বহুরূপী I কেক কীর্তি
সেরা কেক কোনটি, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান অনেকেই। কেননা, একেক ভোক্তার রয়েছে একেক ধরন বা ফ্লেভারের কেকের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা। স্বাদ, দাম, মান, উপলক্ষের ভিত্তিতে কেক হয়ে থাকে নানা রকমের।
জন্মদিন উদযাপনে ইয়েলো বাটার কেক বহুল প্রচলিত। এতে চকোলেট ফ্রস্টিং এবং রংধনু ছিটানো বিলো দেওয়া থাকে। এই কেকে সাধারণত মাখন ও চিনি একসঙ্গে ক্রিম করা হয়। তারপর শুকনো ও ভেজা উপাদানগুলো যোগ করা হয় তাতে। এ ছাড়া এর রয়েছে ‘ডাম্প’ সংস্করণ; যেখানে সব উপাদান একটি বাটিতে রেখে সহজভাবে একসঙ্গে মেশানো হয়।
অন্যদিকে, পাউন্ড কেকের নামকরণ এমন হওয়ার কারণ, এর প্রতিটি প্রধান উপাদান (ময়দা, মাখন ও চিনি) এক পাউন্ড করে মিশিয়ে বানানো হয়। এই কেক বেক করার সময় খুব বেশি ওপরে ওঠে না এবং টেক্সচারটি খুব ঘন থাকে। প্রচলিত সংস্করণে কোকো পাউডার থাকে; তবে ক্ল্যাসিক রেসিপিগুলোতে এর প্রকৃত স্বাদ দিতে ভ্যানিলা নির্যাস ছাড়া আর কিছুই ব্যবহার করা হয় না।
দক্ষিণে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ক্ল্যাসিক ডেজার্ট হিসেবে রেড ভেলভেট কেকের বেশ কদর। এটি মাখন কিংবা তেল দিয়ে তৈরি। এই কেকের রং ঐতিহ্যগতভাবে বাটার মিল্ক ও কোকো পাউডারের মিশ্রণ থেকে আসে। এর আধুনিক সংস্করণগুলো সাধারণত লাল ফুড কালার কিংবা রাস্পবেরি ভেলভেট কেকের ক্ষেত্রে গোলাপি রং ব্যবহারের মাধ্যমে এই আভা অর্জন করে।
আরও রয়েছে ক্যারট কেক। বেকিং সোডা ও বেকিং পাউডার দিয়ে তৈরি এই কেকে মাখনের পরিবর্তে প্রধান চর্বির উৎস হিসেবে তেল ব্যবহার করা হয়। গ্রেটেড গাজর যোগ করার ফলে কেকটি অতিরিক্ত আর্দ্র হয়ে ওঠে। ক্যারট কেক উষ্ণ মসলার মাধ্যমে স্বাদযুক্ত হয় এবং ক্রিম পনির ফ্রস্টিং দিয়ে ফ্রস্ট করা থাকে। চাইলে এতে আখরোট যোগ করা যেতে পারে।
স্পঞ্জ কেক এমনই একটি ফোম-স্টাইলের কেক, যাতে কোনো কৃত্রিম বেকিং পাউডার বা বেকিং সোডা নেই। এটি কেবলই সম্পূর্ণ ডিম পোচ কিংবা ডিমের সাদা অংশ থেকে আকৃতি পায়। এই কেকে সিরাপের স্বাদ (যাতে লেবুর শরবত দিয়ে ভিজিয়ে এবং লেবু-দইয়ের একটি প্রলেপ দিয়ে পরিবেশন করা হয়) কিংবা হুইপড ক্রিম এবং থেঁতো করা বেরি দিয়ে স্তরযুক্ত করা হলে খেতে বেশ ভালো লাগে।
ইতালি ও ফ্রান্সে স্পঞ্জ কেককে জেনোইস বলা হয়। জেনোইস কেকে ডিমের কুসুম, ডিমের সাদা অংশ এবং চিনি একসঙ্গে ভালোভাবে ফেটানো হয়। তারপর ময়দার সঙ্গে তেল কিংবা মাখন দিয়ে ভাঁজ করা হয়। এই ধরনের কেক সাধারণ স্পঞ্জ কেকের চেয়ে বেশি আর্দ্র ও কোমল হয়ে থাকে।
স্পঞ্জ ও অয়েল কেকের মাঝামাঝি একটি রূপ হলো শিফন কেক। তেল সংযোজন, ডিমের সাদা অংশ এবং বেকিং পাউডার এটিকে হালকা করে তোলে। অন্যদিকে, সবচেয়ে হালকা কেকের খ্যাতি জুটেছে অ্যাঞ্জেল ফুড কেকের কপালে! এটি ডিমের সাদা অংশ দিয়ে তৈরি করা হয়। এতে কোনো চর্বি থাকে না। ঐতিহ্যগতভাবে এই কেক প্যানে বেক করা হয়। এটিকে প্যানে উল্টো করে ঠান্ডা করা হয়, যেন বাতাসের টেক্সচার বজায় থাকে। এই কেকে প্রচুর চিনি থাকে, যা একে স্পঞ্জের মতো টেক্সচার এনে দেয়।
ফ্লাওয়ারলেস বা ময়দাবিহীন কেক বলতে বেকড (চিজকেক বা চকোলেট টর্টে) ও আনবেকড (যেমন নো-বেক চিজকেক)—উভয় ধরনের কেককেই বোঝায়। এটি উচ্চ চর্বিযুক্ত উপাদানে সমৃদ্ধ। এই কেকগুলোতে নিচের ক্রাম্ব ক্রাস্ট থাকতে পারে; আবার না-ও থাকতে পারে।
এবার আসি আপসাইড-ডাউন কেকের কথায়। মাখন-স্টাইলের কেকের এই ক্ল্যাসিক সংস্করণ ঐতিহ্যগতভাবে আনারস দিয়ে বানানো হয়। তবে বরই, পিচ, ব্লুবেরি, নাশপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল দিয়েও বানানো যেতে পারে। এতে সাধারণত মাখন ও চিনি দিয়ে টপিংগুলো প্যানের নিচে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বেক করার পরে কেকটি এমন রূপ পায়, যাতে ব্যবহৃত ফলটি মুখের দিকে বা ওপরে থাকে।
ডেভিলস ফুড কেক তৈরি করা হয় কোকো পাউডারের মতো চকোলেট যোগ করে। অতিরিক্ত বেকিং সোডা ক্রাম্ব এই কেককে হালকা ও বাতাসযুক্ত টেক্সচার এনে দেয়। এই কেক চকোলেট ফ্রস্টিং বা বাটারক্রিম দিয়ে ফ্রস্ট করা হয়। অন্যদিকে, কলা, আনারস, পেকান ও গরমমসলা দিয়ে স্বাদযুক্ত করা হয় হামিংবার্ড কেক। এটি তৈরি করা হয় ট্যাঞ্জি ক্রিম পনির ফ্রস্টিং দিয়ে। জ্যামাইকায় উদ্ভাবিত এই কেক অতীতে ‘ডক্টর বার্ড কেক’ নামে পরিচিত ছিল, যা ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে।
বলা হয়, কেক ছাড়া পার্টি কেবল সভার মতো লাগে! তাই বলে মাত্রাতিরিক্ত খেয়ে শারীরিক বিপদ ডেকে আনা একেবারেই কাম্য নয়।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট