ত্বকতত্ত্ব I সিঙ্কলেস স্কিন কেয়ার
সে-ও সম্ভব। যদি জানা থাকে সঠিক প্রক্রিয়া। আর প্রয়োজন পড়বে গুটিকয়েক সৌন্দর্যপণ্য। ব্যস!
মাঝেমধ্যে এমনটা হয়। সারা দিনের ক্লান্তি শরীরে এমনভাবে জেঁকে বসে যে ত্বকের যত্নের কথা ভেবে সিঙ্কের ধারেকাছেও ঘেঁষতে ইচ্ছা করে না। আবার অনেক সময় বন্ধুদের সঙ্গে ব্যাকপ্যাক ট্রিপে হয়তো দুদিন ধরে সিঙ্কের দেখাই মেলে না! কিংবা কখনো হয়তো বাইরে ঝুম বৃষ্টি দেখে বিছানায় পড়ে থাকার লোভ সামলানো যায় না। এমন সব পরিস্থিতিতে ত্বককে ভুক্তভোগী না বানানোর প্রয়াসেই ‘সিঙ্কলেস স্কিনকেয়ার রুটিন’-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
বর্তমানে বাজারে এমন অনেক স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট রয়েছে, যেগুলোর ব্যবহারে পানির প্রয়োজন হয় না। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এগুলোর ব্যবহার পানির সাহায্যে করা স্কিনকেয়ার রুটিনের চেয়েও বেশি সহজ ও কার্যকর হতে পারে। এসব প্রডাক্টের মধ্যে ওয়েট ওয়াইপস, মাইসেলার ওয়াটার এবং ফেশিয়াল সেরামের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। কেননা এগুলো দিনের যেকোনো সময় এবং যেকোনো জায়গায় বসে ব্যবহার করা যায়। আর ধাপে ধাপে সাজানো যায় সিঙ্কলেস স্কিনকেয়ার রুটিন।
সাজসারাই
সিঙ্ক থাকুক আর না থাকুক, স্কিনকেয়ারের প্রথম শর্ত, মুখে কোনো মেকআপ কিংবা মেকআপের অবশিষ্টাংশ থাকা যাবে না। তাই এই স্কিনকেয়ার রুটিনের শুরুতেই খুব ভালোভাবে মুখের মেকআপ কিংবা ত্বকে ব্যবহৃত যেকোনো প্রডাক্টের বিল্ডআপ পরিষ্কার করে নিতে হবে। পছন্দের যেকোনো ভালো ব্র্যান্ডের ওয়েট টিস্যু বেছে নেওয়া যেতে পারে। এটি মেকআপের পাশাপাশি ত্বকের তেল ও ময়লাও দূর করে দেবে নিমেষে। ক্লিনজিং ওয়াইপসও বেছে নেওয়া যায় এ কাজের জন্য।
পরিষ্কার প্রক্রিয়ায়
এক ফোঁটা পানির ব্যবহার ছাড়াই সম্ভব। মাইসেলার ওয়াটারের কল্যাণে। অনেকে আবার মাইসেলার ওয়াটার মেকআপ তোলার কাজেও ব্যবহার করেন। অল স্কিন টাইপ, নরমাল টু অয়েলি স্কিন এবং নরমাল টু ড্রাই স্কিন—এই তিনটি ভিন্ন ধরনের ত্বক বুঝে তবেই বেছে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। স্কিনলেস ক্লিনজিং প্রক্রিয়াকে কার্যকর করে তুলতে। অনেক দামি কিংবা কম খরচে ভালো মানের মিসেলার ওয়াটার কিনতে চাইলে বাজারে রয়েছে হরেক রকম অপশন। মিসেলার ওয়াটার ব্যবহারের জন্য সঙ্গে রাখতে পারেন কটন প্যাডস কিংবা কটন বল। মিসেলার ওয়াটারে কটন বল বা প্যাডটি ভালোভাবে ভিজিয়ে সেটি দিয়ে মুখ মুছে নিতে হবে, ত্বক একেবারে পরিষ্কার হয়ে ওঠা পর্যন্ত।
অ্যাপ্লাই সেরাম
সিঙ্কলেস স্কিনকেয়ার রুটিনে সেরাম ব্যবহার না করার কোনো কারণ নেই; বরং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করার পর যেকোনো পছন্দের সেরাম কয়েক ফোঁটা হাতে নিয়ে তারপর ভালো করে মুখে মেখে নিতে হবে। যদি ড্রাই স্কিন হয়, তাহলে ত্বকের যেসব অংশ বেশি ড্রাই অর্থাৎ কিছুক্ষণ পরপরই শুকিয়ে যায় কিংবা টানে এমন অংশে বেশি করে সেরাম মাখিয়ে রাখা জরুরি। তৈলাক্ত কিংবা সেনসিটিভ ত্বকের ক্ষেত্রেও ত্বক অনুযায়ী সেরাম বেছে নিতে হবে। হায়ালুরনিক অ্যাসিডযুক্ত সেরাম প্রায় সব ধরনের ত্বকেই মানিয়ে যায়, এমনকি অ্যাকনে রয়েছে এমন ত্বকেও। তাই ত্বকের অবস্থা জেনে-বুঝে তারপর সেরাম কেনা উচিত।
ময়শ্চারাইজেশনে
স্কিনকেয়ার রুটিনে পানির উপস্থিতি থাকুক আর না থাকুক, ময়শ্চারাইজারের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। সকাল হোক কিংবা রাত, সেরাম ব্যবহারের পর অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। অনেক ভালো ব্র্যান্ডের প্রডাক্ট লাইনে দিন ও রাতের জন্য আলাদা ময়শ্চারাইজার রয়েছে। পছন্দমতো এগুলোর যেকোনো একটি বেছে নেওয়া যায়। ত্বক স্বাভাবিক থেকে তৈলাক্ত হলে ওয়াটার বেসড ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। আর শুষ্ক ত্বকের জন্য হুইপড ক্রিম বেসড ময়শ্চারাইজার খুব কাজের। যদি সারা দিনের জন্য বাইরে বের হতে হয়, সে ক্ষেত্রে হাইড্রা নিউট্রিশন দেওয়া ডে ক্রিম হতে পারে পছন্দ। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এ ধরনের ক্রিম সারা দিন কমপ্লেক্সন একই রকম রাখবে। সে সঙ্গে ত্বককে কোমল আর হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করবে। আর নাইটটাইম রুটিন, তবে বেছে নেওয়া যায় হাইড্রা নিউট্রিশন দেওয়া নাইট বামের মতো ময়শ্চারাইজারগুলো।
অ্যাপ্লিকেশন আই ক্রিম
সাধারণ স্কিনকেয়ারের সময় কমবেশি সবাই চোখে পানির ঝাপটা দিয়ে থাকে। এতে চোখের কান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি ভেতরের ধুলাময়লা বের হয়ে আসে। মুখটাও ফ্রেশ মনে হয়। তবে সিঙ্কলেস স্কিনকেয়ারে যেহেতু এটা সম্ভব নয়, তাই চোখের চারপাশের ত্বকে রাখতে হবে বাড়তি নজর। চোখের চারপাশের ত্বক সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। পর্যাপ্ত যত্ন ছাড়া চোখে ক্লান্তি এবং বার্ধক্যের ছাপ পড়তে পারে সবার আগে। তাই চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন চোখের চারপাশের ত্বকে খুব ভালো ব্র্যান্ডের মাইল্ড আই ক্রিম ব্যবহার করার, যা ত্বকের ওই নাজুক অংশকে হাইড্রেটেড রাখবে। জোগান দেবে জরুরি পুষ্টি। এ ক্ষেত্রে এর রোলার বল অ্যাপ্লিকেটর দেওয়া আই জেল দিয়ে খুব সহজেই ত্বকের ওই অংশে আই ক্রিম লাগিয়ে নেওয়া যাবে। এটি আইব্যাগের ফোলা ভাব কমিয়ে আনতে কার্যকর। আর আই জেল যদি অ্যালোভেরা আর শসার প্রাকৃতিক নির্যাসে তৈরি হয়, তাহলে তো আরও ভালো। চোখের নিচের কালো দাগ কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে এটি।
রোদ থেকে রক্ষায়
যদি সিঙ্কলেস স্কিনকেয়ার রুটিন সারা দিনের জন্য হয়, তবে এর শেষ ধাপ হিসেবে ত্বককে ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করার জন্য ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন মেখে নিতে হবে। সানস্ক্রিন ব্যবহারে অবহেলা করলে ত্বক খুব সহজে বুড়িয়ে যেতে পারে, এমনকি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি স্কিন ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে। তাই সিঙ্কলেস স্কিন কেয়ার রুটিন একটি ভালো মানের ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ত্বকের উন্মুক্ত অংশে মাখিয়ে নিতে হবে, যার এসপিএফ অবশ্যই ১৫ বা তার বেশি। ডার্মাটোলজিস্টরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন অন্তত ২ ঘণ্টা পর পর ত্বকে পুনরায় সানস্ক্রিন মেখে নেওয়ার।
সিঙ্কলেস ত্বকচর্চার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন ঘাড়, গলা ও চিবুকের নিচের অংশের কোনো রকম অবহেলা না হয়। ত্বকের অন্যান্য অংশের মতো এসবেরও পরিচর্যা করে নিতে হবে।
শিরীন অন্যা
মডেল: বৃষ্টি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন