ত্বকতত্ত্ব I সুবর্ণ সুযোগ
গ্লাস স্কিনের যুগ গত হয়েছে গেল বছরই। সময় এখন লিকুইড গোল্ড স্কিনের। বিশেষত বাদামি ত্বকের জন্য
‘দ্য গ্লো বুস্টিং কমপ্লেক্সন ট্রিক’—বিশেষজ্ঞরা এভাবেই বিশেষায়িত করছেন লিকুইড গোল্ড স্কিনকে। অর্থাৎ ত্বকচর্চার এমন এক প্রক্রিয়া, যার নিয়মিত অনুশীলনে ত্বক ঠিকরে আলো বের হবে। বিশেষত চাপা রঙের ত্বকের কথা মাথায় রেখেই তৈরি বিশেষ এ পরিচর্যার রুটিন। প্রক্রিয়াতে অন্তর্ভুক্ত ডিউই ময়শ্চারাইজার আর বাদামি ত্বকের উপযোগী হরেক রকম সৌন্দর্যপণ্য। উদ্দেশ্য একটাই—ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো। গ্লাস স্কিন ট্রেন্ডকে পর্যালোচনা করলে চোখে পড়বে মূলত লাইট স্কিন টোন; অর্থাৎ ফর্সা ত্বককে কেন্দ্র করেই যেন এর আবির্ভাব। বাদামি কিংবা চাপা ত্বকের জন্য খুব বেশি জুতসই নয় এই ধারা। এ ধরনের ত্বকের উজ্জ্বলতা বর্ণনা করতে গেলে তা বরং বেশি মানায় মেল্টেড গোল্ড লুকের সঙ্গে। এ কারণেই বিউটি ট্রেন্ডে নতুন এ সংযোজন। কিন্তু ত্বকে কী করে পাওয়া যাবে এই ইফেক্ট?
এক্সফোলিয়েশন
লিকুইড গোল্ড স্কিন চাই? পরিচর্যার আগে প্রস্তুতি বেশি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে এক্সফোলিয়েশন ইজ দ্য কি। কারণ, টেক্সচার আর পোর ছাড়া নিখুঁত ত্বকেই মেকআপ বসে সবচেয়ে সুন্দরভাবে। এক্সফোলিয়েশনের ফলে ত্বকের মৃতকোষ দূর হয়। ফলাফল—আর্দ্রতা সহজে শুষে নিতে পারে ত্বক। যেকোনো ধরনের পণ্য কার্যকরভাবে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে ফেশিয়াল হেয়ার রিমুভালও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের পিচ ফাজ দূর করার ক্ষেত্রে থ্রেডিং আর ওয়াক্সিং অস্বস্তির কারণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ত্বকবান্ধব প্রক্রিয়াগুলো বেছে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। ত্বকের ধরন আর প্রতিক্রিয়াশীলতা বুঝে। এ ছাড়া ডিটক্স মাস্ক ব্যবহার করা যায়, যা ত্বকের দূষণ দূর করবে, টান টান করে তুলবে। এ ছাড়া এক্সফোলিয়েশনের জন্য কেমিক্যাল পিলের মতো ট্রিটমেন্টও দারুণ কার্যকর। মৃতকোষ দূর করতেও চমৎকার।
হাইড্রেশন
ডার্ক স্কিনটোন সাধারণত একটু শুষ্কই হয়ে থাকে। তাই বলে শুধু ভারী ক্রিম আর ঘন ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে—ব্যাপারটা একদমই তেমন নয়। পরিবর্তে হালকা হাইড্রেটিং সেরাম আর হায়ালুরনিক অ্যাসিডযুক্ত লোশনেই কাজ চলে যাবে। মেলানিন সমৃদ্ধ ত্বকের জন্য হায়ালুরনিক অ্যাসিড সবচেয়ে কার্যকর উপাদান। এটি চাপা ত্বকে উজ্জ্বলতা জোগানোর পাশাপাশি দেয় শিশিরসিক্ত আভা। এটা ত্বকের আর্দ্র ভাব বাড়ায়। ফলে পেলব দেখায় ত্বক। অকালবার্ধক্য রোধ করে। হায়ালুরনিক অ্যাসিড ত্বককে ১০০০ গুণ বেশি পানি ধরে রাখার সক্ষমতা দেয়। বলা যায়, ত্বকের জন্য পানি পানের সুযোগ করে দেয় এই উপাদান।
হিলিং মিশন
ত্বককে রোগমুক্ত, সুস্থ রাখতে হবে। এতে করে ত্বকের কোমলতা, মসৃণতা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে রিজেনারেটিং ফর্মুলার সেরাম ব্যবহার করতে হবে। ওমেগা ৬ এবং ৯ ছাড়াও সেরামে উপাদান হিসেবে থাকা চাই ভিটামিন এ এবং ডি, যা ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে সারাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে জোগাবে বাড়তি পুষ্টি।
ইন ইনগ্রেডিয়েন্ট
লিকুইড গোল্ড স্কিনের জন্য এমন ত্বক চাই, যা আর্দ্রতায় পরিপূর্ণ। ফলে দেখাবেও শিশিরসিক্ত। বাইরে তো বটেই, ত্বকের একদম গভীর অব্দি যেন পরিপূর্ণ আর্দ্রতা মেলে, খেয়াল রাখতে হবে সেটিও। কারণ, শুধু টপ লেয়ারে পণ্যের প্রয়োগ ত্বকে সে বাউন্সি ভাব তৈরি করতে সক্ষম নয়। গবেষণায় জানা গেছে, অপেক্ষাকৃত গাঢ় রঙা ত্বকের কোষ স্তর বেশি থাকে, কোষের বন্ধনও তুলনামূলক মজবুত হয়। ফলে তা ভেদ করে ত্বকের গভীরে পণ্যের কার্যকারিতা পৌঁছানোর কাজ মোটেই সহজ নয়। তাই এ ধরনের ত্বকে ময়শ্চারাইজিং উপাদানের লেয়ারিং হওয়া চাই সঠিক উপায়ে। এতে ত্বক তার সাধ্যমতো পানি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। তবে এটাও খেয়াল রাখা প্রয়োজন, ফর্সা ত্বকের চেয়ে গাঢ় ত্বকে তুলনামূলক বেশি প্রাকৃতিক তেল উপস্থিত। এ ক্ষেত্রে স্কোয়ালেন এবং ম্যাকাডেমিয়ার মতো তেলগুলো বেশি উপযুক্ত। কারণ, এ ধরনের তেল মানবদেহে উৎপাদিত হয়। ফলে এসব তেল সহজেই শুষে নিতে পারে ত্বক, জোগায় আর্দ্রতা। এ ছাড়া শিয়া বাটার, অ্যাভোকাডো অয়েল আর সেসিমি অয়েলও লিকুইড গোল্ড স্কিন পেতে সহায়ক।
কিওর কনসার্ন
অনেকেরই ধারণা, গাঢ় রঙা ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বেশি বিধায় তা সূর্যের রশ্মি থেকে সুরক্ষায় যথেষ্ট। ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। সূর্য থেকে সুরক্ষিত না থাকলে এ ধরনের ত্বকেও সানবার্ন, সান ড্যামেজ থেকে স্কিন ক্যানসার—হতে পারে সবই। তাই সানস্ক্রিন মাস্ট। এ ছাড়া হাইপার পিগমেন্টেশন আর ডার্ক সার্কেলও মেলানিন রিচ ত্বকের জন্য দারুণ সমস্যা। এ ক্ষেত্রে মালবেরিযুক্ত স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট কাজ করতে পারে জাদুর মতো। কারণ, এই উপাদান ত্বকে ডার্ক পিগমেন্ট উৎপাদনের হার কমায়। ফলে ত্বক হয়ে ওঠে দাগছোপমুক্ত।
হেলদি হ্যাবিট
শুধু পণ্যের ওপর ভরসা করলেই লিকুইড গোল্ড স্কিন মিলবে না, এর সঙ্গে জরুরি নিয়মিত চর্চা। তবেই পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত ত্বক। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় ত্বক ম্যাসাজ করে নেওয়া। যা রক্ত চলাচল বাড়াবে, টক্সিন কমাতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া চোখের নিচে ঠান্ডা গোলাপজল দিয়ে আইসিং করেও দেখা যেতে পারে।
অ্যান্ড অ্যাভয়েড
লিকুইড গোল্ড স্কিন চাইলে সতর্ক হয়ে ওঠা চাই আগেভাগেই। পেট্রোলিয়াম থেকে নির্যাসিত মিনারেল অয়েল সমৃদ্ধ ময়শ্চারাইজার এড়িয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কেননা এটি ত্বকের ওপর বাড়তি পরত তৈরি করে দেয়, ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। আর এর নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক পাতলা হতে শুরু করে। তাই সাবধান!
1 অর্চনা সাহা
মডেল: মোহিনী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন