যাপনচিত্র I সাজানো জীবনের দায়ভার
সিগমা মেহেদী। দেশের শীর্ষস্থানীয় ওয়েডিং প্ল্যানিং সার্ভিস ‘সিগমাজ’-এর কর্ণধার। তার যাপিতজীবনের গল্প জানার চেষ্টা
জীবনকে নিজের মতো করে সাজানোর স্বপ্ন সত্যে পরিণত করতে যারা সক্ষম, তাদেরই একজন সিগমা মেহেদী। শুধু নিজের জীবন নয়, নতুন জীবন শুরু করতে যাওয়া নবদম্পতির বিয়ের আয়োজন পরিপাটি করার পেছনেও তার ভূমিকা দারুণ। দুই দশক ধরে তিনি দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে সে কাজ করে যাচ্ছেন নিজের গড়া ওয়েডিং প্ল্যানিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ‘সিগমাজ’-এর মাধ্যমে। তাই ব্যস্ততা তার নিত্যসঙ্গী। তবু এতটুকু সময় পেলে একান্ত জীবন কীভাবে কাটান, সেই গল্পও জানিয়েছেন আমাদের।
ভোরের আলো
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে পছন্দ করেন সিগমা মেহেদী। সাধারণত সাতটার মধ্যেই উঠে পড়েন। তারপর প্রার্থনা শেষে বেরিয়ে পড়েন হাঁটতে। মর্নিংওয়াকে ৮ থেকে ১০ হাজার স্টেপ ফেলেন রোজ। তারপর খানিকটা ক্লান্তি নিয়ে ফেরেন ঘরে। সারেন নাশতা।
খাবারের টেবিলে
সিগমার সকালের নাশতায় একটা ডিম থাকা চাই-ই চাই। আরও থাকে জুস কিংবা ফ্রুটস। কোনো কোনো দিন খুব ইচ্ছে করলে লাল আটার রুটি খান তিনি। নয়তো খান কনফ্লেক্স দুধ। আর একটা খেজুর না খেলে যেন সকালের নাশতাটা ঠিক পরিপূর্ণ হয় না!
‘লাঞ্চে সাধারণত চিকেন অ্যান্ড স্যালাড খাই। কোনো দিন খুব ইচ্ছে করলে ভাতও খাই,’—এভাবেই মধ্যাহ্নভোজের ফিরিস্তি জানালেন। হাসিমুখে আরও জানালেন, রাতের খাবার রুটিন এখনো ফিক্সড করতে পারেননি! যদি কোনো দাওয়াত থাকে, তাহলে সেখানকার খাবারের ব্যাপারে স্বভাবতই আয়োজকদের আয়োজনের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে চেষ্টা চালান নৈশকালে কোনো কার্ভস না খাওয়ার। অন্যদিকে, বাসায় থাকলে অনেক সময় স্যুপেই সারেন রাতের আহার পর্ব। কোনো কোনো রাতে ভাতও খান অবশ্য।
পরিবার বলয়
নানা ব্যস্ততার মাঝে একান্তই অবসর কাটানোর মতো সময় বের করা সিগমা মেহেদীর পক্ষে যে বেশ কষ্টসাধ্য, তা বলা বাহুল্য। তবু কোনোমতে তেমন কোনো দিনের দেখা মিলে গেলে পরিবারই তার কাছে প্রাধান্য পায়। পরিবারকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি এদিন নিজে নিজে রান্না করেন। তার ফাঁকে ফাঁকে, কাজের চাপে জমে থাকা পারিবারিক কাজগুলো সারার চালান চেষ্টা। কোনো কোনো দিন অবশ্য কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে পড়েন।
পোশাকের হালচাল
প্যান্ট-শার্ট থেকে সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, লেহেঙ্গা…এককথায় ওয়েস্টার্ন থেকে ইস্টার্ন—যেকোনো পোশাকেই স্বস্তি বোধ করেন এই খ্যাতিমান ইভেন্ট প্ল্যানার। যখন যেখানে থাকেন, সেই পরিবেশ, সেই সিচুয়েশনের ওপর নির্ভর করেই বেছে নেন পোশাক। ফলে তার ব্যক্তিগত ওয়্যারড্রোবগুলো যে উপচে পড়ছে নানা রকমের পোশাকের সম্ভারে, সে আর বলতে!
সাজসজ্জার বাহার
সিগমা মেহেদীকে আমরা সব সময়ই পরিপাটি দেখে অভ্যস্ত। পোশাকে কিংবা সাজে কখনোই যেন একবিন্দু খুঁত রাখতে তিনি নারাজ। অনেকেই হয়তো ভাবেন, এ জন্য নিশ্চয় রোজকার রুটিন থেকে পারলারে বেশ খানিকটা সময় ব্যয় করতে হয় তাকে। অথচ, বাস্তব চিত্র ঠিক উল্টো। বিউটি পারলারে যাওয়ার মতো সময় বের করা খুব মুশকিল সিগমার পক্ষে। এমনকি দাওয়াত থাকলেও সেই সময়টুকু তিনি বের করতে পারেন না। তাই বলে মেকআপে ছাড় দিতে রাজি নন মোটেও; বরং নিজের মেকআপ নিজেই করেন। বললেন, ‘মেকআপের বেলায় সেরা ব্র্যান্ড পছন্দ করি আমি। কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড নয়, বরং মাল্টি ব্র্যান্ড ব্যবহার করি। ঠোঁটে ব্রাউন বা নিয়ন লিপস্টিক ব্যবহার বেশি পছন্দ আজকাল।’ আরও জানালেন, প্রতিদিন সকালে বেশির ভাগ সময় নিজের চুল নিজেই সাজান।
অন্যদিকে, নিজেকে ফিট রাখতে নিয়ম করে হাঁটার পাশাপাশি জিমেও দেন হাজিরা। সেটা তার সকালের রুটিনেই। অবশ্য প্রতিদিন নয়, বরং সপ্তাহে তিন-চার দিন জিম করেন সিগমা। সেখানে কোনো দিন লেগস, কোনো দিন আপারবডি—রুটিন অনুসারে করেন। আর তাতেই দেহমনে ফুরফুরে হয়ে ওঠেন।
শখের পৃথিবী, বোধের পৃথিবী
‘আসলে আমি খুব শখ করে ব্যবসা করি। আমার শখের জিনিস ব্যবসাই। অন্য কোনো কিছুর প্রতি আমার এত টান নেই, সিগমাজ-এর ব্যবসার প্রতি যত টান আছে,’ বলেন সিগমা। আরও বলেন, ‘জীবনে সুখী থাকাটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে, জীবনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কের প্রতি দায়বদ্ধতা, ব্যবসার প্রতি দায়বদ্ধতা। ফলে, এই যে আমি ২০ বছর ধরে একটা ব্যবসা করছি, একটা ব্যবসায় ফোকাসড, এখানে আমার তৃপ্তি ও খুশিটা একটা লেভেলে মেইনটেইন করে আসছি। জীবনে স্ট্যাবিলিটি খুবই ইমপর্টেন্ট। জীবনে প্রতিদিন নিজের কাজ যথাযথভাবে করা, নিজের কাজ নিয়ে খুশি থাকাটা জরুরি। আমি মনে করি, অন্যের প্রতি নিজের দায়িত্ববোধ সম্পূর্ণভাবে পালন করতে পারা এবং নিজের কাজকর্ম নিয়ে খুশি থাকাটা জীবনকে সার্থক করে তোলে।’
এদিকে, ব্যস্ততার ফাঁক গলিয়ে একটুখানি সময় পেলে একান্তই নিজেকে সময় দিয়ে মনোজগতের শুশ্রূষা জারি রাখেন সিগমা মেহেদী। বললেন, ‘যখনই কাজের মাঝখানে ফ্রি টাইম পাই, তখন নিজের সঙ্গে প্রচুর সময় কাটাই।’ আরও জানালেন, ভ্রমণ করতে ভীষণ ভালো লাগে তার।
ঘুমের ঘণ্টা
একান্তই কোনো প্রজেক্টের চাপ না থাকলে, রাত জেগে ডিজাইন করার তাড়া না থাকলে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে পছন্দ করেন তিনি। সেটা বারোটা-একটার মধ্যেই। কেননা, রাত জাগা তার একদমই পছন্দ নয়।
মোটামুটি এমন ডিসিপ্লিন মেনেই সিগমা ঘুমিয়ে পড়েন পরের দিন সকালে ঠিক সময়ে জেগে উঠবেন বলে। আরও একটা কর্মব্যস্ত দিনের ফাঁকতালে নিজেকে নিজের মতো সময় দেবেন বলে।
রুদ্র আরিফ
ছবি: ওমর ফারুক টিটু