ত্বকতত্ত্ব I আভায় আবশ্যক
বিবাহ-পূর্ববর্তী প্রাত্যহিক পরিচর্যার জন্য। কনের রূপ আরও খোলতাই হবে এতে। সামান্য কিছু সরঞ্জামের সহায়তায়। লিখেছেন সারাহ্ রুশমিতা
বিয়ের পরিকল্পনায় পোশাক, গয়না, সাজসজ্জা—সব থাকল, কিন্তু যদি বাদ পড়ে যায় ত্বকের যত্ন, তাহলেই সেরেছে! পুরো প্রস্তুতির বাকি সব বরবাদ হতে আর দেরি হবে না। তাই বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে যাওয়ার পর থেকে ত্বকের যত্ন প্রয়োজন নিয়মিত। নয়তো সবকিছুই বিফলে যাবে কিন্তু!
ড্রাই ব্রাশিং
ত্বকের উজ্জ্বলতা বেশ খানিকটা নির্ভর করে নিরবচ্ছিন্ন রক্তসঞ্চালনের ওপর। তাই দেহের সব অংশে যেন রক্তসঞ্চালন সমানভাবে হয়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। রক্তসঞ্চালন সঠিকভাবে হলে সেখানে ব্রণ পর্যন্ত হতে পারে না, এতটাই গুরুত্বপূর্ণ এই রক্ত চলাচল। ত্বকের সর্বত্র যদি রক্ত ছড়িয়ে যায়, তাহলে কোনো ধরনের সেলুলাইট তৈরি হতে পারে না। সেলুলাইট তখনই তৈরি হয়, যখন ফ্যাট এবং ফ্লুইড একসঙ্গে জমে ত্বকের নিচে স্ফীত অংশ তৈরি করে। এরপরে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যেহেতু ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে যায়, ফলে ত্বক তার স্বাভাবিক শক্তি হারিয়ে ঝুলে যেতে শুরু করে। স্ফীত অংশগুলো আরও বেশি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
ড্রাই ব্রাশিংয়ের মাধ্যমে ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। শাওয়ারের আগে পুরো শরীরে বুলিয়ে নিলে রক্ত চলাচলের গতি যেমন বাড়ে, ত্বকের জন্য প্রক্রিয়াও একই। ন্যাচারাল ব্রিস্টলে তৈরি ড্রাই স্কিন ব্যবহার করতে হবে নিয়মিত। লং স্যুইপিং মোশনে ব্রাশটি ব্যবহার করতে হবে। কিছুক্ষণ হালকাভাবে ব্রাশিংয়ের পরে গোসল সেরে নিতে হবে। এতে ত্বকে রক্ত চলাচলের পরিমাণ বাড়বে।
এক্সফোলিয়েশন
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য এক্সফোলিয়েশন ভীষণ জরুরি। ত্বক প্রতি মিনিটে ৩০ হাজার মৃতকোষ উৎপন্ন করে। এই কোষগুলো আমাদের ত্বকের ওপরের অংশে জমতে থাকে। এতে বাড়তি একটি আস্তরণ তৈরি হয়। এটি পরিষ্কারে নিয়মিত হওয়া তাই জরুরি। ঘরে বসে সহজেই এর সারাই সম্ভব। দরকার শুধু অল্প কিছু উপাদান। প্রয়োজনমতো হিমালয়ান সল্ট, তার সঙ্গে নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল। গোসল শেষ করার ঠিক আগে আগে ভেজা ত্বকে এর প্রলেপ লাগিয়ে নিতে হবে। মুখত্বকের পাশাপাশি মিশ্রণটি দেহের কয়েকটি অংশে ব্যবহার করা যাবে। যেমন কনুই, হাঁটু ও পিঠ। আলতো হাতে মাসাজ করতে থাকলে লবণ অল্প অল্প করে গলতে শুরু করবে। মিশ্রণটি ত্বকে মিশে যাবে।
ডারমারোলার
ত্বক পরিচর্যার জন্য দারুণ উপযুক্ত একটি অনুষঙ্গ। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের ওপরের স্তর কার্যকরভাবে পরিষ্কার করা সম্ভব। হাজারটা মাইক্রো নিডেলস দিয়ে তৈরি করা হয় এই রোলার। ফলে এর ব্যবহারে ত্বকের মাইক্রোস্কোপিক ছিদ্রগুলো পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হয়। ডারমারোলার ব্যবহারে ত্বক আরও কিছু উপকারিতা পেয়ে থাকে। চামড়া পাতলা থাকলে পুরুত্ব বাড়ে। স্ট্রেচ মার্ক কমিয়ে আনে। ত্বকে ফুটে ওঠা রেখাগুলো মিলিয়ে দিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ত্বকে ব্যবহৃত পণ্যে থাকা উপাদানগুলোকে ত্বকের একদম গভীরে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
ডারমারোলার ব্যবহারে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কারণ, এতে যেসব নিডেল ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর আকার বিভিন্ন রকমের হয়। শূন্য দশমিক ৫ মিমি থেকে ১ দশমিক ৫ মিমি পর্যন্ত সাইজের নিডেল ব্যবহার করতে দেখা যায় বেশির ভাগ ডারমারোলারে। এ ক্ষেত্রে রোলার বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়া ভালো। ত্বকের ক্ষতির শঙ্কা তখন আরও কমে আসবে। ডারমারোলিংয়ের পর ত্বকে হায়ালুরনিক অ্যাসিডের প্রলেপ দিয়ে নিলে আর্দ্রতা নিশ্চিত করা যাবে। বিশেষজ্ঞদের এমনই পরামর্শ। বিয়ের উৎসবের আগে সময় নিয়ে ডারমারোলিং করা যেতে পারে। এতে ত্বক পরিষ্কার হবে গভীর থেকে। দূর হবে দূষণও।
রেটিনল
ত্বক সঠিকভাবে পরিষ্কারের পরবর্তী ভাবনা যত্ন নিয়ে। রেটিনল ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ধীর করে। ত্বক রাখে সজিব। বিয়ে উৎসবে যেহেতু ত্বকের ওপরে বেশ খানিকটা চাপ পড়ে, একই সঙ্গে থাকে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের নানা কিছু, তাই এ সময়ে ত্বকের সজিবতার দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। রেটিনল ত্বকে কোলাজেনের পরিমাণ বাড়ায়। সেলুলার টার্নওভার বাড়ায়, অ্যাকনে আর পিগমেন্টেশনের মূল কারণের ওপর নজর দেয়। হায়ালুরনিক অ্যাসিডের প্রাকৃতিক উৎপাদন বাড়ায় রেটিনল। ফলে ত্বকের শুষ্কতা কমে আসে।
রেটিনল ব্যবহার করলে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সূর্যের তাপ থেকে ত্বককে রক্ষা করা। এ জন্য নিয়ম মেনে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। কারণ, রেটিনল ব্যবহারে ত্বকের নাজুকতা বাড়ে। আর যেহেতু উৎসব উপলক্ষে ত্বকের বিভিন্ন রকমের পরিচর্যা করা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। ত্বকের ওপরের অংশের সুরক্ষায় তাই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা চাই প্রতিদিন। সঠিক পরিমাণে প্রলেপ মাখিয়ে তবেই বের হতে হবে বাইরে। শুধু মুখে নয়, দেহেও ব্যবহার করা যেতে পারে রেটিনল। নিদেনপক্ষে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ রেটিনল যুক্ত লোশন ত্বকে ব্যবহার করা জরুরি। ধীরে ধীরে এই মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অব্দি।
এভাবেই বিয়ের আগে নিয়মিত যত্নে ত্বক নিজে থেকেই বেশ খানিকটা পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। প্রসাধনের জন্যও প্রস্তুত হবে ত্বক। বাড়বে আত্মবিশ্বাস।
মডেল: আনসা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন