ফিচার I ফুটবলার’স ফ্যাব-ফুড
একটা টুর্নামেন্ট। মাতিয়ে রাখে সারা দুনিয়া। চলছে সেই ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’; বিশ্বকাপ ফুটবল। প্রিয় তারকারা লড়ছেন মাঠে। কী খেতে ভালোবাসেন তারা, জানা যাক ফাঁকতালে
ফিটনেস ধরে রাখতে কঠোর খাদ্যাভ্যাসের মধ্য দিয়ে যেতে হয় ফুটবলারদের। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ফল আহার এবং পর্যাপ্ত পানি পান করেন তারা। তৈলাক্ত মাছ, দুধ, ডিম, পালংশাক, ব্লুবেরি, অ্যাভোকাডো, বিটরুট, চিয়া সিড, কুইনো, ফুলকপি এবং ডাবের পানি—এমন খাবার বা পানীয় তাদের জন্য বেশ স্বাস্থ্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ। ভুলে গেলে চলবে না, তারাও মানুষ এবং আছে নিজস্ব পছন্দ। চলমান এই বিশ্বকাপে যাদের ওপর বিশেষ নজর বিশ্ববাসীর, যাপিত জীবনে তাদের খাদ্যাভ্যাস কেমন, তা জেনে নেওয়া যাক।
লিওনেল মেসি
সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন হিসেবে তাকে গণ্য করা হয়। এই আর্জেন্টাইন ক্যাপ্টেন ও নাম্বার টেনের ভীষণ পছন্দের খাবার মিলানেসা নাপোলিতানা। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে এর উৎপত্তি। আর্জেন্টাইন এই আইটেমে রয়েছে একটি ব্রেডেড এবং ফ্রায়েড মিলানেসা স্টেক, যার ওপরে হ্যাম, ট্যাংজি টমেটো সস, ডিম, লবণ, চিজ, রসুন, গোলমরিচ, টমেটো, অলিভ অয়েল আর বিস্কুটের গুঁড়া মিশিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে যোগ করা হয় মোজারেলার মোটা টুকরো, যা ব্রয়লারের নিচে গলানো হয়। মিলানেসা নাপোলিতানা পরিবেশন করা হয় সাধারণত ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের সঙ্গে।
রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী বাঁ পায়ের জাদুকর লিওনেল মেসি রুট সবজির সঙ্গে রোস্টেড চিকেন খেতেও ভালোবাসেন। তিনি রাঁধুনিও বটে! সুযোগ পেলেই সন্তানদের জন্য রাঁধতে ভালোবাসেন স্নেটজেলস। খাবারটি নানা রকম মাংস দিয়ে তৈরি করা গেলেও তিয়াগো, মাতেও এবং সিরো—তিন পুত্রের জন্য তিনি তা তৈরি করেন মুরগির মাংস দিয়ে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
‘সিআর-সেভেন’খ্যাত এই পর্তুগিজ ক্যাপ্টেন একজন সত্যিকার ফিটনেস ফ্রিক এবং সুদর্শন অ্যাথলেট। কী খাচ্ছেন, তা নিয়ে খুবই সচেতন। ডায়েট সম্পর্কে তার অবিশ্বাস্য সচেতনতার ফল, ৩৭ বছর বয়সেও তিনি অন্যতম সেরা পারফরমার। সূত্রমতে, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর (অনেকে ‘ক্রিশ্চিয়ানো’ও বলে থাকেন) প্রিয় খাবার বাকালহাউ আ ব্রাস। এই পর্তুগিজ খাবারের উৎপত্তি দেশটির রাজধানী লিসবনে। এটি লবণযুক্ত কড, পেঁয়াজ এবং পাতলা করে কাটা (ম্যাচস্টিক আকারের) ভাজা আলু দিয়ে তৈরি। আসলে সব কটি উপাদান থেঁতলানো ডিমের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটিকে কালো জলপাই দিয়ে সাজানো হয়। তাতে ছিটিয়ে দেওয়া হয় তাজা শাকবিশেষ।
শস্যজাতীয় খাবার, টাটকা ফল ও মাছ বেশি খেয়ে থাকেন রোনালদো। চর্বিহীন প্রোটিন সংগ্রহ করেন সোর্ড ফিশ, কড ফিশসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ থেকে। আর হ্যাঁ, মাছগুলো অবশ্যই টাটকা থাকা চাই। হিমাগারের হলে চলবে না।
রোনালদোর ভোজপাত্রে নানা রকম স্যালাডও থাকে। সকালের নাশতায় থাকে পনির, হ্যাম, কম চর্বির দই, ফলফলারি। এ সময়ে অ্যাভোকাডো ফলের টোস্টও খেয়ে থাকেন। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এ ফুটবলারের কাছে জাদুকরী খাবার হলো মুরগির মাংস: প্রোটিনে ভরপুর; অথচ চর্বি কম।
নেইমার জুনিয়র
সময়ের সেরা ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ড নানা ধরনের ইতালীয় খাবার ভালোবাসেন। এ ছাড়া সকালের নাশতায় ডিম অথবা সিরিয়াল (শস্যদানাবিশেষ) রাখতে পছন্দ করেন নেইমার। রাতের পাতে তার পছন্দ রিসত্তো, লাসাগনা ও জাপানিজ ফুড। অবশ্য, ভোজনরসিক এই তারকার পছন্দের খাবারের তালিকা বেশ লম্বা। সেখানে আরও আছে পাস্তা, পিৎজা, লাজানিয়া, তিরামিসুর মতো মজাদার খাবার। লাজানিয়া তৈরির মূল উপাদান রেড মিট কিংবা মুরগির কিমা করা মাংস। তার সঙ্গে লাজানিয়া শিট (নুডলস), টমেটো পিউরি, চিজ, অরিগানোর মতো বেশ কয়েকটি উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করা সুস্বাদু এই খাবার পিএসজি ও ব্রাজিলের নাম্বার টেনকে বেশ তৃপ্তি দেয়।
গ্যারেথ বেল
১৯৫৮ সালের পর ওয়েলসকে বিশ্বকাপে তুলে আনতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন গ্যারেথ বেল। রিয়াল মাদ্রিদকে ২০১৭/১৮ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন লিগ জিতিয়ে ম্যান অব দ্য ফাইনাল হয়েছিলেন। এবারের বিশ্বকাপের ছোট দলের বড় তারকা তিনি। ডিম ও চিপসের একটি বিশেষ আইটেম এই ওয়েলস সকার সেনসেশনের খুব প্রিয়। তাতে কেবল ভাজা ডিমের সঙ্গে চিপস পরিবেশন করা হয়; আর তা যুক্তরাজ্যের একটি জনপ্রিয় ফুড আইটেমও বটে।
লুইস সুয়ারেজ
বার্সেলোনার ইতিহাসখ্যাত ত্রাস ধরানো এমএসএন (মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার) ত্রয়ীর একজন তিনি। ক্লাব ফুটবলের সেই সময় এখন সোনালি অতীত! নিজের ভালো ফর্মের দিনগুলোতে আয়াক্স, লিভারপুল, বার্সেলোনা, আতলেতিকো মাদ্রিদে কাটানো এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার বর্তমানে খেলছেন স্বদেশি ক্লাব নাসিওনালে। নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, স্পেন হয়ে নিজ দেশে ফেরা এই নাম্বার নাইন তারকা ইতালীয় খাবারের বেশ অনুরাগী।
ইডেন হ্যাজার্ড
হেটারসরা ক্লাব ফুটবলে বর্তমান ফর্মের জন্য তাকে ট্রল করতেই পারেন! তবু তিনি সত্যিই একজন অসাধারণ খেলোয়াড়; যদিও রিয়াল মাদ্রিদে আছেন নিজের ছায়া হয়ে। অবশ্য জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপলেই ঝলসে ওঠেন এই বেলজিয়ান অধিনায়ক। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে তার চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই মনে আছে? এই সাবেক চেলসি উইঙ্গার ইতালীয় খাবারের পাশাপাশি হ্যামবার্গার খেতে ভালোবাসেন।
হ্যারি কেন
ইংল্যান্ড ও টটেনহাম তারকার দুর্দান্ত ফর্ম ইংল্যান্ডকে সর্বশেষ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ও ইউরোতে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিল। তার পছন্দের খাদ্যতালিকার শীর্ষে রয়েছে স্টেক, ব্রাউন রাইস ও স্যালাড।
সন হিউং-মিন
অনেকের মতেই, এ মুহূর্তে ফুটবলে এশিয়ার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন দক্ষিণ কোরিয়া ও টটেনহামের এই তারকা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল মেশিন সন হিউং-মিন কোরিয়ান রাইস ও কোরিয়ান বারবিকিউ খেতে বেশ পছন্দ করেন।
রবার্ট লেভান্ডোস্কি
সাবেক বায়ার্ন মিউনিখ ও বর্তমানে বার্সেলোনার পোলিশ এই স্ট্রাইকার নিকট অতীতে এক ম্যাচে ৩-৪ গোল করাটাকে এককথায় নিয়ম বানিয়ে ফেলেছিলেন। লেভার (পোলিশ উচ্চারণে রবের্ত লেভানদোফ্স্কি) প্রিয় খাবারের তালিকায় আছে প্যানকেক, ব্রাউনি, ভেজিটেবল স্প্যাগেটি, পোরিজ ও উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন মাছ।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট