তনুরাগ I উজ্জ্বলতার উৎসে
টিকটকে ট্রেন্ডি এ বিউটি টুল। মৃত ত্বককোষ সারিয়ে আপাদমস্তক মসৃণ ত্বকের জন্য
সব বয়সী মানুষের কাছে এখন দারুণ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাক। হোক তা ফ্যাশন, স্বাস্থ্য কিংবা সৌন্দর্যবিষয়ক। স্বল্প সময়ের এ ভিডিওগুলো থেকে মেলে হরেক রকম সমাধান। তাই তো টিকটক এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সম্প্রতি এ ভিডিও শেয়ারিং সাইটে ত্বকযত্নের অন্যতম ধাপ এক্সফোলিয়েশনের অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায় ভাইরাল হয়েছে। ট্রেন্ডের শীর্ষে উঠে এসেছে বিউটি টুল ‘এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভস’।
ত্বকের মৃতকোষ ঝেড়ে ফেলতে এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভসের ব্যবহারের ধারণাটি নতুন নয়। কোরিয়ান স্পাতে বহু বছর ধরে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে থাকা এই গ্লাভস ব্যবহারের বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণ। টিকটকে ‘এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভস’ সার্চ টার্মটি ১২৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন ভিউ পেয়েছে। অন্যদিকে #exfoliatingglove হ্যাশট্যাগটি পেয়েছে ৬২ মিলিয়নের বেশি ভিউ। হাজার হাজার ব্যবহারকারী তাদের নিজস্ব ভিডিও শেয়ার করে জানান দিচ্ছেন, বাজেটবান্ধব এই প্রডাক্ট শরীরের অবাঞ্ছিত মৃত চামড়া দূর করতে অন্য যেকোনো রাসায়নিক এক্সফোলিয়েটরের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।
এই গ্লাভস দেখতে অনেকটা ট্যানিং মিট কিংবা ওভেন মিটের মতো। প্রায় সব ভিডিওতেই দেখা যায়, ব্যবহারকারী পা কিংবা শরীরের কোনো অংশ বাথটাবে ভিজিয়ে নেওয়ার পর হাতে এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভস পরে কাঙ্ক্ষিত অংশের ত্বকের ওপর থেকে নিচের দিকে ঘষে নিচ্ছেন। আর সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের মৃতকোষগুলো উঠে আসছে। ব্রিটিশ বিউটি ব্র্যান্ড হানা আমারার একটি টিকটক ভিডিওতে, যেখানে তাদের নিজেদের এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভস ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে ভিউ ছিল ৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন। ভিডিওটিতে শুধু গ্লাভসটির কার্যকারিতার চাক্ষুষ প্রমাণই মেলেনি, সেই সঙ্গে দেখানো হয়েছে কেরাটোসিস পিলারিস আক্রান্ত ত্বকের শুষ্ক ও রুক্ষ ভাব খুব সহজে কীভাবে সারিয়ে তোলা যায় এর মাধ্যমে।
সাধারণত, ত্বককে এক্সফোলিয়েট করার দুটি উপায় রয়েছে। রাসায়নিকভাবে টপিক্যাল অ্যাসিডের মাধ্যমে অথবা স্পঞ্জ বা ব্রাশের মতো সরঞ্জাম দিয়ে স্ক্রাবিংয়ের মাধ্যমে। এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভসগুলো এমন কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়, যা মৃদু ঘর্ষণের মাধ্যমেই ত্বকের মৃতকোষগুলো ফেলে দিতে পারে। সাধারণত এ ধরনের কটনের সঙ্গে পলিয়েস্টার কিংবা সিনথেটিক কাপড় মিলিয়ে এমন গ্লাভস তৈরি হয়। এপিডার্মিস থেকে কার্যকরভাবে ত্বকের মৃতকোষগুলোর স্তর সরিয়ে ফেলার জন্য এগুলো ডিজাইন করা হয়েছে। এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভসগুলো সাধারণত প্রসারিত হতে পারে; তাই যেকোনো আকার বা আকৃতির হাতে এগুলো আঁটসাঁট হয়ে বসে যায়। ফলে খুব সহজেই শরীরের এমন সব অংশ এক্সফোলিয়েট করা যায়, যেখানে নাগাল পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। যেমন কাঁধ, পিঠ, গোড়ালি, বিকিনি এরিয়া কিংবা পায়ের আঙুলের মাঝের স্থানগুলো। মোটকথা, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শরীরের এক্সফোলিয়েশন সহজ, দ্রুত এবং ঝামেলামুক্ত করতে এই গ্লাভসের জুড়ি নেই। আন্তর্জাতিক কসমেটিক ডার্মাটোলজিস্ট হাওয়ার্ড সোবেলের মতে, এর কার্যকারিতা ড্রাই রাব স্পা ট্রিটমেন্টের মতোই। পার্থক্য শুধু এটাই যে ত্বকের যত্নের এই প্রক্রিয়া বাড়িতেই সেরে নেওয়া যায়। এমনকি তিনি এই প্রক্রিয়ায় গ্লাভসের সঙ্গে শাওয়ার জেল কিংবা ক্লিনজার ব্যবহার করার পরামর্শও দেন, যাতে একই সঙ্গে ত্বকের ক্লিনজিং ও এক্সফোলিয়েশনের কাজ হয়ে যায়। এ ছাড়া এমনটা করলে এক্সফোলিয়েশনের সঙ্গে সঙ্গেই শাওয়ার জেল তার ময়শ্চার দিয়ে ত্বককে আর্দ্র করে তুলবে।
আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির মতে, এ ধরনের এক্সফোলিয়েটিং সবার জন্য সঠিক না-ও হতে পারে। যারা এমন কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ বা স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করেন, যেগুলো ত্বককে শুষ্ক ও সংবেদনশীল করে দেয়, তাদের এই গ্লাভস এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। কারণ, এর ফলে ত্বকের শুষ্কতা আরও বেড়ে যেতে পারে এবং ত্বকে অ্যাকনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর যদি ত্বক আগে থেকে অ্যাকনেপ্রবণ হয়ে থাকে, তাহলে এর ব্যবহারে সাবধানী হওয়া প্রয়োজন। যাদের স্কিনটোন খুব বেশি গাঢ়, তাদের ক্ষেত্রেও এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভসের ব্যবহার সীমিত রাখার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কেননা এর ফলে ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ পড়তে পারে। যেকোনো ধরনের ত্বকের জন্যই অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েশন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ত্বক খুব বেশি এক্সফোলিয়েট করলে ত্বকের বাহ্যিক স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অতিক্ষুদ্র ফাটল ধরতে শুরু করে ত্বকে। এতে ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া ত্বকের ভেতরে অবাধে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যায়, যা পরে ত্বকে প্রদাহ এবং লালচে ভাব সৃষ্টি করে। তাই চেষ্টা করতে হবে এই গ্লাভস বাথরুমে না রেখে আলমারি বা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রাখার। গোসলের সময় এটা বারবার চোখের সামনে থাকলে প্রতিবারই এক্সফোলিয়েট করার ইচ্ছা জাগতে পারে। আর শুকনো স্থানে রাখলে গ্লাভসও ভালো থাকবে অনেক দিন। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য সপ্তাহে এক থেকে দুবার এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভসের ব্যবহার যথেষ্ট।
যতক্ষণ পর্যন্ত এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভসের অতিরিক্ত ব্যবহার না হচ্ছে, ততক্ষণ এটি ত্বকের কোনো ক্ষতি করবে না। তাই স্কিন কেয়ার রুটিনে এর অন্তর্ভুক্তি জরুরি। এর জন্য খুব বেশি খরচও করতে হবে না। এরিডওয়্যার, আমাজনের সবচেয়ে জনপ্রিয় এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভসগুলোর মধ্যে একটি, যার ৪ দশমিক ৫ স্টার রেটিং এবং ১৫ হাজারের বেশি রিভিউ রয়েছে। এই গ্লাভসের ২ জোড়া মিলবে মাত্র ১৪ ডলারে। তবে দামি এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভস যে বাজারে নেই এমনটা নয়। যেমন ইলিউমের একেকটি গ্লাভসের দাম পড়বে ২২ ডলার। তাই বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়া যাবে যেকোনোটি। মিনিসো, দারাজ, সাজগোজ কিংবা দ্য মল বিডির ওয়েবসাইটেও মিলবে এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভসের অসংখ্য বিকল্প। পাশাপাশি এমন অনেক অনলাইন শপ রয়েছে, যারা পছন্দের এক্সফোলিয়েটিং গ্লাভস এনে দিতে পারবে বাইরের যেকোনো দেশ থেকে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যদি ত্বক খুব বেশি অ্যাকনেপ্রবণ কিংবা সংবেদনশীল হয়, তাহলে এর ব্যবহারের আগে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ জরুরি।
শিরীন অন্যা
মডেল: তাসনিম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন