ইভেন্ট I বিএসওএবির মিট দ্য প্রেস
২৪ মার্চ, বৃহস্পতিবার। আয়োজিত হয়ে গেল সরকার অনুমোদিত দেশের একমাত্র বিউটি সার্ভিস সংগঠন বিউটি সার্ভিস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএসওএবি)-এর প্রথম মিট দ্য প্রেস
বসন্তের কর্মব্যস্ত সকাল। ঘড়ির কাঁটায় ১১টা পেরিয়েছে মাত্র। রোদ্দুরের তেজ ও ট্রাফিক জ্যামের হুংকার এড়িয়ে, গুলশান ক্লাবের প্যাটিয়ো হলে ভিড় করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। মঞ্চে তখন বিউটি সার্ভিস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএসওএবি)-এর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী প্যানেলের প্রতিনিধিরা। সংগঠনের প্রথম মিট দ্য প্রেস এটি। শুরুতেই ফুল দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বরণ করা হয়। এরপর শুরু মূল আয়োজন। তাতে সভাপতির বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি কানিজ আলমাস খান।
কানিজ আলমাস খান সংগঠনের পক্ষে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও দাবি উপস্থাপন করেন। বিশেষত শিল্প খাত হিসেবে সৌন্দর্যসেবা খাতে ভ্যাট সহনশীল করার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সৌন্দর্যসেবার মতো এমন একটি সম্ভাবনাময় ও কর্মপ্রাণ শিল্প খাত প্যানডেমিকের ধাক্কা সামলে উঠতে যখন লড়ছে, তখন এর যাত্রাপথকে আরেকটু সুগম করতে আপনাদের মাধ্যমে বিএসওএবির পক্ষে সরকারের কাছে কিছু দাবি উত্থাপন করা প্রয়োজন মনে করছি। বাংলাদেশ সরকারের টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে এ খাত কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশের অনগ্রসর ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও মান্দি নারীদের কাজে লাগিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের জীবনমানের উন্নতিতেও রাখছে অবদান। আপনারা জানেন, এই খাত পরিচালনায় নিয়োজিত উদ্যোক্তাদের ৯৯ শতাংশই নারী। তারা এই শিল্প খাতে বিনিয়োগ করে কিংবা শ্রমের মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের জীবনমানের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আশানুরূপ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু বিদ্যমান প্রতিকূল ভ্যাট ব্যবস্থা ও করোনার কারণে এ খাতে নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সৌন্দর্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রসারিত ফ্লোর ভাড়া নিয়ে সেবাকাজ পরিচালনা করতে হয়। এগুলোর জন্য বিপুল পরিমাণ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। তা ছাড়া ভাড়া বাড়ির কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেট ইত্যাদি খাতেও যে ভ্যাট পরিশোধ করতে হচ্ছে, তা রেয়াত নেওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে বিভিন্ন জোগানদারের কাছ থেকে উপকরণ ক্রয়ের বিপরীতে পারলার প্রতিষ্ঠানকেই উৎসে কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু জোগানদারের ভ্যাটও রেয়াত নেওয়া যাচ্ছে না। অথচ সৌন্দর্যসেবার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওই বাড়ি ভাড়া, ইউটিলিটি ব্যয়, জোগানদারের মূল্যসহ ভ্যাটযুক্ত মোট সেবামূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে সরবরাহ ভ্যাট প্রদান করা হচ্ছে। ফলে ভ্যাটের ওপর ভ্যাট প্রদান করতে হচ্ছে আমাদের। সৌন্দর্যসেবায় সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা ভ্যাটের মৌলিক নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
‘তা ছাড়া বর্তমান অর্থবছরের বাজেটে প্রসাধনীর আমদানি পর্যায়ে কর ভার ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তাই সেবা প্রদানের খরচও আগের চেয়ে বেড়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সৌন্দর্যসেবাশিল্পের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ আরোপ করার জন্য রাজস্ব বিভাগে আবেদন জানিয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।
বিএসওএবি সভাপতি আরও বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আইন আমাদের এই সৌন্দর্যসেবা খাতের ওপর কতটা প্রযোজ্য, সে বিষয়ে পরিষ্কার দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। আমাদের ব্যবহার্য উপকরণ আমরা অন্যান্য ক্রেতার মতোই বাজার থেকে কিনে থাকি। আমরা কোনো ব্যবহার্য পণ্যই উৎপাদন বা প্রস্তুত করি না। সে ক্ষেত্রে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ইত্যাদির দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তায় না। এমনকি আমরা যেসব উপকরণ বা পণ্য ব্যবহার করি, তার মধ্যে অনেক কিছুতেই মেয়াদের বিষয়টি তেমন কোনো গুরুত্ব বহন করে না এবং কোনো কোনো উপকরণে মেয়াদ থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। সে ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার আইনের সুনির্দিষ্ট এবং যুক্তিসংগত নির্দেশনা থাকা আবশ্যক বলে মনে করি। অন্যথায় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে যে শঙ্কা বাসা বেঁধেছে, তা আমাদের ব্যবসাকে বাধাগ্রস্ত করছে, যা কাম্য নয়।’
আয়োজনে সমাপনী বক্তব্য দেন বিএসওএবির সাধারণ সম্পাদক সুমনা হাসান। এরপর উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বলে রাখা ভালো, বিএসওএবির ২০২১-২০২৩ মেয়াদের নবনির্বাচিত ১৬ সদস্যের কার্যনির্বাহী প্যানেলে রয়েছেন: সভাপতি কানিজ আলমাস খান, সিনিয়র সহসভাপতি নিলুফার খন্দকার, সহসভাপতি গীতি বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সুমনা হাসান, সহসাধারণ সম্পাদক আলেয়া শারমিন কচি, উপসাধারণ সম্পাদক আরিফা হোসেন, কোষাধ্যক্ষ সায়রা মঈন, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ রাজিয়া সুলতানা, সম্পাদক (জনসংযোগ, যোগাযোগ ও ইভেন্ট) কাজী কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক (জনসংযোগ, যোগাযোগ ও ইভেন্ট) রহিমা সুলতানা রীতা ও ফারখুন্দা জাবীন খান, দপ্তর সম্পাদক ফারহানা ইয়াসমিন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রোজা হোসেন, যুগ্ম সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোসা. ইসরাত জাহান, সদস্য (ইসি) সায়লা ইসলাম ফ্লোরা ও কানিজ সুলতানা।
মধ্যাহ্নভোজের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের মিট দ্য প্রেস।
i বিউটি ডেস্ক
ছবি: ক্যানভাস