হট স্পট I মিরপুর বেনারসি পল্লি
লাখ কথা ছাড়া আবার বিয়ে হয় নাকি! তা-ও বাঙালি বিয়ের ক্ষেত্রে। বাঙালির কাছে বিয়ে তো শুধু অনুষ্ঠান নয়, আস্ত এক মহোৎসব। যা আয়োজনে খরচ তো হবেই। কিন্তু প্যানডেমিকের পর থেকেই ঝোঁক বেড়েছে বাজেট ওয়েডিংয়ে। কমেছে বাজেট, কমেছে অতিথির সংখ্যাও।
অনেকেই ঝুঁকছেন অপচয়রোধী বিয়েতে। তবে আয়োজনে আপোস না করে। মাইক্রো ওয়েডিং ট্রেন্ড মেনে উদযাপিত হচ্ছে ছিমছাম, মেদবর্জিত সব অনুষ্ঠান। বাহুল্য কম, আন্তরিকতা বেশি। তাই কেনাকাটার রাশও টেনে ধরা হচ্ছে যতটা সম্ভব। কিন্তু কিছু জিনিস তো না হলেই নয়। এর মধ্যে অন্যতম শাড়ি। বউয়ের শাড়ি তো বটেই; সঙ্গে নানি-দাদি, মা-খালা, আর ফুফু-চাচিরাও বাদ পড়েন না লিস্টি থেকে। কিন্তু এত শাড়ি কিনতে গেলে বাজেট ফেলের আশঙ্কা অসম্ভব কিছু নয়। তাই এমন উপায় বের করা চাই, যাতে সবার শাড়ির শপিংটা সেরে নেওয়া যাবে বাজেটের মধ্যেই। সে ক্ষেত্রে সেরা অপশন মিরপুরের বেনারসি পল্লি। দামে কম, মানে ভালো—কথাটা যেন এই শাড়ি শপিং প্যারাডাইসের ক্ষেত্রেই খাটে। বিয়ের শাড়ির জন্য দেশে তো বটেই, দেশের বাইরের মানুষের কাছেও এর কদর অনেক। সে বাজেট শপিংই হোক, বা হোক তা ধরাবাঁধা বাজেটের বাইরে। কিন্তু যারা সাধ্যের মধ্যে সাধের বিয়ের শপিং সারতে চান, তাদের জন্য মিরপুর বেনারসি পল্লি ওয়ান স্পট সল্যুশন।
বিয়ের দিন সেজে ওঠার জন্য বাঙালি মেয়েদের কাছে আজও বেনারসি সেরা অপশন। বছরের পর বছরজুড়ে যেন আজও বহন করে চলছে আশ্চর্য এক লেগ্যাসি। এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল লাল রংটাই ক্ল্যাসিক। তবে পছন্দভেদে চলতে পারে ফুশিয়া, মেরুন, রাস্ট থেকে কমলা রঙের বেনারসি। অনেক কনের আবার বউভাতেও বেনারসি চাই। তবে লালের বদলে সেদিনের জন্য বেছে নিতে দেখা যায় রয়্যাল ব্লু, গ্রিন, ম্যাজেন্টা ঘরানার রংগুলো। এর সবই মিলবে বেনারসি পল্লিতে। কারণ, দেশের বেনারসির সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস এটি। উৎপাদন তো বটেই, বেচাবিক্রির দিক থেকেও এগিয়ে। দামটাও একদম হাতের নাগাল থেকে শুরু। মাত্র ৩ হাজার টাকায় বেনারসি মিলবে এখানে।
কাঁচামাল আর ডিজাইনভেদে যার দাম ছুঁতে পারে লাখের ঘর অব্দি। দামে কম হলেও মান নিয়ে আপোস করতে নারাজ এখানকার উৎপাদনকারীরা। তাই সাধ্যের মধ্যে সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করেন। তবে যারা ট্র্যাডিশনাল ভারী বেনারসি পরতে চান না, অপশন আছে তাদের জন্যও। জর্জেটের ওপর স্টোনের কাজ করা বেনারসি মিলবে এখানে। আর দামটাও খুব বেশি নয়। যদি বেনারসি একদমই বাদ থাকে বিয়ের লিস্টে, সে ক্ষেত্রে কাতান তো থাকছেই। হালের কাঞ্জিভরম থেকে টিস্যু, জর্জেট, অপেরা, জুট—কাতানের হরেক রকম মিলবে বেনারসি পল্লিতে। ভারী পাড়ের সঙ্গে সারা গায়ে ছোট ছোট বুটি বা কলকার ডিজাইন যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি খোঁজ মিলবে পুরো জমিনজুড়ে কাজ করা নকশায়ও। ফ্লোরাল থেকে জ্যামিতিক ডিজাইনের। কোনো শাড়িতে কনট্রাস্টিং পাড় তো কোনোটায় জমিন পাড়ে কোনো ফারাক নেই। আর দাম শুনলে তো অবাক হবেন যে কেউ। ২ হাজার থেকে শুরু। উঠবে হাজার দশেক অব্দি।
বিয়ের শপিং লিস্টে সিল্ক না থাকলে কি হয়? নানা ধরনের সিল্কও মিলবে এখানে। দাম শুরু মাত্র ৯০০ টাকা থেকে। মেহেদি বা হলুদের জন্য সেরা অপশন। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের সুতি শাড়িও রাখা হয় এখানকার দোকানগুলোতে। মিলবে জামদানি, মনিপুরি, বালুচরি, মসলিন, কোটাও। প্রতিটি শাড়ির শুরুর রেঞ্জ সাধ্যের মধ্যে। অন্তত কারও পকেট কাটা যাবে না। সঙ্গে নিয়ে নেওয়া যাবে বিয়ের ওড়না। বেনারসি, কাতান, নেট থেকে হাল আমলের ক্রেজ এমব্রয়ডারড কবুল ওড়নাও মিলবে এখানে। দাম হাজারখানেক থেকে শুরু। শাড়ি না চাইলে আছে লেহেঙ্গাও। কোনোটা এখানে তৈরি তো কোনোটা আমদানি করা প্রতিবেশী দেশ থেকে। শাড়ির তুলনায় দামটা একটু চড়া। ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু। কিন্তু অন্য যেকোনো মার্কেট থেকে সস্তা মিরপুর অরিজিনাল ১০ নম্বরে অবস্থিত এ মার্কেটে। তবে খেয়াল করতে হবে মেইন রোডের ওপর নয়, একটু ভেতরের দিকে দু-তিনটা গলি পেরোলেই মূল বাজার। বর্তমানে যেখানে ১১২টির মতো দোকান আছে। আর কেনাকাটার সময় সাবধান! দরদামে পাকাপক্ব হওয়া চাই। নইলে যে ধরা খেয়ে যেতে হবে!
ফ্যাশন ডেস্ক
মডেল: আন্নি ও বর্ণা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: মাহমুদা শাড়ি হাউজ
জুয়েলারি: উযমাহ্
ছবি: হাদী উদ্দীন