skip to Main Content

ফিচার I ভাসমান ভোজনালয়

চারপাশে অবারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঢেউয়ে দুলছে খাবারের টেবিল। দারুণ না? বলছি ফ্লোটিং রেস্টুরেন্টের কথা

উপভোগ্য ডাইনিং সব সময়ই স্পেশাল। তা যদি হয় ভাসমান, তাহলে তো কথাই নেই! কারণ, এর রয়েছে স্বতন্ত্র আবেদন। চোখ বন্ধ করে একটু কল্পনা করুন তো, নির্মল পরিবেশে, মনোরম দৃশ্যের সমাহারে, ঢেউয়ে ঢেউয়ে মৃদু দুলছে আহারের পাত্র। এমন অভিজ্ঞতাই এনে দেয় ভাসমান রেস্তোরাঁগুলো।
বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি এমন রেস্তোঁরার খোঁজ জানা যাক:

ক্লাউড নাইন

 রাস্টার ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট, আরব আমিরাত: শুরুতেই এই গ্রহের সবচেয়ে আলোচিত ভাসমান রেস্তোরাঁটি নিয়ে কথা বলা যাক। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের রাস্টার নির্দিষ্ট জায়গায় নিষ্ক্রিয় থাকার পরিবর্তে পানিতে ভেসে বেড়ায়। এই রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে ৪০০ জনের জমায়েত সম্ভব। অতিথিরা দুবাই শহরের সবচেয়ে মহিমান্বিত দৃশ্যের সান্নিধ্যে থেকে বিভিন্ন রন্ধনসম্ভার উপভোগ করতে পারেন। রেস্তোরাঁটি স্বভাবতই বিলাসবহুল। রোমান্টিক ডিনার, বিভিন্ন অ্যানিভার্সারি, বিয়ে এবং মিলনমেলার জন্য সেরা হটস্পটগুলোর একটি।
 সি প্যালেস, নেদারল্যান্ডস: ইউরোপের প্রথম ভাসমান চায়নিজ রেস্তোরাঁ হিসেবে সুপরিচিত আমস্টারডামের সি প্যালেস রেস্টুরেন্ট। এই রেস্তোরাঁর প্রতিটি ধাপেই রয়েছে অতিথিদের জন্য অতুলনীয় অভিজ্ঞতার পসরা। ব্যতিক্রমী প্যাগোডা-শৈলীর রেস্তোরাঁটির বাইরের অংশ অভিনব ডিজাইনের রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে অন্যতম উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এটি এখন পর্যটকদের জন্য খাবারের এক বিশিষ্ট ভাসমান ভাণ্ডার!

সাইগন রেস্টুরেন্ট ক্রুজ শিপ

 সাইগন রেস্টুরেন্ট ক্রুজ শিপ, ভিয়েতনাম: এই ট্রিপল-ডেকার ভাসমান রেস্তোরাঁ ভিয়েতনামের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রিয় হটস্পট। এই রেস্তোরাঁয় ৬০০ জন অতিথি একসঙ্গে খাবারের স্বাদ নিতে পারেন। সাইগন রেস্টুরেন্ট ক্রুজ শিপটি জনাকীর্ণ শহর থেকে দূরে একটি চমৎকার সন্ধ্যা কাটাতে সাহায্য করবে আপনাকে। এখানে বিভিন্ন ধরনের ক্ল্যাসিক্যাল পারফরম্যান্সের সঙ্গে মজাদারভাবে অতিথিদের সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়।
 ভেলি লেক ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট, ভারত: কেরালার ত্রিভান্দ্রমের ভেলি লেকে অবস্থিত এই ভাসমান রেস্তোরাঁ ভারতের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবেও বিবেচিত। অবকাশ যাপনকারীদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হটস্পট এটি। মজার ব্যাপার হলো, ভাসমান সেতুই এই ভোজনশালায় পৌঁছানোর একমাত্র উপায়, যা অন্য পাশে জমির সঙ্গে যুক্ত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি জিভে পানি আনার মতো খাবার পাওয়ার সেরা গন্তব্যগুলোর অন্যতম এটি।

জাম্বো ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট

 জাম্বো ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট, হংকং: শহরের অ্যাবারডিন বন্দরে অবস্থিত জাম্বো ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট হংকংয়ের আকর্ষণীয় ভোজনালয়গুলোর অন্যতম। ২০০৩ সালে পুনর্বিন্যাসের পর এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ভ্রমণের বিকল্প হিসেবে একটি থিম পার্কে রূপান্তরিত হয়। এই রেস্তোরাঁয় আসা বিখ্যাত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন সদ্য প্রয়াত ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং হলিউড তারকা জন ওয়েন।

সি প্যালেস

 প্লাস্টিক ডাইনিং রুম, কানাডা: ১৬৭০টি (মতান্তরে ১৬৭২) প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বানানো। তাই এমন নামকরণ। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে অবস্থিত এই এক্সক্লুসিভ রেস্তোরাঁ আসলে ওই শহরের ফলস ক্রিক ইয়ট ক্লাবে একটি নৌকার ওপর ভাসমান। প্লাস্টিকের সমুদ্রদূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেই এর সৃষ্টি। স্থানীয় স্কুল অব ফিশ ফাউন্ডেশন সি রেস্টুরেস্টের সঙ্গে যৌথভাবে ছয় কোর্সের টেকসই সামুদ্রিক খাবার পরিবেশন করা হয় এখানে, যা মূলত ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের জন্য বেশ আদর্শ। অন্য যেকোনো ভাসমান রেস্তোরাঁর তুলনায় অধিকতর পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এর কদর বাড়ছে।

পিএস ট্যাটারশাল ক্যাসেল

 ক্লাউড নাইন, ফিজি: প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ ফিজির উপকূলে এর অবস্থান। পোর্ট ডেনারাউ থেকে নৌকায় মাত্র ৫০ মিনিটের সমুদ্রযাত্রায় অতিথিরা পৌঁছতে পারেন সেখানে। ১২০ জন ধারণক্ষমতার ক্লাউড নাইনে কোনো মেনু তালিকা নেই; তবে সেদিন চলা যেকোনো পিৎজা অফার গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়া রেস্তোরাঁটিকে ঘিরে থাকা ঝকঝকে সেরুলিয়ান সমুদ্রে পর্যটকেরা ডাইভিং, স্নরকেলিং ও সূর্যস্নান করতে পারবেন। মনে হবে, যেন বাস্তব নয়, কোনো কল্পনার রাজ্যে চলে এসেছেন!
 সল্ট অ্যান্ড সিল, সুইডেন: দেশটির পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত, সামুদ্রিক খাবারের এই পুরস্কারপ্রাপ্ত রেস্তোরাঁ সমুদ্র থেকে সরাসরি সুস্বাদু ও স্মার্ট খাবারের পরিবেশনের জন্য একটি হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এখানকার আরেকটি বিশেষত্ব হলো হেরিং প্লেট, যা স্টিমড আলু বা স্ন্যাপস জোড়া দিয়ে পরিবেশন করা হয়। আরও রয়েছে প্যান-ফ্রায়েড কডসহ ক্রেফিশ টারটার, মাখনযুক্ত শেলফিশের ঝোল এবং কালো করা গাজরের পিউরি হলসহ বিভিন্ন ধরনের সুইডিশ খাবার। কখনো যদি সমুদ্রের হাওয়া একটু বেশি বেড়ে যায়, ২৩২টি চটকদার ঘর রয়েছে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।

রাস্টার ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট

 পিএস ট্যাটারশাল ক্যাসেল, যুক্তরাজ্য: পিএস ট্যাটারশাল ক্যাসেল মূলত একটি পুরোনো যাত্রীবাহী ফেরি। ১৯৩৪ সালে যাত্রা শুরু করে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত নর্দান ইংল্যান্ডের পূর্ব উপকূলীয় হামবার মোহনায় চলাচল করেছে এটি। এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে হামবার নদীতে ব্যারাজ বেলুন ও সৈন্য পারাপারেও কাজে লেগেছে। ১৯৭৪ সালে ফেরি হিসেবে এর কার্যকারিতা ফুরিয়ে গেলে দুই বছর পর একে টেনে নিয়ে আসা হয় লন্ডনে। এরপর টেমস নদীর ওপর ভাসমান আর্ট গ্যালারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৮২ সালে একে ভাসমান রেস্তোরাঁয় রূপ দেয় শেফ অ্যান্ড ব্রেয়ার গ্রুপ।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছোট ও বড় আকারে ছড়িয়ে রয়েছে আরও কিছু ভাসমান রেস্তোরাঁ। এর যেকোনোটিই আপনাকে একই সঙ্গে খাবার ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের বাড়তি সুবিধা এনে দেবে।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top