skip to Main Content

হট স্পট I শতবর্ষী শাঁখারীবাজার

শহরে সবচেয়ে ভালো শাঁখা মিলবে কোথায়? উত্তর একটাই—শাঁখারীবাজারে। ঐতিহ্যবাহী এই এলাকার নামটাই যে শাঁখারিদের নামানুসারে। একসময় ঢাকায় তৈরি এ শিল্পকর্মের নামডাক ছিল দুনিয়াজোড়া। এখনো সে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে প্রায় চার শ বছরের পুরোনো এলাকাটি। সতেরো শতকে মোগল শাসনামলে খাজনাবিহীন লাখেরাজ জমি প্রদান করে বিক্রমপুর থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় দক্ষিণ ভারত থেকে আগত শঙ্খবণিক আর কারিগরদের। স্থাপিত হয় শাঁখারীপট্টি বা বাজার। ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছাকাছি নিম্ন আদালত ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে প্রায় দুই শ মিটার পেরোলে মিলবে এই এলাকা।
এখানে শুধু শাঁখা নয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা ধরনের অনুষঙ্গ, যেমন পলা, সিঁদুর, আলতাও মিলবে। আছে পূজা আর বিয়ের প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী থেকে শুরু করে কাঁসা, পিতল, তামার নানা তৈজসপত্র, প্রতিমার পোশাক, পূজার ফুল, প্রতিমার ছবির ফ্রেমসহ আরও আনকোরা সব জিনিসপত্র। এমনকি ঐতিহ্যবাহী সব বাদ্যযন্ত্র তৈরির প্রতিষ্ঠানও মিলে যাবে এই এলাকায়। রয়েছে সারি সারি টিপের দোকান। চোখে পড়বে ঘুড়ি বেচাকেনাও। গলির এ-মাথা থেকে ও-মাথা সারি সারি এসব দোকানে বিকিকিনি শুরু হয় সকাল দশটা থেকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ভিড়ভাট্টা। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিনই চলে বেচাবিক্রি।
শাঁখারীবাজারের গলির বেশ আগেই চোখে পড়বে গুটি কয়েক ভ্রাম্যমাণ দোকান। রাস্তার ওপরেই কাপড় বিছিয়ে চলে বেচাকেনা। এখানে মিলবে বিডসের গলার মালা, চুড়ি, কানের দুলসহ রংবেরঙের গয়না। পাওয়া যাবে মেটালের তৈরি চুড়ি, আংটি, কানের দুল, নেকপিস। এমনকি রত্নপাথর বসানো আংটিরও পসরা মিলে যাবে। দাম ২০ টাকা থেকে শুরু করে শ পাঁচেক অব্দি। শাঁখারীবাজারে গলির শুরু থেকেই চোখে পড়ে শাঁখা-পলার দোকান। থরে থরে সাজানো সফেদ এসব গয়না নজর কাড়বে দোকানের বাইরে থেকেই। সঙ্গে পলার পসরা। এখানে বিভিন্ন নকশার শাঁখা মিলবে। বাঁধানো এবং বাঁধানো ছাড়া। বাঁধানো ছাড়া যেগুলো, সেগুলোর দাম জোড়া তিন শ থেকে শুরু। আর গোল্ড প্লেটে বাঁধানো শাখা চাইলে গুনতে হবে হাজার টাকা। মিলবে খাঁটি সোনায় বাঁধানো শাঁখাও। শুরু চার হাজার থেকে, দাম ওঠে হাজার দশেক অব্দি। শাঁখার নকশাতেও মিলবে ভিন্নতা। নামও বাহারি—বেকি, কঙ্কন, বেণি, শঙ্খপাতা, ধানছড়া, দড়িবান, বাজগিট্টু, চিত্তরঞ্জন, পানবোট, সতীলক্ষ্মী, জলফাঁস, হাইসাদার, দানাদার, লতাবলা, তারপেঁচ, মোটালতা, নাগরী বয়লা—আরও কত কী। তবে আক্ষেপ, হাতে নকশা করার কারিগরির বদলে এখনকার শাঁখায় আধিপত্য মেশিনের। দেখতে ঝকঝকে হলেও স্থায়িত্ব কম এগুলোর।

পলার একদম সাদামাটা নকশা যেমন চোখে পড়বে, রয়েছে পুঁতি পাথর আর গোল্ড প্লেট করাগুলোও। দাম ২০ টাকা থেকে শুরু। যারা টিপ পরতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য দারুণ জায়গা এ শাঁখারীবাজার। একদম ছোট থেকে মাঝারি কিংবা ঢাউস সাইজের সব টিপ সাজানো মিলবে এখানে। কোনোটা কৌটায়, তো কোনোটা আবার পাতায়। রং আর নকশায় মিলবে বৈচিত্র্য। কোনোটা একদম সাধারণ তো কোনোটায় পাথরের কারুকাজ। এ ছাড়া গুটি কয়েক মিলবে ধুতি, শাড়ি, কামিজসহ হরেক রকমের পোশাক। বেশির ভাগই ভারত থেকে আমদানি করা। কিছু দেশীয় পোশাক মিলতে পারে খুঁজে ফিরলে। দামটা নাগালের মধ্যেই—পাঁচ শ থেকে হাজার পাঁচেকের মধ্যেই সেরে নেওয়া যাবে কেনাকাটা। যাদের ধাতুতে তৈরি তৈজসপত্রে আগ্রহ, তাদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু দোকান। থালা-বাটি-ঘটি থেকে হাঁড়ি, পাতিল, কলস—মিলবে সবই। সাইজ পছন্দ করে কিনে নেওয়া যাবে। তবে এখানে পিস হিসেবে নয়, এগুলো বিকোয় কেজি দরে। দাম ওঠানামা করে বাজারদর অনুসারে। মিলবে মূর্তি, ঘণ্টা, পঞ্চপ্রদীপ, আম্রপল্লব, ধূনতি, মন্দিরাসহ পূজার নানা নৈবেদ্য। তবে দামাদামিতে পটু হওয়া প্রয়োজন।

 গরদের শাড়ি ১৫৫০ টাকা
 পঞ্চপ্রদীপ ৮৫০ টাকা
 তামার থালা ৬৮০ টাকা
 ঘট ৩০০ টাকা
 ধূনতি ৫৫০ টাকা
 মন্দিরা ২০০ টাকা
 আম্রপল্লব ৫০ টাকা
 পলা ও শাখা৪৫০ টাকা

 ফ্যাশন ডেস্ক
মডেল: নীলাঞ্জনা নীলা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব ও অ্যাকসেসরিজ: শাঁখারীবাজার
ছবি: ছবি: আহনাফ আকিব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top