নখদর্পণ I সানস্ক্রিনের সুরক্ষা
জেল ম্যানিকিউরে মাস্ট। নখের ভঙ্গুর ভাব কিংবা হলদেটে ছোপ ছাড়াও হাতের ত্বকের অকালবার্ধক্য রুখে দিতে
সানস্ক্রিন! সে তো ত্বকের জন্য। সূর্যালোকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে। ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী শতকরা ৭৭ শতাংশ মানুষ সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। ১১ শতাংশ মানুষের প্রতিদিনকার রূপরুটিনে থাকে প্রয়োজনীয় এ সৌন্দর্যপণ্য। আর বাকিরা সানস্ক্রিনের গুরুত্ব সম্পর্কে এখনো অসচেতন।
সম্প্রতি আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির বরাতে জানা গেছে, জেল ম্যানিকিউর করার আগে হাত ও নখে সানস্ক্রিন মেখে নেওয়া দরকার। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সানব্লক ব্যবহারেই এখনো অনেক মানুষের অনীহা, তবু সৌন্দর্যপ্রেমীরা অন্তত এ ব্যাপারে সচেতন থাকবেন বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।
জেল নেইলপলিশের প্রক্রিয়া চলাকালীন বেশ কয়েকবার ধাপে ধাপে ইউভি রশ্মি ব্যবহার করা হয়, তাই সম্ভাব্য ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রেখে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
জেল ম্যানিকিউর কখনো দুই, আবার কখনো তিন সপ্তাহ অব্দি স্থায়ী হয়। টানা দু-তিন সপ্তাহ হাত থাকে সুন্দর এবং কোনো অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা ছাড়াই নখ দেখায় আকর্ষণীয়। তাই এটি করানোর আগে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত হয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।
জেল ম্যানিকিউরে ঝুঁকি
আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি অনুসারে, জেল ম্যানিকিউরের ফলে নখের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি এবং ফাটল সৃষ্টি হতে পারে। বারবার এ ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলে হাতের ত্বক বুড়িয়ে যেতে শুরু করে সময়ের আগে। আশঙ্কা বাড়তে পারে স্কিন ক্যানসারেরও। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এটি নখ দুর্বল করার পাশাপাশি নখে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের হার বাড়ায়।
জেল নেইলপলিশ শক্ত করতে ব্যবহৃত ইউভি এবং এলইডি আলো হাতের জন্য মিনি ট্যানিং বেডের মতো। ট্যানিং বেড এবং জেল ম্যানিকিউর উভয়ের মধ্যেই উচ্চ মাত্রার ইউভিএ রেডিয়েশন রয়েছে, যা ত্বকের ক্যানসারের কারণ হতে পারে। তবে জেল ম্যানিকিউরের যন্ত্র থেকে কম মাত্রার ইউভিএ রশ্মি নির্গত হওয়ায় এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এই রশ্মিগুলো বারবার ব্যবহারের ফলে হাতের ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ত্বককে পাতলা করে দিতে পারে। ফলে বলিরেখা ও পিগমেন্টেশন হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে এই রশ্মির ব্যবহারে এই ঝুঁকিগুলো বাড়তে থাকবে।
রশ্মি থেকে রক্ষায়
আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজিস্টের ওয়েবসাইটেই মিলবে এর সমাধান। সুরক্ষিত থাকতে, জেল নেইলপলিশের প্রক্রিয়া শুরুর আগে ৩০ বা তার বেশি এসপিএফ যুক্ত ব্রড স্পেকট্রাম, ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। নখে জেল নেইলপলিশ সেট করার জন্য ব্যবহৃত অতিবেগুনি রশ্মি থেকে এটি ত্বক রক্ষায় সাহায্য করবে।
ম্যানিকিউরিস্ট লোশনের পরিবর্তে বেশি এসপিএফ যুক্ত এ সানস্ক্রিন ব্যবহারে জেল নেইলপলিশ প্রক্রিয়ার ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
তা ছাড়া ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষা পেতে অ্যান্টি-ইউভি গ্লাভসও পরে নেওয়া যায়। এ ধরনের গ্লাভসে আঙুলের ডগা ছাড়া সবকিছু ঢেকে থাকে বলে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা পায় হাতের ত্বক। এ ছাড়া যারা নিয়মিত জেল নেইলপলিশ অ্যাপ্লাই করে থাকেন, তাদের ওর্যাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নেওয়ার পরামর্শ দেন অনেক ত্বক বিশেষজ্ঞ। এতে ত্বকের ওপর বাড়তি সুরক্ষা স্তর তৈরি হয়।
তাই পরবর্তী জেল ম্যানিকিউর অ্যাপয়েন্টমেন্টে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন সঙ্গে নিয়ে যেতে ভোলা যাবে না একদম। পুরো প্রক্রিয়াকে মাত্র সেকেন্ডেই সুরক্ষিত করে তোলার জন্য।
স্বর্ণা রায়
ছবি: ইন্টারনেট