ফিচার I বিবাহ বেতাল
বিয়ে ঘিরে বিভিন্ন সমাজে রয়েছে বিবিধ রীতি। কিছু কিছু তো একেবারেই আজব। এমনই কয়েকটির খোঁজ
থুতু দাওয়াই
বিয়ের জন্য সাজানো হয়েছে কনেকে। একটু পরই যাবেন শ্বশুরবাড়ি। বাঁধবেন নতুন সংসার। তাকে কীভাবে বিদায় দেবেন বাবা? মাথায় হাত বুলিয়ে শুভকামনা জানাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কন্যার মাথায় ও স্তনে থুতু ছিটিয়ে দেবেন? এমন আজব রেওয়াজই রয়েছে কেনিয়ার মাসাই সম্প্রদায়ে। আসলে এই জাতিগোষ্ঠীর লোকজন বিশ্বাস করেন, থুতু ছিটানো সৌভাগ্যের প্রতীক। শুধু কেনিয়া নয়, আরও বেশ কিছু দেশে ছড়িয়ে থাকা মাসাই সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে জায়গা করে নিয়েছে। আর বিয়েই নয়, এমনকি বয়স্কজনের সঙ্গে হাত মেলানোর আগে নিজের হাতে থুতু ছিটানোর রেওয়াজ রয়েছে ওই সমাজে। সেটি তারা শ্রদ্ধা প্রকাশের উদ্দেশ্যেই করে থাকেন! মন্দ ভাগ্য ও বালা-মুসিবত দূর করতে নবজাতকের গায়ে থুতু ছিটানোর রেওয়াজও রয়েছে মাসাই সমাজে।
ঘড়ি ধরে কান্না
বিয়েতে কান্নাকাটির ব্যাপার ঘটেই। মূলত কনেপক্ষের দিক থেকে। তাই বলে ঘড়ি ধরে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে? চীনের তুজিয়া নৃগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে এই চল। বিয়ের এক মাস আগে শুরু হয় এই সময়নির্দিষ্ট কান্না। শুরু করেন কনে। ১০ দিন পর সেই কান্নায় যোগ দেন তার মা। আরও ১০ দিন পর দাদি-নানি। এভাবে একে একে যোগ দেন পরিবারের সব নারী সদস্য। তাতে কান্নার এক বেসুরো রোল পড়ে যায় কনের বাড়িতে।
চাবুকের চাপ
বিয়ে করতে গিয়ে পিটুনি খাওয়ার ঘটনা যে কালেভদ্রে ঘটে না, তা তো নয়। তাই বলে নিয়ম করে পেটাতে হবে বরকে? তেমনই রেওয়াজ রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু মানুষের মধ্যে। সেখানে নববধূকে ঘরে তোলার আগে বরকে সইতে হয় নিদারুণ এক শারীরিক যন্ত্রণা। তার পায়ে আচ্ছামতো পেটানো হয়! এ কাজ করে বরপক্ষই। তারা বরের পা থেকে জুতা খুলে নেন। তারপর রশি দিয়ে বেঁধে দেন পা। পরে লাঠি কিংবা শুকনো মাছ দিয়ে আচ্ছামতো পেটানো হয় পায়ে। এ ঘটনা অবশ্য মজা করে নয়, বরং বরের মানসিক ও শারীরিক সহনশীলতা এবং তার ব্যক্তিত্ব পরখ করে নিতেই।
কালো-কীর্তি
স্কটল্যান্ডের কিছু অংশে রয়েছে আরেক আজব রীতি। বর-কনেকে ‘কালিমা’ দেওয়ার চল। নাম, ‘ব্ল্যাকেনিং’। সাধারণত বিয়ের আগের দিন বর ও কনেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন তাদের বন্ধুরা। তারপর তাদের সারা শরীরে মাখিয়ে দেন গুড়, কালিঝুলি, পালক ও ময়দা। এভাবে বর-কনেকে ‘মুরগি’ বানিয়ে রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে বেড়ান! দেশটির ইউনিভার্সিটি অব দ্য হাইল্যান্ডসের তথ্য থেকে জানা যায়, এই রেওয়াজ মূলত নতুন সংসারকে মন্দ আত্মার রোষানল থেকে বাঁচাতে।
প্রকৃতির ডাকে মানা
বিয়ে ঘিরে বর-কনেকে এমনিতেই একটু চাপে থাকতে হয়। তাই বলে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া মানা? তা-ও টানা তিন দিন? মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার টিডং জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে এমনই উদ্ভট রেওয়াজ। বিয়ের পর বর-কনেকে ওই নির্দিষ্ট সময় ধরে নিজেদের বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হয় না। এমনকি রীতিমতো পাহারা দিয়ে রাখা হয় তাদের, যেন বাথরুমে একবারও যেতে না পারেন! এ সময়ে খাবার ও পানীয়ও দেওয়া হয় খুব সামান্য। টিডং সংস্কৃতিমতে, দাম্পত্য জীবনে যেন কোনো কালো ছায়া না পড়ে, সংসার ভেঙে না যায়, সন্তানের অপমৃত্যু না ঘটে; সে জন্যই এমন কঠোর বিধিনিষেধের ভেতর তিনটি দিন কাটাতে হয় নববধূ ও তার বরকে।
ভাঙচুরের খেলা
জার্মানির কিছু বিয়ে পরিণত হয় ভাঙচুরের মহোৎসবে। বিয়ের দিন সন্ধ্যায় কনের বাড়িতে চলে তা। সেখানে অতিথিরা জড়ো হয়ে ইচ্ছেমতো ভাঙচুর করতে থাকেন চীনামাটির বাসনপত্র। ঐতিহ্যগতভাবে এটি ‘পল্টারাবেন্ড’ নামে পরিচিত। এই ভাঙচুরের উদ্দেশ্য অবশ্য ভালো! বর-কনের জন্য মঙ্গল বয়ে আনা। একই সঙ্গে চোখের সামনে এত এত বাসনপত্র ধ্বংস হতে দেখে নবদম্পতি ধৈর্যের বাঁধ কতক্ষণ আটকে রাখতে পারে, সেটাও পরখ করে নেওয়া।
হাসতে মানা
নিঃসন্দেহে বিয়ে বর-কনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর প্রধানতম। এমন দিনে তারা একটুও হাসতে পারবেন না, এ কেমন রেওয়াজ? হ্যাঁ, এমন রেওয়াজেরই চল রয়েছে কঙ্গোর কিছু অংশে। বিয়েকে ‘ভালোবাসার বন্ধনে’র মতো রোমান্টিক তকমায় জাহির করতে তারা নারাজ। বরং একে ‘খুবই গুরুতর ঘটনা’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই ‘যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য’ ধরে রাখতে বিয়ের দিন বর-কনের মুখে হাসি ঝিলিক দেওয়া বারণ!
চুমুয় চ্যাপ্টা
পশ্চিমা সমাজে নব দম্পতির চুমু খাওয়া খুবই পরিচিত দৃশ্য। আর তা সাধারণত বিয়ে পড়ানোর মুহূর্তে আলতো করে একটিবার। কিন্তু সেই চুমুকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন সুইডিশরা। সুইডেনে ব্রাইডাল পার্টিতে ঘরভর্তি পুরুষ অতিথির মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয় নববধূকে। পার্টি যতক্ষণ চলে, তাকে ইচ্ছেমতো চুমু খেতে থাকেন ওই অতিথিরা। যদি অতিষ্ঠ হয়ে নববধূ পার্টি ছেড়ে চলে যান, তাহলে আরেক মুসিবত! তখন নারী অতিথিদের পাল্লায় ছেড়ে দিতে হয় নতুন বরকে। আর স্ত্রীর বদলে তাকে সইতে হয় চুমুর অত্যাচার!
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ