ফিচার I পোস্ট-প্যানডেমিক পাওয়ার ড্রেসিং
রি-অ্যাডাপশন রিয়ালিটি! অতিমারির আসা-যাওয়ায় পাল্টে গেছে ড্রেস ফর সাকসেসের ফ্যাশন কোড। পোশাকের নকশায় পেশাদারত্বের বদলে প্রাধান্য পাচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্য
টেইলরড পোশাকে অভ্যস্ত অফিসগামীরা অতিমারির পুরোটা সময় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন হুডি, জগার্স, ট্যাকস্যুটের মতো লাউঞ্জওয়্যারে। নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মেলামেশায় ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে কাজের ক্ষেত্রেও। যেমন লন্ডনে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর থেকে আউটডোর ডাইনিংসহ রেস্তোরাঁগুলোতে এখন ব্যক্তিগত ও প্রফেশনাল ক্যাচ-আপের লোকজনের উপচে পড়া ভিড়। পোশাক নিয়েও দেখা যাচ্ছে ভিন্নধর্মী চিন্তাভাবনা। নিজেকে সাজিয়ে তোলার সুযোগে পাওয়ার ড্রেসিংয়ে যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন ট্রেন্ড।
২০২১-এর ভার্চ্যুয়াল রানওয়ে জুড়ে মহামারি-পরবর্তী নতুন অফিস ড্রেস কোড কেমন হতে পারে, তা ডিজাইনাররা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। তবে পাওয়ার ড্রেসিংয়ের টেইলারিং ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখা যায়নি কারও মধ্যেই; বরং একে ডিজাইনাররা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। যার মধ্যে ইলাস্টিকেটেড ওয়েস্টব্যান্ড, ওভারসাইজ সিলুয়েট, নরম কাপড় এবং আরও প্লেফুল কালারের অন্তর্ভুক্তি ছিল চোখে পড়ার মতো।
কর্মক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিসত্তাকে সুদৃঢ়ভাবে উপস্থাপনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ওমেন ওয়ার্ক ওয়্যার উপস্থাপন করেছিলেন স্টেলা ম্যাককার্টনি। তার ডিজাইনে চোখে পড়েছে আগের চেয়েও অনেক বেশি খামখেয়ালিপনা। উজ্জ্বল ম্যাটেরিয়াল ও রঙের ব্যবহারও ছিল নজরকাড়া।
ম্যাককার্টনি তার নিউট্রাল প্যালেট ও মিনিম্যালিস্ট স্ট্যাপলগুলোর ডিজাইন অদলবদল করে তৈরি করেছেন চওড়া, জ্যাজি ফ্লেয়ার যুক্ত টাউজার স্যুট সেট। বোম্বার জ্যাকেটের সঙ্গে লেয়ারিংয়ে দেখা গেছে ব্লেজার। স্পোর্টি জগারের সঙ্গে।
ডিজাইনার রোকস্যান্ডা ইলিনচিক কালেকশনও ছিল সুচিন্তিত। অতিমারির পর অফিসফেরত নারীরা কী পরতে চাইবেন, তা নিয়েই ভেবেছেন তিনি। কাশ্মীরি-ব্লেন্ড ফ্যাব্রিকে তৈরি করেছেন নরম স্যুট। এগুলোকে আরও প্লেফুল করে তুলতে যোগ করেছেন পোড়া কমলা ও ফুশিয়ার মতো রং। কালার ব্লক এ স্যুটগুলো ছিল কালেকশনের হাইলাইট। এ ছাড়া কালেকশনে চোখে পড়েছে শিক সিল্ক ব্লাউজ, যা ব্লেজারের চমৎকার বিকল্প হতে পারে পাওয়ার ড্রেসিংয়ের ক্ষেত্রে। পরবর্তী ফল সিজন অব্দি যেন পোশাকগুলো পরা যায়, সে চিন্তাও করেছেন রোকস্যান্ডা। পাওয়ার ড্রেসিংয়ের নতুনতর এসব সংযোজনে ক্রেতাদের থেকেও মিলছে ইতিবাচক সাড়া। আরামদায়ক এবং আপবিট ওয়ার্কওয়্যার কনসেপ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রমশ। আসন্ন মৌসুমের জন্য নারীদের লাক্সারি ফ্যাশন, বিউটি ও লাইফস্টাইল কোম্পানি নেট-এ-পোর্টার ‘দ্য নিউ ব্লেজার’ ট্রেন্ডকে উৎসাহিত করছে। লং-লাইন শেপ, কলারলেস ডিটেইল, বেল্টিং আর ভিনটেজ প্রাণিত সিলুয়েটে তৈরি এসব ব্লেজার মোটেও ট্র্যাডিশনাল নয়।
বক্সি সিলুয়েটের ব্লেজারগুলো তৈরি হচ্ছে আরামদায়ক নিটেড ফ্যাব্রিকে। উজ্জ্বল সব রঙে। সেন্ট লরেন্টের মতে ক্ল্যাসিক সিলুয়েটের ওয়ার্কওয়্যারগুলোর আকর্ষণ হারিয়ে যায়নি; বরং এগুলোতে এখন ডেনিম, ড্রেস আর নিট দিয়ে স্টাইল করা হচ্ছে সর্বোচ্চ আরাম বজায় রাখার জন্য। বেশির ভাগ ডিজাইনারই এখন এই বিষয়ে সচেতন। ফাংশনালিটি বাড়াতে জ্যাকেট ও ট্রাউজারের ডিজাইনে নানান ধরনের ডিটেইল যোগ করা হচ্ছে।
সেলিন থেকে সেন্ট লরেন্ট—অনেক মেগা-ব্র্যান্ডের রানওয়েতেই দেখা গেছে সাদামাটা ব্লেজার-ডেনিম কম্বিনেশনটি। তাই বলা হচ্ছে, আসছে সময়ে এটি অফিস ইউনিফর্ম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। এটি শিক, পলিশড লুক দেয়। বেশি ফরমাল বা অস্বস্তিকর অনুভূতি ছাড়াই। লকডাউন-পরবর্তী করপোরেট বিশ্বে আসছে সময়ে এটি রাজত্ব করবে বলে ধারণা ডিজাইনারদের।
মেনজ ওয়্যার ডিজাইনার ড্যানিয়েল ডব্লিউ ফ্লেচার বরাবরই ট্র্যাডিশনাল ব্রিটিশ টেইলারিংয়ে বেশ বিচক্ষণ। স্যুট শুধু বোর্ডরুমের জন্য উপযুক্ত—গ্রাহকদের এমন মানসিকতা পরিবর্তন করার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, স্যুট যেকোনো সময় পরার জন্য গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। অধিকাংশেরই বদ্ধমূল ধারণা, স্যুট এমন পোশাক, যা শুধু অফিসে পরতে হয়। কিন্তু যখন কেউ অফিসেই যাচ্ছেন না, তখনো স্যুট পরতে এবং নিজেকে বোল্ড ভাবতে কোনো বাধা নেই বলে মনে করেন এই ডিজাইনার। লাক্সারি ফ্যাশন রিটেইলার মাইথেরেসার ফ্যাশন বায়িং ডিরেক্টর টিফানি সিউ মনে করেন, পাওয়ার ড্রেসিংয়ের জন্য কাজ করা ব্র্যান্ডগুলো দারুণ অভিনব সব টেইলারিং অফার করছে এখন, যাতে গ্রাহকেরা শুধু ওয়ার্কওয়্যার হিসেবে নয়, এর বাইরেও পোশাকগুলো অনায়াসে পরতে পারেন। এর প্রমাণ মেলে পোলিশ ডিজাইনার ম্যাগদা বুট্রিম ও দ্য অ্যাটিকোর কাজে।
হাই স্ট্রিট লেভেলেও আপডেট ওয়ার্কওয়্যার কালেকশনের ডিজাইন ও বিপণন শুরু হয়েছে অনেক আগে। লন্ডনভিত্তিক ডিজাইনার ফোবি ইংলিশ পোস্ট-প্যানডেমিক ওয়ার্ক ক্যাপসুলের ধারণার একটি সিরিজ উপস্থাপন করেছেন স্কেচের মাধ্যমে। ইংলিশের স্কেচে লুজ ‘ড্রেসিং গাউন-স্টাইল’ কোট অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ছাড়া দেখা গেছে ইলাস্টিকেটেড ওয়েস্টব্যান্ড দেওয়া আরামদায়ক ট্রাউজার ও হুডেড শ্যাকেট। এটি একটি ট্র্যাডিশনাল শার্ট সিলুয়েটের সঙ্গে ভারী উলেন কাপড় যুক্ত জ্যাকেটের মিলিত রূপ শ্যাকেট, দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পোস্ট-প্যানডেমিক পাওয়ার ড্রেসিংয়ে। স্বস্তিদায়ক, নরম ও আরামদায়ক অনুভূতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে ডিজাইনারের ফোবির এ কাজে। এমনকি অনেক অ্যাথলেজার ব্র্যান্ডও ঝুঁকছে স্পোর্টি অফিসওয়্যার তৈরিতে।
বোঝাই যাচ্ছে, পোশাকে সর্বোচ্চ আরাম দিতে ডিজাইনাররা এখন বদ্ধপরিকর। ফ্যাশন হাউসগুলো জোর দিচ্ছে রিল্যাক্স টেইলারিংয়ের ওপর। সবচেয়ে বড় কথা, আরাম ও স্বস্তিকে প্রাধান্য দিয়ে কেউই আর বেসিক ওয়ার্কওয়্যার কালেকশনে সীমাবদ্ধ থাকতে রাজি নন।
তাসমিন আহমেদ
মডেল: বর্ণ ও প্রিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: রিফাত রহমান
ছবি: জিয়া উদ্দীন