অ্যাডভার্টোরিয়াল I ডরিন হোটেল: সেবার মানে আপসহীন
মোহাম্মদ ফাওয়াদ। ডরিন হোটেলের এজিএম ও ডিরেক্টর অব অপারেশনস। ২০০৫ সালে শুরু করা কর্মজীবনে ১৬ বছরের বেশি সময় কাজ করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলে। ২০১৬ সালে যোগ দেন ডরিন হোটেলে; প্রতিষ্ঠানটির তখন নাম ছিল ফোর পয়েন্টস বাই শেরাটন। পরের বছর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু ডরিন হোটেলের।
তিনি জানান, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু করলেও ২০১৬ সাল থেকে ব্র্যান্ডিং ইমেজ তৈরির কাজে লেগে পড়ে কর্তৃপক্ষ; অন্যদিকে স্যুইটস ব্লকের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। ফলে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, মানে কার্যক্রমের প্রথম মাসেই তারা মুনাফার মুখ দেখে, যা বাংলাদেশের হোটেল কার্যক্রমের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ২০১৭-১৮ সময়কালে পূর্বপরিকল্পিত টার্গেট অনুযায়ী হোটেলটি ব্যবসায়িকভাবে বিকাশ লাভ করতে থাকে। ২০১৯ সালে ডিরেক্টর অব অপারেশনস হিসেবে পদোন্নতি পান ফাওয়াদ। আগে সেলস ও ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করলেও এ পর্যায়ে বাড়তে থাকে তার কাজের পরিধি। ফলে ফ্রন্ট অফিস থেকে শুরু করে হাউসকিপিং, সিকিউরিটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, এফএনবি সার্ভিসসহ বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব সামলাতে শুরু করেন তিনি। ২০১৯ সালে এসটিআর নামের এক জরিপে বাংলাদেশের পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর মাঝে রেভিনিউ অর্জনের দিক দিয়ে সবার ওপরে জায়গা করে নেয় ডরিন হোটেল। এই অর্জনকে টিম এফোর্ট আখ্যা দিয়েছেন ফাওয়াদ।
জানা গেল, আগামী জানুয়ারি থেকে ডরিন হোটেল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ক্রাউন প্লাজা হিসেবে। মালিকানায় অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ক্রাউন প্লাজা কর্তৃপক্ষ ডরিন হোটেলের সঙ্গে মিলে মুনাফা বণ্টনের মাধ্যমে হোটেলটি পরিচালনা করবে। ফাওয়াদ বলেন, হোটেল পরিচালনায় ডরিন মানের দিক দিয়ে কখনো আপস করেনি। নতুন পরিচালনা পর্ষদ এতে যোগ দিলে টার্ন ডাউন সার্ভিসের মতো নতুন কিছু সার্ভিস যোগ হওয়ার ব্যাপারে আভাস দেন তিনি।
ডরিন হোটেলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ তাদের পাঁচটি অভিজাত রেস্তোরাঁ—দ্য ফ্লেয়ার, দ্য বিস্ট, ওয়েসিস লাউঞ্জ, দ্য ডেলি ও প্যানাচে। এ সম্পর্কে ফাওয়াদ বলেন, টাওয়ার বিল্ডিংয়ের ২৪ তলায় দ্য ফ্লেয়ার হচ্ছে অল ডে ডাইনিং রেস্তোরাঁ; ফলে এখানে ২৪ ঘণ্টা খাবার পরিবেশন করা হয়। ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে বুফে লাঞ্চ ও বুফে ডিনারের ব্যবস্থা থাকে। অনুমান করাই যাচ্ছে, এর মূল আকর্ষণ বুফে খাবারের পরিবেশনা। তবে ফ্রেশ খাবার পেতে চাইলে অন অর্ডারেও তাৎক্ষণিক খাবার পরিবেশন করা হয়। সতেজ খাবার যাদের পছন্দের শীর্ষে, তাদের জন্য পাস্তা, পেন কেক, দোসা, লুচি, এগ ব্যানেটেডের মতো মেনু অর্ডারের সঙ্গে সঙ্গেই বানিয়ে পরিবেশন করার সুব্যবস্থা রয়েছে। পারিবারিক অবকাশযাপন ও সময়কে প্রাধান্য দেওয়া হয় এই প্রতিষ্ঠানে। ফলে প্রতি শুক্র ও শনিবারে এখানে খেতে আসা পরিবারের সদস্যদের জন্য রয়েছে বিনা মূল্যে সুইমিংপুল ব্যবহারের সুবিধা। ঢাকা শহরের পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর মাঝে এই সেবা প্রথম ডরিন হোটেলই শুরু করে।
অন্যদিকে, দ্য বিস্টে শুধু দুপুর ও রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়। টাওয়ার বিল্ডিংয়ের ২৬ তলার ছাদে রেস্তোরাঁটির অবস্থান। লাতিন আমেরিকার বিখ্যাত সব স্টেক খেতে চাইলে এটি হতে পারে যে কারও জন্য উপযুক্ত স্থান। দেশে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির উদ্ভব না হলে, অগ্রাধিকার দেওয়া হয় আমদানি করা মাংস, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ান গরুর মাংসের ওপর। শহরের সুউচ্চ স্থানে বসে সিটি ভিউ উপভোগ করতে চাইলে ঢাকায় এর চেয়ে ভালো জায়গা নেই বললেই চলে—এমনটাই অভিমত মিস্টার ফাওয়াদের। তিনি আরও জানালেন, এখানে রয়েছে ৮-১০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রাইভেট রুম। শীতের সময় এমন পরিবেশে বসে এক কাপ কফি পান যে কারও বিরস বদনের দিনকে আনন্দময় করে তুলতে পারে। ফুল মুন ডে-তে কাপলদের জন্য থাকে বিশেষ অফার। পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার এখানে আয়োজন করা হয় লাইভ মিউজিকের, যা সংগীতপ্রেমী ভোজনরসিকদের জোগায় বাড়তি রসদ।
টাওয়ার বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ওয়েসিস লাউঞ্জে সন্ধ্যাবেলায় দেখা মেলে একদল তরুণ করপোরেট ও উদ্যোক্তার জম্পেশ আড্ডা। খাবার মেনুতে অগ্রাধিকার থাকে বিভিন্ন স্ন্যাকস আইটেম ও মকটেলের। প্রতি মাসে এখানে সংযোজন করা হয় বিভিন্ন ধরনের নতুন মকটেল। বলে রাখা ভালো, ডরিন একটি নন-অ্যালকোহলিক হোটেল; তবে পর্যটকেরা চাইলে নিজ উদ্যোগে তাদের পছন্দের পানীয় নিয়ে আসতে পারেন হোটেল রুমে। অবশ্য ওয়েসিস লাউঞ্জে নিকোটিন পার্সেন্টেজ ছাড়া স্মোকিং ককটেলের ব্যবস্থা আছে। এখানে ট্রেন্ডি মিউজিক নির্বাচন থেকে শুরু করে সার্বিক পরিবেশে বজায় থাকে তারুণ্যের ছোঁয়া।
ডরিন হোটেলের আরেকটি আকর্ষণীয় জায়গা দ্য ডেলি। নির্মল পরিবেশে ক্ল্যাসিক কফি ও চায়ের সঙ্গে বেকারি ও ডেজার্ট আইটেম উপভোগ করতে চাইলে হোটেলের টাওয়ার বিল্ডিংয়ের লবিতে অবস্থিত এই রেস্তোরাঁ হতে পারে দারুণ সমাধান। ডরিন হোটেলের সুদক্ষ শেফরা বেকারি ও পেস্ট্রি আইটেমে নতুন নতুন প্যাটার্ন ও ডিজাইন প্রয়োগ করেন, ফলে খাবারের ক্ষেত্রে একঘেয়েমি আসে না।
প্যানাচের অবস্থান ডরিন হোটেলের স্যুইটস ব্লকের ছাদে। এটি গার্ডেন রেস্টুরেন্ট হওয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ সব সময়ই বজায় থাকে। শুধু শীত ঘিরে, নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে এই রেস্তোরাঁ চালু থাকে। এখানে প্রাতরাশে করা হয় বারবিকিউ। গ্রিন লাউঞ্জ, পুলের পাশে বসে অক্টোপাস থেকে শুরু করে কালামারি পর্যন্ত বিভিন্ন সামুদ্রিক খাবার, গ্রিল্ড প্রন ও বিফ, চিকেন, মাটন, ল্যাম্ব চপসহ নানা ধরনের বাহারি খাবারের পসরা সাজানো থাকে। অগ্রাধিকার দেওয়া হয় লাইভ ফুড সরবরাহের প্রতি। বিশেষ কোনো সময় উদযাপনে আয়োজন করা হয় লাইভ মিউজিকের। ক্রেতা-ভোক্তাদের ধরে রাখতে খাবারের মূল্য সীমিত রাখা হয়েছে ৩৩৩৩ টাকা; নির্দিষ্ট কিছু ক্রেডিট কার্ডে বাই ওয়ান গেট ওয়ানের সুবিধাও রয়েছে।
হোটেলের টাওয়ার বিল্ডিংয়ে রুম সংখ্যা ১১৯। ডিলাক্স ও লার্জার কিং দুই ক্যাটাগরিতে রুম আছে এখানে; সঙ্গে আছে একটি সুবিশাল স্যুটস রুম। অন্যদিকে, রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ে রয়েছে ৩০টি রুম। মিস্টার ফাওয়াদ বলেন, গুলশান ২ সার্কেলে অবস্থিত ডরিনের লোকেশন এই হোটেলের অন্যতম স্বাতন্ত্র্য। নিবেদিতপ্রাণ স্টাফরা এর অন্যতম প্রাণ। কর্মীদের এখানে দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ। তরুণদের মাঝে নতুনকে আবিষ্কার ও প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জাগাতে কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তারুণ্যকে দেওয়া হয় অগ্রাধিকার। দেশসেরা ও আন্তর্জাতিক মানের শেফরা তাদের সুদক্ষ ও সুনিপুণ হাতে বৈচিত্র্যময় রন্ধনশৈলীতে মুগ্ধ রাখেন অতিথিদের।
এই হোটেলের ইভেন্ট ভেন্যু ব্যাঙ্কুয়েট হল, যার ধারণক্ষমতা ১৫০-২০০ জন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে করপোরেট ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয় এখানে; পাশাপাশি ওয়েডিং সিজনে বিয়ে আয়োজনের ধুম পড়ে বেশ।
মিশন-ভিশন সম্পর্কে মোহাম্মদ ফাওয়াদ বলেন, ডরিন হোটেল তাদের ট্যাগলাইনে উল্লেখ করে, ‘কমফোর্ট ইজ নট কমপ্লিকেটেড’। ভোক্তারা যখন হোটেল বুকিং করেন, তারা কমফোর্টের পাশাপাশি ভালো মানের খাবার ও ফ্রেশরুমে আন্তর্জাতিক মানের উপাদানের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে চান। এই হোটেলে আছে বিলাসবহুল ফোর লেয়ার বেড, যা দেয় সর্বাধিক আরামের প্রতিশ্রুতি। সেবার মানের দিক দিয়ে রয়েছে বৈশ্বিক সুনাম, যা ম্যাডালিয়া নামক সফটওয়্যার দিয়ে পরিমাপ করা হয়। ৭০ শতাংশ ভোক্তার ওপর চালানো হয় জরিপ, যেখানে ৯-এর নিচের যেকোনো মার্কিংকে গণ্য করা হয় শূন্য। বুকিং ডট কম, এক্সপেডিয়ার মতো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেউ হোটেল বুকিং করতে চাইলে হোটেলের রেটিং সবার কাছে উঠে আসে। বিভিন্ন মাপকাঠিতে ডরিন হোটেল বাংলাদেশের সব পাঁচ তারকা হোটেলের মাঝে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করে বলে দাবি এই কর্মকর্তার। তিনি আরও জানান, সেবার মানকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ধরে রাখার প্রত্যয়ে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং যাবে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ডরিন হোটেলের সৌজন্যে
He is a excellent person for us. Also doreen family is sweet family. we provide a true hospitality for all guest.