ফিচার I খাদ্যকাণ্ডের সালতামামি
খাবার নিয়ে হাতাহাতি, কাড়াকাড়ি। আবার খাদ্য দিয়েই অনাহারীর হাসি কেনা। সারা বছরই খাবারকে কেন্দ্র করে ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। বিয়ে ভাঙে, প্রাণ যায়। ভাইরাল হয় কত ভিডিও
সেই ফটোগ্রাফারের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। বিয়ের খাবার না পেয়ে বর-কনের সব ছবি ডিলিট করে দিয়েছিলেন যিনি। সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে রসিয়ে-রসিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ১০ ঘণ্টার বিয়ের প্রোগ্রামে ছবি তুলতে তুলতে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরে খেতে গিয়ে দেখেন, কিছুই অবশিষ্ট নেই। রাগে ও ক্ষোভে বরের সামনেই বিয়ের সব ছবি ডিলিট করে দিয়েছিলেন সেই ফটোগ্রাফার। যদিও তিনি পেশাদার আলোকচিত্রী ছিলেন না। তা ছাড়া ঘটনাটিও এ বছরের নয়, ২০২১ সালের। তবে ২০২২ সালেও খাবার নিয়ে ঘটেছে নানান কাণ্ড। এগুলোর কিছু আনন্দের, কিছু আবার মনকে ব্যথিত করে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতের উত্তর প্রদেশের আমরোহা জেলায় একটি বিয়েতে ঘটেছে অদ্ভুত ঘটনা। সেখানে একই দিনে পাশাপাশি চলছিল দুটি বিয়ে। আমন্ত্রিত অতিথিরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কোন বিয়েতে তাদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। পরে অতিথিরা বেছে-বেছে একটি বিয়েবাড়িতে প্রবেশ করেন। তাতে ওই বাড়ির খাবারে টান পড়ে। এতে কনেপক্ষ বেশ বেকায়দায় পড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন এক ফন্দি আঁটেন কনেবাড়ির লোকেরা। আধার কার্ড দেখে-দেখে বিয়েবাড়িতে ঢুকতে দেন তারা। কিন্তু বিয়েবাড়িতে তো সাধারণত কেউ আধার কার্ড সঙ্গে নিয়ে যান না। তাই কার্ড দেখাতে না পেরে প্রকৃত অতিথিরাও না খেয়ে ফেরেন। এতে উভয় বিয়ের ওপরই আমন্ত্রিতদের অসন্তোষ দেখা গেছে। তবে যারা মানিব্যাগে আধার কার্ড নিয়ে ঘোরেন, তারা বিয়ের খাবার খেয়েই ফিরেছিলেন সেদিন।
এ বছর মিরর ইউকে-তে বিয়ের খাবার নিয়ে একটি বিশেষ খবর প্রকাশিত হয়। যুক্তরাজ্যে এক কনে বিয়েতে অভিনব দাওয়াতের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তার বাবার পক্ষে বিয়ের খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় একটিই বিকল্প, তা হলো আমন্ত্রিতদের নিজেদেরই খাওয়ার খরচ বহন করতে হবে। যদি আমন্ত্রিতরা তা না করতে চান, বিয়ে বাতিল হয়ে যাবে! কনের এই ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেকেই বিষয়টি মানবিক দিক থেকে দেখেছিলেন। তবে শেষমেশ বিয়েটি হয়েছিল কি না জানা যায়নি।
গত মাসে ভারতের বিহারের পূর্ণিয়া জেলার ঈশ্বরীতলায় খাবারকে কেন্দ্র করে বিয়ে ভেঙেছে। না, খাবারের স্বল্পতায় নয়; বরং সময়মতো পাত্রের সামনে খাবার না আসায় অপমানিত বোধ করেছে পাত্রপক্ষ। কথা না বাড়িয়ে কনেপক্ষের সব উপহার ফিরিয়ে দিয়ে ছাতনাতলা থেকে উঠে বাড়ির পথে হেঁটে গেছেন পাত্র। কারও কথাই শোনেননি। এতে আবার অপমানিত বোধ করেছে কনেপক্ষ। শেষে বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে।
এদিকে, এ বছরের মে মাসে নরসিংদীতে খাবার কম পড়ায় বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন কনে। বিয়ের দিন দুপুরে খাবার কম পড়ায় বরের বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে থালা ছুড়ে মেরেছিলেন। এতেই চটেছিলেন কনেপক্ষের লোকেরা। দুপক্ষের হাতাহাতিতে আহত হন ১০ জন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিয়েটি আর হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন ওই কনে।
নভেম্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর বিয়েতে খাবারের ব্যতিক্রম আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি এতিম শিশুদের এক বেলা পেট ভরে খাইয়েছিলেন তারা। তাদের এমন আয়োজনে এতিম শিশুরা বেশ খুশি। তা ছাড়া এলাকাবাসীর কাছেও প্রশংসিত হয়েছে ওই দম্পতি এবং তাদের পরিবার।
বিয়েশাদির অনুষ্ঠান ছাড়াও এ বছর খাবার নিয়ে কয়েকটি বিচিত্র ঘটনা ঘটেছে। কদিন আগেই শেষ হওয়া টি-২০ বিশ্বকাপ ঘিরেও রয়েছে এমন এক ঘটনা। অস্ট্রেলিয়ার হোটেল ও খাবার নিয়ে নাখোশ হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। কঠোর পরিশ্রম শেষে তারা হোটেলে এসে স্যান্ডউইচ ও ফলমূল দেখে চটেছিলেন। মূলত তারা তখন ভারী খাবার আশা করেছিলেন।
সেপ্টেম্বরে ভারতের উত্তর প্রদেশের শাহারানপুর স্টেডিয়ামে রাজ্যের ২০০ কাবাডি খেলোয়াড়ের সঙ্গে ঘটেছে আরেক ঘটনা। ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, শৌচাগারের সামনে রাখা থালা থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছেন তারা। কেননা, ভাতের থালা সেখানেই পরিবেশন করা হয়েছিল। তবে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা অস্বীকার করে বলেছিল, সেটি শৌচাগার নয়, সুইমিংপুল। কিন্তু খেলোয়াড়েরা সেটিকে শৌচাগার বলেই অভিযোগ করেছেন।
গত এপ্রিলে বলিউডের কিছু গানের সঙ্গে খাবারের থিম মিশিয়ে আঁকা কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়। মূলত গানের সঙ্গে খাবারের থিমের সংযোগ রেখেই আঁকা হয়েছিল ছবিগুলো। যেমন ‘নিম্বুরা নিম্বুরা’ গানটিকে থিম ধরে আঁকা হয়েছে একজন ‘লেবু বালিকা’কে, যার গায়ের রং লেবুর মতো, মাথা থেকে ঝুলে আছে লেবুপাতা। আবার দেখা যাচ্ছে একজন শেফ থালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তার থালার ওপরে ঝরে পড়ছে টাকা। তিনি গাইছেন, ‘টিপ টিপ বর্ষা মানি’। মূল গানে ‘পানি’ শব্দটি ছেঁটে ‘মানি’ করা হয়েছে কার্টুনে। এ বিষয়গুলো কার্টুনগুলোকে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে।
এ বছরের শুরুতেও খাবারবিষয়ক একটি মানবিক আয়োজন করা হয়েছিল। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০০ এতিম শিশুকে চায়নিজ রেস্তোরাঁয় উন্নত খাবার খাইয়েছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জ্ঞানের আলো পাঠাগার। ঘটনাটি গোপালগঞ্জের। মেনুতে ছিল ফ্রায়েড চিকেন, ফ্রায়েড রাইস, চায়নিজ সবজি, চিকেন মাসালা, স্যালাড ও কোমল পানীয়।
আকাশেও খাবার নিয়ে ঘটে গেছে বিচিত্র ঘটনা। জুলাই মাসে তুরস্কের একটি এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে খাবারের থালায় মিলেছে সাপের আস্ত মাথা। ঘটনাটি ঘটে এয়ারলাইনস সানএক্সপ্রেসের একটি ফ্লাইটে। খাবারের মেনুতে আলু ও সবজি থাকার কথা। কিন্তু হঠাৎই একজন তার থালায় সাপের আস্ত মাথা পেয়ে আঁতকে ওঠেন। পরে এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও ফ্লাইটে খাবার সরবরাহকারী সংস্থা এই অভিযোগ পুরো অস্বীকার করেছে।
শুধু আকাশের বিমান নয়, মাটির ট্রেনে খাবার নিয়ে ঘটেছে আরেক ঘটনা। ভারতের রাজস্থানের আলওয়ারে এক ট্রেনচালক শুধু কিছু কচুরি কেনার জন্য থামিয়েছেন ট্রেন। সেটির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে দেশের একটি লঞ্চে এক কিশোরের অদ্ভুত এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। দূর থেকে সাঁতরে চলন্ত লঞ্চের সামনে চলে আসে সে। সবাই ভাবে, সে বোধ হয় বাঁচার চেষ্টা করছে। কোনোমতে লঞ্চের এক দড়ি বেয়ে উঠতে সক্ষম হয়। কিন্তু পরক্ষণেই দেখা যায়, লঞ্চের ডেকের দোকান থেকে দুটি চিপস ও চানাচুরের প্যাকেট হাতিয়ে নিয়ে সে পানিতে লাফিয়ে পড়েছে!
আহমেদ সজিব
ছবি: ইন্টারনেট