ফিচার I ফ্রেমের ফেরে
দৃষ্টিশক্তি তো বটেই, স্টাইল কোশেন্টও অন পয়েন্ট রাখতে। সামঞ্জস্যই শুরুর সূত্র
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ দিকের কথা। হাতলে আবদ্ধ ফ্রেম করা দুটো ম্যাগনিফায়িং লেন্স দিয়ে শুরু চশমার চল। ইতালিতে। গোলাকার লেন্সগুলোর ফ্রেম তৈরি হতো লোহা, ব্রাশ, হাড়, শিং, চামড়ায়। এমনকি সোনা-রুপার মতো মূল্যবান ধাতুও ব্যবহৃত হতো ফ্রেম গড়াতে। মূলত পড়াশোনার সুবিধার্থে জ্ঞানী-গুণী, বোদ্ধারাই এই চশমা ব্যবহার করতেন। ব্যয়বহুল ছিল বলে শুধু সামর্থ্যবানদের চোখেই উঠত। পরবর্তীকালে পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রিন্টিংয়ের প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হওয়ার পর নতুন পাঠকদের জন্য তুলনামূলক কম দামে উৎপাদন হার বাড়িয়ে দেওয়া হয় চশমার। সপ্তদশ শতাব্দীতে সম্পদশালী স্টাইলিশদেরকে নিম্নশ্রেণির মানুষদের থেকে আলাদা করতে চশমা ব্যবহার করা হতো। তবে পরবর্তী তিন শতাব্দী জনসাধারণের কাছে চশমা ছিল ‘আউট অব ফ্যাশন’। অনেক সময় বাদে ফের ফ্যাশনে চর্চিত হয় তা। ১৯৬৫ সালে যখন কনট্যাক্ট লেন্সের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, ঠিক তখনই ভোগ ম্যাগাজিনের বিউটি সেকশনের পাতায় ফুটে ওঠে আইগ্লাস ফ্যাশনের ভিন্নতর রূপ। সাধারণ, সলিড কালারের ফ্রেম। কোনোটা ছোট ও আয়তাকার, আবার কোনোটা বড় গোলাকার অথবা হেক্সাগোনাল ফ্রেমের। সে সময় সৃষ্ট নতুন ইন্ডাস্ট্রি দ্য ফ্যাশন আইওয়্যার গ্রুপ অব আমেরিকা বাজারে আনে এগুলো। সে বছরই প্রথম আইওয়্যার ফ্যাশনে আবির্ভূত হয় রেট্রো ফ্যাড। লন্ডন ও নিউইয়র্কের বুটিক ফ্যাশন অনুপ্রাণিত। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিককার স্টাইল গ্র্যানি গ্লাস তখন আইওয়্যার ট্রেন্ডের শীর্ষে। জন লেনন আর রজার ম্যাকগুয়েনের মতো তারকাদের কল্যাণে। ১৯৫০ সাল থেকে ডিজাইনারদের ডেরায় আইওয়্যার নিয়ে নিরীক্ষা শুরু হয়। তবে প্রথম হাই প্রোফাইল ডিজাইনার আই গ্লাস বাজারে আনে ক্রিশ্চিয়ান দিওর। ১৯৬৯ সালে। সেইন্ট লরেন, ডিয়ান ফন ফুর্সটেনবার্গ, হলস্টনের মতো ডিজাইনার ব্র্যান্ডগুলো এ চর্চা অব্যাহত রাখে ১৯৭০ সাল অব্দি। সেই দশকের সিগনেচার লুক ছিল রাউন্ডেড কর্নারের ওভারসাইজড ফ্রেম। সেমিট্রান্সপারেন্ট প্যাস্টেল আর ফখ টরটয়েজ শেলের ফ্রেম তখন বেশি জনপ্রিয়। ১৯৮০ সালে আরও বেশি ডিজাইনার ফ্রেম বাজারে আসতে শুরু করে। তখন ডিজাইনার লোগোসমেত ফ্রেমের চল বাড়ে হু হু করে। সেই সঙ্গে উজ্জ্বল, সলিড রঙের ফ্রেমের চাহিদাও ছিল তুঙ্গে। নব্বইয়ের ভিনটেজ স্টাইল আইফ্রেমেও ছিল রঙের ছড়াছড়ি। হলুদ গোলাকার সান কিয়োটো ফ্রেম সে সময় হয়ে ওঠে ফ্যাশনের ক্ল্যাসিক এলিমেন্ট। মাল্টিটোনের মোটা রিমের আই গ্লাস ফ্রেমও ছিল নব্বইয়ের অনুষঙ্গের তালিকায়। মাল্টিকালার আর প্যাটার্নের টরটয়েজ শেল রিমও দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সে সময়। তারপর প্রতিবছরই কালার ফ্রেম নানা রূপে আর রঙে ফিরে এসেছে ট্রেন্ডে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ‘কালারস আর দ্য নিউ ব্ল্যাক’ ২০২২-এ। তাই কালার প্যালেটের লাইট ব্লু, ইয়েলো, রেড, পিঙ্ক আর পার্পলের মতো রংগুলো আলো ছড়াচ্ছে শেমার ফ্রেমে। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে সবুজ।
কালার ফ্রেম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্কিনটোন বিবেচনা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি প্রাধান্য দিতে হবে আন্ডারটোনকেও। খোলা চোখে ত্বকের যে রং দেখা যায়, তা হচ্ছে স্কিন টোন। পেল, ট্যান, ডার্ক ইত্যাদি। আর ত্বক স্তরের নিচে যে রং, তাকে বলা হয় আন্ডার টোন। একে তিনটি ভাগ করা যায়। পিঙ্ক, রেড অথবা ব্লু আন্ডারটোন কুল টোনের বৈশিষ্ট্য। আন্ডারটোন ইয়েলো, পিচি কিংবা গোল্ডেন হলে স্কিন টোন ওয়ার্ম। আন্ডারটোন ওয়ার্ম আর কুলের মাঝামাঝি হলে টোন নিউট্রাল।
আন্ডারটোন নির্ধারণের সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে শিরার রং পর্যবেক্ষণ। নীল অথবা বেগুনি হলে কুল আন্ডারটোনের ত্বক। শিরা সবুজাভ হলে ত্বক ওয়ার্ম আন্ডারটোনের; যদি নীল অথবা সবুজ রঙের সংমিশ্রণ হয়, সে ক্ষেত্রে নিউট্রাল আন্ডারটোনের ত্বক। আরেকটা সহজ উপায় হচ্ছে সোনা অথবা রুপার গয়না পরে নেওয়া। রুপার গয়না ত্বকের সঙ্গে বেশি মানালে তা কুল আন্ডারটোন স্কিনের লক্ষণ। সোনায় যদি বেশি সুন্দর দেখায়, সে ক্ষেত্রে আন্ডারটোন ওয়ার্ম। আর যদি সোনা বা রুপা উভয়েই সুন্দর দেখায়, সে ক্ষেত্রে ত্বক নিউট্রাল আন্ডারটোনের।
ফর্সা কুল আন্ডারটোনের ত্বকের জন্য আইসি টোনের আইফ্রেম বেছে নেওয়া সবচেয়ে ভালো। গ্রে ও সিলভারের মতো। আরেকটু রঙের যোগ চাইলে বেছে নেওয়া যায় ডার্ক ব্লু, গ্রিন আর রোজি পিঙ্ক। হলুদাভ সবুজ, অ্যাম্বারের মতো গাঢ় রং এ ক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। সাদা ও বেইজ রঙের ফ্রেমও থাকুক বাতিলের তালিকায়। ফর্সা ওয়ার্ম আন্ডারটোনের ত্বকের জন্য শ্যাম্পেইন গোল্ড, কপার, টরটয়েজ ব্রাউন আর অলিভ চমৎকার অপশন। চলতে পারে টরটয়েজ শেল, সোনালি আর কালো রঙের ফ্রেমও।
মিডিয়াম টোনের ত্বক সাধারণত ওয়ার্ম আন্ডারটোন যুক্ত হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে কপার, ব্রোঞ্জ, গোল্ডের সলিড ফ্রেম দারুণ মানাবে। এ ছাড়া টরটয়েজ, টাইগার স্ট্রাইপের প্রিন্টের ফ্রেমও ভালো দেখাবে। ফার্ন অথবা অ্যাভোকাডোর মতো সবুজ পাতার শেডও চলবে অনায়াসে। এ ছাড়া লালের নানা শেড চাপিয়ে নেওয়া যেতে পারে চোখে। তবে মিডিয়াম টোনের হলেও ত্বক যদি কুল আন্ডারটোনের হয়, সে ক্ষেত্রে কপার, শ্যাম্পেইন গোল্ডের মতো নিউট্রাল টোন খুব মানাবে। চলতে পারে ব্লুয়িশ গ্রে আর সবুজাভ নীল রংও। টরটয়েজ শেডের ফ্রেম মন্দ দেখাবে না। তবে এ ক্ষেত্রে প্যাস্টেল আর সাদা রংগুলো এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন স্টাইলিস্টরা।
ডার্ক স্কিন টোনে বাদামি আর কালো রঙের ফ্রেম এড়িয়ে গেলে ভালো। যদি ওয়ার্ম আন্ডারটোনের হয় ত্বক, সে ক্ষেত্রে লালের বিভিন্ন শেডের ফ্রেম বেছে নেওয়া যায়। চলবে মেটালিক গোল্ড আর টাইগার স্ট্রাইপও। বাদামির উষ্ণ শেডগুলোও ট্রাই করা যেতে পারে। আর ডার্ক স্কিন যদি কুল আন্ডারটোনের হয়, সে ক্ষেত্রে নীল থাকা চাই পছন্দের ফ্রেমের শীর্ষে। অনিক্স, গ্রে, সবুজের গাঢ় শেডগুলোও দারুণ দেখাবে।
অর্চনা সাহা
মডেল: জেরিন
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন