সেলুলয়েড I দ্য সান ইন আ নেট
মূল শিরোনাম: Slnko v sieti
পরিচালনা: স্তেফান উহার
অভিনয়: মারিয়ান বেইলিক, ইয়ানা বেলাকোভা, এলিস্কা নোসালওভা
চিত্রগ্রহণ: স্তানিস্লাভ জমোলানি
সম্পাদনা: বেদরিখ ভদের্কা
সময়ব্যাপ্তি: ৯০ মিনিট
ভাষা: স্লোভাক
দেশ: স্লোভাকিয়া [তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়া]
মুক্তি: ১৯৬৩
আদিগন্ত পর্বতমালা। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। উদার খোলা হাওয়া। প্রকৃতিতে প্রাগৈতিহাসিক সৌন্দর্যের মমতা। তবু আসে সূর্যগ্রহণ! আধুনিকতার নামে প্রাকৃতিক মাধুর্যকে গ্রাস করার কালো ছায়া। দ্রুত বাড়তে থাকা নগরায়ণে বৃক্ষরাজির জায়গা দখল করে নেয় ইট-পাথর-কংক্রিটের দঙ্গল। বিশৃঙ্খল দালানকোঠা। বদ্ধ ফ্ল্যাট। আকাশে পাখির ঝাঁকের বদলে ডিশ অ্যান্টেনার গিঞ্জি।
সময়টা ষাটের দশক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, সমগ্র দুনিয়াতে একটা আমূল পরিবর্তন ও পরিমার্জনের ঢেউ। তার কতকটা স্বস্তির, কতকটা স্বভাবতই বিড়ম্বনার। এমনই কালক্রান্তিতে সেন্ট্রাল ইউরোপের তৎকালীন কমিউনিস্ট শাসিত জনপদ চেকোস্লোভাকিয়ার (বর্তমানে চেক রিপাবলিক ও স্লোভাকিয়া—দুটি আলাদা দেশে বিভক্ত) ব্রাতিস্লাভা (স্লোভাকিয়া) শহরের দুই কিশোর-কিশোরীর দৈহিক ও মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কের ভেতর দিয়ে সময়ের নিদারুণ চিত্র সেলুলয়েডে এঁকে গেছেন স্লোভাক মাস্টার ফিল্মমেকার স্তেফান উহার, তার ‘দ্য সান ইন আ নেট’-এ। গিঞ্জি নগরচিত্র, রাস্তায় গণমানুষের সদা ব্যস্ততার বিপরীতে গ্রামীণ জনপদের নয়নাভিরাম প্রশান্তি গাথার এক কাব্যিক সন্নিবেশ ঘটেছে এই সিনেমায়।
কিশোরটির নাম ফায়োলো। শৌখিন ফটোগ্রাফার।
মূলত হাতের ছবি তুলতেই ভালোবাসে। নিজের ছোট্ট ডার্করুমে সেই ছবিগুলো তাকে জীবনের অন্য এক বোধে নিয়ে যায়। ভাবে, হাতের চিত্রে মানবসভ্যতার দারুণ বৈচিত্র্য ও রোমাঞ্চ ফুটে থাকে। কিশোরীটির নাম বেলা। ঘরে আছে অন্ধ মা, ছোট ভাই আর দাম্পত্য জীবনে অবিশ্বস্ত বাবা। একই অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিবেশী বাসিন্দা এই কিশোর-কিশোরীর একান্তই নিজেদের স্বাধীন ভূখণ্ড হলো ছাদ। অতিকায় অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংগুলোর ছাদের এক কোনায়, ডিশ অ্যান্টেনার জঞ্জাল এড়িয়ে, একান্তে সময় কাটাতে ভালোবাসে ওরা। অবশ্য সেই মধুর মুহূর্তগুলোতেও মিহি সুরে ভেসে বেড়ায় বিষাদের বাদ্যযন্ত্র। ওদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়তে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের পৃথিবীর বিষাক্ত ধূলিকণা। আর এর সূত্রপাত ঘটে তখন, যখন কিশোরটি বাধ্যতামূলক সামার ক্যাম্পে যোগ দিতে পাড়ি জমায় গ্রামাঞ্চলে; যৌথ খামারের ফসল তোলার জন্য। সেখানে সে জড়িয়ে পড়ে অন্য নারীর সঙ্গে। মূলত দৈহিক সেই স্বল্পকালীন সম্পর্ক। এদিকে শহরে থাকা কিশোরীটিও জড়িয়ে পড়ে আরেকজনের সঙ্গে। সেটিও স্বল্পকালীন।
ক্যাম্প শেষে কিশোরটি শহরে ফিরলে ফায়োলো ও বেলার সম্পর্ক আবারও চলতে থাকে; তবে তত দিনে ওরা যেন আর আগের মতো নির্মল নেই। পারস্পরিক অবিশ্বস্ততা যদিও দুজন দুজনের কাছে প্রকাশ করেনি, তবু ওরা এবং ওদের সম্পর্কটি একরকম গুমড়ে কাঁদতে থাকে। তাতে কিচ্ছু করার নেই ওদের! নেমে আসা সূর্যগ্রহণ, কিংবা পরিবর্তনশীল আধুনিকতা ওদেরকে তত দিনে প্রাপ্তবয়স্কদের বিষাদ ও বিষভরা বাস্তবতায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে! প্রাগৈতিহাসিক সৌন্দর্যের মহিমা ও নির্মলতা এখন দূরের কোনো রূপকথা যেন; বাস্তবতা এখানে ডিশ অ্যান্টেনা ছাওয়া জঞ্জালপূর্ণ নগরযাপনের।
আধুনিকতা ও প্রাগৈতিহাসিকের এমন দ্বন্দ্বমুখর প্রতিবিম্ব কাব্যিক ও জাদুকরী ইমেজের সুতোয় ‘দ্য সান ইন আ নেট’-এ দারুণভাবে গেঁথে গেছেন স্তেফান। সেই সময়ে গড়ে ওঠা প্রবল দাপুটে ফিল্ম মুভমেন্ট ‘চেক নিউ ওয়েভ’-এর (অনেকে ‘চেকোস্লোভাক নিউ ওয়েভ’ও বলে) অনন্য এক উদাহরণ হয়ে আছে এটি।
আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। ‘দ্য সান ইন আ নেট’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র দুটি কোন বয়সী?
[ক] তরুণ-তরুণী
[খ] কিশোর-কিশোরী
[গ] বুড়ো-বুড়ি
[ঘ] শিশু
২. ফায়োলার শখ কী?
[ক] কৃষিকাজ
[খ] ফিল্মমেকিং
[গ] ফটোগ্রাফি
[ঘ] ট্রাভেলিং
৩। স্তেফান উহার কোন ফিল্ম মুভমেন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
[ক] ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ
[খ] চেক নিউ ওয়েভ
[গ] নিউ জার্মান সিনেমা
[ঘ] ইতালিয়ান নিওরিয়ালিজম
গত পর্বের বিজয়ী
১. সানজিদা আফরিন, সিলেট
২. তানজিনা আক্তার ইশা, গুলশান, ঢাকা
৩. সংযুক্ত সাহা বর্ণা, র্যাঙ্কিন স্ট্রিট, ঢাকা।