ফরহিম I প্রেরণায় পুরুষ
সচেতন পুরুষদের প্রতিদিনকার রূপরুটিন থেকে অনুপ্রাণিত হতে পারেন নারীরাও। আয়ত্তে আনতে পারলে উপকার মিলবে আলবত
মুখে ফেসপ্যাক, চোখে গোল গোল শসা—রূপচর্চার কমন দৃশ্য। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে এই দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়, তাই না? তাই বলে কি সব ছেলের ত্বকচর্চা বারণ? একদমই নয়। বরং রূপসচেতন পুরুষেরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন কিছু গ্রুমিং টেকনিক মেনে চলেন, যেগুলোর মাধ্যমে খুব কম সময়েই প্রেজেন্টেবল হয়ে ওঠা যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই টিপসগুলো মেয়েদের জন্যও বেশ উপকারী।
ট্রিমিং টেকনিক
চুল অনেকাংশেই পুরো আউটলুককে রিপ্রেজেন্ট করে। চমৎকার একটা পোশাক পরার পরে চুল যদি থাকে এলোমেলো, তাহলে সাজে গোছানো ভাবটা ঠিক ফুটে ওঠে না। চুল পরিপাটি থাকলে চেহারার মধ্যে একধরনের আভিজাত্য ফুটে ওঠে। বেশির ভাগ পুরুষই নিয়ম করে মাসে অথবা দুই মাসে একবার সেলুনে গিয়ে চুল ট্রিম করে থাকেন। এতে চুলের স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকে, দেখায়ও পরিপাটি। নারীরাও মেনে চলতে পারেন এ পন্থা। কিছুদিন পরপর নতুন কাট দিয়ে চুল ছোট না করতে চাইলে যে কাট দেওয়া আছে, সেটাকেই একটু ট্রিম করে নেওয়া যেতে পারে। আগা ফাটা রুক্ষ চুল নিয়ে কয়েক মাস অপেক্ষার পর নতুন কাট দেওয়ার বদলে প্রতি মাসেই একটু একটু করে ট্রিম করে হেয়ারস্টাইল পরিপাটি রাখা যায়।
এ ছাড়া নোজ ও ইয়ার ট্রিমিং ছেলেদের রেগুলার গ্রুমিং রুটিনের মধ্যে পড়ে। বাসায় বা সেলুনে শেভিং ও চুল কাটার সময় একসঙ্গে নোজ ও ইয়ার ট্রিমিংও সেরে নেন তারা। এতে বেশ পরিচ্ছন্ন একটা লুক পাওয়া যায়। মেয়েরাও ফলো করতে পারেন এই গ্রুমিং টেকনিক। মাসে একবার নিয়ম করে নোজ ও ইয়ার ট্রিম করে নেওয়া যেতে পারে। ঘরে বসে কিংবা পার্লারে গিয়ে।
শেভিং সিস্টেম
ছেলেরা শেভ করার আগে বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা মেনে চললেও বেশির ভাগ মেয়ে কিন্তু এ ব্যাপারে একটু উদাসীন। হাত কিংবা পা—শরীরের যেকোনো জায়গা একটু পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিয়েই ঝটপট শেভিং শুরু করে দেন অনেকে। কিন্তু এতে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। লোমকূপগুলোর গোড়া শক্ত হয়ে ত্বকে দেখা দিতে পারে র্যাশসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। এ ক্ষেত্রে ছেলেদের শেভিং রুটিন ফলো করা যেতে পারে। প্রথমে একটু শেভিং ফোম মেখে নিতে হবে। তবে হাতের কাছে শেভিং ফোম না থাকলে, শাওয়ার জেল অথবা সাবান দিয়েই ভালো করে ম্যাসাজ করে নিয়ে তারপর আস্তে আস্তে শেভিং শুরু করতে হবে। আর শেভিং শেষে ছেলেরা যেমন আফটার শেভ ব্যবহার করেন, তেমনি লোশন অথবা টোনার ব্যবহার করা যায় মেয়েদের ত্বকে। এতে শেভ করার পর ত্বকে যে রুক্ষতা তৈরি হয়, তা কেটে যাবে, আর্দ্র থাকবে দীর্ঘ সময়।
ফর ফেস
বাইরে থেকে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে ত্বক পরিষ্কারের ব্যাপারে খানিকটা আলসেই মেয়েরা। বেশির ভাগ সময়েই তাদের মুখত্বকে মেকআপ থাকে, যা রিমুভার আর ফেসওয়াশ দিয়ে ডাবল ক্লিন করে নেওয়া সামান্য সময়সাপেক্ষ। অন্যদিকে ছেলেরা বাইরে থেকে এসেই ঝটপট মুখ-হাত ধুয়ে একদম ফিটফাট। ঠিক এই ব্যাপারটাই অনুশীলন করতে পারেন মেয়েরাও। যতই ক্লান্তি থাকুক না কেন, বাড়ি ফিরেই ভালো একটা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া জরুরি। এতে স্কিন ড্যামেজ হওয়ার শঙ্কা কমবে, ফ্রেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিমেষেই সারা দিনের ক্লান্তিও দূর হয়ে যাবে।
ফেশিয়াল হেয়ার ওয়াক্সিং
মেয়েদের ফেশিয়াল হেয়ার ওয়াক্সিং আমাদের দেশে এখনো খুব বেশি প্রচলিত না হলেও অনেক দেশে বেশ জনপ্রিয়। আর এই কৌশলও রপ্ত হয়েছে ছেলেদের ফেস শেভিং আইডিয়া থেকে। এটি মুখের ছোট ছোট লোম তুলে ফেলার পাশাপাশি মৃতত্বক কোষ সারাইয়ে সাহায্য করে। এতে ত্বক বেশ পরিষ্কার দেখায়, পাশাপাশি বাড়ে উজ্জ্বলতাও। যাদের নিয়মিত মেকআপ করতে হয়, তাদের জন্য এই পদ্ধতি বেশ কাজের। ত্বকে মেকআপ সুন্দরভাবে সেট করার পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী করার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর এ উপায়।
শরীরচর্চা
একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে ছেলেদের জিমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বডি বিল্ডিং হোক বা রেগুলার ওয়ার্কআউট, অভ্যাসটা কিন্তু উপকারী। নারীরাও নিয়ম মেনে, রুটিন করে করতে পারেন শরীরচর্চা। বডিকে পারফেক্ট শেপ দেওয়ার পাশাপাশি সুস্থও থাকা যাবে শরীরচর্চার মাধ্যমে। প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে কিছু সময় বরাদ্দ রাখা যেতে পারে জিমের জন্য। নানা রকমের শরীরচর্চায় দেহের বাড়তি মেদ যেমন কাটবে, তেমনি অনেক রোগও দূর হবে। জিমে যাওয়া ঝামেলার মনে হলে প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে একটা নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম করে হাঁটা যেতে পারে। নিয়মিত হাঁটলে দেহাবয়ব সুন্দর হয়, শরীরও থাকে সুস্থ। অফিসে একটানা বসে না থেকে কিছুক্ষণ পরপর হাঁটা দরকার। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।
ডেইলি ডিওডোরেন্ট
বাইরে বের হওয়ার সময় ডিওডোরেন্ট ব্যবহার সচেতন পুরুষদের অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটি। আর মেয়েদের যেন পারফিউম ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্য। তবে পারফিউম যেহেতু শুধু সুগন্ধ ছড়ানোর কাজে দেয়, তাই মেয়েদেরও ডিওডোরেন্ট ব্যবহার মাস্ট। ঘামের দুর্গন্ধ এড়াতে বেশ কাজে দেয়। এ ছাড়া যাদের আন্ডারআর্ম বেশি ঘামে, নিয়মিত ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে তা কমে যেতে পারে অনেকাংশে। তবে ব্যবহারে একটু বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কেনার সময় অবশ্যই এক্সপায়ার ডেট দেখে নিতে হবে। স্কিনে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে ডিওডোরেন্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া চাই।
সাদিয়া আফরিন
মডেল: সাদাফ ও তুবা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল