ফরহিম I লোমশ
পিঠের এমন দশা অনেকের কাছে মোটেও আকর্ষণীয় নয়। অস্বস্তিরও কারণ। পরিত্রাণের উপায় কঠিন নয়
ছেলেদের লোমশ হাত, পা, মুখ কিংবা বুক—খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। অতটা দৃষ্টিকটুও নয়। কিন্তু লোমশ পিঠ দেখলেই অনেকের কপাল কুঁচকে যায়। যদিও প্রাকৃতিকভাবে ছেলেদের পিঠে লোম গজানোর ব্যাপারটা অস্বাভাবিক নয়। তবু যেন ট্যাবুতে পরিণত হয়েছে হেয়ারি ব্যাক। সাধারণত পিঠের ওপরের এবং নিচের অংশটাও বেশি লোমশ হতে দেখা যায়। তবে অনেকের আবার পুরো পিঠজুড়েই ঘন লোমের আস্তর তৈরি হয়। অনেকের কাছে যা গরিলা ইফেক্ট নামে পরিচিত। হেয়ারি ব্যাক শুধু অসুন্দরই দেখায় না, গরমে অস্বস্তিও তৈরি করে। দেহের তাপ বেড়ে বাড়তি ঘাম হয়, যা থেকে হতে পারে দুর্গন্ধ।
হওয়ার কারণ
এ ক্ষেত্রে হরমোন থাকবে তালিকার শীর্ষে। জেনেটিক্যালি প্রিডিসপোসড পুরুষদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে চুল বাড়ার প্রবণতা থাকে। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি হাইপারট্রাইকোসিস নামে পরিচিত। এটি এমন একটি কন্ডিশন, যা পুরুষদের হেয়ার গ্রোথ অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফলাফল, হেয়ারি ব্যাক। এ ছাড়া পুরুষালি হরমোন টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির কারণেও শরীরে লোমের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
পরিত্রাণের প্রক্রিয়া
ম্যানস্কেপিংয়ের মাধ্যমে হেয়ারি ব্যাক থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নানা কৌশল রয়েছে। সুবিধা অনুযায়ী বেছে নেওয়া যায় যেকোনোটি।
ব্যাক শেভারস
সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি এটি। সহজ ও সাশ্রয়ী। ব্যথাহীনও। রেগুলার ব্যাক শেভিংয়ের জন্য পারফেক্ট অপশন। তবে শুরুতে পিঠের লোম খানিকটা ট্রিম করে নিতে হবে। নইলে ত্বকে অস্বস্তিকর অনুভূতি তৈরি হতে পারে। সবচেয়ে ভালো ফলের জন্য একটা কোয়ালিটির শেভিং ক্রিম আর লম্বা হাতলযুক্ত ব্যাক শেভারও প্রয়োজন হবে। এতে করে পিঠের লোম সুন্দরভাবে শেভ করা যাবে। পরে লোম যখন আবার গজাতে শুরু করবে, তখন অস্বস্তিও লাগবে না ত্বকে। তবে সমস্যা একটাই, শেভিং শুধু লোমগুলো শেভ করে দেয়, গোড়া থেকে তুলে আনে না। তাই বেশ দ্রুতই লোম আবার ফিরে আসতে শুরু করে। এ ছাড়া চটজলদি কুইক ফ্রিক্সের জন্য সাধারণ রেজারও ব্যবহার করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে অন্য কারও সাহায্য নিতে হবে।
ক্রিম হেয়ার রিমুভাল
ওয়াক্সিংয়ের বাস্তবসম্মত বিকল্প এটি। রেজারের মতো কাটাছেঁড়ার ভয় নেই। হরেক রকমের হেয়ার রিমুভাল ক্রিম মিলবে বাজারে। হাত-পায়ের লোম তোলার পাশাপাশি পিঠেও ব্যবহার উপযোগী এগুলো। লোমশ জায়গাজুড়ে ক্রিম মেখে নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করে মুছে নিতে হবে। রিমুভাল ক্রিমের নির্দেশিকা মেনে কাজ করলে ভালো ফল মিলবে। তবে এ ক্ষেত্রে রয়েছে রেজরের মতো সমস্যা। এর ব্যবহারে লোম শুধু দূর হবে, গোড়া থেকে উঠে আসবে না। অর্থাৎ লোম দ্রুত আবার ফিরে আসবে। এ ছাড়া স্পর্শকাতর ত্বকে হেয়ার রিমুভিং ক্রিম অনেক সময় মানায় না, উল্টো প্রতিক্রিয়া করে বসে।
হোম ওয়াক্সিং
এ ক্ষেত্রে হেল্পিং হ্যান্ড লাগবে একজন। ওয়াক্সিংয়ে পারদর্শী। আর লাগবে ভালো ওয়াক্স। খেয়াল রাখতে হবে, ওয়াক্স যেন বেশি গরম না থাকে। অন্যথায় বিপদ! ত্বক পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে এতে। নির্দিষ্ট স্থানে ওয়াক্স মেখে স্ট্রিপ লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর লোম যেদিকে বেড়ে উঠছে, ঠিক তার বিপরীত দিকে হেঁচকা টানে উঠিয়ে ফেলতে হবে স্ট্রিপ। প্রক্রিয়াটি বেশ ব্যথাদায়ক হলেও সান্ত্বনা একটাই, রেজার কিংবা হেয়ার রিমুভাল ক্রিম ব্যবহারের পর দ্রুত লোম ফিরে আসার আশঙ্কা এ প্রক্রিয়ায় খানিকটা কম। কারণ, এতে গোড়া থেকে লোম উঠে আসে। আর স্যালনের চেয়ে ঘরে বসে এ প্রক্রিয়া সারলে খরচটাও তুলনামূলকভাবে কম।
স্যালনে ওয়াক্সিং
পিঠের লোম দূর করার সেমি পার্মানেন্ট প্রক্রিয়া বলা যায় এটিকে। আর স্যালনে করা হয় বলে ফলটাও মেলে ভালো। কারণ, দক্ষ প্রফেশনাল দিয়ে সারা হয় পুরো প্রক্রিয়া। বাসায় বসে করার চেয়ে স্যালনে ওয়াক্সিং সারলে সময়টা কম লাগে, ব্যথাও কম। ঝঞ্ঝাবিহীনভাবে সেরে নেওয়া যায়। আর ওয়াক্সিংয়ের পুরো প্রক্রিয়া অনেক বেশি স্পর্শকাতর। ভুল হলেই সেরেছে! ত্বকে ইনগ্রোন হেয়ারের সমস্যা তৈরি হবে, সঙ্গে বাড়বে অস্বস্তি। আর সংক্রমণের আশঙ্কা তো থাকছেই। খরচটা একটু বেশি পড়লেও এর ফলাফল স্থায়ী হবে সপ্তাহ দুয়েক অব্দি।
লেজার হেয়ার রিমুভাল
সবচেয়ে ব্যয়বহুল অপশন। তবে বেশি কার্যকর। বেশ কয়েকবারের সেশনে মাস থেকে বছর অব্দি লোমমুক্ত থাকবে পিঠ। এটি লোম একদম গোড়া থেকে নির্মূল করে দেয়, পার্মানেন্টলি। তবে এর আগে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ সেরে নিতে হবে। পিঠে লোমের পরিমাণ, এর পুরুত্ব, ঘনত্ব ছাড়াও হরমোন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সেরে নেওয়া প্রয়োজন। লেজার হেয়ার রিমুভালের সপ্তাহখানেক আগে থেকে সূর্যালোকে যাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। ট্রিটমেন্টের পরের সপ্তাহগুলোতেও থাকতে হবে সাবধান। বিশেষ এ প্রক্রিয়া সারার জন্য সঠিক জায়গা বাছাই করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লেজার ট্রিটমেন্ট যিনি করবেন, তাকে হতে হবে দক্ষ। তাই এ ব্যাপারগুলো আগে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া ভালো। আর ট্রিটমেন্ট সারার পর বিশেষজ্ঞ পরামর্শ অনুযায়ী পিঠের ত্বকের যত্ন নেওয়াও জরুরি।
i বিউটি ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট