skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I ত্বকের অতলে

বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই একদমই। কিন্তু ভেতরে বাসা বাঁধা এই সিস্টিক অ্যাকনে দারুণ ব্যথাদায়ক। সারবে না প্রচলিত ট্রিটমেন্টেও। তাহলে উপায়?

পিম্পল বা ব্রণের প্রধান বৈশিষ্ট্য? একে খালি চোখে দেখা যায়। ত্বকের ওপরেই ফুটে ওঠে এর বিচিত্র রূপ। কখনো ছোট, কখনো বড়। কখনো লালচে, ব্যথাদায়ক। কিন্তু ব্লাইন্ড পিম্পলের গল্পটা একদমই ভিন্ন। ত্বকস্তরের নিচে বাড়ে এই ব্রণ। তাই অনেকটা অদৃশ্যই বলা যায়। খুব বেশি হলে ত্বকের ব্রণ ওঠা জায়গায় একটা লাম্প অনুভব করা যায়, ব্যস! কিন্তু ভেতরের অবস্থা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। দেখা যাচ্ছে না বলে অবহেলায় ফেলে রাখলে বিপদ আরও বাড়বে।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক কী এই ব্লাইন্ড পিম্পল নামক আজব বস্তু। এটা মূলত একধরনের ইনফ্লেমড সিস্ট, যা ত্বকের অভ্যন্তরীণ স্তরে বেড়ে ওঠে। তাই ত্বকের ওপরের স্তরের সঙ্গে এর কোনো সরাসরি সংযোগ থাকে না। যেহেতু এটা ত্বকের গভীরে বেড়ে ওঠে, বাইরে থেকে শুধু একটা ফোলা ভাবই তৈরি হয় ত্বকে। অনেক সময় সামান্য লালচে বা বাদামি একটা স্পট দেখা দেয়, তা-ও নির্ভর করে ত্বকরঙের ওপর। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্লাইন্ড পিম্পল মানেই আন্ডারকাভার, ব্যথাদায়ক ব্রণ, যা দেখা না গেলেও অনুভব করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মত, জীবাণু আর অত্যধিক সিবামের মিশ্রণ যখন লোমকূপ বন্ধ করে দেয়, তখন ত্বকের নিচে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। অনেকটা সিস্টিক ব্রণের মতোই। তাহলে পার্থক্যটা কোথায়? পার্থক্য হলো ব্লাইন্ড পিম্পল ত্বকস্তরের ওপরে দেখা যায় না, তৈরি হয় ত্বকের গভীরের সাবকিউটেনিয়াস লেভেলে। ফলাফল—একে স্পর্শ করা যায় না, সারে অনেক বেশি সময় নিয়ে, আর বেশ ব্যথাদায়কও বটে।
ব্লাইন্ড পিম্পলের প্রধান কারণ হরমোন। তাই স্বাভাবিকভাবে হরমোনের ওঠানামা হলেই দেখা দেয় এর প্রকোপ। তা হতে পারে পিরিয়ডের আগে কিংবা পরে অথবা দেহে টেস্টোস্টেরনের হার বাড়া বা কমার সময়। এ ছাড়া ডিএনএর কারণে অনেকেরই হাইপারসেনসিটিভ হরমোন রিসেপ্টর থাকে, যার ফলে ব্রেকআউট হতে পারে। এই হরমোনগুলোর প্রভাবে দেহে অতিরিক্ত তেল উৎপাদিত হয়, বাড়ে জীবাণুর প্রকোপ, সঙ্গে যোগ হয় প্রদাহ। ব্যস, তাতেই তৈরি ব্যথাদায়ক ব্রণ।
ব্লাইন্ড পিম্পল যেহেতু দেখা যায় না, অন্যান্য ব্রণের মতো একে চেপে বের করা অসম্ভব। সাধারণত ত্বকের নিচে থাকে বলে সারতে বেশি সময় লাগে। খোঁচাখুঁচি না করে, নিজের মতো ছেড়ে দিলে সারতে সপ্তাহখানেক থেকে কয়েক মাস অব্দি সময় লাগে। ৫০ থেকে ৮০ ভাগ ব্লাইন্ড পিম্পল নিজে নিজেই সেরে যায়। তাই বলে সারানোর চেষ্টা না করে বসে থাকলেও চলবে না। কিন্তু চাপাচাপি করা যাবে না একদমই। এতে প্রদাহ বেড়ে যাবে, ব্রণ আরও ভেতরে ঢুকে যাবে। সেই সঙ্গে রেখে যাবে পোস্ট ইনফ্ল্যামেটরি মার্ক। কারও কারও ক্ষেত্রে এর ক্ষতি আরও দীর্ঘস্থায়ী। ত্বকে গোলাপি, লাল আর বাদামি রঙের দীর্ঘস্থায়ী হাইপারপিগমেন্টেশন আর ক্ষত। এমনকি অ্যাট্রোপিক স্কার আর আইস পিক স্কারও তৈরি হতে পারে এর ফলে। তবে কোনো বিশেষজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্ট দিয়ে যদি ব্রণে কর্টিসন শট দেওয়া যায়, তাহলে এটি দ্রুত সারতে পারে।
আর যদি বেশি খোঁচাখুঁচি হয়, তাহলেই বিপদ। আরও ভেতরে ঢুকে যাবে ব্রণ, বাড়াবে প্রদাহ। সেই সঙ্গে যোগ হবে নতুন জীবাণুর সংস্করণ। সেটা হতে পারে হাত থেকে কিংবা যা দিয়ে খোঁচানো হয়েছে তা থেকে। তখন সারতে সময় আরও বেশি লাগবে। সঙ্গে ব্যথা উপরি পাওনা! তাই ব্লাইন্ড পিম্পল হলে হুড়োহুড়ি করা যাবে না একদমই। প্রথমে মেনে নিতে হবে, রাতারাতি গায়েব হয়ে যাবে না এটি। এমনকি সামনের অনেক রাতই এটি বহাল তবিয়তে টিকে থাকবে ত্বকে। সবচেয়ে কার্যকর ট্রিটমেন্টও কাজ শুরু করবে পাঁচ দিন পরে থেকে। তাই নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধই বেশি উপযোগী সিস্টিক এবং ইনফ্ল্যামেটরি অ্যাকনের ক্ষেত্রে। কিন্তু কীভাবে?
 নজর দিতে হবে নিত্যদিনকার রূপরুটিনে। শুধু মুখ ধুয়ে ময়শ্চারাইজার মেখে নেওয়াই যথেষ্ট নয় ব্লাইন্ড পিম্পল প্রতিরোধে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। সিস্টিক অ্যাকনের জন্য বেনজয়েল পার-অক্সাইড দারুণ উপকারী। এটি অ্যাকনে সৃষ্টিকারী জীবাণুকে ধ্বংস করে দিতে সহায়ক। তাই বেনজয়েল পার-অক্সাইডযুক্ত ক্লিনজার থাকা চাই হাতের কাছে। এটি ত্বককে শুষ্ক করে দিতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে সামান্য অস্বস্তি, বিশেষ করে স্পর্শকাতর ত্বকে। তাই ক্লিনজারে এর মাত্রার দিকে খেয়াল রাখা চাই। ২ দশমিক ৫% থেকে ৫%ই যথেষ্ট এ ক্ষেত্রে। সেই সঙ্গে ঘুমানোর আগে ময়শ্চারাইজার মাস্ট। তবে রেটিনলযুক্ত ময়শ্চারাইজার আর বেনজয়েল পার-অক্সাইডযুক্ত ক্লিনজার একই সঙ্গে ব্যবহার না করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। সেই সঙ্গে রুটিনে যোগ করতে হবে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট টোনার, প্যাড অথবা সেরাম। মৃত ত্বককোষ সারাইয়ের জন্য। ত্বকের বাড়তি তেল দূর করে ত্বককে মসৃণ করে তুলতেও জুড়ি নেই এর। এগুলোতে থাকা আলফা আর বেটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড মৃতকোষ সরানোর ক্ষেত্রে জাদুকরী। সেই সঙ্গে উঁচু-নিচু ভাব দূর করে, বিবর্ণ করে দেয় হাইপারপিগমেন্টেশনকেও। যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের জন্য গ্লাইকোলিক, ল্যাকটিক, ম্যালিক আর ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড সেরা। আর ত্বকের তেলে ভাব দূর করতে সচেষ্ট স্যালিসাইলিক অ্যাসিড এবং উইলো বার্ক এক্সট্র্যাক্ট। এগুলো নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক থাকবে মৃতকোষ মুক্ত, বাড়তি তেলও জমতে পারবে না। ফলে লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যাবে না। ব্লাউন্ড পিম্পলের হাত থেকে বেঁচে যাবে ত্বক।
 ব্লাইড পিম্পলের সমস্যা থাকলে রুটিনে রাখতে হবে রেটিনয়েড। তবে সব রেটিনয়েড এ ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। তালিকায় রয়েছে মাত্র দুটি অপশন। প্রেসক্রিপশন রেটিনয়েড এবং অ্যাডাপেলেন। প্রথমটা নিতে হবে ডাক্তারের পরামর্শে। যেমন—রেটিন-এ অথবা টেজারোটেন। এগুলো ত্বককে শুষ্ক করে ফেলে, তাই ব্যবহারের পরিমাণ পি-সাইজ ড্রপ হলেই যথেষ্ট। পুরো মুখের জন্য। আর অ্যাডাপেলেনও ব্যবহার করা যায়। শক্তিশালী এ এক্সফোলিয়েটর ত্বকের মৃতকোষ সরায়, দূর করে বাড়তি তেল। ফলে ত্বকস্তরের নিচে থাকা লোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে যায় না। ব্লাইন্ড পিম্পল থেকে রক্ষা পায় ত্বক।
 নেওয়া যায় প্রেসক্রাইবড মেডিকেশন। হরমোনাল এসব অ্যাকনে সারাতে ওরাল মেডিসিন অনেক বছর ধরেই কার্যকর। মোট চার ক্যাটাগরির ইন্টারনাল অ্যাকনে ট্রিটমেন্ট এ ক্ষেত্রে কার্যকর—অ্যান্টিবায়োটিক, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, অ্যাকুটেন আর স্পাইরোনোল্যাকটন। এগুলোর প্রতিটিই ত্বকের বাড়তি তেল নিঃসরণের হার নিয়ন্ত্রণ করে, পাশাপাশি এর ওপর জীবাণুর প্রভাবকেও প্রশমিত করে।
 রেড এবং ব্লু এলইডি ট্রিটমেন্টও নেওয়া যেতে পারে এ ধরনের ব্রণ থেকে বাঁচতে। এর মধ্যে ব্লু অ্যাকনে সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করে আর রেড লাইট কমায় প্রদাহ।
 বাসায় বসে কোল্ড কমপ্রেসও নেওয়া যায়। একটা বরফখণ্ড নিয়ে কাপড়ে পেঁচিয়ে ব্লাইন্ড পিম্পলের ওপর চেপে ধরে রাখতে হবে এক থেকে দুই মিনিট। ত্রিশ মিনিট পর পর দিনভর এই প্রক্রিয়া চালানো গেলে রক্তনালি সংকুচিত হয়ে প্রদাহ কমে যাবে।
 হাইড্রোকোলাইড পিম্পল প্যাচ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ডিসকালারেশন ঢাকা যাবে, সেই সঙ্গে প্রদাহে মিলবে আরাম।

 অর্চনা সাহা
মডেল: মিলি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top