তনুরাগ I হ্যাপি পিট
টিকটকে ট্রেন্ডিং লেটেস্ট এই ওয়েলনেস ট্রেন্ড। একদম গভীর থেকে পরিষ্কারের পাশাপাশি বিল্ডআপ দূর করার জন্য দারুণ
সৌন্দর্যচর্চায় ক্লিনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাস্কিংও এখন বেসিক স্টেপগুলোর মধ্যে একটি। শুধু মুখত্বকের জন্য নয়, দেহত্বকের জন্যও এর ব্যবহার এখন দারুণ জনপ্রিয়। সম্প্রতি টিকটকে ট্রেন্ডিং হয়েছে আর্মপিট বা বগলের জন্য ব্যবহৃত মাস্ক। আর্মপিট ডিটক্স হিসেবেই ভাইরাল এ প্রক্রিয়া। দাবি করা হচ্ছে, কার্যকরভাবে বগলের ঘাম আর দুর্গন্ধ রোধ করবে এটি। দীর্ঘ সময় ধরে ডিওডোরেন্ট আর অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহারের ফলে জমে থাকা অবশিষ্টাংশ দূর করতেও সহায়তা করবে। সম্প্রতি টিকটকে #আর্মপিটডিটক্সের ভিউ পঞ্চাশ লাখ ছাড়িয়েছে। সৌন্দর্যসচেতনদের মাঝে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে আলাদা আগ্রহ।
আর্মপিট ডিটক্স কী
বর্তমান ভোক্তারা সৌন্দর্যপণ্যে ব্যবহৃত উপাদান নিয়ে খুব সচেতন। উপাদানগুলোর কার্যকারিতা তো বটেই, দেহের ওপর এর প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া নিয়েও আপডেটেড থাকতে পছন্দ করেন তারা। ফলে বাজারে চলতি ডিওডোরেন্টের বদলে অ্যালুমিনিয়াম ফ্রি প্রাকৃতিক ফর্মুলাগুলোর প্রতিই মানুষের ঝোঁক বাড়ছে প্রতিনিয়ত। অ্যালুমিনিয়াম মূলত আর্মপিটের লোমকূপগুলোর মুখ বন্ধ করতে সাহায্য করে, যা ঘাম রুখে দেয়। অ্যান্টিপার্সপিরেন্টে অ্যালুমিনিয়াম সল্ট ব্যবহার করা হয়, যা মাখার পর লোমকূপে গলে যায়। যখন অ্যালুমিনিয়াম প্রোপার্টিযুক্ত ডিওডোরেন্টের ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন দেহ প্রাকৃতিকভাবেই ডিটক্স মুডে চলে যায়। এই সময় ঘামের পরিমাণ বাড়ে, বাড়তে পারে দুর্গন্ধও। কারণ, অ্যালুমিনিয়াম যুক্ত ডিওডোরেন্ট ব্যবহার না করার ফলে আর্মপিটের লোমকূপগুলো স্বাভাবিক ক্ষমতা ফিরে পায়।
টিকটক ক্রিয়েটর মেলোডিরোজমিলারের আর্মপিট ডিটক্সের ভিডিও এখন ভাইরাল এই সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে। সম্প্রতি দুই লাখের কাছাকাছি মানুষ ভিডিওটি দেখেছে। মূলত অ্যালুমিনিয়াম ফ্রি ডিওডোরেন্ট ব্যবহার শুরু করার পর থেকে দেহের দুর্গন্ধের সঙ্গে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতাই ব্যাখ্যা করেছেন এ টিকটকার। তৈরি করে দেখিয়েছেন তার ডিটক্স রেসিপি। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার আর বেনটোনাইট ক্লে মাস্কের মিশ্রণে তৈরি, যা দেখে উপকৃত হয়েছেন অনেকেই। প্রমাণ, ভিডিওটির কমেন্ট বক্স।
আর্মপিট ডিটক্সিং নিয়ে ডার্মাটোলজিস্টদেরও নানা মত রয়েছে। ডিওডোরেন্ট এবং অ্যান্টিপার্সপিরেন্টে থাকা অ্যালুমিনিয়াম আর্মপিটের জীবাণু উৎপাদনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। আরও তীব্র দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে যদি অ্যালুমিনিয়াম যুক্ত ফর্মুলার বদলে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের মতো ব্যাকটেরিয়ানিরোধী উপাদান দিয়ে আর্মপিট মাস্কিং করা যায়, তা জীবাণুর পাশাপাশি অযাচিত দুর্গন্ধের হাত থেকেও রক্ষা করবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তবে ঘামের পরিমাণ কমাতে পারে না এ প্রক্রিয়া। কারণ, ডার্মাটোলজিস্টদের মত, ঘাম রুখতে ঘর্মগ্রন্থির গভীরে প্রবেশ করতে হবে। ক্লিনিক্যালি মাস্ক দিয়ে যা করা অসম্ভব। এ ছাড়া ঘামের দুর্গন্ধ রোধে ডিটক্সিংয়ের পাশাপাশি নজর দিতে হবে ডায়েটেও। প্রোবায়োটিক আর সবুজ সবজি, শাক খেতে হবে। এগুলোতে থাকা ক্লোরোফিল দেহে ডিওডোরাইজিং ইফেক্ট এনে দেবে।
উপকারিতা
আর্মপিট মাস্কিং বা ডিটক্সিফায়িং, যা-ই বলা হোক না কেন, এর ফলে বগলের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দ্রুত পরিষ্কার হতে শুরু করে। তাই সাধারণ ডিওডোরেন্টের বদলে ন্যাচারাল ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে আর্মপিট মাস্কিং প্রাকৃতিক উপাদানের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে ডিওডোরেন্ট বা অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহারের ফলে আর্মপিটের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। এ ধরনের ডিটক্সিফায়িংয়ের ফলে বিল্ডআপ দূর হয়ে তা খুলে যায়। আর্মপিটের সুস্থতা বজায় থাকে। এ ছাড়া ডিটক্স মাস্ক বগলের র্যাশ, লালচে ভাব, চুলকানিসহ নানা অস্বস্তিকর অবস্থায় স্বস্তি দিতে সহায়তা করে। ত্বকের স্পর্শকাতরতায় আরাম দেয়।
ডিটক্সিফায়িংয়ে দরকার
টিকটক ঘাঁটলে দেখা যাবে আর্মপিট ডিটক্স করার হরেক রকম রেসিপি। তবে চারকোল আর ম্যালিক অ্যাসিডের মতো দূষণ নিষ্কাশনে সহায়ক উপাদানের ব্যবহারই সবচেয়ে জনপ্রিয়। এ ছাড়া নানা ধরনের ক্লে থাকতে পারে তালিকায়। এর মধ্যে কেওলিন ক্লে ত্বকের জন্য সবচেয়ে কোমল। এটি দূষণ দূর করার পাশাপাশি ত্বকের অতিরিক্ত তেলে ভাব শুষে নেয়। অস্বস্তিও সৃষ্টি করে না। মরোক্কান লাভা ক্লেও ব্যবহৃত হতে পারে আর্মপিট ডিটক্সিফায়িংয়ে। এটি গভীর থেকে ত্বক পরিষ্কার করে, মৃতকোষ সারাইয়েও সহায়ক। আর বেনটোনাইট ক্লে তো আর্মপিট ডিটক্সিফায়িংয়ে বহুল ব্যবহৃত। এর অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টি বগলের মসৃণতা বাড়ায় এবং দুর্গন্ধ রোধে সহায়তা করে। অন্যদিকে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টি আর্মপিটে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে রোধ করে। এই অংশের ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখে। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া লোমকূপ খুলে দিয়ে এর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখে।
মাস্কিংয়ের জন্য প্রয়োজন হবে এক টেবিল চামচ বেনটোনাইট ক্লে, এক চা-চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার আর সামান্য পানি। একটা কাচের বাটিতে সব উপাদান নিয়ে কাঠের অথবা নন-মেটাল চামচ দিয়ে মিশিয়ে একটা ক্রিমি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর এটি বগলে মাখিয়ে রাখতে হবে বিশ মিনিট অব্দি। গোসলের সময় এই মাস্ক ধুয়ে নেওয়া যায়, অথবা একটু উষ্ণ পানিতে ভেজানো কাপড় নিংড়ে নিয়ে মুছে নিলেও চলবে। প্রতিদিন এ প্রক্রিয়ায় করে নেওয়া যাবে আর্মপিট ডিটক্সিফায়িং।
ডিটক্স মাস্কের পাশাপাশি আরও কিছু পন্থা অবলম্বন করা যায়, যা দেহের এই অংশের ঘাম আর দুর্গন্ধ রোধে সহায়তা করবে।
টি ট্রি অয়েল, অরিগ্যানো, পিপারমিন্ট অথবা ইউক্যালিপটাসের মতো উপাদানযুক্ত বডিওয়াশ বা সাবান দিয়ে নিয়মিত গোসল করা যেতে পারে। এর প্রতিটি দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর।
গোসলের পর আর্মপিট ভালো করে মুছে নিতে হবে। ভেজা থাকলেই সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেবে, ছড়াবে দুর্গন্ধ।
যাদের বেশি ঘাম হয়, তারা সুতি বা সিল্কের মতো ন্যাচারাল ফ্যাব্রিকে তৈরি কাপড় পরলে ভালো। পোশাক নিয়মিত পরিষ্কার রাখাও প্রয়োজন।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: মিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান