কুন্তলকাহন I স্ক্যাল্প মাসাজার
স্ক্যাল্পের সুস্থতা রক্ষা, সঙ্গে স্ট্রেস মুক্তি। সুপারহিট এ বিউটি টুল সংগ্রহে থাকলে হেয়ার স্যালনের স্পেশাল ট্রিটমেন্টের ফল মিলবে বাসায় বসেই
চুলের জন্য নয়, স্ক্যাল্প ফোকাসড এ ব্রাশগুলো। তাই তুলনামূলকভাবে ছোট, গোলাকার হয় স্ক্যাল্প মাসাজার। ব্রিসলগুলো হয় সিলিকন অথবা নরম প্লাস্টিকে তৈরি। হ্যান্ডি এ টুলগুলো সাধারণত মাথার ত্বকের মৃত কোষ আর হেয়ার প্রডাক্টের জমে থাকা অবশিষ্টাংশ দূর করে স্ক্যাল্পকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। শুধু এক্সফোলিয়েটিং নয়, মাথার ত্বককে উদ্দীপ্ত করে তুলতেও জুড়ি নেই বিশেষ এ মাসাজারগুলোর। দেয় প্রফেশনাল হেড মাসাজের অনুভূতি। এ ছাড়া—
সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য এক্সফোলিয়েশন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সুস্থ স্ক্যাল্পের জন্যও এই প্রক্রিয়া সমান কার্যকর। স্ক্যাল্প মাসাজার স্ক্যাল্পের এক্সফোলিয়েশনে চমৎকার কাজ করে। এতে মাথার ত্বকে জমে থাকা মৃতকোষ দূর হয়। ফলে হেয়ার ফলিকলগুলো নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পায়। চুলও বেড়ে ওঠে দ্রুত।
ঝলমলে চুল চাই? স্ক্যাল্পের রক্তসঞ্চালন বাড়ানো এর সহজ উপায়। হাতের কাছে স্ক্যাল্প মাসাজার থাকলে পুরো কাজটা সেরে নেওয়া যাবে ঝামেলাহীনভাবে। এতে করে হেয়ার ফলিকলে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছে যাবে। পৌঁছাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও। ফলে চুলও বেড়ে উঠবে সুস্থতার সঙ্গে। আর নিয়মিত মাসাজ না করলে স্ক্যাল্পের রক্তসঞ্চালন যখন মন্থর হয়ে যায়, তখন পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন আর পুষ্টি পৌঁছায় না হেয়ার ফলিকলে। ফলাফল—চুল দেখায় জেল্লাহীন, অপুষ্ট।
শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, ড্রাই শ্যাম্পু কিংবা অন্য যেকোনো হেয়ারস্টাইলিং প্রডাক্ট নিয়মিত ব্যবহারের ফলে স্ক্যাল্পে তার অবশিষ্টাংশ জমতে শুরু করে; যা হেয়ার ফলিকলের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। স্ক্যাল্প মাসাজার দিয়ে নিয়মিত স্ক্রাব করে নিলে এগুলো জমার কোনো সুযোগই পাবে না। চুলও বেড়ে উঠতে পারবে স্বাচ্ছন্দ্যে। মাথায় যদি খুশকি থাকে, স্ক্যাল্প মাসাজার ব্যবহারে এগুলো মাথার ত্বক থেকে উঠে আসবে, তারপর ধুয়ে নিলেই খুশকি দূর হবে সহজে। এ ছাড়া মাসাজার ব্যবহারে স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েটেড থাকে, ফলে ড্যানড্রাফ কন্ট্রোল শ্যাম্পুর প্রয়োজনীয় সব উপাদান সহজেই মাথার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। ফলাফল ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুর কার্যকারিতাও বাড়ে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি শ্যাম্পু করার সময় স্ক্যাল্প মাসাজার ব্যবহার করা যায়।
রিল্যাক্সেশনের জন্য স্ক্যাল্প মাসাজার ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। এটি দিয়ে সঠিকভাবে মাথার ত্বকের মাসাজ হেয়ারলাইনে থাকা স্ক্যাল্প টেনশন দূরীভূত করতে সহায়ক, যা মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালনকেও ত্বরান্বিত করে। ফলে ক্লান্তি ভাব কাটে, অবসাদ মুক্ত হয় দেহ। মাসাজার দিয়ে স্ক্যাল্প মাসাজের ফলে সেরোটনিন নির্গত হয়, যা মুড বুস্টিংয়ে সহায়ক। কারণ, মাসাজার মাথার ত্বকের স্পর্শকাতর অংশগুলোতে সরাসরি চাপ প্রয়োগ করে, মাসাজের কার্যকারিতা বাড়ায়। তাই হেয়ার কেয়ার রুটিনে অ্যান্টি স্ট্রেস টুল হিসেবে থাকতেই পারে মাসাজার।
২০১৬ এর এক জরিপ অনুযায়ী রেগুলার স্ক্যাল্প মাসাজের ফলে চুল ঘন হয়ে বাড়ে। অংশগ্রহণকারীরা প্রতিদিন চার মিনিট করে ২৪ সপ্তাহ ধরে নিয়মিত মাসাজ করেন স্ক্যাল্প। ফলাফল—ঘন, মজবুত চুল। ২০১৯ এর আরেক জরিপে ৩৪০ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে শতকরা ৬৯ জনের চুল পড়া কমে যাওয়ার পাশাপাশি, নতুন চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে বলে প্রমাণ মেলে। তবে এ ক্ষেত্রে মাসাজ করা হয় স্ক্যাল্প মাসাজার দিয়ে, দিনে দুবার।
ব্যবহারবিধি
স্ক্যাল্প মাসাজার ব্যবহারের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। ব্যক্তি পছন্দভেদে জুতসই প্রক্রিয়া বেছে নিয়ে তারপর স্ক্যাল্পের যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে। যেটা বেশি সহজ মনে হবে, সেটা বেছে নিলে সুবিধা হচ্ছে, কাজটা করতে অনাগ্রহ হবে না।
শ্যাম্পু করার সময় স্ক্যাল্প মাসাজার ব্যবহারের সবচেয়ে জুতসই সময় বলে ধরে নেওয়া হয়। এতে সব সুবিধা তো পাওয়া যায়ই, সেই সঙ্গে স্ক্যাল্পে জমে থাকা মৃতকোষ আর প্রডাক্টের অবশিষ্টাংশগুলো সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে নেওয়া যায়। তাই প্রথমেই মাথায় শ্যাম্পু দিয়ে তারপর ছোট ছোট সার্কুলার মোশনে মাসাজার দিয়ে মাসাজ করে নিতে হবে স্ক্যাল্পে। মাথার ত্বক পুরোপুরি পরিষ্কার হওয়া অব্দি মাসাজ চালিয়ে যেতে হবে। তারপর ধুয়ে নিতে হবে ভালো করে। কন্ডিশন করে চুল মুছে তারপর শুকিয়ে নিতে হবে ভালো করে।
হেয়ার অয়েল, সঙ্গে স্ক্যাল্প মাসাজ। মাথার ত্বকের জন্য চমৎকার ট্রিট। একদিকে তেল যেমন চুলকে মজবুত আর কোমল করে তুলবে, তেমনি সারাবে খুশকি, যোগ করবে বাড়তি উজ্জ্বলতা। স্ক্যাল্প মাসাজার তেলের কার্যকারিতা বাড়াতেও সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে পছন্দসই তেল দিয়ে নিতে হবে স্ক্যাল্পে। তারপর মাসাজার দিয়ে সার্কুলার মোশনে পুরো মাথা মাসাজ করে নিতে হবে। তারপর শ্যাম্পু আর কন্ডিশন করে নিতে হবে চুল।
স্ক্যাল্প মাসাজার ব্যবহারের ইনভার্টেড মেথডটাও কম কার্যকর নয়। হেড মাসাজের আরাম তো মিলবেই, সঙ্গে চুলের বৃদ্ধিও ত্বরান্বিত করবে। তবে মাসাজার ব্যবহারের আগে মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে সব চুল আপসাইড ডাউন করে নিতে হবে। তারপর সার্কুলার মুভমেন্টে মাসাজ করে নিতে হবে স্ক্যাল্প। এতে করে হেয়ার ফলিকলে রক্তসঞ্চালন বাড়বে। চুলেও মিলবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
মাসাজ কতক্ষণ করা হবে, তা নির্ভর করবে মাথার ত্বকের অবস্থার ওপর। সে ক্ষেত্রে পাঁচ মিনিট অব্দি করে নেওয়াই যথেষ্ট। এতে জমে থাকা ময়লাও দূর হবে, মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়ানোর জন্যও পর্যাপ্ত সময় মিলবে। শ্যাম্পু করার দিনগুলোতে স্ক্যাল্প মাসাজারের ব্যবহার যদি নিয়মিত করা যায়, তাহলে সবচেয়ে ভালো। সেই সঙ্গে সপ্তাহে অন্তত দুবার এর ব্যবহার হেয়ার কেয়ার রুটিনকে করবে পরিপূর্ণ।
অর্চনা সাহা
মডেল: জাকিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন
স্ক্যাল্প মাসাজার কোথায় কিনতে পাওয়া যাবে?প্রাইস কেমন পড়বে?