কভারস্টোরি I মেকআপ মাল্টিটাস্কিং
সময়োপযোগী সেরা কৌশল। সাজতে বেলা পেরিয়ে যাবে না; বরং ব্যস্ততায় বাড়তি হ্যাপা কমবে অনেকখানি। সেরে নেওয়া যাবে স্বল্প সৌন্দর্যপণ্যে। তাই সাশ্রয়ী বটে। থাকছে এক্সপেরিমেন্টেশনেরও সুযোগ। আর কী চাই? বিস্তারিত জাহেরা শিরীনের লেখায়
২০১৪। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মার্কেট ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি মিনটেল জরিপ চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সৌন্দর্যসচেতন নারীদের নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশ নারী মাল্টিফাংশনাল লিপ প্রডাক্টের প্রতি আগ্রহ দেখান, আর ৬৫ শতাংশ নারী কৌতূহল প্রকাশ করেন মাল্টিফাংশনাল ফেশিয়াল কাভারেজ প্রডাক্টে। জরিপে দেখা যায়, সেখানকার মানুষ মনে করেন, মেকআপ মাল্টিটাস্কিংয়ের মাধ্যমে যেমন সাশ্রয় সম্ভব, তেমনি সময়ও বাঁচানো যাবে অনেকখানি। সেই শুরু। তারপর থেকে সৌন্দর্যসচেতনদের মাঝে চর্চা বাড়ে মেকআপ মাল্টিটাস্কিংয়ে। বিউটি ব্র্যান্ডগুলোও তৈরি করতে শুরু করে মাল্টিটাস্কিং প্রডাক্ট। ডাবল ডিউটি, অনেক সময় ট্রিপল ডিউটির এসব মেকআপ প্রডাক্টের বাজারও হয়ে ওঠে রমরমা। বিউটি আর্টিস্ট থেকে বিউটিউবার আর ইনফ্লুয়েন্সাররা তো বটেই, বিশ্বখ্যাত তারকাদেরও মেকআপ মাল্টিটাস্কিংয়ে ঝোঁক বাড়ে প্রতিনিয়ত। নিত্যনতুন কৌশল নিয়ে নিরীক্ষার খবর আর সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টেই মেলে তার প্রমাণ। যা দেখে অনুপ্রাণিত হন সাধারণ সৌন্দর্যসচেতনেরাও। ফলাফল, এ বছরের বিউটি ট্রেন্ডের শীর্ষ স্থান এর দখলে।
সময়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এ বিউটি ট্রেন্ড সেরে নেওয়া যায় সহজেই। সময়টাও লাগে একদম কম। খুব বেশি মেকআপ প্রডাক্টেরও প্রয়োজন পড়ে না। কারণ, মেকআপ মাল্টিটাস্কিং ট্রেন্ডের মূলমন্ত্রই হচ্ছে বিভিন্ন উপায়ে একটি সৌন্দর্যপণ্যের ব্যবহার। এ ছাড়া সুবিধা রয়েছে মেলা—
মেকআপ মাল্টিটাস্কিং ট্রেন্ডে মূলত একই মেকআপ প্রডাক্ট বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। ফলে সাজ সারতে বেশি পণ্যের প্রয়োজন পড়ে না। তাই খরচটাও কমে যায় অনেকখানি।
হুটহাট চিন্তা না করেই মেকআপ কিনে ফেলার ঝোঁক দেখা যায় অনেকের মধ্যে। ফলাফল—অব্যবহৃত মেকআপ প্রডাক্ট জমতে শুরু করে। যা দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায় একসময়। মাল্টিটাস্কিংয়ের ফলে এর আশঙ্কা এড়ানো যায় অনেকখানি।
মেকআপ কালার ম্যাচ করার কাজ অনেক সহজ করে দেয় এ প্রক্রিয়া। শুধু জানতে হবে সঠিক কৌশল।
কাস্টমাইজড কালার তৈরি করে নেওয়া যায় অনায়াসে। নিরীক্ষারও সুযোগ মেলে রং নিয়ে। কারণ, মাল্টিটাস্কিংয়ের মাধ্যমে আইশ্যাডোকে মেখে নেওয়া যায় ঠোঁটে, আবার ঠোঁটের রং চড়িয়ে নেওয়া যায় মুখত্বকে। এমন নানা অভিনব কৌশল এক্সপেরিমেন্টেশনের কারণে সাজে রঙের কখনো কমতি হয় না।
ম্যাজিকই বটে মাল্টিটাস্কিং। কিন্তু মূলমন্ত্রগুলো তো জানা থাকতে হবে। তবেই বক্সে থাকা প্রতিটি প্রডাক্টের সদ্ব্যবহার সম্ভব।
প্রাইম টাইম
ত্বকের দৃশ্যমান লোমকূপগুলো ভরাট কিংবা মিনিমাইজের মাধ্যমে গায়েব করে দেওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা আছে মেকআপ প্রাইমারের। সেই সঙ্গে ত্বকে মেকআপের দীর্ঘস্থায়িত্ব বাড়ানো তো থাকছেই। ত্বকের আর্দ্রতার সামান্যতম হেরফের না করে দিনভর নিখুঁত দেখাতে মেকআপপ্রেমীদের বিউটি বক্সে প্রাইমার মাস্ট হ্যাভ আইটেম। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, মেকআপ মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য দুর্দান্ত এর পারফরম্যান্স। যেকোনো ফেস প্রাইমার আইশ্যাডো প্রাইমার হিসেবে দারুণ কার্যকর; আই মেকআপকে আরও নজরকাড়া করে তোলার পাশাপাশি দিনভর টিকিয়ে রাখার জন্য। এ ছাড়া এই এক ফেস প্রাইমার ব্যবহৃত হতে পারে ঠোঁটেও। লিপস্টিকের নিচে; যা লিপস্টিকের ফাটা ফাটা লুক রোধ করে দেবে ভেলভেটি টেক্সচার। এ ছাড়া আই মেকআপ সারার পর বাড়তি যে ফলআউট জমা হয় ত্বকে, তা দূর করতেও প্রাইমারের জুড়ি নেই। প্রথমে ফ্লাফি ব্রাশ দিয়ে ঝেড়ে নিতে হবে শ্যাডো। তারপর ফাউন্ডেশন ব্রাশ প্রাইমারে আলতো করে ডুবিয়ে নিয়ে চোখের নিচে আলতো বুলিয়ে নিতে হবে। ব্যস, বেজ আবার আগের মতো পারফেক্ট দেখাবে। অনেক সময় আইলাইনারের বাইরের কোণ সূক্ষ্ম না হয়ে লেপ্টে যায়। সে ক্ষেত্রে কটন বাড বা কনসিলার ব্রাশে প্রাইমার মাখিয়ে লাইন মুছে মুছে সূক্ষ্ম করে নেওয়া যায়। ঠোঁটে লিপস্টিক মাখতে ভুল হয়ে গেলেও লাইন ঠিকঠাক করে নিতে রিমুভার নয়, ব্যবহার করা যাবে প্রাইমার। এতে মুখত্বকের অন্য মেকআপগুলো ঘেঁটে যাবে না। ফ্রিজি হেয়ার আর উড়ো উষ্কখুষ্ক চুল বশে আনতেও প্রাইমার কিন্তু খুব কাজের। আঙুলের ডগায় অল্প পরিমাণে নিয়ে ঘষে তারপর মেখে নিতে হবে সমস্যাযুক্ত স্থানে। এ ছাড়া ফুল কাভারেজ ফাউন্ডেশনকে সামার ফ্রেন্ডলি করে তুলতে এতে কয়েক ফোঁটা প্রাইমার মিশিয়ে নেওয়া যায়; যা শিয়ার, ট্রান্সলুসেন্ট ইফেক্ট দেবে ত্বকে। এ ছাড়া আইশ্যাডোকে ক্রিমি টেক্সচার দিতে চাইলে প্রাইমারের চেয়ে ভালো অপশন আর হয় না। সেই সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ীও হবে চোখের পাতায়। জেল আইলাইনার শুকিয়ে গেলে এতে সামান্য প্রাইমার মিশিয়ে নিলেই হয়ে উঠবে একদম নতুন।
ফাউন্ডেশন ফ্যাক্ট
কনসিলার হিসেবে কিন্তু দারুণ কাজ করে ফাউন্ডেশন। তবে লেয়ার করে নিতে হবে ডিটেইল ফেস ব্রাশ দিয়ে। ফুল কাভারেজ ফাউন্ডেশনটাই এ ক্ষেত্রে ভালো অপশন। তবে শক্তিশালী পিগমেন্টেড লাইট টেক্সচারের ফাউন্ডেশন দিয়ে আরও ফ্ললেস দেখাবে ত্বক। লাইট মেকআপ করার সময় অথবা নো মেকআপ মেকআপ লুকে স্পট কনসিলিং অর্থাৎ দাগছোপ ঢাকতে ফাউন্ডেশনের বাড়তি পরত ত্বককে করে তুলবে নিখুঁত। ফুল অন কাভারেজের বিকল্প হিসেবে একদম ফ্রেশ ফেসড এ লুক স্বাভাবিকভাবে সুন্দর দেখাতে সাহায্য করবে যে কাউকে। ফাউন্ডেশন কেনায় ভুল হয়ে গেছে? ম্যাচ হয়নি শেড? তাতে কী! দেদার ব্যবহার করে নেওয়া যাবে। তবে পাল্টাতে হবে কৌশল। ফাউন্ডেশনের শেড ডার্ক হয়ে গেলে তা দিয়ে সেরে নেওয়া যাবে কনট্যুরিং। এমনকি ব্রোঞ্জিংও। আর খুব হালকা শেডের ফাউন্ডেশন যদি কেনা হয়ে যায়, তা ব্যবহার করা যাবে স্কিন হাইলাইট করার জন্য।
ট্রাই ট্রান্সলুসেন্ট
মাল্টিটাস্কিংয়ে এই মেকআপ প্রডাক্টও কম যায় না। আইশ্যাডো মনের মতো ব্লেন্ড হচ্ছে না? সে ক্ষেত্রে চোখের পাতায় ফ্লাফি ব্রাশ দিয়ে ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার ব্লেন্ড করে নিতে হবে প্রথমে। তারপর আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেশনের কাজ সহজ হয়ে যাবে। দ্রুত এবং মসৃণভাবে মিশে যাবে ত্বকে। ব্লাশন যদি বেশি হয়ে যায় মুখে, মোটেও ভালো দেখাবে না। সে ক্ষেত্রে বড় ব্লেন্ডিং ব্রাশ দিয়ে সামান্য পাউডার ব্লেন্ড করে নিলেই চলবে। ব্লাশনের রং হালকা করে নিতে। একইভাবে কনট্যুর, ব্রোঞ্জার আর হাইলাইটার হালকা করতেও দারুণ কার্যকর এই টেকনিক। অন্যদিকে কোনো লিপস্টিকের রং খুব পছন্দ হয়েছে, কিন্তু ফিনিশটা ক্রিমি হওয়ায় কেনা যাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রেও সমাধান এই পাউডার। লিপস্টিক ম্যাটিফাইয়ার হিসেবে চমৎকার। তবে অনেক বেশি মেখে ফেলা যাবে না। আঙুলে সামান্য মাখিয়ে আলতো করে বুলিয়ে নিতে হবে লিপস্টিকের ওপর। কাঙ্ক্ষিত ফিনিশ পাওয়া পর্যন্ত। ড্রাই শ্যাম্পু হিসেবেও কিন্তু ব্যবহার করা যায় ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার। চুলের গোড়ায় ছড়িয়ে দিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ট্রান্সলুসেন্ট হওয়ায় চুলে সাদা পাউডারি ভাব রয়ে যাবে না, বরং মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তেলে ভাব শুষে নেবে। দেওয়ার কিছুক্ষণ পর চুল উল্টে-পাল্টে ব্রাশ করে নিতে হবে। এতে করে অতিরিক্ত পাউডার ঝরে পড়ে যাবে। মেকআপ ব্রাশ পরিষ্কার করে নেওয়া যায় ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার দিয়ে। অবিশ্বাস্য হলেও ব্যাপারটা সত্য। মেকআপের সময় একই ব্রাশ দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন রং ব্যবহার করতে চাইলে এর থেকে ভালো সমাধান আর হয় না। একটা রং ব্যবহারের পর অন্য রং ব্যবহারের আগে ব্রাশটা পাউডারে বুলিয়ে নিয়ে টিস্যু দিয়ে মুছে নিতে হবে। এতে পিগমেন্ট বের হয়ে যাবে ব্রাশ থেকে। পরবর্তী রং ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠবে ব্রাশ।
আইশ্যাডো অ্যাকশন
আইব্রাও পাউডার হিসেবে মেখে নেওয়া যায় ভ্রু জোড়ায়। তবে অবশ্যই আইব্রাওয়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে। ব্রাউনটাই বেশি ব্যবহৃত হয়, তবে চলতে পারে প্যালেটের কালো শেডগুলোও। এ ছাড়া হাইলাইটার, কনট্যুর, ব্লাশ এবং ব্রোঞ্জার হিসেবেও জুতসই এটি। তবে আইশ্যাডোর রং যেহেতু বেশি পিগমেন্টেড হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যবহারের আগে নিরীক্ষা জরুরি। এ ক্ষেত্রে হাত দিয়ে অ্যাপ্লাই করার পক্ষপাতী মেকআপ আর্টিস্টরা। ঠোঁটেও চড়ানো যায় আইশ্যাডো রং। আঙুলে আইশ্যাডো মাখিয়ে ঠোঁটে অ্যাপ্লাই করে নিতে হবে। তবে এর আগে লিপবাম দিয়ে নেওয়া বাধ্যতামূলক। ঠোঁটে আইশ্যাডো মাখানোর পর গ্লসও অ্যাপ্লাই করে নেওয়া যায়।
লিপস্টিক লাক
হাতের কাছে এই একটা প্রডাক্ট থাকলে সাজের অনেক কাজই অনায়াসে করে নেওয়া সম্ভব। বিউটি বক্সে ব্রাউন লিপস্টিক থাকলে সেটা ব্যবহার করা যাবে কনট্যুরিংয়ে। সে ক্ষেত্রে লিপস্টিক হতে হবে ক্রিমি ফর্মুলার। আর কনট্যুরিং সেরে পাউডার দিয়ে সেট করে নিতে হবে। একইভাবে অরেঞ্জ লিপস্টিক ব্যবহার করা যাবে কালার কারেকশনে। চোখের নিচে আর মুখের চারপাশের পিগমেন্টেশন ঢেকে, নিখুঁত মুখত্বকের জন্য। আর ব্লাশন হিসেবে লিপস্টিকের ব্যবহার তো বেশ অনেক সময় ধরেই জনপ্রিয়। পিঙ্ক, মভ, পিচ রঙের লিপস্টিকগুলোই ব্লাশন হিসেবে ব্যবহারের জন্য বেশি মানানসই। আইশ্যাডো হিসেবেও চলতে পারে চোখের পাতায়। তবে সে ক্ষেত্রে ত্বক তেলে হলে চলবে না। আর লিকুইড লিপস্টিক দিয়ে আইলাইন করে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা আই সেফ কি না, সেটা যাচাই করে নিতে হবে আগে।
মেকআপ মাল্টিটাস্কিংয়ে মেতেছেন বিশ্বখ্যাত তারকারাও। হাইএন্ড মেকআপ প্রডাক্ট কেনার সামর্থ্য থাকলেও বিউটি প্রডাক্ট ডাবলিং এমনকি ট্রিপলিং করায় কম যান না এই এ-লিস্টাররা; যা প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে তাদের ভক্তদের।
জিজি হাদিদ
পারফেক্ট ন্যুড লিপস্টিকের খোঁজ মিলতে পারে এই সুপারমডেলের কাছে। ডব্লিউ ম্যাগাজিনের সঙ্গে সেই ট্রিকটাই শেয়ার করেছিলেন জিজি। ন্যুড লিপস্টিকপ্রেমী হিসেবে পরিচিত এই তারকা পারফেক্ট শেডের জন্য ঠোঁটে পরে নেন মেবলিন ব্র্যান্ডের ২৪ হাওয়ার কনসিলার। ত্বকরঙের সঙ্গে মিলিয়ে শেড বেছে নিয়ে। জিজি যখন স্কুলে, তখন ঠোঁটের কালচে ভাব ঢাকতেই প্রথম বেছে নিয়েছিলেন এ কৌশল, যা এখন অব্দি কাজে লাগাচ্ছেন এ তারকা।
কাইলি জেনার
কুইন অব লিপস হিসেবে সুপরিচিত এ তারকা। বিশ্বখ্যাত তার নিজস্ব ব্র্যান্ডের লিপস্টিক লাইনও। তাই লিপস্টিক ব্যবহারের সেরা ট্রিক জানতে কাইলির চেয়ে ভালো অপশন আর কেউ কি হতে পারে? তার এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টের বরাতে জানা যায়, মেকআপের মাল্টিটাস্কিংয়ে কম যান না কাইলি। একসময় কালো আইলাইনার অনায়াসেই মেখে নিতেন ঠোঁটে। ম্যাট ব্ল্যাক লিপস্টিকের ডিউপ হিসেবে। কারণ, এ রং খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। পরে কাইলির কালো লিপস্টিকপ্রীতির প্রমাণ মেলে আবার। লঞ্চ করেন তার নিজস্ব ম্যাট ব্ল্যাক লিপস্টিক, ডেড অব নাইট লিপ কিটে।
কেন্ডেল জেনার
ব্রোঞ্জ শেডের আইশ্যাডোর অভাব বিউটি বক্সে? পারফেক্ট বিউটি হ্যাক রয়েছে সুপারমডেল কেন্ডেলের কাছে। ভোগের ভিডিওর বরাতে জানা গেছে সেই গোপন সূত্র। পারফেক্ট গোল্ডেন আই লুকের জন্য আইশ্যাডো নয়, ব্রোঞ্জারেই ভরসা তার। গালে ও গলায় ফ্লাফি ব্রাশ দিয়ে ব্রোঞ্জার অ্যাপ্লাই করার পর আইলিডেও মেখে নেন পর্যাপ্ত পরিমাণে; যা বাড়তি উষ্ণতা যোগ করে সাজে।
বিয়ন্সে
বিশ্বখ্যাত এ সংগীতশিল্পীও মেকআপ মাল্টিটাস্কিংয়ের দারুণ অনুরক্ত। এ ক্ষেত্রে তার পছন্দের পণ্য লিপবাম। তবে সে ক্ষেত্রে স্মিথ রোজবাড স্যালভে একমাত্র পছন্দ। নীল কৌটায় পোরা এ লিপবাম বিয়ন্সে ব্যবহার করেন লিপস্টিকের সঙ্গে। এ ছাড়া মাসকারার বিকল্প হিসেবেও। আইল্যাশে পর্যাপ্ত পরিমাণে বাম মাখিয়ে কার্ল করে নেন ল্যাশ কার্লার দিয়ে। ন্যাচারাল মাসকারার মতো কাজ করে বাম। চকচকে উজ্জ্বল দেখায় চোখের পাতা।
এমি রোজাম
আমেরিকান এই অভিনেত্রী লিপস্টিক ব্যবহার করেন হাইলাইটার হিসেবে। ঘটনা একদম সত্য! যেনতেন লিপস্টিকে কাজ হবে না কিন্তু। এমির পরামর্শ অয়েল বেসড লিপস্টিক ব্যবহারের। তিনি ব্যবহার করেন বার্টস বি এর জোজোবা অয়েল লিপস্টিক। বুলিয়ে নেন চিকবোন, নোজব্রিজ আর কিউপিডস বো-তে। একদম ত্বকের হাইলাইট করা অংশগুলোতে। ত্বকে শিশিরসিক্ত, ঘর্মাক্ত একটা লুক দেয় এই টেকনিক, যা জনপ্রিয় তারকা জেন্ডায়ারও খুব পছন্দ। এ ক্ষেত্রে এমির পরামর্শ জোজোবা অয়েলযুক্ত লিপস্টিকগুলো বেছে নেওয়ার। এতে ত্বকের ক্ষতি হবে না, বরং পরিপুষ্ট দেখাবে। দেখাবে আর্দ্র।
সেলেনা গোমেজ
আমেরিকান সুইটহার্ট খ্যাত সেলেনা গোমেজও কম যান না মেকআপ মাল্টিটাস্কিংয়ে। মেকআপ আর্টিস্ট হাং ভ্যানগো থেকে আয়ও করেছেন দারুণ এক ট্রিক। হাইলাইটার শুধু চিকবোন আর কিউপিডস বো-তে নয়, ব্যবহার করেন আইলিডেও। আইশ্যাডোর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় চোখের সাজকে আরও বেশি নজরকাড়া করে তুলতে সহায়তা করে এই টেকনিক। পুরো চেহারায় বাড়তি ঔজ্জ্বল্য যোগ করার জন্য।
জেসিকা আলবা
ব্যক্তিগত মেকআপ আর্টিস্ট ড্যানিয়েল মার্টিনের বদৌলতে খোদ এই তারকা বুঝতে শিখেছেন মাল্টিটাস্কিং মেকআপের ম্যাজিক। আইলাইনারের বদলে মাসকারা দিয়েও যে কিলার ক্যাট লাইন এঁকে নেওয়া যায়, আলবাকে তা-ই শিখিয়ে দিয়েছেন ড্যানিয়েল। এ জন্য খুব বেশি হ্যাপাও পোহাতে হয় না। শুধু হাতের কাছে থাকতে হবে একটা ছোট আর্ট ব্রাশ, যা মাসকারার টিউবের মধ্যে পুরে নেওয়া যাবে সহজে। লাইনটাও এঁকে নেওয়া যাবে ঝক্কি ছাড়া।
অ্যালিসন ব্রি
ত্বকযত্নের পণ্য দিয়ে যদি মেকআপ সেরে নেওয়া যায়, মন্দ হয় না কিন্তু! নিয়মিত তাই-ই করেন আমেরিকান এই অভিনেত্রী। ট্রিকটা অবশ্য তার ব্যক্তিগত মেকআপ আর্টিস্ট কুইন মারফি থেকে শেখা। ফেস অয়েলকে হাইলাইটার হিসেবে ব্যবহারের অভিনব এ টেকনিক প্রতিদিন মেকআপ করার কাজটা যেমন সহজ করে দেয়, ত্বককেও রাখে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। সাধারণত ন্যাচারাল অয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন অ্যালিসনের মেকআপ আর্টিস্ট। চিকবোন, কিউপিডস বো-তে চেপে চেপে মেখে নেওয়া হয় এ তেল। একদম ন্যাচারাল, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য।
লিন্ডসে লোহান
‘লিপস্টিক আমার খুব পছন্দ। তবে একে ব্লাশন হিসেবে ব্যবহার করতে আরও বেশি ভালোবাসি’—এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। এ বক্তব্যেই সুস্পষ্ট মেকআপ মাল্টিটাস্কিংয়ে তার ঝোঁক। সাধারণত ক্রিমি লিপস্টিককেই ব্লাশন হিসেবে ব্যবহার করেন লোহান। আবার ক্রিমি ব্লাশনকে লিপস্টিক হিসেবেও মেখে নেন ঠোঁটে। তবে লিপস্টিকের এমন ব্যবহারে ত্বকে ব্রেকআউটের আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই বলে কি থেমে যাবেন লোহান? একদমই নয়; বরং তার নতুন মেকআপ লাইনের জন্য তৈরি করেছেন টু ইন ওয়ান প্রডাক্ট; যা লিপস্টিক ও ব্লাশন—দুভাবেই ব্যবহারের উপযোগী।
ম্যান্ডি মুর
চুলের উড়ো ভাব দূর করতে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর মেনে চলা গো-টু-টিপ সামনে এসেছিল এক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। ডিসপোজেবল মাসকারা ওয়ান্ড ব্যবহারের এমনতর উপায় শুনে সৌন্দর্যবিশ্বের বিস্ময় ছিল দেখার মতো। তবে যে মাসকারা ব্যবহার করা হচ্ছে, তার ওয়ান্ড ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহার করতে হবে পুরোনো মাসকারার ওয়ান্ড। মিনি কম্ব হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী হওয়ায় এটি দিয়ে সহজেই সেট করে নেওয়া যাবে এলোমেলো হয়ে থাকা ছোট ছোট চুল। হেয়ারস্টাইলিং সেরে নেওয়ার পর সামনের দিকের যে চুল কোনোভাবেই বশে আনা যায় না, সেগুলো সেট করার দারুণ উপায় এটি।
মডেল: ইফা ও আয়শা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: আলমিরা ও মুক্তা
ছবি: হাদী উদ্দীন