ফিচার I আন্ডারপেইন্টিং
বছর-পুরোনো সাজকৌশল, আবার সাড়া জাগাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রক্রিয়া প্রথাছুট হলেও ফলাফল নজর কাড়বেই। লিখেছেন সারাহ্ রুশমিতা
কনট্যুর, হাইলাইট, ব্লাশ—এই তিন রূপসজ্জার উপকরণ মেকআপের ব্যাকরণ মেনে ফাউন্ডেশনের পরে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে এত দিন! কিন্তু বর্তমানে নতুনভাবে এদের ক্রম সাজানো হচ্ছে। ফাউন্ডেশন ব্যবহারের আগে করে নেওয়া হচ্ছে কনট্যুর, হাইলাইটেড হচ্ছে ত্বক আর বুলিয়ে নেওয়া হচ্ছে ব্লাশ! হালের জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল টিকটকে দেখা যাচ্ছে নতুন এই ট্রেন্ড! আসছে কিছুদিন এই ধারার মেকআপে মজে থাকবেন মেকআপপ্রেমীরা, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এ জনপ্রিয়তার জোয়ার জেন জেডের হাত ধরে এসেছে ঠিকই, আন্ডারপেইন্টিংয়ের এই টেকনিক কিন্তু একদম আনকোরা নয়। বেশ কয়েক দশক আগে থেকেই মেকআপ-সচেতনেরা জানেন এই কৌশল সম্পর্কে। তবে সম্প্রতি টিকটকের হ্যাশট্যাগে আন্ডারপেইন্টিং ব্যবহার করতে শুরু করেছেন অনেকেই। যার সংখ্যা সম্প্রতি ৭ মিলিয়নে পৌঁছে গেছে।
মেকআপ এক্সপার্ট জিল পওয়েল লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক মেকআপ আর্টিস্ট। আন্ডারপেইন্টিংকে মেকআপের সফট ফোকাস ফিল্টার হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। তার মতে, রূপসজ্জার এই কৌশলে ব্যবহারের তালিকায় থাকা পণ্যের রংগুলো এঁকে এঁকে বসানো হয় ত্বকে। তারপরে ফাউন্ডেশনের হালকা প্রলেপে মিলেমিশে যায় সব রং। মোলায়েম ভাব দৃশ্যমান হয়।
এই অঞ্চলের আরেক রূপসজ্জা বিশেষজ্ঞ জেমি গ্রিনবার্গের মতে, যারা মেকআপে পারদর্শী নন, তাদের জন্যও আন্ডারপেইন্টিং দারুণ কৌশল। কারণ, এই প্রক্রিয়ায় নিখুঁত কনট্যুরিংয়ের প্রয়োজন নেই। মেকআপ প্রলেপের আড়ালে প্রসাধনের খুঁটিনাটি মিশে যায় ত্বকের সঙ্গে। ফলে ফুটে ওঠে স্বাভাবিক সৌন্দর্য।
কীভাবে করা হয় আন্ডারপেইন্টিং? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মেকআপ ভিডিও কনটেন্টে নতুন এই ধারা দেখে ইচ্ছে হতেই পারে, ত্বকে কৌশলটি কেমন ফুটে ওঠে, তা দেখে নেওয়ার। তাই আন্ডারপেইন্টিংয়ের আদ্যোপান্ত জানা জরুরি আগেভাগেই।
আন্ডারপেইন্টিংয়ে বেসিক টুলসের বাইরে তেমন কিছু প্রয়োজন হবে না বললেই চলে। এই মেকআপ কৌশল মূলত কনট্যুরিং এবং হাইলাইটিংয়ে মিশে আছে।
একটি বিষয় ভুলে না গেলে ভালো। মেকআপের প্রথম ধাপ হিসেবে ত্বককে হাইড্রেট করে নেওয়া প্রয়োজন সব থেকে বেশি। নয়তো মেকআপের প্রলেপ মসৃণভাবে ত্বকে বসবে না। ছোপছোপে দেখাবে, হারাবে সৌন্দর্য। ত্বকের ধরন বুঝে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে প্রথমে, তারপরে তিন ধাপে আন্ডারপেইন্টিংয়ের পেইন্টিং ধাপ সম্পন্ন হবে।
প্রথম ধাপ কনট্যুরিং। মেকআপ এক্সপার্টদের ভোট ক্রিম ব্রোনজারে। ত্বকের রং বুঝে বেছে নিতে হবে প্রসাধন। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মানুষের ত্বকরং সাধারণত খানিকটা গাঢ় হয়। তাই ডার্ক ব্রাউন শেডের ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্রিম ব্রোনজারের পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারেন স্টিক ব্রোনজার। স্বাছন্দ্য অনুযায়ী বেছে নিলে মেকআপ হবে স্বস্তিদায়ক। ব্রোনজার ব্যবহারে সাধারণত প্যাটিং ও ব্লেন্ডিং মোশনই বেছে নেওয়া হয়। আঙুলের মাথায় নিয়ে ত্বকে মাখিয়ে নেওয়া যায় ব্রোনজার। এরপর সার্কুলার মোশনে ব্রাশ বুলিয়ে সম্পন্ন করা চাই কনট্যুরিং।
দ্বিতীয় ধাপে হাইলাইটিং। কনট্যুরিং শেষে। ত্বকের দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ রেখে সম্পন্ন করতে হবে এ ধাপ। শেষ ধাপ ব্লাশ! পাউডারি নয়, বরং ক্রিমি টেক্সচারের প্রসাধন এ ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। কেননা, মনমতো ব্লেন্ড করে নেওয়া যায় এগুলো। আরও একটি সুবিধা হচ্ছে, এ ধরনের প্রডাক্ট ত্বকের ওপর প্রলেপ তৈরি করে; যাকে বলা হয় ‘সেকেন্ড স্কিন লাইক ফিনিশ’! একই সঙ্গে ব্লেন্ডার আর ব্রাশ ব্যবহার করে মুখমণ্ডলের সব স্থানে মেকআপের প্রলেপ বুলিয়ে দেওয়া সম্ভব। ত্বকের রং ও টেক্সচারে তারতম্য চাইলে অস্পষ্ট করে দেওয়া যায় মেকআপের স্পর্শে। এখানে মেকআপ ব্লেন্ডার এবং ব্রাশের আকারের দিকে মনোযোগী হতে হবে। ছোট থেকে মাঝারি আকারের মেকআপ ব্রাশ প্রয়োজন হবে আন্ডারপেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে। এখানে মনে রাখা যায় একটি বিষয়, ত্বকের যে অংশে আন্ডারপেইন্টিং করা হচ্ছে, সে অংশের থেকে মেকআপের ব্রাশের আকার যেন ছোট হয়। সে ক্ষেত্রে ব্রাশ সব অংশে, সহজে পৌঁছে যাবে। আর ক্রিম বেজড প্রসাধনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে পাউডারি প্রডাক্ট ব্যবহার করা যাবে না, তেমনটা নয়। এগুলো ব্যবহারেও আন্ডারপেইন্টিং সম্ভব। তবে অনুশীলন প্রয়োজন।
আন্ডারপেইন্টিংয়ে ব্রোনজার, হাইলাইটার আর ব্লাশ ব্যবহারে দিতে হবে ফাউন্ডেশনের প্রলেপ। একটি ব্রাশের সাহায্যে রং অনুযায়ী সেই প্রলেপ বুলিয়ে নিতে হবে। টিন্টেড ফাউন্ডেশন ব্যবহারেও আন্ডারপেইন্টিং বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন মেকআপ আর্টিস্টরা।
সুইপিং মোশনে ব্রাশের সাহায্যে ফাউন্ডেশন বুলিয়ে নিতে হবে ত্বকে। এরপরের ধাপে ব্যবহার করা যেতে পারে বিউটি ব্লেন্ডার। বাউন্সিং মোশনে মুখের ত্বকে বিউটি ব্লেন্ডার অথবা স্পঞ্জ দিয়ে সেট করে নিতে হবে ফাউন্ডেশন। ন্যাচারাল লুকের জন্য ফাউন্ডেশন বেছে নেওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। লাইটার কাভারেজ ফাউন্ডেশন ব্যবহারে ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। ফুল কাভারেজের ফ্যান হলে ভারী প্রলেপ ত্বকে না বসিয়ে হালকা করে নিলে ভালো দেখাবে।
আন্ডারপেইন্টিং মোটেই কঠিন কাজ নয়, বরং বেশ সহজেই সেরে নেওয়া যায়। ব্রোনজার, হাইলাইট ও ব্লাশ—ক্রম অনুযায়ী তিনটি প্রসাধনে মুখ সাজিয়ে এর ওপর নিখুঁতভাবে ফাউন্ডেশন বুলিয়ে পুরোটা ভালোভাবে মিশিয়ে নিলেই মহাযজ্ঞ হবে সারা।
মডেল: মাহালেকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন