ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ওহে নারী তোমারই লাগিয়া
মোদা দোন্না। নারীর ফ্যাশন। হ্যাঁ, তা বটে। আগামী শীত আর বসন্তের জন্য। প্রতিবারই হয়। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি; বরং শো, প্রদর্শনী ইত্যাদি মিলিয়ে ওই এক সপ্তাহে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাশন ক্যাপিটাল মিলানে ফেব্রুয়ারির শেষে রুটিন মেনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৭০টি ইভেন্ট।
নিউইয়র্ক ও লন্ডনে নতুনদের জয়জয়কার থাকলেও মিলান আর প্যারিসে প্রবীণদেরই রাজত্ব। তাই প্রতিষ্ঠিত ডিজাইনাররাই বেশি থাকেন তাঁদের সৃজনসম্ভার নিয়ে। তবে ঐতিহ্যবাহী হাউজগুলো অবশ্যই থাকে তালিকার শীর্ষে। প্রাদা, গুচি, আরমানিরা ছিলেন বরাবরের মতো প্রোজ্জ্বল। এবারও মিলান ছিল জাঁক আর জমক।
তবে লন্ডন আর নিউইয়র্কে নারীত্ব এবং নারীবাদ নিয়ে আন্দোলনের ঝলক ছিল। কিন্তু মিলান ফ্যাশনে রাজনৈতিক বিবৃতি তুলে না ধরেও ডিজাইনাররা প্রকাশ করেছেন নারীর ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। উত্তেজনা উসকানো প্রবণতা সত্ত্বেও রবার্তো ক্যাভালির কালেকশনে ছিল পরিণতির ছাপ।
উজ্জ্বল রঙ এবার লন্ডনের মতো মিলানেও রানওয়ে আকর্ষণ করেছে। তবে ম্যাচিং থেকেছে গুরুত্বহীন। ভারসাচির শোতে দোনাতেল্লা বল স্কার্ট ত্বকচুম্বিত ক্যাট স্যুটে দেখিয়েছেন ফর্মের খেলা।
মিউসিয়া প্রাদা নতুন ট্রেন্ডে স্বস্তি খুঁজেছেন, তবে অবশ্যই পদ্ধতিগতভাবে পৃথক পথে হেঁটে। তাঁর প্রিন্ট ছিল আকর্ষণ এবং ভবিষ্যতাশ্রয়ী। ছায়াপথের আবহ। তবে প্রাদা এবার অন্যভাবে চমকে দিয়েছেন। ১৯ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ মডেল আনক ইয়াইকে দিয়ে শো শুরু করিয়ে। ১৯৯৭ সালে অর্থাৎ ২০ বছর আগে প্রথমবার এটা করেছিলেন নাওমি ক্যামবেল। এবার অ্যানিমেল প্রিন্ট ব্যবহার করেছেন ওসি ক্লার্ক আর ক্যাভালির পল সারিজ।
ম্যাক্স মারার কৃষ্ণনান্দনিকতা যেমন ছিল, তেমনি মারনিতে উজ্জ্বল নীল আর সবুজের চোখধাঁধানো উপস্থিতি। আলবার্তো ফেরেত্তির হাঁটু ছুঁইছুঁই ট্রেঞ্চকোট, জিল স্যান্ডারের সহজ সিলুয়েটের কোট ছিল উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে গুচির কালেকশনে অ্যালেসান্দ্রো মিশেল দেখিয়েছেন তাঁর রূপান্তর। এই কালেকশনে বলতে গেলে নিজের ঢাকে নিজেই কাঠি দিয়েছেন।
অবশেষে পথ এসে মিলেছে প্যারিসে
অটাম-উইন্টার ফ্যাশন উইকের ক্যারাভান শেষ পর্যন্ত এসে হাজির হয়েছে প্যারিসে। পর্দা নেমেছে সেখানে লুভর মিউজিয়ামে কোর্ট ইয়ার্ডে। এই লুসুল কোর্ট ইয়ার্ড নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সময় তৈরি হয়েছিল অশ্বারোহীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য। এই প্যাসেজকেই বেছে নেয়া হয় লুই ভুইতোঁর শোর জন্য। ভবিষ্যতাশ্রয়ী টুইড ভেস্ট পরানো হয়েছে সোয়েটারের উপরে। মডেলরা পরেছেন সাইফাই ইউনিফর্ম, তার সঙ্গে টুইড স্যুট স্কার্ট, লেদা স্কার্ট, ক্রপড জ্যাকেট। তবে লুই ভুইতোঁয় আজেদাইন আলাইয়ার মৃত্যুর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁর ডিজাইন করা পোশাকের অর্ডারে এখনো সয়লাব শোরুমগুলো।
কেবল লুই ভুইতোঁ নয়, দিওরে মারিয়া গ্রাৎজিয়া চিউরি, ক্লোয়িতে নাতাশা র্যামসে লিভাই, আলেকজান্ডার ম্যাককুইনে সারাহ বার্টন এবং স্টেলা ম্যাককার্টনিরা তাঁদের সৃষ্টির অনন্যতা উপস্থাপন করেছেন প্যারিসে।
গেল মৌসুমের স্ট্রিট ফ্যাশন প্রভাব থেকে বেরিয়ে ভ্যালেন্তিনো ফিরেছেন রোম্যান্টিক নান্দনিকতায়। ফলে স্ক্যালপ ট্রিম, ফ্লোরাল নিট আর মেঝে ছোঁয়া গাউনে ভরাট কাচ, এম্ব্রয়ডারি আর অ্যাপ্লিকেতে সেই রোম্যান্টিসিজম উপস্থিত পুরোমাত্রায়।
সাঁ লোর বিবর্তন প্রতীয়মান গাঢ় থেকে উজ্জ্বল রঙে। অন্যদিকে হেমন্তের যে মন কেমন করা রোম্যান্টিসিজম, তাকে অনবদ্য নৈপুণ্যে ফুটিয়ে তুলেছে শ্যানেল। সে জন্য বেছে নেয়া হয়েছে রাজকীয় প্রাসাদ-অভ্যন্তরের ওক গাছের সারি। ঝরা পাতা মাড়িয়ে এগিয়েছেন মডেলরা বিমূর্ত পাতার ছাপে গোড়ালিদীর্ঘ টুইড স্কার্ট স্যুট আর শ্যানেল সিল দেয়া পাফার জ্যাকেটে।
স্টেলা ম্যাককার্টনি এবার পুরুষদেরও সহাবস্থান ঘটিয়েছেন নারীদের সঙ্গে। স্বপ্নের মতো ট্রম্পে লা’ওয়েই প্রিন্ট আর ডিকনস্ট্রাক্টেড লেয়ারে স্টেলা ফুটিয়েছেন তাঁর সিগনেচার টেলরিং।
তবে বলতেই হবে, দিওর কালেকশনে মারিয়া গ্রাৎজিয়া চিউরি রাজনীতিকে স্থান দিয়েছেন। তিনি তুলে ধরেছেন ১৯৮৬ সালে প্যারিসের ছাত্রবিক্ষোভ। দিওর হাউজের বাইরে সেই সময়ে এক নারীর প্ল্যাকার্ড হাতে ছবিই হয়েছে প্রেরণা। নিটে প্রিন্ট করা হয়েছে স্লোগান। বিভিন্ন দৈর্ঘ্যরে প্লিটেড কিল্টের সঙ্গে ম্যাচ করে পরানো হয়েছে পুরুষালী জ্যাকেট। অরগ্যাঞ্জা ড্রেসে উলেন এম্ব্রয়ডারির সৌন্দর্য অবাক করে।
স্টাফ রিপোর্টার
ছবি: ইন্টারনেট