সঙ্গানুষঙ্গ I গো গ্রিন
সিজন এবার সবুজের। কালার প্যালেটে সেকেন্ডারি, কিন্তু আশপাশের দমচাপা গুমোট ভাবটাকে মুহূর্তে হালকা করে দিতে পারে এই রং, তাই না?
প্রকৃতিপ্রাণিত এই রং প্রভাবিত করছে হালের ওয়াইটুকে এসথেটিকেও। ফলাফল সবুজ রঙের বিভিন্ন শেডে ছেয়ে যাচ্ছে চলতি মৌসুমের ফ্যাশন। মিন্ট থেকে সেজ কিংবা কেলি আর এভারগ্রিনের রমরমা র্যাম্প থেকে রেড কার্পেটে। নিত্যদিনের ব্যবহারে অতি সাধারণ লাইম টোট ব্যাগ থেকে শুরু করে সবুজ মাইক্রো মিনিব্যাগ—সবকিছুই জায়গা করে নিতে শুরু করেছে ফ্যাশনিস্তাদের মনে। বাদ যাচ্ছে না ফুটওয়্যারও। স্ট্র্যাপি স্যান্ডেল কিংবা চাঙ্কি বুট—সবেতেই সবুজের হাতছানি। কালার প্যালেটের অন্য রঙের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যায় বলে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের মাস্টার বলা হয় সবুজকে। তাই তো ডিজাইনারদের ডেরাতেও এ রং নিয়ে চলছে নানান নিরীক্ষা। লুই ভিতোঁ, বটেগা ভেনেটা আর শ্যানেলের সাম্প্রতিক অ্যাকসেসরিজ কালেকশনে সেই সুস্পষ্টতা। আউটফিটে পারফেক্ট পপ অব কালার চাইলে সবুজ রঙের অনুষঙ্গের যোগই যথেষ্ট।
জুতা
ক্যাজুয়াল হোক কিংবা ফরমাল—এমারেল্ড থেকে শুরু করে লাইম গ্রিন শেডের ফুটওয়্যার জায়গা করে নিচ্ছে ফ্যাশন-সচেতনদের ক্লজেটে। পিংক শু, রেড হিলস কিংবা গোল্ডেন স্যান্ডেলের সঙ্গে মানিয়ে যাওয়ার মতো অনেক আউটফিট থাকলেও স্ট্রিট স্টাইল আউটফিটের সঙ্গে গ্রিন জুতার জোড় জম্পেশ।
ডেনিমের সঙ্গে এক জোড়া গ্রিন পাম্প যদি পরে নেওয়া যায়, চমৎকার দেখাবে। এই লুক আধুনিক নারীদের পছন্দের শীর্ষে থাকার কারণ? পছন্দের যেকোনো ক্যাজুয়াল ডেনিমের সঙ্গে গ্রিন পাম্প মানিয়ে যায় খুব সহজে। চিরাচরিত মিন্ট গ্রিনের চল থেকে একটু আলাদা লুক তৈরি করতে পারে এই স্টাইল।
শিক ব্ল্যাক আউটফিটের সঙ্গে স্টাইল করা যেতে পারে গ্রিনের বেশ কয়েকটি শেডের শু। লাইম কিংবা নিয়ন গ্রিনের মতো শেডগুলো বেশ কয়েক বছর ধরে রয়েছে ফ্যাশনে। ব্ল্যাক স্কার্ট কিংবা ব্ল্যাক গাউনের পাশাপাশি ব্ল্যাক কামিজের সঙ্গেও মানানসই হতে পারে এক জোড়া গ্রিন শেডের শু। লুক দিয়ে লাইম লাইট তৈরি করতে চাইলে এই স্টাইল সেরা।
সাদা-কালোর মিশেলে তৈরি ফ্যাব্রিকের সঙ্গেও গ্রিন শু হতে পারে আদর্শ। স্ট্রাইপ কিংবা চেক, সাদা-কালো ফ্যাব্রিকের সঙ্গে গ্রিন শু খুবই স্টাইলিশ দেখায়। বো পাম্প কিংবা হাইহিল আউটফিটের ধরন বুঝে বেছে নেওয়া যেতে পারে যেকোনোটি। কালো কিংবা সাদা-কালোর সংমিশ্রণের পাশাপাশি শুধু সাদা কিংবা অফ হোয়াইট ফ্যাব্রিকের সঙ্গেও গ্রিন শু দারুণ দেখায়। ফরমাল হোয়াইট আউটফিটের সঙ্গে অনেক তারকাকেই তাই গ্রিন পাম্প বেছে নিতে দেখা যায়।
সবুজ জুতা পার্টি ওয়্যার হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে অনায়াসে। আর এগুলোর মধ্যে যদি সিকোয়েন্স, পাথর কিংবা লেইসের এমবেলিশমেন্ট থাকে, তাহলে তো কথাই নেই।
জুয়েলারি
যুগের পর যুগ পেরোলেও গ্রিন এমারেল্ড কখনোই ‘আউট অব স্টাইল’ হয়নি। অনেকেই ডায়মন্ডের চেয়েও বেশি এই গ্রিন জেমস্টোন পছন্দ করেন এর আভিজাত্যের কারণে। তবে এই জুয়েলারি স্টাইল করতে হয় খুব বুঝেশুনে। আউটফিটের মূল রঙের সঙ্গে মানিয়ে। কারণ, যেকোনো শেডের সঙ্গে এমারেল্ড মানায় না। যেমন: ধূসর প্যান্ট আর হলুদ টপ পরা হলে হলুদ হবে আউটফিটের মূল রং। তাই আউটফিটের মূল রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে এমন জুয়েলারি বেছে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কালার হুইলের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। যেমন লাল রঙের সঙ্গে এমারেল্ডের সবুজ রংটা জুতসই। তাই যেসব আউটফিটের মূল শেড লাল, সেগুলোর সঙ্গে অ্যাকসেসরিজ হিসেবে এমারেল্ড অনবদ্য। লালের অন্য শেডগুলো যেমন মেরুন অথবা লাল-নীলের মিশ্রণে তৈরি বেগুনির সঙ্গেও এমারেল্ডের স্টাইলিং চমৎকার দেখায়। নীল রঙের সঙ্গেও মানিয়ে যায় গ্রিন এমারেন্ড জুয়েলারি। তবে এমারেন্ড জুয়েলারির সেটিং যদি ইয়েলো গোল্ডের ওপর হয়, তবে আউটফিট হিসেবে মেটালিক গোল্ডেন কিংবা সিলভার আউটফিট এড়িয়ে চলাই ভালো। সবচেয়ে নিরাপদ স্টাইলিংয়ের জন্য সবুজ আউটফিটের সঙ্গে পরে নেওয়া যায় ক্ল্যাসিক এমারেল্ড। স্টাইলিং সাধারণ হলেও দেখাবে দারুণ।
ব্যাগ
যারা সবুজ শেডটি মুখের আশপাশে কিংবা পায়ে পরতে চান না, তাদের জন্য সেরা বিকল্প হতে পারে গ্রিন হ্যান্ডব্যাগ। সবুজ রংটা সর্বজনীন হলেও এমন অনেকেই আছেন, যারা এই শেডের আউটফিট পরতে পছন্দ করেন না, তবে লুকে সামান্য সবুজ যোগ করতে চান, শুধু এ রঙের হ্যান্ডব্যাগ দিয়ে স্টাইলিং সেরে নেওয়া সম্ভব। বেশি খরচ না করেই।
সে ক্ষেত্রে শুরুতেই সবুজের এমন একটি শেড বেছে নিতে হবে, যেটা কমবেশি প্রায় সব আউটফিটের সঙ্গে মানিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে গ্রাসি গ্রিন জুতসই। এই রং মানানসই মনে না হলে মিন্ট থেকে অলিভ গ্রিন—চলবে সবই।
নেভি ব্লু আর গ্রাসি গ্রিন রঙের কম্বিনেশন নজরকাড়া। সবুজের উজ্জ্বল এই শেড গাঢ় নীলের ওপর চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে। অফিসের ফরমাল লুক হিসেবে এটি হতে পারে আদর্শ। সেই সঙ্গে অ্যাকসেসরিজ হিসেবে পরে নেওয়া যায় মেটালিক গোল্ড কানের দুল। জুতার ক্ষেত্রে এক জোড়া ন্যুড নেভি ব্লু হিল, ব্যস!
ওই একই গ্রাসি গ্রিন ব্যাগ প্রতিদিনের অফিসের পাশাপাশি ব্যবহার করা যেতে পারে ছুটির দিনের আউটিংয়েও। একটা ক্যাজুয়াল ও আরামদায়ক টি-শার্টের সঙ্গে পছন্দের হাইরাইজ স্কিনি জিনস পরে নেওয়া যায়, সঙ্গে সেই সবুজ ব্যাগ। ক্লাসি ও ফাঙ্কি লুকের জন্য। অ্যাকসেসরিজ হিসেবে এক জোড়া গোল্ডেন স্টাড কানের দুল আর ব্যাঙ্গেল ব্রেসলেট পরে নিলেই চলবে। ফুটওয়্যার হিসেবে পরা যেতে পারে গাঢ় বাদামি কিংবা ধূসর রঙের বুটস।
নেভি ব্লুর মতো বার্গেন্ডির ওপরও খুব সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে এই গ্রিন ব্যাগ। বার্গেন্ডি, ওয়াইন রঙা ব্লেজার অথবা টার্টল নেক টপের সঙ্গে স্লিম অ্যাঙ্কেল লেন্থ কালো প্যান্টের জোড় দারুণ। জুয়েলারি হিসেবে পরা যেতে পারে কালো পিরামিড স্টোন নেকলেস। ব্লেজার পরলে এর ভেতর পরে নেওয়া যায় সাদা ফুলহাতা টি-শার্ট। এই আউটফিটের মধ্যমণি কিন্তু সেই গ্রিন ব্যাগ।
শিরীন অন্যা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ইন্টারনেট