ফিচার I বাধাগতের বাইরে
শাড়ি-ব্লাউজের স্টাইলিং। বরাবরই সুপারহিট। কিন্তু মাঝেমধ্যে খানিকটা একঘেয়েও বটে। তাই পুরোনো এই অভ্যস্ততা থেকে বেরিয়ে আসার প্রেরণা জোগাচ্ছেন খোদ ডিজাইনার, সেলিব্রিটি আর ইনফ্লুয়েন্সাররা। শাড়ি শাড়ির মতোই থাকছে। শুধু ব্লাউজের বদলে গায়ে জড়ানো হচ্ছে ওয়্যারড্রোবের অন্য সব স্টেটমেন্ট পিস। বাকি খোঁজ জাহেরা শিরীনের লেখায়
চৌদ্দ গিরা থেকে গজখানেক। ভয়েল, রুবিয়া, বেক্সি। কাপড় কেন, পাড়ার দর্জির দোকানে বানাতে দাও, মামলা খতম। আর যদি শাড়ির সঙ্গেই ব্লাউজের বাড়তি কাপড় দেওয়া থাকে, তাহলে তো ব্যাপারটা আরও সহজ। আগে তো বাড়িতে এসে মাস্টারের মাপ নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল বনেদি পরিবারগুলোতে। এখনো মেড টু অর্ডার ব্লাউজ জনপ্রিয়। রেডিমেড ব্লাউজের দোকানও বহু। ডিজাইনার ব্লাউজেও বাজার সয়লাব। কখনো শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ ম্যাচিং তো কখনো কনট্রাস্টেই কাম সারা। ব্লাউজের ফিট, কাট আর স্টাইলের এক্সপেরিমেন্টেশন তো রোজকার। তাতেও থেমে নেই নিরীক্ষা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কয়েক বছর ধরে শাড়ির স্টাইলিংয়ে প্রায়শই বাদ পড়ে যাচ্ছে ব্লাউজ। বদলে শাড়ির সঙ্গী হচ্ছে ওয়্যারড্রোবের ওয়েস্টার্ন আর ইন্দোওয়েস্টার্ন প্রেরণার পোশাকগুলো। সনাতনী শাড়ির অন্যতর এ স্টাইলিংয়ে সেজে ওঠা সম্ভব রোজকার দিন থেকে বিশেষ আয়োজনে। ব্লাউজের বিকল্প এ পিসগুলোর সঙ্গে মানিয়ে শাড়ির ড্রেপিংয়েও সামান্য অদলবদল করে নেওয়া যায়। একদম অন পয়েন্ট লুকের জন্য।
অফ শোল্ডার টপ
পশ্চিমি পোশাকের ভক্ত? শাড়ি স্টাইলিংয়ের সময় ব্লাউজের বদলে গায়ে গলিয়ে নেওয়া যেতে পারে সাধের ক্রপ টপ। একদম কাঁধ খোলাতে যাদের অস্বস্তি, তাদের জন্য কোল্ড শোল্ডার ঘরানারগুলো তো থাকছেই। এ ক্ষেত্রে শাড়ি পরার কায়দাতে খানিকটা বৈচিত্র্য আনা যায়। যেমন আঁচল না ছেড়ে পেঁচিয়ে গলায় স্কার্ফের মতো করে দেওয়া যায়। কিংবা সরু করে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে টপের ওপর দিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে করে টপের সৌন্দর্য পুরোপুরি বোঝা যাবে। ক্যাজুয়াল লুকের জন্য শাড়ি একটু উঁচু করে পরে নেওয়া যায়। সঙ্গে পায়ে থাকুক স্নিকার কিংবা কনভার্স। আবার শিফন, জর্জেট বা স্যাটিনের শাড়ির সঙ্গে অফ শোল্ডার টপ আর স্টিলেটোর কম্বিনেশন কিন্তু চমৎকার দেখায়। সঙ্গে উঁচু করে বাঁধা পনিটেইল আর গ্লাস মেকআপ লুক। ব্যস! সামার রেডি স্টাইলিশ লুকের জন্য পারফেক্ট। সুডৌল কাঁধ আর সুন্দর কলারবোনের অধিকারীরা শাড়ির সঙ্গে অনায়াসেই ক্যারি করতে পারবেন এ ধরনের টপ।
করসেট
স্লিক, স্টাইলিশ এবং সেনশুয়াস। শাড়ির সঙ্গে করসেটের জোড়ে যে কাউকে এমনটাই দেখাবে। ভিক্টোরিয়ান পিরিয়ড প্রাণিত শিলুয়েটে তৈরি হয় করসেট, যা মূলত দেহাবয়বকে সুডৌল দেখাতে ব্যবহৃত হয়। করসেটের সঙ্গে শাড়ি পরে নিলে তাই দেখায় ছিপছিপে। মূলত পেছন খোলা হয় করসেটের ডিজাইন। যা জিপার, বোতাম অথবা ফিতার সাহায্যে বেঁধে নেওয়ার অপশন থাকে। কোমর অব্দি লম্বা হয়ে থাকে এই ক্ল্যাসিক পিস। ফলে ওয়েস্ট শেপার হিসেবেও কাজ করে চমৎকার। শাড়ির সঙ্গে করসেট পরতে চাইলে সেটা হল্টার নেক বা স্লিভলেস হলে স্টাইলিং চমৎকার হবে। তবে যদি ফুলস্লিভ পরতেই হয়, সে ক্ষেত্রে নেটের মতো স্বচ্ছ ফ্যাব্রিকগুলো বেছে নিতে হবে স্লিভ বানাতে। একদম সুতি থেকে শিফন, জর্জেট, চিনন, নেট কিংবা লেস—সব ধরনের শাড়ির সঙ্গে চমৎকার দেখায় করসেট। তবে পুরো লুকে করসেট দিয়ে স্টেটমেন্ট তৈরি করতে চাইলে ভারী কাজ করাগুলো বেছে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে শাড়িটা হওয়া চাই প্লেইন, সিম্পলের মধ্যে গর্জাস। আর করসেট যদি সলিড কালারের হয়, সে ক্ষেত্রে শাড়ি হতে পারে হেভিলি এমবেলিশড।
ব্রালেট
বেসিক লঞ্জারে। বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্লাউজের বদলে। সেলিব্রিটি আর ইনফ্লুয়েন্সার প্রাণিত লুক চাইলে শাড়ির সঙ্গে পরার জন্য জুতসই অপশন এটি। মিলবে বিভিন্ন স্টাইলে। তাই শাড়ি দিয়ে স্টাইলিংটাও সেরে নেওয়া যায় মনের মাধুরী মিশিয়ে। শিমারি, সিক্যুইনড শাড়ি যদি থাকে ওয়্যারড্রোবে, তার সঙ্গে মানাবে সলিড স্যাটিনের ব্রালেট। শাড়ির রঙের সঙ্গে মানিয়ে। অন্যদিকে প্লেইন শাড়িতে অভ্যস্ত হলে ব্রালেট বেছে নেওয়া যেতে পারে এমবেলিশড। জরি, সিক্যুইন, দপকা বা হালের ট্যাসেলড বর্ডারের ব্রালেটও চমৎকার মানাবে এর সঙ্গে। আর শাড়ি যদি হয় শিফন অথবা জর্জেটের, তাহলে তো কথাই নেই। ক্রোশের তৈরি ব্রালেট থাকতে পারে সংগ্রহে। সামারি শাড়ি লুকের জন্য চমৎকার। আর ওয়্যারড্রোবে অবশ্যই রাখতে হবে বেসিক ব্ল্যাক ব্রালেট। যেকোনো ধরনের কিংবা রঙের শাড়ির সঙ্গে সহজে টিম আপ করার সুবিধার্থে।
লং জ্যাকেট অথবা শ্রাগ
শাড়ির সঙ্গে জ্যাকেটের জোড় বেশ কয়েক বছরের পুরোনো। শীতেই বেশি জুতসই। উষ্ণতা জোগাবে, সঙ্গে তৈরি করবে স্টাইল স্টেটমেন্ট। তাই বলে গরমে যে জ্যাকেট বা শ্রাগ পরার সুযোগ নেই, তেমনটা নয়। ফ্যাব্রিক বাছাইয়ে সচেতন হলেই চলবে। ঋতুভেদে তাই শাড়ির সঙ্গে পরার জ্যাকেট বা শ্রাগ উলেন থেকে কটনের হতে পারে। তবে এটি পরতে হবে শাড়ির ওপর দিয়ে। সঙ্গে সরু-মোটা ওয়েস্ট বেল্ট বা কোমরবন্ধনী পরে নিলে তো কথাই নেই। স্লিক, সিম্পল হেয়ারস্টাইল সঙ্গে মিনিমাল অ্যাকসেসরিজেই জমে যাবে সাজ। সঙ্গে স্মোকি আইজ আর পেল লিপস। ব্যস, ফ্যাশনিস্তা লুক কমপ্লিট।
কুর্তা
লুকে ইন্দো ওয়েস্টার্ন ভাইব চাইলে শাড়ির সঙ্গে কুর্তি পরে নেওয়া যায় অনায়াসে। খাঁটি দেশীয় সাজেও কীভাবে আধুনিকা হয়ে ওঠা যায়, তারই প্রমাণ এটি। শর্ট বা লং—দুই ধরনের কুর্তাই পরে নেওয়া যাবে শাড়ির সঙ্গে। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে কুর্তার ফিটিং যেন সঠিক হয়। নইলে পুরো সাজটাই বরবাদ। আর কুর্তার সঙ্গে শাড়ির স্টাইলিংয়ে আঁচল হতে হবে লম্বা। আর অবশ্যই প্লিট করে নিয়ে সেট করতে হবে। কুর্তার সঙ্গে কোমর আরও সরু দেখাতে চাইলে বেল্ট যোগ করে নেওয়া যায়।
শার্ট
ক্ল্যাসিক বাটন ডাউন শার্টের সঙ্গে শাড়ির জোড় যেন পরিশীলতার পরিচায়ক। শাড়ি স্টাইলিংয়ে অনেক বেশি খোলামেলাভাবে অস্বস্তি হলে অনায়াসেই ব্লাউজের বদলে বেছে নেওয়া যেতে পারে শার্ট। সলিড কালারের শার্ট শাড়ির সঙ্গে সেফ অপশন। তবে শাড়ি যদি হয় মিনিমালিস্টিক, সে ক্ষেত্রে বোল্ড ডিটেইলের শার্ট কিন্তু চমৎকার দেখাবে। সে ক্ষেত্রে ড্রামাটিক স্লিভ ছাড়াও শার্ট হতে পারে হেভি এমবেলিশড। এ ছাড়া সুতির শাড়ির সঙ্গে কটন ফরমাল শার্ট পরে নেওয়া যায় অনায়াসে। অন্যদিকে সিল্কের শাড়ির সঙ্গে মানানসই হবে একটু গর্জাস, এমব্রয়ডারি করা সিল্ক, স্যাটিন বা অরগ্যাঞ্জার শার্ট। পছন্দমতো মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে নিতে হবে। বেমানান লাগবে না, ক্যারি করতে পারলে ফ্যাশন সেন্সের তারিফ করবে সবাই।
বডিস্যুট
ভার্সাটাইল এই ফ্যাশন পিস শাড়ির সঙ্গেও মানিয়ে যায় চমৎকারভাবে। যেকোনো বডিশেপের জন্য পারফেক্ট। স্প্যান্ডেক্সের মতো ফ্যাব্রিকে তৈরি হয় বডিস্যুট, যা শরীরের বাড়তি মেদ নজরের আড়াল করে দেয়। ফলে শাড়িতে দেখায় সুডৌল। বডিস্যুটের স্টাইলও রয়েছে মেলা, যেমন: কোল্ড শোল্ডার, ক্রোশে, স্লিভলেস ম্যাশ, লং স্লিভ, কাট আউট, ক্রস ওভার, কিহোল ফ্রন্ট, বেয়ার ব্যাক, লেস আপফ্রন্ট, টার্টল নেক ইত্যাদি। শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে পছন্দ অনুসারে এগুলোর যেকোনোটি বেছে নেওয়া যেতে পারে স্টাইলিংয়ের জন্য।
মডেল: মারিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ভায়োলা বাই ফারিয়া
ছবি: জিয়া উদ্দীন