skip to Main Content
homegrown-july-into

হোমগ্রোন I অ্যাজুরিয়া

অতিরিক্ত কেমিক্যালের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আর বাজারভর্তি নকল প্রডাক্টের ভিড়ে আসলটা খুঁজে বের করার হ্যাপা এড়াতে বর্তমানে অনেকেই ঝুঁকে পড়ছেন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি স্কিনকেয়ার প্রডাক্টের ওপর। আর প্যানডেমিকের সময় দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়ায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে দেশীয় নতুন ব্র্যান্ডগুলো। এগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় অ্যাজুরিয়া।
প্রকৃতিপ্রাণিত স্কিনকেয়ার লাইন অ্যাজুরিয়া অর্গানিক স্কিনকেয়ার। যাদের প্রতিটি পণ্য সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি। প্রতিদিনকার ত্বক ও চুলের সমস্যা দূর করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কোনো ধরনের কেমিক্যালের ব্যবহার ছাড়াই। অ্যাজুরিয়ার কর্ণধার হৃদি আহমেদ এই স্কিনকেয়ার লাইনের পেছনের গল্প সম্পর্কে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই উদ্ভিদবিদ্যা এবং প্রাচীন সৌন্দর্যরহস্যের মতো বিষয়ে আকৃষ্ট ছিলাম। একটার সঙ্গে আরেকটা প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে কী ফল মেলে, তা জানার উৎসাহ আমার বরাবরের।’ ২০১৮ সালে হৃদি নিজের ত্বক নিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। সে সময় মূলধারার কোনো প্রডাক্টই তার ত্বক সমস্যার সমাধান দিতে পারছিল না; উল্টো এসবে ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলো ত্বকের বারোটা বাজিয়ে দিতে শুরু করল। তখনই সিদ্ধান্ত নেন, নিজের স্কিনকেয়ারের ভার নিজ কাঁধেই তুলে নেবেন। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করে ফেললেন বেশ কিছু স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট। ব্যবহারে ফলও মেলে দ্রুত। কাছের মানুষদের অনেকেও এই প্রডাক্টগুলো ব্যবহার করেন। সাড়া মেলে ভালো। হৃদির নিজস্ব স্কিনকেয়ার লাইন তৈরির পেছনের মূল উৎসাহ মেলে সেখান থেকেই। কিন্তু সেই সময়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর করতে থাকা হৃদির কাছে ব্যবসা মানে ছিল তার পড়ালেখা থেকে একেবারেই বিপরীত কিছু। ব্যবসার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাও ছিল না। তবে এসব ব্যাপারে নিজের কৌতূহল আর পরিবারের উৎসাহ—সব মিলিয়ে তার মনে হলো, নিজের মতো ত্বকের সমস্যায় ভুগতে থাকা আরও অনেকের উপকারে আসাটা হয়তো তার জন্য নির্ধারিতই ছিল। এসব ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় অ্যাজুরিয়া। বর্তমানে দুজন পরিচালক আর দুজন কর্মী নিয়ে চলছে এর যাত্রা।
এখন পর্যন্ত অ্যাজুরিয়া বেশ কয়েকটি পণ্য নিয়ে কাজ করেছে, যা ত্বক বা চুলের নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়েছে, যেমন:
i ব্রণ, ব্রণের দাগ, সান ট্যান, তৈলাক্ত ত্বক, শুষ্ক ও নিস্তেজ ত্বকের জন্য আলাদা মাস্ক, পাউডারড ফেসওয়াশ এবং স্ক্রাব।
i হাইড্রেটিং ফেশিয়াল মিস্ট, যা টোনারের পাশাপাশি প্রাকৃতিক মেকআপ বেস এবং সেটিং স্প্রে হিসেবেও কাজ করে।
i মৃত কোষ জমে কালো হয়ে যাওয়া ঠোঁটের জন্য লিপ স্ক্রাব।
i অ্যারোমাথেরাপির সুবিধাযুক্ত হারবাল স্টিমিং প্রডাক্ট।
i চুল পড়া বা টাক সমস্যা, খুশকি ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে আলাদা হেয়ার মাস্ক; যা চুলকে চকচকে ও প্রাণবন্ত করে তোলার পাশাপাশি বাড়তি ভলিউম যোগ করবে।
প্রডাক্ট লাইন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে হৃদি বলেন, ‘ত্বক ও চুলের যত্নে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি পণ্যগুলোর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ লাইন তৈরি করার আশা ভবিষ্যতে; যা প্রতিদিনকার স্কিনকেয়ার ও হেয়ারকেয়ার রুটিন থেকে রাসায়নিকভাবে তৈরি সব ধরনের প্রডাক্ট সম্পূর্ণরূপে নির্মূলে সাহায্য করবে। সেই সঙ্গে সৌন্দর্যচর্চার নিয়মিত অংশ হিসেবে শুধু প্রাকৃতিক পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করবে।’
অ্যাজুরিয়ার প্রডাক্ট লাইনের মধ্যে প্রায় সব কটিই গ্রাহকদের কাছে পছন্দের বলে দাবি হৃদির। তবে এগুলোর মধ্যে রোজ মিক্স-মাস্ক অ্যান্ড স্ক্রাব আর হারবাল পাউডারড ফেসওয়াশ অ্যান্ড স্ক্রাব শুরু থেকেই তাদের বেস্টসেলার প্রডাক্ট। লাস্টার-হেয়ার মাস্ক বুস্টার এই বছরে প্রডাক্ট লাইনে যুক্ত হয়েও খুব কম সময়ে সাড়া ফেলেছে। লিপ কেয়ার প্রডাক্ট লাইনের প্লাম্প পাউটস স্ট্রবেরি-ইনস্ট্যান্ট প্লাম্পিং লিপ স্ক্রাব এবং লিপ মাস্ক রয়েছে ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে। মিস্ট লাইনে স্পিরিটস অব দ্য ফরেস্ট হাইড্রেটিং ফেশিয়াল মিস্ট ত্বকে একটা ঠান্ডা ও সতেজ অনুভূতি জোগায়, যার কারণে গ্রীষ্মে এর চাহিদা বেশি। শরীরের তাৎক্ষণিক উজ্জ্বলতার জন্য গ্রাহকদের প্রথম পছন্দ বিউটি অ্যান্ড দ্য বিন-কফি স্ক্রাব। তবে ত্বক কিংবা চুলের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী বেছে নেওয়া যায় পছন্দের প্রডাক্ট। সমস্যার কথা জানালে তাদের টিমও সহায়তা করবে উপযুক্ত প্রডাক্টটি খুঁজে পেতে।
হৃদি বলেন, ‘প্রাকৃতিক স্কিনকেয়ার প্রডাক্টগুলো কেবল ত্বকের জন্যই নয়, পরিবেশের জন্যও ভালো। ত্বকের জন্য পণ্যগুলো খুব হালকা হওয়ায় এগুলো কোনো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে না, যা রাসায়নিকভাবে তৈরি পণ্যগুলো সাধারণত করে। পরিবেশের জন্য, বেশির ভাগ জৈব স্কিনকেয়ার লাইনগুলো সবুজ কোম্পানি। আর পরিবেশের কথা বললে সব অর্গানিক প্রডাক্ট লাইনযুক্ত উদ্যোগই পরিবেশবান্ধব।’ অ্যাজুরিয়া কোনো কারখানা বা মেশিনে পণ্য তৈরি করে না। প্রতিটি প্রডাক্ট পরম যত্নে শতভাগ হাতে তৈরি। ক্রুয়েলটি ফ্রি এই উদ্যোগ কয়েকটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল—এসডিজি) অনুসরণ করে চলায় ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সিএসআর রিপোর্টে স্থান করে নেয়। প্রাকৃতিক পণ্যের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখতে অ্যাজুরিয়া কিছু এসডিজি মেনে চলে। যার অংশ হিসেবে তারা—
i গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটায় না;
i পরিবেশবান্ধব কোম্পানি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করে;
i পানিদূষণ করে না, কারণ কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য তৈরি হয় না;
i একটি সবুজ পৃথিবীতে অবদান রাখতে সহায়তা করার জন্য ছোট ছোট উদ্যোগ গ্রহণ করে।
অ্যাজুরিয়ার প্রতিটি পণ্যের দাম ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে। প্রডাক্টগুলো মিলবে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। ক্রেতার চাহিদা অনুসারে কয়েকটি প্রডাক্ট মিলিয়ে কম্বো প্যাক তৈরি করে নেওয়ার সুযোগও থাকছে।
i শিরীন অন্যা
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top