ফিচার I ফাউন্ডেশনের নয়া ফর্মুলা
কোনোটা একদম রংহীন তো কোনোটা আবার বিশেষ পরিস্থিতিতে ভোল বদলায়, করে বর্ণবদল। বিস্ময়কর বটে
ফাউন্ডেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোর মধ্যে একটি—এর পিগমেন্ট। যার পারফেক্ট ম্যাচের ওপর নির্ভর করে ত্বকে ফাউন্ডেশনের কার্যকারিতা। সঠিক শেডের ফাউন্ডেশন ত্বকের খুঁতগুলো অস্পষ্ট করে কিংবা একেবারে ঢেকে দেয়। করে তোলে মসৃণ। বেশ কিছুদিন হলো বিউটি ব্র্যান্ডগুলো এই পিগমেন্ট নিয়েই করছে নানা নিরীক্ষা। ফাউন্ডেশনের রং তাই কখনো উবে যাচ্ছে, আবার কখনো তো মাখার পর ত্বকরঙের সঙ্গে মানিয়ে পাল্টেও যাচ্ছে। ব্যাপারটা বিস্ময়কর বটে। তবে পুরোটাই স্মার্ট টেকনোলজির কামাল। সঙ্গে তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন উপাদান। যেগুলোর সংমিশ্রণে বিশেষজ্ঞ টিমের বছরখানেক সাধনার ফল এসব অভিনব ফর্মুলার ফাউন্ডেশন।
নো পিগমেন্ট ফাউন্ডেশন
রংবিহীন এ ফাউন্ডেশন দেখে চক্ষু চড়কগাছ হওয়াই স্বাভাবিক। তাই প্রথম যখন বাজারে আসে, এ নিয়ে আলোচনার অন্ত ছিল না। তৈরি হয় বিভ্রান্তিও। বেকা কসমেটিকস প্রথম লঞ্চ করে অভিনব এই ফর্মুলা। তাদের জিরো কালেকশনে। ট্যাগলাইন ‘জিরো টু হাইড’। পণ্যটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ত্বকের স্বাভাবিকতা উদ্যাপন। সেই সঙ্গে খুঁতকে কমিয়ে আনা, পুরোপুরি ঢেকে ফেলার বদলে। কারণ, জরিপে দেখা গিয়েছিল পারফেক্ট ডলড আপ লুক সৌন্দর্যসচেতনদের এখন আর পছন্দ নয়, বরং স্বাভাবিক এবং সহজে করে নেওয়া যায় এমন সৌন্দর্যে বেশি আগ্রহী সবাই। তারই ফলস্বরূপ এই অভিনব ফাউন্ডেশন। এমন একটি মেকআপ পণ্য যা ত্বকযত্নের সুবিধাসংবলিত। এতেই বোঝা যায়, নো পিগমেন্ট ফাউন্ডেশন হচ্ছে একধরনের অভিনব হাইব্রিড, মেকআপ আর স্কিন কেয়ার প্রডাক্টের। লাইটওয়েট, হুইপড টেক্সচারের এই ফাউন্ডেশনগুলো দেখতে জেলির মতো। ফর্মুলায় উপাদান হিসেবে উপস্থিত থাকবে গ্লিসারিন, হায়ালুরনিক অ্যাসিড, বিউটিলিন গ্লাইকলসহ ত্বকবান্ধব সব উপাদান। ফলে এই ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পর ত্বক হয়ে উঠবে আর্দ্র ও মসৃণ। সিলিকন ফ্রি এ ফাউন্ডেশনগুলো ত্বকে সহজেই ব্যবহারযোগ্য। তবে একদমই ফুল কাভারেজ দেবে না। ঢাকবে না ব্রণ কিংবা গাঢ় কোনো দাগ। ট্রান্সপারেন্ট, ভেরি শিয়ার কাভারেজের ফাউন্ডেশনগুলো ত্বকের লালচে ভাব, তেলতেলে অবস্থা আর লার্জ পোরের সমস্যায় কাজে দেবে। সামান্য অস্পষ্ট করে দেবে চেহারার খুঁত। ম্যাট ফিনিশ করে তুলবে ত্বক। মূলত যারা নো মেকআপ মেকআপ লুক পছন্দ করেন এবং ত্বকে ভারী বেইজের বদলে প্রাইমারের মতন বেইজে স্বচ্ছন্দ, তাদের জন্য পারফেক্ট অপশন এটি। এ ছাড়া এগুলো ত্বকের চকচকে ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখবে; দেবে শিশিরসিক্ত চেহারা। কিন্তু খেয়াল রাখা চাই, বেইজে যাদের ফুল কাভারেজ পছন্দ, তাদের জন্য মোটেও জুতসই পণ্য নয় এটি।
সেলফ অ্যাডজাস্টিং ফাউন্ডেশন
ফাউন্ডেশনের জন্য সঠিক শেড বাছাই? সে তো দারুণ হ্যাপার কাজ! শত শত ব্র্যান্ড আর শেডের মাঝে ত্বকরঙের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সারতে হয় নানান সমীকরণ। কালার আর শেড মিলিয়েও স্বস্তি নেই, মাথায় রাখতে হয় আন্ডারটোনও। আর এর মানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয়, হাজারটা সোয়াচ যাচাইসহ নানান ঝামেলা। তাই এ থেকে যদি মুক্তি মেলে, সৌন্দর্যসচেতনেরা তো তাতে ঝুঁকবেনই। তারই প্রমাণ মিলেছে সেলফ অ্যাডজাস্টিং ফাউন্ডেশন লঞ্চ হওয়ার পর। হাজারো নারী একবার হলেও এটি ট্রাই করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। এটি মূলত এক জাদুকরী ফাউন্ডেশন অথবা টিন্টেড ময়শ্চারাইজার, যা ত্বকের সংস্পর্শে এলে রং বদলে ফেলে একদম স্কিন টোনের সঙ্গে মানিয়ে। ম্যাজিক না একদম! আসলে না। পুরোটাই প্রযুক্তি। সেলফ অ্যাডজাস্টিং ফাউন্ডেশনের ফর্মুলাকে দুই ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যেতে পারে। একটি হচ্ছে পিএইচ রিঅ্যাকটিভ ফর্মুলা এবং দ্বিতীয়টি এনক্যাপসুলেটেড কালার। পিএইচ রিঅ্যাকটিভ ফর্মুলা মূলত কেমিক্যাল বেসড। এতে ব্যবহৃত উপাদানগুলো ময়শ্চারের পিএইচ লেভেলের ওপর ভিত্তি করে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। যেহেতু মানুষভেদে ত্বক আলাদা এবং পিএইচের ভারসাম্যও ভিন্ন, তাই ত্বকের আর্দ্রতার অ্যাসিডিটি আর অ্যালকালাইন লেভেলেও থাকে বৈচিত্র্য। ফলে উপাদানগুলো এর সংস্পর্শে এসে রং পাল্টায় ভিন্নভাবে। ফাউন্ডেশন প্রয়োগকারীর ত্বকের আর্দ্রতার পিএইচ লেভেল তখন যেমন থাকে, সে অনুযায়ী পাল্টে যায় এর রং। এমনকি বাতাসের আর্দ্রতাও পরিবর্তন আনতে পারে এমন ফাউন্ডেশনগুলোর শেডে।
এনক্যাপসুলেটেড কালার ফর্মুলায় সাধারণ একটি রংহীন বেজ প্রডাক্ট থেকে কালার পিগমেন্ট আলাদা করে রাখা হয়। কালার পিগমেন্টের ক্যাপসুলগুলোকে তেল অথবা জেল দিয়ে কোট করে রাখা হয়, ফলে প্রাথমিকভাবে পিগমেন্টগুলোকে রংহীন দেখায়। ফাউন্ডেশন দেখায় ধূসর অথবা সাদা রঙের। যখন এই ফাউন্ডেশন ত্বকে ঘষে নেওয়া হয়, তখন ক্যাপসুলের কোটগুলো ভেঙে যায় এবং রং পরিবর্তিত হয়। কালার ক্যাপসুলগুলোর আকার সাধারণত ১০০ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে। আর ফাউন্ডেশন ত্বকে প্রয়োগ না করা পর্যন্ত এর রং পাল্টায় না। মূলত চার ধরনের পিগমেন্ট ব্যবহার করা ভিন্ন ভিন্ন ত্বকরঙের জন্য মানিয়ে নিতে। এগুলো হলো টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইড, রেড আয়রন অক্সাইড, ইয়েলো আয়রন অক্সাইড এবং ব্ল্যাক আয়রন অক্সাইড। মিকা অথবা সিনথেটিক মিকার ছোট ছোট পার্টিকেলও ব্যবহার করা হয় কিছু পিগমেন্ট ক্যাপসুলে। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা আরও বাড়ে, তৈরি হয় অপটিক্যাল ব্লারিং ইফেক্ট। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেলফ অ্যাডজাস্টিং এ ফাউন্ডেশনগুলোও মিলবে ভিন্ন ভিন্ন শেডে। লাইট, ডার্ক আর মিডিয়াম স্কিন টোনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। এগুলো কিনতে গরমিল হলে কিন্তু সমস্যা। ত্বকের শেডের সঙ্গে মানাবে না একদমই। তবে একটু খেয়াল করে কেনা গেলে অনেক ঝামেলা থেকে বেঁচে যাওয়া যাবে। দু-তিন ধরনের ফাউন্ডেশন মিশিয়ে ত্বকে মাখাতে হবে না, লোমকূপগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে না। কালার অ্যাডজাস্টিং ফর্মুলার ফাউন্ডেশন হাতের কাছে থাকলে সিঙ্গেল লেয়ারেই সেরে নেওয়া যাবে কাজ।
অর্চনা সাহা
মডেল: অনন্যা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল