সঙ্গানুষঙ্গ I আপন আলোয়
দশক পুরোনো সংস্কৃতির পরিচায়ক। পরবর্তী সময়ে পরিণত হয় সেলিব্রিটি অবসেশনে। ফ্যাশনে পার্সোনালাইজেশন পছন্দ? সংগ্রহে থাকলে মন্দ হবে না
নব্বইয়ের বিখ্যাত টিভি সিরিজ ‘সেক্স ইন দ্য সিটি’র কথা মনে আছে? এর সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র ক্যারি ব্র্যাডশ। শুধু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই নয়, ফ্যাশনসেন্সের জন্যও। ফ্যান থেকে ফ্যাশনবিশ্ব—সর্বত্র। তবে ক্যারির পোশাকই যে শুধু আলোচনায় ছিল তেমনটা নয়, বাদ পড়েনি অ্যাকসেসরিজও। ব্যাগ, জুতার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি চর্চায় ছিল ক্যারির গলার নেমপ্লেট নেকলেস। সে সময় ক্রেজে পরিণত হওয়া এই অ্যাকসেসরিজ পরিচিত হয়ে ওঠে ক্যারি নেকলেস হিসেবে। হিপ কারসিভ ফন্টে খোদাই করা গোল্ডেন নেমপ্লেটের সেই নেকলেস শোতে সংযোজনের পুরো কৃতিত্ব কিংবদন্তি কস্টিউম ডিজাইনার প্যাট্রিশিয়া ফিল্ডের।
নিউইয়র্ক শহরে একটি দোকান ছিল এই ডিজাইনারের। যার আশপাশের পাড়াগুলোতে তরুণদের পরতে দেখা যেত এ ধরনের মনোগ্রাম নেকপিস। সেটাই নজরে আসে প্যাট্রিশিয়ার। তার মনে হয়, ক্যারি চরিত্রটার সঙ্গে দারুণ মানাবে নেকপিসটি। নাম ভূমিকায় কাজ করা অভিনেত্রী সারাহ জেসিকা পার্কারকে দেখান তিনি। দারুণ পছন্দ হয় সারাহর। তারপর তো ইতিহাস। পরে গসিপ গার্ল, মিন গার্লের মতো জনপ্রিয় সিরিজগুলোতেও চোখে পড়ে নেমপ্লেট নেকলেসের ব্যবহার। ২০০০ থেকে ২০০৭ সাল অব্দি রিলিজ হওয়া কম-বেশি সব মেইনস্ট্রিম র্যাপ ভিডিওতে র্যাপারদের গলায় চোখে পড়ে এই ধাঁচের নেকলেস। শুধু পর্দাতেই নয়, এর বিকিকিনি বাড়ে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যও। বরাবরের মতোই তালিকায় এগিয়ে তারকারা। সংগীত তারকা বিয়ন্সের গ্রুপ ডেসটিনি চাইল্ডের প্রত্যেক সদস্যের গলায় থাকত ‘উঈ’র নেম নেকলেস। পরে তার ডাকনাম ‘ইয়েন্স’ লেখা নেমপ্লেট পিসে দেখা যায় তাকে। আর এখন তো ‘মমি’ লেখা নেকলেসে হরহামেশাই দেখা যায় এই তারকাকে। ল্যাটিন মিউজিক স্টার জেনিফার লোপেজও আছেন নেমপ্লেট নেকলেস অনুরাগীদের তালিকায়। তার গলায় ‘বেলা’ লেখা সিলভার নেকলেস হয়তো অনেকেরই চোখে পড়েছে। যার অর্থ সুন্দরী। দশক পেরিয়ে সম্প্রতি জেলোর গলায় উঠেছে স্বামী বেন অ্যাফলেকের নামখচিত নেকলেস। কার্দাশিয়ানরা তো বরাবরই ট্রেন্ড সেটার। কিম কার্দাশিয়ানের নেমপ্লেট জুয়েলারির কালেকশন ফ্যাশন-সচেতনদের কাছে সুপরিচিত। বেশির ভাগেই তার সন্তানদের নাম খোদাই করা। পুরো কার্দাশিয়ান পরিবারেরই কাস্টম জুয়েলারির প্রতি আলাদা ঝোঁক আছে। এর মধ্যে কোর্টনি কার্দাশিয়ানের ‘সিস্টার’ নেমপ্লেট নেকলেস উল্লেখযোগ্য। পিছিয়ে নেই কেন্ডেল জেনারও। সম্প্রতি সুপার মডেল বেস্ট ফ্রেন্ড জিজি হাদিদের সঙ্গে নিজের নাম সংযুক্ত করে তৈরি করেছেন কেনজি খোদাই করা গোল্ড নেমপ্লেট নেকলেস। দুজনের গলায় যা শোভা পায় প্রায়ই। জিজি হাদিদের নেমপ্লেট নেকলেসের কালেকশনে আরও আছে তার মেয়ের নাম খোদাই করা স্টেটমেন্ট পিস। জিজির বোন আরেক সুপার মডেল বেলা হাদিদেরও এ ধরনের নেকলেসপ্রীতি রয়েছে। তার ইনস্টাগ্রাম ফিডেই মিলেছে প্রমাণ। ব্রিটিশ ঘরানাতেও আছে নেম নেকলেসের ঝোঁক। বড় পুত্রবধূ কেট মিডলটনের সংগ্রহে রয়েছে তার সন্তানদের নামের আদ্যাক্ষরে তৈরি মনোগ্রাম ডিস্ক। অন্যদিকে ছোট পুত্রবধূ মেগান মার্কেলের নেম নেকলেসে চোখে পড়ছে খোদ নিজের এবং স্বামীর নামের প্রথম অক্ষর। সংগীতশিল্পীদের মাঝে নেম নেকলেসের ক্রেজটাই অন্য রকম। প্রমাণ, আশির আইকন প্রিন্স, ম্যাডোনা থেকে হালের রিহানা, আরিয়ানা গ্র্যান্ডে, অ্যাডলে, টেইলর সুইফট আর নিকি মিনাজের জুয়েলারি কালেকশন।
প্রাথমিক দৃষ্টিতে মনে হতেই পারে, ফ্যাশন ম্যাপে নেমপ্লেট নেকলেসের নাম এসেছিল ক্যারি ব্র্যাডশর বরাতে। ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই তেমন নয়। এর শুরুটা আশির দশকে। আফ্রিকান আমেরিকান কমিউনিটির বদৌলতে। মনে করা হয়, আফ্রো আমেরিকান র্যাপাররাই তাদের লুককে অন্যতর করে তুলতে নাম খোদাই করা নেকলেস পরার চল শুরু করেন। ঘটনা সত্য কিন্তু পেছনের ইতিহাস আরও গভীর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আফ্রো আমেরিকানরা যখন দাসত্ব থেকে মুক্ত হন, তখন নিজের পরিচয় তুলে ধরার পাশাপাশি সংস্কৃতির পরিচায়ক হিসেবে পরতে শুরু করেন পার্সোনালাইজড এসব জুয়েলারি। পরে ব্ল্যাক আর্টিস্টদের মাধ্যমে স্টাইলিশ উপায়ে এটি ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিশ্বব্যাপী।
মাঝে কয়েক বছর ট্রেন্ডোমিটারে ধরা না পড়লেও এ বছর বেশ জোরেশোরেই ফ্যাশনবিশ্বে আশির রেট্রো ভাইব নজরে আসছে। ফলাফল—নেমপ্লেট নেকলেসও ফের ফিরেছে স্টাইলিংয়ে। ইনিশিয়াল নেকলেস, মনোগ্রাম পেনডেন্ট অথবা ডিস্ক, ক্রস নেকলেসসহ নানা রূপে। গড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে সোনা কিংবা রুপায়। কখনো এক লেয়ারের চেইনের সঙ্গে তো কখনো একের অধিকই সই। সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে হীরা, বার্থস্টোন, জেম, পার্ল, বিডসহ পছন্দসই এমবেলিশমেন্ট। সহজে কাস্টমাইজেবল বলে লুকে পার্সোনাল টাচ দিতে অতুলনীয় এ ধরনের নেকলেস; যা শত মানুষের ভিড়েও পরিধানকারীকে আলাদা করে দিতে পারে অনায়াসে।
অর্চনা সাহা
মডেল: অ্যান্নি ও রিচি
মেকওভার: পারসোনা
জুয়েলারি: সিক্স ইয়ার্ড স্টোরি ও অ্যাডর্ন অ্যান্ড কো.
ছবি: হাদী উদ্দীন ও তানভীর খান