সেলুলয়েড I ট্রায়াঙ্গল অব স্যাডনেস
এবারের কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সেরা সিনেমার পুরস্কার বা পাম দি’অর জিতে নিয়েছে সুইডিশ ফিল্মমেকার রুবেন অস্ত্লুন্দের ‘ট্রায়াঙ্গল অব স্যাডনেস’। স্যাটায়ারিক্যাল ডার্ক কমেডি জনরার এই সিনেমার কাজ শুরু হয়েছিল অবশ্য ২০২০ সালে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে প্রোডাকশনের কাজ বারবার ব্যাহত হওয়ায় এত দিন সময় লেগে যায়। বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এই চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা পুরস্কার জয়ের ঘটনা অবশ্য ৪৮ বছর বয়সী রুবেনের জন্য এটাই প্রথম নয়। তার বানানো ঠিক এর আগের সিনেমা ‘দ্য স্কয়ার’ও ২০১৭ সালে জিতে নিয়েছিল পাম দি’অর।
‘ট্রায়াঙ্গল অব স্যাডনেস’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা মেলে দুই সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ও ফ্যাশন মডেল কার্ল [হ্যারিস ডিকিনসন] ও ইয়াইয়ার [চার্লবি ডিন]। সারাক্ষণ নিজেদের জাহির করে বেড়ানো এই তরুণ-তরুণী বুঝে উঠতে পারে না, ব্যক্তিজীবনে তারা আসলেই যুগল নাকি অনলাইনে স্রেফ আরও বেশি ফলোয়ার বাড়ানোর লোভে উদ্ভট সব কর্মকাণ্ড করে চলেছে। মাঝেমধ্যে অবশ্য তাদের মধ্যে লেগে যায় বিবাদ; তাতে মনে হয়, তারা যেন কোনো সাবেক যুগল!
এরই মধ্যে একটি ব্যয়বহুল সুপার ইয়টে বিনা মূল্যে ভ্রমণের আমন্ত্রণ পায় ইয়াইয়া। সেখানে সে আর কার্লই সবচেয়ে গরিব যাত্রী। সমাজের অতি ধনী শ্রেণির ওই প্রমোদতরির নাবিক আবার একজন মার্ক্সবাদী! যাত্রা শুরুর আগে এক রেস্তোরাঁয় বিল দিতে গিয়ে দেখা যায়, ইয়াইয়ার কার্ড কাজ করছে না। অন্যদিকে তার কর্মকাণ্ড যদিও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে খুবই স্বাভাবিক, তবু তা কার্লকে বিরক্ত করে। যাত্রাপথে ওই প্রমোদতরি এক প্রবল ঝড়ের মুখে পড়ে। তা ছাড়া নাবিকের নৈশভোজে খারাপ সিফুড এবং বুড়ো এক দম্পতির গ্রেনেড বিস্ফোরণের কারণে যাত্রীরা একসময় নিজেদের খুঁজে পায় এক নির্জন দ্বীপে। অথচ মাছ ধরার কিংবা আগুন জ্বালানোর কৌশল জানা নেই তাদের। এমনই প্রমোদভ্রমণের মধ্য দিয়ে উপস্থাপিত হতে থাকে একের পর এক ডার্ক স্যাটায়ার।
হাস্যরসে ভরপুর এই সিনেমার কাহিনি দেখানো হয়েছে তিন খণ্ডে। প্রতিটিই হয়ে উঠেছে আগেরটির চেয়ে বেশি হাস্যোদ্দীপক। সিনেমাটির সূচনাদৃশ্যে একটি ফ্যাশন শুটের বিহাইন্ড দ্য সিনের দেখা মিললেও ‘ট্রায়াঙ্গল অব স্যাডনেস’ শেষ পর্যন্ত ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে বিদ্রূপ করেনি; বরং ফিল্মমেকার মনোযোগ দিয়েছেন আরও গভীর বিষয়ের ওপর। সাম্যবাদ, মার্ক্সবাদ ও সাম্যের ভেতর দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন চরম পুঁজিবাদকে।
বলে রাখা ভালো, সহজ বিষয় সহজে দেখানোর লোক নন রুবেন অস্ত্লুন্দ। ‘বিনয়ী’ ফিল্মমেকার তিনি কোনো দিনই নন; বরং নিজের সিনেমায় এমন এক ফিল্মি ল্যাঙ্গুয়েজ জাহির করতে ওস্তাদ, যার মাধ্যমে দর্শকের প্রচলিত চিন্তাভাবনাকে একেবারেই খারিজ করে দিয়ে তাদের মনোজগৎ তছনছ করে দিতে তিনি সক্ষম। এই সিনেমাও ব্যতিক্রম নয়। সব মিলিয়ে বিত্ত, সৌন্দর্য ও ক্ষমতার দম্ভ প্রদর্শনীর এক নিদারুণ ‘ক্যাটওয়াক’ হয়ে উঠেছে ‘ট্রায়াঙ্গল অব স্যাডনেস’।
আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। রুবেন অস্ত্লুন্দের সিনেমা মোট কতবার পাম দি’অর পেয়েছে?
[ক] চারবার
[খ] তিনবার
[গ] দুবার
[ঘ] একবার
২। ‘ট্রায়াঙ্গল অব স্যাডনেস’-এর নির্মাণকাজ কবে শুরু হয়?
[ক] ২০২২
[খ] ২০২১
[গ] ২০২০
[ঘ] ২০১৯
৩। কোন কারণে সিনেমাটির শুটিং বারবার বিঘ্নিত হয়েছিল?
[ক] করোনা মহামারি
[খ] সামুদ্রিক ঝড়
[গ] ভূমিকম্প
[ঘ] সুনামি
গত পর্বের বিজয়ী
১। তুষার বিশ্বাস, ধানমন্ডি, ঢাকা
২। নাফিজা আক্তার, গাজীপুর, ঢাকা
৩। তাসনিম পারভীন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ