skip to Main Content

ফিচার I পাত্রীর পুষ্টি

বিয়ের ধকল সামলাতে মাসখানেক আগে থেকে কনের পাতে আনা চাই রদবদল। কিছু খাদ্য পরিহার এবং কিছু পদ নিয়মিত গ্রহণের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারে তার দেহকোষ, ত্বক কিংবা চুলের পুষ্টি

বিয়ে মানেই নতুন জীবনে প্রবেশ। সঙ্গী কেমন হবে, তা নিয়ে এ সময় টেনশন কাজ করে। তা ছাড়া মেয়েদের ওপর চাপে শ্বশুরবাড়ির চিন্তা। এ ধরনের স্ট্রেস হবু বধূর স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ সময়ে খাবারে বাছবিচার করা উচিত। নিশ্চিত করতে হবে কনের পুষ্টি।
বিয়ের আগে কনের পাতে চাই পদের পরিবর্তন। খাবার গ্রহণে আনতে হবে নিয়ন্ত্রণ। বিয়ের কিছুদিন আগে থেকেই বিশেষ কয়েকটি খাবার খাওয়া শুরু করলে বিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে থাকা যাবে প্রাণবন্ত।
সকালে খাওয়া যেতে পারে আটার রুটি। সঙ্গে সেদ্ধ সবজি ও শসার স্যালাড। দুপুরের খাবারের আগে একটি ডিমের সাদা অংশ এবং টকজাতীয় ফল। দুপুরে ভাত, তবে তা খেতে হবে ৬০-৭০ গ্রাম। খাওয়া যেতে পারে মাছ বা মুরগির ঝোল দিয়ে। সঙ্গে সবজি, স্যালাড ও ডাল। শেষ পাতে টক দই। ব্যস, দুপুরের খাবার শেষ।
বিকেলে হালকা নাশতা। রাখা যেতে পারে মুড়ি বা বিস্কুট। রাতে সবুজ সবজি, ডাল ও এক টুকরা মাংস। টক দই যোগে এক বাটি স্যালাড খেয়ে নিলেও উপকার মিলবে।
আগাম প্রস্তুতির জন্য কনেরা বিয়ের এক সপ্তাহ আগে থেকে ডাবের পানি পান শুরু করলে উপকার মিলবে। এতে শরীরে খনিজের ঘাটতি মিটবে। তা ছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। বিয়ের আগে কিছুদিন সকালে উঠেই একটু বাড়তি পরিমাণ পানি পান করা যেতে পারে। এতে শরীর থেকে টক্সিক বেরিয়ে যাবে। তা ছাড়া ঘুম থেকে উঠে একটি আপেল খাওয়া যেতে পারে।
সকালের নাশতায় অনেকের পাউরুটি খাওয়ার অভ্যাস। বিয়ের কনেদের জন্য এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপাদেয় হবে ব্রাউন ব্রেড। বিয়ের এক মাস আগে থেকেই সম্ভব হলে বাইরের খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। বাড়িতে বানানো খাবারগুলো খাওয়ার অভ্যাস করলে বিয়ের আগে ও পরে ফিট থাকা যাবে।
বিয়ের আগে খাওয়ার পদে রদবদল আনার পাশাপাশি কিছু অভ্যাসে আনতে হবে পরিবর্তন। এক মাস কিংবা ন্যূনতম এক সপ্তাহ আগে থেকে এসব বদল আনলে সুফল মিলবে। যেমন প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। দৈনিক আমিষের চাহিদা পূরণ হয়, সেভাবেই ডায়েট ঠিক করা চাই। খাবার রান্নায় যতটা সম্ভব সয়াবিন তেল এড়িয়ে অলিভ অয়েল বা রাইস ব্রান অয়েল ব্যবহার করা হবে স্বাস্থ্যসম্মত।
সুস্থতা নিশ্চিতে স্যালাডের প্রতি বেশি জোর দেওয়া ভালো। কেননা বিয়ের প্রস্তুতি হিসেবে কনেদের ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তাই ভাত ও রুটির পরিবর্তে বেশি ফলমূল ও স্যালাড খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় ফাইবার মিলবে।
বিয়ের কনের স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন কিছু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করা জরুরি। বেশি চিন্তার কারণে শরীরের ক্যালরি কমে যায়। তাই প্রতিদিন সকালে বিয়ের কনে এক মুঠ বাদাম খেলে ক্যালরির ঘাটতি দূর হবে। অন্যদিকে, সবজির তরকারি পছন্দ না হলে তা দিয়ে জুস বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টির পাওয়ার পাশাপাশি স্কিনও ভালো থাকবে।
চাকরিজীবী মেয়েদের ক্ষেত্রে কাজের চাপের জন্য অনেক সময় খাবারে নিয়ম মানার সুযোগ হয় না। তা ছাড়া সব সময় হাতের কাছে পুষ্টিকর খাবারও মেলে না। সে ক্ষেত্রে বাইরে বেরোনোর আগে সঙ্গে রাখা যেতে পারে ড্রাই ফ্রুট। সেগুলো স্ন্যাকস হিসেবে স্বাস্থ্যসম্মত।
আজকাল স্বাস্থ্যসচেতনেরা চিয়া সিড খুব খাচ্ছেন। বিয়ের কনের জন্যও এটি উপাদেয়। এটি ওমেগা থ্রির খুবই ভালো উৎস। প্রতিদিন সকালে চিয়া সিডের পানি পান করলে উপকার মিলবে। এসবের পাশাপাশি দৈনিক এক বাটি পাকা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। এতে শরীরের প্রতিটি কোষে পুষ্টি পৌঁছাবে। এ ফল খাবার হজমেও সহায়ক।
কনের পুষ্টি নিশ্চিত করতে বিয়ের ছয় মাস আগে থেকে কিছু খাবার খাওয়ায় লাগাম টানতে হবে। তবে একেক কনের ক্ষেত্রে একেক খাবার এড়িয়ে যাওয়া ভালো। যেমন ওপরে ড্রাই ফ্রুট খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হলেও যেসব কনে স্থূলতায় ভুগছেন কিংবা ওজন বাড়ার ভয় আছে, তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের খাবার এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। কেননা, ড্রাই ফ্রুটে অনেক বেশি ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ থাকে, যা ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। চুইংগাম খাওয়াও পরিহার করা চাই। কেননা এটি চিবোলে শরীরে হাওয়া ঢুকে পেট ফেঁপে যায়। বিয়ের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে চুইংগাম খাওয়া বন্ধ রাখা উত্তম।
বিয়ের স্ট্রেস কমাতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। তা নিশ্চিত করতে ঘুমবিনাশী খাদ্য ও পানীয় পরিহার করা ভালো। বিশেষ করে কফি। এটি বেশি পান করলে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ পড়তে পারে। হতে পারে অ্যাসিডিটিও। তবে অনেকের ক্ষেত্রে কফি সয়ে যায়। তারা তা পান করতে পারেন নিশ্চিন্তে।
বাদ দিতে হবে অ্যালকোহলও। এটি হজমে মারাত্মক গণ্ডগোল বাধায়। এমনকি এটি পানে মুড অফ হয়ে থাকার আশঙ্কাও রয়েছে। বিয়ের আগে এমনিতেই স্ট্রেসের শেষ নেই, অ্যালকোহল তা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে এটি এখন কিংবা তখন, কোনো সময়ই স্বাস্থ্যোপযোগী পানীয় নয়। বিয়ের কনের জন্য তো নয়ই।
এখনকার তরুণীরা জাঙ্ক ফুডে বেশ আসক্ত। অবশ্য ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার কিংবা পিৎজা মুড ভালো করলেও হজমের সমস্যা করতে পারে। ফলে বিয়ের আগে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই ওপরে কনেদের বিয়ের আগে হোমমেড খাবারে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
একই সমস্যা বাধাতে পারে কার্বোনেটেড ওয়াটার। এসবের মধ্যে প্রচুর চিনি থাকে। ড্রাই ফ্রুটের মতো এটিও কনেকে বিয়ের আগে স্থূল করে দিতে পারে। মাসখানেক আগে থেকে এ ধরনের পানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াই ভালো হবে বিয়ের কনের জন্য।
আরও কিছু খাবার রয়েছে, বিয়ের বেশ কিছুদিন আগে থেকে যেগুলো পাতে রাখলে কনের পুষ্টি নিশ্চিত হবে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো গাজর। এটি ফ্রি র‌্যাডিক্যাল দূর করে স্কিন সতেজ রাখে। বিয়ের আগে শরীরের অভ্যন্তরীণ পুষ্টির মতো ত্বকের পুষ্টিও জরুরি। তাই কনে বেশি করে গাজর খেলে উপকার হবে। একই কাজ করবে টকজাতীয় ফল। এসব ফল অ্যান্টিঅক্সিজেন হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি কোলাজেন তৈরি করে। ফলে পুষ্টিকর ত্বক মেলে। এসব ছাড়াও কনেরা বিয়ের অন্তত ১৫ দিন আগে থেকে বিট, বেরি, কলা ও পেয়ারা খেলে সুফল মিলবে। এসব খাদ্য শরীরের ভেতরের পুষ্টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ত্বক ও চুলকেও করে তুলবে প্রাণবন্ত।

 আহমেদ সজিব
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top