হোমগ্রোন I মমতাজ হারবাল
বাংলাদেশের ব্র্যান্ড। যাত্রা শুরু ত্রিশ বছর আগে। হারবাল অর্থাৎ ভেষজ উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য তৈরি করে। বেগম মমতাজ ভিরানীর হাত ধরে প্রথম আলোয় আসে দেশীয় এই ব্র্যান্ড। তাই তার নামেই নামকরণ।
বেগম মমতাজ ভিরানী একজন বিউটিশিয়ান। পেশার প্রতি আগ্রহ থেকে ডারমাটোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিন দশক আগে নিজ উদ্যোগে হারবাল প্রোডাক্ট তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজ ঘরে পণ্য তৈরি করতেন। তখন পণ্যের প্রচার নিয়েও একাই কাজ শুরু করেছিলেন। পরিচিত-অপরিচিত দোকান ঘুরে নিজ হাতে তৈরি পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন।
তিন দশকের যাত্রায় আজ ৫০০ কর্মীর প্রতিষ্ঠান মমতাজ হারবাল। তৈরি পণ্যের সংখ্যা প্রায় ১১০। প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডও রয়েছে, নাম জয়া। মমতাজ হারবাল পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে ক্রেতার চাহিদাকে গুরুত্ব দেয়। নিয়মিত মার্কেট রিসার্চও করা হয় ক্রেতা চাহিদা সম্পর্কে জানার জন্য। সব তথ্য পর্যালোচনা করে মমতাজ হারবালের মাদার ব্র্যান্ড মমতাজের প্রোডাক্ট লাইন তৈরি করা হয়েছে। পণ্যমূল্যও নির্ধারণ করা হয় ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা মাথায় রেখে। পণ্য সহজলভ্য এবং ক্রয়মূল্য সাধ্যের মধ্যে থাকায় সমাজের সব শ্রেণির কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে ব্র্যান্ডটি।
ব্র্যান্ড মমতাজের প্রোডাক্ট লাইনে বেসিক কসমেটিকস, হেনা পেস্ট, হেয়ার টনিক, হেয়ার রিমুভাল ক্রিম, স্ক্রাব, অ্যাকনে ক্রিম রয়েছে। প্রসাধনের কাঁচামাল নিজেরাই সংগ্রহ করে। মমতাজ হারবালে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক নির্যাস, ঔষধি গাছগাছড়া, ফুল, পাতা। যেকোনো পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাঁচামালের মানের বিষয়ে তাই শতভাগ সতর্ক থাকতে চায় মমতাজ হারবাল—এমনটাই জানালেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সাত্তার। কাঁচামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেশকে প্রাধান্য দেয় এই ব্র্যান্ড। তবে দেশের বাইরে থেকেও তা সংগ্রহ করা হয়। সে ক্ষেত্রেও সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন ব্র্যান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। আবদুস সাত্তার বলেন, ‘মমতাজ হারবাল একটি পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে এক থেকে দেড় বছর সময় নিয়ে থাকে। এর কারণ, আমাদের টিম বাজারের চাহিদা বুঝে পণ্য তৈরির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। তারপর আমাদের রিসার্চ টিম পণ্যের কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে পণ্য তৈরি এবং প্যাকেজিংয়ের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয় দেশ-বিদেশ থেকে। এখানে আমরা মানের বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিই।’
মমতাজ হারবালের প্রোডাক্ট লাইন তৈরি করা হয়েছে সৌন্দর্যসচেতনদের পাঁচ ধরনের চাহিদা প্রাধান্য দিয়ে। যেগুলোর মধ্যে আছে—
হাতে তৈরি সাবান
স্কিন কেয়ার
ফেস কেয়ার
হেয়ার কেয়ার
বিউটি অ্যান্ড মেকওভার
মমতাজ হারবালের সাব-ব্র্যান্ড জয়ার রয়েছে মেকওভার ও স্কিন কেয়ারের পণ্য।
মমতাজ হারবাল ‘মার্কেট ডিমান্ড’-এর বিষয়ে সচেতন। এই ব্র্যান্ডের সদস্যরা ক্রেতাচাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেন। বাজার যাচাই করে যথোপযুক্ত তথ্য সংগ্রহ করে তবেই নেওয়া হয় সিদ্ধান্ত। প্রতিটি পণ্যের ওইএম (অরিজিনাল ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার) ক্রেতাদের জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এতে করে পণ্য সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য বাছাইয়ের সুযোগ পান তারা।
মমতাজ হারবাল নিজেদের পণ্য তৈরির পাশাপাশি বেশ কিছু খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের জন্য পণ্য তৈরি করে। এর একটি হলো আড়ং। মমতাজ হারবালের পণ্য আড়ং আর্থ নামের ব্র্যান্ডিংয়ে মিলছে বাজারে। পাওয়া যাচ্ছে ফেস প্যাক, বেদিং বার, শ্যাম্পু, ফেস স্ক্রাব, ফেসওয়াশ, ফেস মাস্ক, বডি স্ক্রাব, হেয়ার প্যাক ধরনের প্রসাধন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আবদুস সাত্তার বলেন, ‘নতুন বেশ কিছু পণ্যের কাজ করে যাচ্ছে আমাদের টিম। আশা করছি সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে কিছুদিনের মধ্যে নতুন ১০ থেকে ১৫টি পণ্য বাজারে আনতে পারব।’ নতুন পণ্য সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘মমতাজ হারবাল নতুন দুটি লাইন নিয়ে কাজ করছে। একটি বডি স্প্রে এবং অপরটি এয়ার ফ্রেশনার। সুগন্ধি নিয়ে এই প্রথম কাজ করছে মমতাজ হারবাল। এই লাইন দুটিতেও পরিপূর্ণ গবেষণার মাধ্যমে মান নিয়ন্ত্রণ করে তৈরি হচ্ছে পণ্য।’
মমতাজ হারবাল অফলাইন ও অনলাইন—দুই মাধ্যমেই ক্রেতাদের পণ্য কেনার সুযোগ দিচ্ছে। দেশের বাজারে বেশির ভাগ প্রসাধনের দোকানে বাণিজ্যিকভাবে পৌঁছে দেওয়া হয় এর পণ্য। একই সঙ্গে ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয় সরাসরি ক্রেতার কাছে। এ ক্ষেত্রে ডেলিভারি সিস্টেম রাখে বিশেষ ভূমিকা। মমতাজ হারবাল সে ব্যাপারেও দারুণ সচেতন। নিজেদের সিস্টার কনসার্ন ডেলিভারি চ্যানেল আসাদ এন্টারপ্রাইজকে ব্যবহার করে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয় দেশের সব অঞ্চলের ক্রেতার কাছে।
সারাহ্ দীনা
ছবি: সংগ্রহ