সেলুলয়েড I দ্য র্যাট ট্র্যাপ
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: আদুর গোপালকৃষ্ণান
অভিনয়: কারামানা জনারদানান নায়ের, শারদা
চিত্রগ্রহণ: মনকাড়া রবি ভার্মা
সংগীত: এম. বি. শ্রীনিবাসন
সম্পাদনা: এম. মনি
সময়ব্যাপ্তি: ১২১ মিনিট
ভাষা: মালয়ালম
দেশ: ভারত
মুক্তি: ১৯৮২
উপমহাদেশের চলচ্চিত্র কিংবদন্তি ঋত্বিক ঘটক যখন পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের [ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া] শিক্ষক ছিলেন, তখন তার সরাসরি ছাত্র থাকা যে কজন পরবর্তীকালে বিশ্ব চলচ্চিত্রে নিজস্ব ফিল্ম-ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে নিজেদেরও কিংবদন্তির কাতারে নিয়ে যেতে পেরেছেন, তাদের একজন আদুর গোপালকৃষ্ণান। ফিচার ফিল্মে এই মাস্টার ফিল্মমেকারের একেবারেই প্রথম দিকের অনবদ্য সৃষ্টি ‘দ্য র্যাট ট্র্যাপ’। ফ্রান্সের জগদ্বিখ্যাত কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হওয়া এই চলচ্চিত্র তাকে নির্মাতা হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সম্ভ্রমজাগানিয়া জায়গা করে দিয়েছে।
এক অভিজাত পরিবারের ক্ষয়কালের নিদারুণ গল্প দেখায় দ্য র্যাট ট্র্যাপ। একদার সেই আভিজাত্য এখন আর নেই। কালের বিবর্তনে সহায়-সম্পত্তিও কমে এসেছে। পারিবারিক প্রাসাদও জনাজীর্ণ। তবু পরিবারটির এ প্রজন্মের মধ্যবয়সী কর্তাব্যক্তিটির জীবন-যাপন ও আচার-আচরণে রয়ে গেছে পূর্বপুরুষের অহম। সেই অহম তাকে বর্তমান সময় ও সমাজ থেকে করে দিয়েছে একেবারেই বিচ্ছিন্ন। বাড়ির গণ্ডিতেই মূলত কাটে তার জীবন। সে জীবন কোনো ফাঁদে আটকা পড়া ইঁদুরের মতোই অস্থির ও অসহায়। পরিবারে রয়েছে সে আর তার দুই বোন। সকলেই অবিবাহিত। আরেক বোন, বয়সে বড়, যার বিয়ে হলেও বারবার সেই বোন ও বোনের ছেলে হানা দেয় সম্পত্তির ভাগ চেয়ে; চালায় নানান অপতৎপরতা। অন্যদিকে, বিবিধ উৎপাতও জারি থাকে। সঙ্গে জারি থাকে আক্ষরিক অর্থেই ইঁদুরের উৎপাত।
চলচ্চিত্রটির শুরুতেই রাতের বেলা ইঁদুরের পেছনে পরিবারের তিন ভাই-বোনের ছুটে বেড়ানো, এবং ফাঁদে আটকা পড়া ইঁদুরকে সকালবেলা খাঁচা বা ফাঁদবন্দি অবস্থায় পুকুরে চুবিয়ে মারতে দেখি আমরা। ছবির শেষ দিকেও একইরকম দৃশ্যের দেখা মেলে। তবে এ বেলা ইঁদুরটি কোনো আক্ষরিক ইঁদুর নয়; বরং স্বয়ং ওই কর্তাব্যক্তি। সেখানে শিকারি একদল অজ্ঞাত লোক, যারা দীর্ঘদিন ঘরবন্দি এবং ইঁদুরের মতোই আতঙ্কগ্রস্ত থাকা কর্তাব্যক্তিটিকে চ্যাংদোলা করে ফেলে দেয় সেই পুকুরেই—ডুবিয়ে মারার জন্য। মাঝখানে এক মহাকাব্যিক ভঙ্গিমায় এগোতে থাকে পরিবারটির যাপনচিত্র। যাতে অসুস্থ হয়ে ঘরে দিনের পর দিন ধুঁকতে থাকা, এতকাল ধরে সংসারের ঘানি টেনে যাওয়া মেজ বোনটিকে একপর্যায়ে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় প্রতিবেশীরা। তার পরিণতি কী হয়, জানা নেই আমাদের। অন্যদিকে, ছোট বোনটি আগেই পালিয়েছে, সম্ভবত প্রেমিকের সঙ্গে।
আপাতদৃষ্টে একটি ক্ষয়িষ্ণু অভিজাত পরিবারের চিত্র হলেও দ্য র্যাট ট্র্যাপ বৃহদার্থে আধুনিক জীবনের এক নির্মম রূপক হয়ে উঠেছে। প্রাত্যহিক জীবনচক্রে যে জীবন আমাদের, তা যেন প্রকৃত অর্থেই ফাঁদে পড়ে যাওয়া ইঁদুরের মতো। অন্যদিকে, এই চলচ্চিত্রে আদুর গোপালকৃষ্ণানের শট ও সংলাপ নির্বাচন, ফ্রেমের বিমুগ্ধকারী বিন্যাস এবং কম্পোজিশন আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় জীবনের প্রাগৈতিহাসিক রূপ ও রসের এক অন্যতর তিক্ততাকে অবলোকনের সামনে।
i আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। আদুর গোপালকৃষ্ণানের সরাসরি শিক্ষক ছিলেন কোন চলচ্চিত্রকার?
[ক] মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি
[খ] জ্যঁ-লুক গোদার
[গ] ঋত্বিক ঘটক
[ঘ] ফেদেরিকো ফেল্লিনি
২। দ্য র্যাট ট্র্যাপ কোন ভাষার চলচ্চিত্র?
[ক] হিন্দি
[খ] মালয়ালম
[গ] বাংলা
[ঘ] ইংরেজি
৩। এই চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার হয়েছিল কোন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে?
[ক] কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
[খ] কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব
[গ] ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসব
[ঘ] মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
গত পর্বের বিজয়ী
১. ফারজানা লিসা, ধানমন্ডি, ঢাকা
২. ফাতেমা জান্নাত, খালিশপুর, খুলনা
৩. সুপ্রিয়া রায়, চট্টগ্রাম