ফিচার I মেহেদি মোচ্ছবে
কনের হাতে কখনো ফুটে ওঠে হাল ফ্যাশনের মোটিফ তো কখনো শোভা বাড়ায় নবদম্পতির পুরো প্রেমকাহিনির সচিত্র উপস্থাপন। যা স্মৃতির খোরাক জোগাবে সারা জীবন, উসকে দেবে অ্যালবামের পাতা ওল্টালেই
মেহেদি রাঙা হাতের পোর্ট্রেট। ব্রাইডাল ফটোগ্রাফিতে এর কদর বরাবরই বিশেষ। আলোকচিত্রী তো বটেই, কনেরাও আলাদা গুরুত্ব দিয়ে মেহেদির ছবি তোলেন। বিয়ের অ্যালবাম দেখলেই যা সহজে অনুমেয়। তাই ছবি তোলার পোজটা কেমন হবে বা পুরো সেটিংটা কেমন থাকবে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকা চাই। সে জন্য আগেভাগে যদি প্রস্তুতিটা সেরে নেওয়া যায়, সবচেয়ে ভালো। সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে পছন্দের পোজগুলো প্র্যাকটিস করে নিলেও মন্দ হবে না। এ ছাড়া বুকমার্ক করে রাখা অপশনগুলো যদি ফটোগ্রাফারকে দেখিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে ছবি তোলার কাজটা আরও সহজ হবে। পাওয়া যাবে পারফেক্ট ব্রাইডাল মেহেদি পোর্ট্রেট।
হবু বরই ভরসা
সামনের পথগুলো তো একসঙ্গে হাতে হাত ধরেই এগোতে হবে, তো শুরুটা না হয় হোক মেহেদির আয়োজন থেকেই। ছবি তোলার সময় হবু বরের সহযোগিতা দারুণ কাজে আসবে কিন্তু। বরকে শুধু বলতে হবে ছবি তোলার সময় সঙ্গে থাকার জন্য। তারপর মেহেদি রঙা হাত দুটো কখনো তার হাতে, তো কখনো কাঁধে রেখে ছবি তুলে নিলে চমৎকার দেখাবে। ছবিতে চেহারা থাকতে পারে, না-ও পারে। তবে ফোকাসটা যেন মেহেদির ডিজাইনে থাকে। সঙ্গে হবু বর-কনের সামান্য রসায়ন। ব্যস! পারফেক্ট পিকচার।
ক্যান্ডিডের কামাল
ক্যান্ডিড ছবির আলাদা চার্ম রয়েছে। কোনো ধরনের মেকি ভাব ছাড়াই ছবিগুলো তোলা হয় বলে মুহূর্তগুলো যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় ক্যামেরার প্রতিটি ক্লিকে। যারা ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে স্বচ্ছন্দ নন, তাদের জন্যও খুব ভালো অপশন ক্যান্ডিড পিকচার। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে ফটোগ্রাফারের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া যায়। ইনস্ট্রাকশনও দিয়ে রাখা যায় কী ধরনের ছবি চাচ্ছেন, সে ব্যাপারে। বাকিটা আলোকচিত্রীর দায়িত্ব। মেহেদির ছবি তোলার ক্ষেত্রে কনের খাওয়ার সময়টা বেছে নেওয়া যেতে পারে। চা কিংবা পিৎজাপ্রেমী কনেদের স্ন্যাকস টাইমের ক্যান্ডিড শটে মেহেদির ছবি দারুণ ফুটবে। এ ছাড়া গয়না পরার সময়ের ছবিতেও হাতকে গুরুত্ব না দেওয়ার উপায় নেই। সেই সঙ্গে যদি কনের ট্রু সেন্টিমেন্টটা ফ্রেমে বন্দী করে নেওয়া যায়, ছবি আসবে দুর্দান্ত। ফুটওয়্যার পরার সময়ও একই ধরনের ক্যান্ডিড শট কাজে আসবে। হাসি বা কান্না ঢাকার কাজে হাত দুটোই তো এগিয়ে আসে সবার আগে। আবেগঘন এ মুহূর্তগুলোর ছবি ক্যান্ডিড মেহেদি শট হিসেবে চমৎকার। আর মেহেদি পরানোর সময়কার ছবি না থাকলে তো বিয়ের অ্যালবামই পূর্ণতা পাবে না।
ফিক্স প্লাস…
মেহেদি রাঙা হাতের ছবি। কনে শাড়ির আঁচল ঠিক করছেন, ঘোমটাটা মাথায় টেনে নিচ্ছেন কিংবা গয়নাটা ঠিকঠাক জায়গায় বসিয়ে নিচ্ছেন এমন ছবি তোলার সময় যদি ফোকাসটা হাতে রাখা যায়, মেহেদির সুন্দর সুন্দর ছবি পাওয়া যাবে। শুধু গয়না ঠিক করারই তো হাজার রকম পোজ আছে। কখনো নেকপিস ঠিক করা তো কখনো কানের কানটানাটা টেনে নেওয়া। এক নথ ঠিক করারই তো হরেক রকম ছবি মিলবে বিয়ের অ্যালবামে।
ব্যাক শট
সামনে হাত এগিয়ে মেহেদির ছবি তো সবাই তোলে। এ ক্ষেত্রে একটু আলাদা হলে ক্ষতি নেই। হাতটা পেছনে নিয়ে ছবি তোলা হলে কিন্তু মন্দ দেখাবে না। হাত এবং তাতে আঁকা মেহেদিই এ ক্ষেত্রে পাবে পুরো ফোকাস। এ ছাড়া পেছনে ফিরে শুধু হাতটা যদি ফটোগ্রাফারের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়, তাহলেও ছবি আসবে চমৎকার।
সিনেমা স্টাইল
বহু আকাঙ্ক্ষিত বিয়েতে, শখের মেহেদি পরা হাত। পছন্দের নায়িকার মতো পোজ দিতে ক্ষতি কোথায়? অনেক কনে তো সোশ্যাল মিডিয়ায় বুকমার্ক আর সেভ করে রাখেন বিয়ের মেহেদির পোজ। ফুল হাতে মেহেদির ছবি তুলে নেওয়া যায় এ ক্ষেত্রে। স্ট্রিং লাইট হাতে নিয়ে ছবি তুললে মেহেদি দেখাবে আরও মায়াময়। এ ছাড়া গালে, হাতে, কপালে কিংবা থুতনিতে মেহেদি রাঙা হাত রেখে পোজ দেওয়া ছবিও মন্দ দেখায় না। পছন্দের বই বা প্রিয় পোষা প্রাণীর সঙ্গেও হাতের ছবি অ্যাসথেটিক ভাইব তৈরিতে অনবদ্য।
আরও আছে আংটি
এনগেজমেন্ট রিং যেন এক টুকরো আবেগের পরিচায়ক। আংটিসমেত মেহেদি রাঙা হাত—ব্রাইডাল মেহেদির ছবিতে এর থেকে পারফেক্ট সেটআপ আর কী হতে পারে! হাতের তালুতে আংটি রেখে হাতখানা এগিয়ে নিলে পাওয়া যাবে আংটি আর মেহেদির পারফেক্ট শট। হাতের ওপর হাত রেখে তোলা সাধারণ মেহেদির ছবিও অসাধারণ দেখাবে শুধু যদি এনগেজমেন্টের আংটি থাকে আঙুলে। আংটি ঠিক করে নেওয়ার ক্যান্ডিড পোজও মন্দ দেখাবে না মেহেদির ছবি তোলার সময়।
তবে কিছু ব্যাপার খেয়াল রাখা চাই। ভেজা অবস্থায় মেহেদি দিয়ে বেশি পোজ দিলে নকশা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই খানিকটা শুকিয়ে যাওয়ার পর ছবি তোলার কাজ শুরু করা উচিত। আর মেহেদি রাঙা হাতের ছবি তুলতে চাইলে মাখার এক দিন পরে তোলাই ভালো। এতে রংটা ভালো করে বসবে হাতে। ছবিতেও দেখাবে ভাইব্র্যান্ট। নখের দিকেও খেয়াল থাকা চাই। পরিষ্কার থাকলে ছবিতে দেখাবে ভালো। নেইল আর্টও করে নেওয়া যেতে পারে সময় থাকলে।
জাহেরা শিরীন
ছবি: মেট্রো ওয়েডিং ও সাজিদুর রাহমান