নখদর্পণ I হালাল-হকিকত
রীতি অনুসরণের পাশাপাশি নখের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দারুণ কার্যকর এই সাজ-অনুষঙ্গ। একদম সংগ্রহে রাখার মতো
সুন্দর নেইলপলিশের কথা ভাবলেই চিন্তায় আসে শেড, ফিনিশ কিংবা দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়ে। কিন্তু ‘অক্সিজেন’ বা ‘আর্দ্রতা’র মতো শব্দ নেইল পেইন্টিং কিংবা মেনিকিওরের ক্ষেত্রে কি ব্যবহার করা হয়? কখনোই না। কেননা মেনিকিওরের ক্ষেত্রে এসব নেতিবাচক অর্থ বহন করতে পারে। যেমন এ ক্ষেত্রে অক্সিজেনের অর্থ হতে পারে নেইলপলিশের নিচে বুদবুদের সৃষ্টি। আর আর্দ্রতার সঙ্গে মিল খায় পিলিং নেইলপলিশের বৈশিষ্ট্যগুলো। কিন্তু হালাল বা ব্রিদেবল নেইলপলিশের ক্ষেত্রে চিত্রটা উল্টো!
হালাল নেইলপলিশের পরত অতিক্রম করে বাতাস কিংবা পানি- দুটোই নখ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যার কারণে একে ‘ব্রিদেবল’ বলা হয়। অধিকাংশ নেইল এক্সপার্টের মতে, নখের স্বাস্থ্যের জন্য এমন নেইলপলিশ ভালো। কারণ, এটি নখকে প্রয়োজনীয় বাতাস ও আর্দ্রতা থেকে বঞ্চিত করে না। সে সঙ্গে মেনিকিওরকে দীর্ঘস্থায়ী করতেও সাহায্য করে। সৌন্দর্যবিশ্বে শুরুতে ‘ব্রিদেবল’ নামটা খানিকটা সন্দেহের চোখে দেখা হয়েছিল। কেননা, নখ মানুষের আঙুলের রক্তপ্রবাহ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন পায়, বাতাস থেকে নয়। এই নামটার পেছনে কিছু রসায়ন জড়িত। এই নেইলপলিশগুলোর আণবিক গঠন মাইক্রোস্কোপিক পানি এবং বায়ুর অণুগুলোকে অতিক্রম করার অনুমতি দেয়, যা নখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ফলে নখের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় থাকে। সেই সঙ্গে সাধারণ নেইলপলিশ ব্যবহারে নখের যে চিপিং ও পিলিং হবার আশঙ্কা থাকে, তা অনেকাংশে কমিয়ে আনে। বর্তমানে প্রায় অনেকে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এই হালাল নেইলপলিশ ব্যবহার করেন। কারণ, এমন নেইলপলিশ প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ডগুলোর দাবি, এগুলো নখে দেওয়া অবস্থায় অজু করলে পানি নখ পর্যন্ত পৌঁছায়। যদিও পুরো ব্যাপারটি নিয়ে এখনো অনেক বিতর্ক এবং ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ রয়েছে।
প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনায় হালাল নেইলপলিশ সাধারণ নেইলপলিশ ফর্মুলার তুলনায় বেশি ছিদ্রযুক্ত। যার মাধ্যমে নখে পানি ও বাতাসের চলাচল সহজ হয়। এসব নেইলপলিশে বিশেষ কিছু এজেন্ট যুক্ত করা হয়, ফলে টপকোটের ব্যবহার ছাড়াই এগুলো নখে ব্যবহারের পর অনেক বেশি গ্লসি দেখা যায়। তবে কিছু ব্র্যান্ড আছে, যেগুলো ব্রিদেবল নেইলপলিশের পাশাপাশি ব্রিদেবল নেইল বেইজ এবং টপ কোটও প্রস্তুত করে। এগুলোর সাহায্যে তিন কোটের মেনিকিওর করে নেওয়া যায় অনায়াসে। হালাল এবং ব্রিদেবল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই নেইলপলিশগুলোর আরও কিছু সুবিধা রয়েছে।
বদ্ধভাবে পরিত্রাণ
আমাদের নখের কোষগুলো নিজে নিজেই প্রসারিত ও সংকুচিত হয়। কারণ, এগুলো আর্দ্রতা শোষণ ও সংরক্ষণ করে, যা নেইলপলিশ লাগানোর পরে ফেটে যাওয়া কিংবা খোসার মতো উঠে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হালাল নেইলপলিশ ব্যবহারে নখে অবাধে বাতাস প্রবেশ করতে পারে। ফলে নখের কোষে পানি জমে থাকে না এবং নেইলপলিশ অনেক দিন নিখুঁত থাকে।
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল
বেশির ভাগ নেইল আর্টিস্টের পরামর্শ—খুব ঘন ঘন মেনিকিওর করে থাকলে সেগুলোর মাঝে কিছুদিনের ছোট ছোট বিরতি নেওয়ার। কারণ, সেই সময়ে নখগুলো একটু শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পায়। তবে হালাল নেইলপলিশ ব্যবহার করলে এমন বিরতির খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না বললেই চলে। কারণ, এগুলো ব্যবহারে নখের ওপর নেইলপলিশের পরত থাকা সত্ত্বেও নখ পর্যাপ্ত পরিমাণে হাইড্রেশন এবং ময়শ্চারাইজেশন পায়।
কম কেমিক্যাল
সব নেইলপলিশেই কেমিক্যাল উপাদান থাকে। কোনোটায় হয়তো বেশি, আবার কোনোটায় কম। সাধারণ নেইলপলিশের তুলনায় হালাল নেইলপলিশে ক্ষতিকর কেমিক্যালের পরিমাণ অনেক কম। তাই এগুলোকে তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ধরনের নেইলপলিশ থেকে বেশি নিরাপদ ধরে নেওয়া হয়।
শুকায় সহজে
হালাল নেইলপলিশ অধিক ছিদ্রযুক্ত ফর্মুলায় হওয়ার কারণে বাতাস এর মধ্য দিয়ে নখে সহজেই প্রবাহিত হয়। তাই এই নেইলপলিশ শুকাতে খুব কম সময় লাগে।
দীর্ঘস্থায়ী
হালাল নেইলপলিশ সাধারণ নেইলপলিশের তুলনায় বেশি টেকসই এবং কোনো ধরনের ডাবল কোট দেওয়া ছাড়াই অনেক দিন টেকে। নখের কোষে পানি আটকে থাকা ছাড়াও অন্যান্য নেইলপলিশের নিচে যে তেলগুলো জন্মে, সেগুলোও নেইলপলিশ চিপিং কিংবা ফেটে যাওয়ার কারণ হতে পারে; কারণ, নেইলপলিশ নখের প্রাকৃতিক তেলের সঙ্গে মিশে যেতে পারে না। কিন্তু হালাল নেইলপলিশে ব্যবহৃত এই তেল নখের মধ্য দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। ফলে মেনিকিওর আরও বেশি টেকসই, নিখুঁত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
যেকোনো নেইলপলিশ লাগানোর আগেই নখ পছন্দমতো শেপে খুব সুন্দর করে কেটে ফাইল এবং বাফ করে নিতে পারলে ভালো। প্রায় সব নেইল আর্টিস্টের পরামর্শ হলো, এই ধাপগুলোর পর নখ খুব ভালো করে সেনিটাইজ করে নিতে হবে। এতে নখের প্রাকৃতিক তেলগুলো সরে যাবে। আর দশটা নেইলপলিশের মতো হালাল নেইলপলিশ ব্যবহারে প্রক্রিয়াও একই। তবে ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের আলাদা ব্যবহারবিধি থাকতে পারে। যেমন অরলি ব্র্যান্ডের হালাল নেইলপলিশগুলোর ফর্মুলা ওয়ান-স্টেপ অ্যাপ্লিকেশনের জন্য তৈরি। এ জন্য ব্র্যান্ডটি পরামর্শ দিয়ে থাকে ডাবল কোট নেইলপলিশ দেওয়ার। যেকোনো হালাল নেইলপলিশ ব্যবহারের আগে প্রস্তুতকারকের নির্দেশাবলি দেখে নেওয়া ভালো। হালাল নেইলপলিশ নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্র্যান্ড কাজ করছে। এদের মধ্যে অরলি, মায়া এবং ৭৮৬ ব্র্যান্ডগুলো অন্যতম। আমাদের দেশে সহজলভ্য ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে আছে লাফজ এবং ইংলট। প্রতিটি ব্র্যান্ডেই রয়েছে হরেক রকম শেড। স্কিনটোন, আউটফিট কিংবা অনুষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী বেছে নিলেই চলবে।
শিরীন অন্যা
মডেল: শ্রাবণী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন