ফরহিম I বিল্ট আ বেসিক
পুরোদস্তুর পুরুষালি পরিচর্যার পণ্য দিয়ে। ময়শ্চারাইজার কিংবা ক্লিনজারের মতো নিত্যব্যবহার্যের বাইরে। প্রতিদিনকার আপাদমস্তক রূপরুটিনকে আরও ফলপ্রসূ করে তোলার জন্য
কথায় আছে, মোটা অঙ্কে পকেট ভারী থাকলেই নাকি ছেলেদের রূপ খোলতাই হয়! তাই ছোট থেকেই ছেলেরা বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবার লেখাপড়া আর চাকরি নিয়ে যতটা জোর দেন, ছেলের ত্বক বা চুলের যত্নে তার সিকি ভাগও মনোযোগ দেন না। ফলে বয়ঃসন্ধি পেরোতে না পেরোতেই ছেলেদের ত্বকে ব্রণ, অ্যাকনের সমস্যা বাড়তে থাকে, রুক্ষতা দেখা দেয়। ছোট থেকে যত্নশীল না হওয়ায় বাড়ে খুশকি আর হেয়ারফলের মতো নানান সমস্যা। তবে আশার কথা, রূপচর্চায় নারী-পুরুষের এই অদৃশ্য বিভাজন ক্রমেই কমছে। বর্তমানে বেশির ভাগ পুরুষই ঘরে ও বাইরে নিজেদের গ্রুমিং আর অ্যাপিয়ারেন্স নিয়ে সদা সতর্ক। আশপাশের মানুষজনের বাঁকা দৃষ্টিকে এখন থোড়াই কেয়ার করছেন তারা। তবে রূপচর্চার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় মেনে, নিয়ম করে একটা বিউটি রুটিন ফলো করলে তার যথাযথ ফল পাওয়া যায়। সে জন্য প্রয়োজন মেল আইডেন্টিফাইড গ্রুমিং এসেনশিয়াল কিট। তবে তা হওয়া চাই ব্যক্তির প্রয়োজন বুঝে। মাথায় রাখতে হবে ত্বক ও চুলের ধরন, সমস্যা এবং প্রয়োজনীয়তা।
হেয়ার ক্লিপার
ট্রিমার কিংবা ক্লিপার কেনার সময় যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশি মাথায় ঘুরপাক খায়, তা হচ্ছে এটা দিয়ে কি দাড়িটাও ট্রিম করে নেওয়া যাবে? উত্তর—না! কিন্তু উল্টোটা হতে পারে। বিয়ার্ড ট্রিমার ছোটখাটো হেয়ার ডিটেইলিংয়ে কাজে আসতে পারে। হেয়ার ক্লিপারে সাধারণত রোটারি মোটর ব্যবহার করা হয়, যা শক্তিশালী হয়ে থাকে। তাই দাড়ি ছাঁটার জন্য এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো; বরং কিটে একটা ডেডিকেটেড হেয়ার ক্লিপার রাখা চাই, যা শুধু চুলের জন্যই ব্যবহৃত হয়।
মাল্টিটাস্কিং বিয়ার্ড ট্রিমার
একটা ভালো বিয়ার্ড ট্রিমার সংগ্রহে থাকলে তা দিয়ে বিভিন্ন কাজ সেরে নেওয়া যাবে। ফেশিয়াল হেয়ার তো বটেই, পাশাপাশি মাথার চুলের চারপাশের ক্লিনআপের জন্যও দারুণ এগুলো। সাইডবার্ন, কানের ওপরের অংশে, নেকলাইন আর লাইনআপসের জন্যও ব্যবহার উপযোগী। দাড়ি কিংবা গোঁফ থেকে ইতিউতি বেড়ে থাকা চুলগুলো ট্রিম করতে জুড়ি নেই বিয়ার্ড ট্রিমারের। তবে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যরে ও ধরনের গার্ডযুক্ত ট্রিমার কেনাই ভালো। এতে ট্রিমারের যথাযথ উপযোগিতা উপভোগ করা যাবে। চটজলদি ক্লিনআপ সেরে নেওয়া যাবে বাসায় বসেই।
লাইটওয়েট বিয়ার্ড ডিটেইলার
ডেডিকেটেড এই বিয়ার্ড ডিটেইলার বেড়ে যাওয়া আইব্রাও এবং নাকের লোম থেকে মুক্তি দেবে। সেই সঙ্গে দাড়ি ও গোঁফের স্টাইলিংয়েও এটি দারুণ সহায়ক। ইতিউতি বেড়ে ওঠার আগেই সুন্দর করে ট্রিম করে নেওয়ার জন্য। বিয়ার্ড ট্রিমার অনেক ভারী ও বিশাল হয়, যা দিয়ে ডিটেইলিংয়ের কাজ সুন্দরভাবে সারা যায় না। তাই পলকা ওজনের একটা বিয়ার্ড ডিটেইলার গ্রুমিং কিট চাই-ই চাই।
বডি গ্রুমার
যে ট্রিমার দিয়ে চুল বা দাড়ি ট্রিম করা হয়েছে, সেটা দিয়েই আন্ডারআর্ম বা জেনেটাল এরিয়া ক্লিনআপে যারা স্বচ্ছন্দ নন, তাদের জন্য এই টুল। স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। বডি গ্রুমার সাধারণত অ্যাঙ্গেলড অথবা ফেস গার্ডেড হয়ে থাকে, ফলে ক্লোজ ক্লিনআপের জন্য দুর্দান্ত। দেয় মসৃণতা। প্রতি সপ্তাহে এবং মাসে ব্যবহার উপযোগী। গ্রুমারের ব্লেডগুলো সাধারণত ফাঁকা ফাঁকা হয়ে থাকে, ত্বক কেটে বা ছড়ে যাওয়া রোধে।
ট্রাভেল সাইজ ব্লো ড্রায়ার
গ্রুমিং কিটে এর উপস্থিতি নিত্যদিনের স্টাইলিংয়ের সময় বাঁচিয়ে দেবে অনেকখানি। সেই সঙ্গে হেয়ার ড্রায়ারের হিটে চুলকে সেট করে নেওয়া যাবে যেকোনো ধরনের স্টাইলে। ছেলেদের জন্য ট্রাভেল সাইজের ব্লো ড্রায়ারই যথেষ্ট, যদি চুল অনেক বেশি লম্বা না হয়। তবে ডিফিউজার অ্যাটাচমেন্টসহ কেনাই ভালো। এতে ওভারহিটিংয়ের সমস্যা এড়ানো যাবে, যা হিট ড্যামেজকে নিয়ন্ত্রণ করবে। সেই সঙ্গে চুলও শুকিয়ে যাবে চটজলদি। কার্লি চুলের জন্য জুতসই অপশন এগুলো।
হিট প্রটেকট্যান্ট
ব্লো ড্রায়ার ব্যবহারের আগে হিট প্রটেকট্যান্ট স্প্রে, লোশন, তেল অথবা ক্রিম ব্যবহার জরুরি। তাই গ্রুমিং কিটে এর উপস্থিতি প্রয়োজন। এগুলো চুলের ওপর প্রতিরক্ষা আস্তর তৈরি করে দেয় এবং হেয়ার কিউটিকলকে মসৃণ করে চুলে বিদ্যমান আর্দ্রতাকে চুলের মধ্যেই আটকে ফেলে। এতে করে চুল বাইরে দ্রুত শুকিয়ে যায়, ভেতরের কাঠামোর কোনো ক্ষতি না করেই। দীর্ঘস্থায়ী হিট ড্যামেজ থেকে রক্ষা পায় চুল। সেই সঙ্গে উষ্কখুষ্ক ভাব, জটা আর চুলের ভেঙে যাওয়াও এড়ানো যায়।
সেফটি রেজার
যারা ঘন ঘন শেভ করেন, তাদের জন্য। সেফটি রেজার সবচেয়ে কাছ থেকে দাড়ি কাটে বলে ক্লিনেস্ট শেভিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো অপশন। এটি ব্যবহারে একটু কৌশলী হতে হয়, তবে একবার আয়ত্ত করে নিতে পারলে ভালো ফল মেলে। এগুলো সস্তা, তাই ঘন ঘন রিপ্লেস করে নেওয়া যায়। যাদের ক্লিন শেভড, শার্প লুক পছন্দ, তাদের জন্য এটি মাস্ট।
কার্টিজ রেজার
শুরুতে কার্টিজ ব্লেড ব্যবহারেই দাড়ি কাটা বেশি সুবিধাজনক। তাই বিগেনারদের জন্য পারফেক্ট অপশন এগুলো। হালকা এবং ছোট হওয়ায় ইউজার ফ্রেন্ডলিও বটে। অনেক বেশি ক্লোজ শেভ না হলেও এগুলো ব্যবহারে কোনো ধরনের ত্রুটি ছাড়াই সেরে নেওয়া সম্ভব শেভিং। তাই কিটে থাকা চাই কার্টিজ রেজার।
ইলেকট্রিক রেজার
ইনগ্রোন ফেশিয়াল হেয়ার যুক্ত অথবা ব্রণযুক্ত ত্বকের জন্য ইলেকট্রিক রেজার সেরা অপশন। এগুলো গার্ডযুক্ত হয়ে থাকে এবং খুব সহজেই ত্বকের ওপর বুলিয়ে নেওয়া যায়। তাই কাটা-ছেঁড়ার শঙ্কা থাকে না বললেই চলে। যাদের নিয়মিত ট্রাভেল করতে হয় কিংবা কম সময়ে শেভিং সেরে নিতে চান, তাদের জন্য ট্র্যাডিশনাল রেজারের চেয়ে ইলেকট্রিক রেজার দিয়ে কাজ সেরে নেওয়া সহজ হবে। এগুলো দিয়ে শেভিং করার পর দু-তিন দিন আর গ্রুমিংয়ের প্রয়োজন পড়বে না।
প্রটেকটিভ প্রি-শেভ অয়েল
অনেকেই হুড়োহুড়ি করে শেভিং সেরে নিয়ে তারপর অভিযোগ করেন, ইনগ্রোন হেয়ার হচ্ছে কিংবা জ্বালাপোড়া করছে ত্বক। তাই সময় নিয়ে শেভিং করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ব্যবহার করা চাই প্রয়োজনীয় পণ্য। শুরুতে উষ্ণ পানির ঝাপটা দিতে হবে ত্বকে। এতে লোমকূপ খুলে যাবে। তারপর মেখে নিতে হবে প্রি-শেভ অয়েল। এতে ত্বকের ওপর একটা প্রতিরক্ষার আস্তর পড়বে, যা রেজার বার্ন আর কাটা-ছেঁড়া রোধ করবে।
শেভিং এজেন্ট
স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য উপযোগী শেভিং ক্রিম রাখা চাই স্টকে। ত্বক রেজারে অভ্যস্ত হলেও। ফ্র্যাগরেন্স ফ্রি ফর্মুলায় তৈরি সুদিং ও কুলিং এজেন্ট যুক্ত ক্রিম এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো। শেভিংয়ের পর স্কিন টোনিং আফটার শেভ বাম মাখানো জরুরি। এটি যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত করবে ত্বককে। রাখবে সংক্রমণমুক্ত, বজায় রাখবে ত্বকের ভারসাম্য। ত্বকের বাইরে প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করবে।
লাইটওয়েট গ্রুমিং ক্রিম
বিভিন্ন ধরন ও টেক্সচারের চুলের প্রয়োজন বুঝে গ্রুমিং ক্রিম রাখা চাই কিটে। চুলের হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনার জন্য। তবে লাইটওয়েট হওয়া চাই এই ক্রিম। এতে করে ন্যাচারাল হবে স্টাইলিং। সেই সঙ্গে বাড়তি আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষিত থাকবে চুল। শ্যাম্পুর বাড়তি ব্যবহারের ফলে চুলের শুষ্কতার সমস্যাও সারাতে সক্ষম এ ক্রিম। সেই সঙ্গে উষ্কখুষ্ক ভাব থেকেও বাঁচাবে।
ময়শ্চার বাম
চুল কিংবা দাড়ি—দুটোতেই প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা জোগানোর পাশাপাশি এ বামগুলো আর্দ্রতা আটকে রাখার কাজ করে। ফলে কোমলতা বজায় থাকে। সেই সঙ্গে এ বামগুলো ফ্লাইওয়েকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। বাড়তি উজ্জ্বলতাও যোগ করে।
অর্চনা সাহা
মডেল: ইলিয়াস
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ওয়্যারড্রোব: হাউজ অব আহমেদ
ছবি: তানভীর খান