skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I অনুভূতির আলোকে

যাচাই করে কেনা চাই গয়না। র‌্যাশ, ফুসকুড়ি, লালচে ভাবের মতো ত্বকসমস্যা এড়াতে। বিশেষত স্পর্শকাতরতায়। লিখেছেন শিরীন অন্যা

সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এমন অ্যাকসেসরিজ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যা ত্বকে কোনো ধরনের জ্বালা-যন্ত্রণা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু কিছু সহজ টিপস মাথায় রাখলে ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক ও মানানসই অ্যাকসেসরিজ বেছে নেওয়া যায় কোনো বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই।
সত্যি বলতে জুয়েলারির ক্ষেত্রে সেনসিটিভ স্কিন বলে কোনো কথা নেই। যদি কোনো গয়না ত্বকে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে অর্থাৎ অ্যালার্জি কিংবা জ্বালাপোড়ার উপদ্রব ঘটায়, তবে বুঝে নিতে হবে, ওই নির্দিষ্ট ধাতুর তৈরি গয়নায় পরিধানকারীর ত্বক সেনসিটিভ। এ ক্ষেত্রে শুরু থেকেই সাবধান হওয়া প্রয়োজন, নয়তো এসব ছোটখাটো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ত্বকে বড় বড় রোগ বাঁধিয়ে বসতে পারে।
ত্বক সেনসিটিভ হলে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন ধাতুর সংস্পর্শে এসে প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। সাধারণত দুইভাবে। প্রথমত অ্যালার্জি হলে ত্বকে লালচে এবং ফ্লেকি ভাব তৈরি হবে। আর্দ্রতা বেড়ে ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতস্থানের মতো হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, ত্বকের নিচে ছোট ছোট বাম্প হয়ে চুলকানির সৃষ্টি করবে।
ত্বক সেনসিটিভ হলে জুয়েলারি বাছাই করার সময় সাধারণ ধাতু যেমন সোনা, রুপা এড়িয়ে চলাই ভালো। পরিবর্তে, টাইটানিয়াম বা স্টার্লিং সিলভারের মতো হাইপোঅ্যালার্জেনিক উপকরণগুলো বেছে নেওয়া যায়। টাইটেনিয়াম হলো এমন একটি ধাতু, যা অনেক ডেনটিস্ট সেনসিটিভ দাঁত বা মাড়ির জন্য ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে স্টার্লিং সিলভার তৈরিতে অনেক কম পরিমাণে অ্যালার্জেনিক ধাতু ব্যবহার করা হয়। স্বর্ণ এড়িয়ে চলার কারণ, হাইপোঅ্যালার্জেনিক হলেও এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ত্রুটিপূর্ণ হয়ে উঠতে এবং অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া নিকেল এবং নিকেলের সঙ্গে বিক্রিয়াকারী ধাতু, যেমন কোবাল্ট ত্বকে প্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে। আর এ ধরনের উপাদান থাকে বলেই রুপার গয়না এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে হোয়াইট গোল্ড ব্যবহার করা যায়। হোয়াইট গোল্ড ও প্ল্যাটিনামে প্রচুর পরিমাণে টাইটেনিয়াম থাকে, ফলে সেনসিটিভ ত্বকে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না।
কম খরচে হাই-এন্ড গয়নার স্বাদ নিতে প্লেটেড জুয়েলারির জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। এই জুয়েলারিগুলো ত্বকের পক্ষে কেমন, তা জেনে নেওয়া জরুরি। ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, প্লেটেড জুয়েলারি ত্বককে ওই সব উপাদান থেকে রক্ষা করতে পারে, যেগুলো ত্বকে অ্যালার্জির কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ত্বক যদি সিলভারে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা গোল্ড দিয়ে প্লেট করে পরা যেতে পারে। এতে সিলভার ত্বকে অ্যালার্জি কিংবা অন্য কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারবে না। প্লেটেড জুয়েলারি বেছে নেওয়ার আগে এর উপাদান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে; কেননা একেকজনের ত্বক একেক ধাতুতে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তাই গয়নাগুলো কিসের তৈরি এবং কোন ধাতু দিয়ে প্লেট করা—সবটাই জেনে নিতে হবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। তবে প্লেটেড জুয়েলারির ক্ষেত্রে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, গয়না যেন নষ্ট না হয়ে যায়। এগুলো নষ্ট হলে এর অভ্যন্তরীণ উপাদান খুব সহজেই ত্বকের সংস্পর্শে এসে ক্ষতি করতে পারে। তাই প্লেটেড জুয়েলারিগুলো স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি যত্নে রাখতে হবে।
কোন ধাতুর প্রতি ত্বক সেনসিটিভ, এটা জেনে নেওয়ার পাশাপাশি কোন জুয়েলারি কিংবা কী পরিমাণে পরতে হবে, সেটা বুঝে নেওয়াও জরুরি। সেনসিটিভ ত্বকে একই সঙ্গে অনেক বেশি গয়না না পরাই শ্রেয়। যত বেশি পরিমাণে এবং বেশি স্তরে জুয়েলারি পরা হবে, ততই ত্বকে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়বে। ত্বকের সংস্পর্শে থাকা এসব গয়না আর্দ্রতার সঙ্গে মিশে খুব সহজেই ত্বকের ক্ষতি করে দিতে পারে। তাই চেষ্টা করতে হবে একই সময় শুধু একটি গয়না পরার। তবে কোনো অনুষ্ঠানে যদি একাধিক গয়না পরার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে আগেই কিছু সময়ের জন্য গয়নাগুলো একসঙ্গে পরে দেখা যেতে পারে। এতে বিশেষ দিনে হঠাৎ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে না। এ ছাড়া সেনসিটিভ ত্বকে কস্টিউম জুয়েলারি এড়িয়ে চলতে হবে। কস্টিউম জুয়েলারি সাধারণত খুব ভারী এবং অনেক ধরনের উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়, যেগুলো কখন যে ত্বকের বারোটা বাজিয়ে দেবে, টেরও পাওয়া যাবে না!
যত্ন নিতে হবে ত্বকেরও। খুব ভেবেচিন্তে জুয়েলারি বেছে নেওয়ার পর বাড়তি কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে আরও বেশি নিরাপদ থাকা যাবে। গোসলের সময় যেকোনো ধরনের জুয়েলারি পরা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া খুব ভারী ব্যায়ামের সময়ও জুয়েলারি খুলে রাখা ভালো। এতে জুয়েলারিতে পানি কিংবা ঘাম জমে আর্দ্রতা সৃষ্টি করবে না। তবে ত্বকে যদি কোনো জুয়েলারির কারণে অ্যালার্জি কিংবা লালচে ভাবের সৃষ্টি হয়েই যায়, সে ক্ষেত্রে সেটি খুলে রেখে খুব ভালোভাবে ওই অংশ গন্ধহীন বা প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর একটি ভালো মানের হাইপোঅ্যালার্জেনিক ময়শ্চারাইজারের ব্যবহার ত্বকের চুলকানি এবং লালচে ভাব থেকে প্রতিকার মেলাতে পারে। এ ছাড়া ১ শতাংশ হাইড্রোকোর্টিসোন অয়েন্টমেন্টের ব্যবহার ত্বকের এ ধরনের সমস্যা থেকে প্রতিকারের ভালো উপায়। তবে ত্বকে যেকোনো ধরনের মলম ব্যবহারের আগে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, অনেক সময় অ্যালার্জির ফলে ত্বক স্যাঁতস্যাঁতে এবং বাম্পি হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় যেকোনো মলমের ব্যবহার ত্বকে অস্বস্তি বাড়িয়ে দিতে পারে।
ত্বকের সব ধরনের সমস্যায় প্রভাব ফেলে লাইফস্টাইলও। ত্বক যদি সেনসিটিভ হয়, তার ওপর প্রতিদিন খুব দৌড়ঝাঁপের মধ্যে পার করতে হয়, সে ক্ষেত্রে জুয়েলারির ব্যবহার আরেকটু বেশি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে; কেননা ঘাম ত্বককে আরও বেশি সংবেদনশীল করে তুলবে। এ অবস্থায় ওয়াটারপ্রুফ জুয়েলারি বেছে নেওয়া যেতে পারে। যেমন টাইটেনিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল এমনকি সিলিকন দিয়ে তৈরি আংটি। সারা দিনের জন্য অফিসে যাওয়ার সময় নেকলেসের মতো জুয়েলারি বাদ দিয়ে ছোট লকেট কিংবা কানে শুধু ছোট টপ পরে নিলেও মিলবে স্বস্তি।

মডেল: মাহালেকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top