ফিচার I জমবে জ্যাকেট
সিজনটাই এমন! তবে লেদার বা উলে নয়, হালকা হিমের এই দিনে ওম খুঁজতে চাই অন্য রকম উইন্টারওয়্যার। স্টাইলিশ সব অপশন তৈরি হচ্ছে দেশেই। খোঁজ জানাচ্ছেন সারাহ্ দীনা
নগরের শীত আসে ধীর পায়ে। লুকিয়ে লুকিয়ে। আবার হুট করে হারিয়েও যায়। হঠাৎ হালকা, মৃদুমন্দ বাতাস জানান দেয় শীত কিন্তু আছে আশপাশে। আমাদের দেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। তাই শহরে বিশেষ করে ঢাকায় শীতের তীব্রতা থাকে না বললেই চলে। শুধু শৈত্যপ্রবাহের কয়েকটা দিন জাঁকিয়ে বসে শীত। বাকি দিনগুলোতে পেঁজা তুলার মতো কুয়াশা, সকাল-বিকেলের মিষ্টি রোদ, রাতের হিমেল বাতাসে শীত বেশ উপভোগ্য। লেয়ারিংয়ে মেতে ওঠার জন্য পারফেক্ট সময়।
হালকা ফ্যাব্রিকের জ্যাকেট শহুরে শীতের জন্য হতে পারে উপযুক্ত পোশাক। উলেন না হয় তোলা থাকুক তীব্র শীতের জন্য। শীতের শুরুর এ সময়টায় পরে নেওয়া যেতে পারে পাতলা ফ্যাশনেবল সব জ্যাকেট। এটি বরাবরই টাইমলেস উইন্টার ফ্যাশন হিসেবে সমাদৃত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জ্যাকেটের জার্নিতে এসেছে নানা পরিবর্তন। কখনো তা গড়নে, কখনো অলংকরণে। এবারের শীতকালীন ফ্যাশন ধারাতেও আছে জ্যাকেট। বৈচিত্র্যে ভরপুর এই লাইন। রং নিয়ে দারুণ সব খেলায় মেতেছেন ডিজাইনাররা। আর দৈর্ঘ্যতে দেখা যাচ্ছে নানান নিরীক্ষা। কোনোটা কোমর অবধি, কোনোটা থাই কিংবা নি লেন্থের, আবার কোনোটা পৌঁছে যাচ্ছে গোড়ালি পেরিয়ে পায়ের পাতা অবধি। এমনই বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এ বছরের আয়োজন।
২০২২-২৩ মৌসুমে দেশি জ্যাকেটে দেখা যাচ্ছে রিভার্সেবল নকশার ব্যাপকতা। বেশ কিছু ব্র্যান্ড কাজ করেছে এই নকশা নিয়ে। বর্তমানে কম খরচে বেশি পোশাক কেনাতেই যেন সব ঝোঁক ফ্যাশন-সচেতনদের। সেই সঙ্গে সময়স্বল্পতা, রাখার জায়গার অভাব, গোছানোর ঝক্কি ইত্যাদি কারণে রিভার্সেবল পোশাকে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। তাই এ নিয়ে কাজ বেড়েছে ডিজাইনারদের ডেরায়। এ রকম পোশাক কেনায় কমছে ক্রেতার ব্যয়। সেই সঙ্গে একই জ্যাকেট দুভাবে স্টাইলিংয়েরও সুযোগ মিলছে।
দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড যাত্রা নিয়ে এসেছে এমনই কিছু শীতপোশাক। বেশ কয়েক ধরনের নকশার জ্যাকেট মিলবে তাদের কালেকশনে। যাত্রা বাংলাদেশ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ইমতেনান জাকি জানিয়েছেন, যাত্রার জ্যাকেটগুলোর গঠনগত নকশায় ভিন্নতা আছে। এবার জাপানের পোশাক কিমোনোর কাটে জ্যাকেট তৈরি করেছে যাত্রা। ইউনিসেক্স হওয়ায়। ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই ব্যবহার উপযোগী। এই জ্যাকেটগুলো রিভার্সেবল। অর্থাৎ ভেতর ও বাহির—দুপাশই ব্যবহার করা যাবে। দুদিকে ব্যবহার করা হয়েছে দুই ধরনের রং। স্টাইলিংয়ে বিকল্প তৈরির জন্য। সাদা, নীল, ধূসর রঙের প্রাধান্যই বেশি এবারের নকশায়। সঙ্গে আছে মানানসই প্রিন্ট। এই লাইনের জ্যাকেট পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে।
ওয়ান পিস কোট তৈরি করেছে যাত্রা। কালেকশনটা একটু ড্রামাটিক। দুই ধরনের প্রিন্ট ব্যবহৃত হয়েছে এর নকশায়। চলচ্চিত্র এবং বিজ্ঞাপনপ্রাণিত। কেনা যাবে ৭ হাজার ৫০০ টাকায়। এই কোটগুলো যাত্রার ফিমেল কালেকশনের জন্য বানানো।
আরও একটি ইউনিসেক্স জ্যাকেট এনেছে যাত্রা। দৈর্ঘ্যরে দিক থেকে কম প্যাটার্নের এই জ্যাকেটগুলোর সঙ্গে রয়েছে হুড। এগুলোও উভয় দিক ব্যবহার উপযোগী। ন্যাচারাল ডাই করা ফ্যাব্রিক, প্যাচওয়ার্ক আর খাদি কাপড়—এই তিন ব্যবহারে তৈরি করা হয়েছে হুডি জ্যাকেটগুলো। ৩ হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যাবে।
ওয়্যারহাউস কাজ করে ফিমেল ক্লথিং লাইন নিয়ে। উইন্টার কালেকশনে রিভার্সেবল জ্যাকেটের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিয়েছে দেশীয় এই ব্র্যান্ডও। উভয় দিক ব্যবহার উপযোগী এ জ্যাকেট দ্রুত সমাধান হতে পারে ব্যস্ত জীবনে। ওয়্যারহাউসের কালেকশনে রিভার্সেবল জ্যাকেটের ডিজাইন মিলবে মোট চারটি। প্যাটার্নেও রয়েছে বিভিন্নতা। লং, বম্বার এবং থাই লেন্থ। শীতের সময়ে পোশাকে উজ্জ্বল রং পছন্দ করা মানুষের সংখ্যা বেশি। সে কথা মাথায় রেখে ওয়্যারহাউস উজ্জ্বল রং বেছে নিয়েছে এ ক্ষেত্রে। রংগুলো হচ্ছে ডিপ মাস্টারড, ছাই, বটল গ্রিন এবং ফুশিয়া। যেগুলো অন্য অনেক রঙের পোশাকের সঙ্গে সহজেই পেয়ার আপ করে নেওয়া যায়। রিভার্সেবল জ্যাকেটের জন্য এসব রং বেছে নেওয়ার কারণ এটাই, জানালেন ওয়্যারহাউসের প্রতিষ্ঠাতা এবং নকশাকার তাসনিম ফেরদৌস। ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে রঙিন এই জ্যাকেটগুলো। ফুল স্লিভ রিভার্সেবল জ্যাকেট লাইনের প্রতিটিতেই আছে পকেট। ভারী কটনে তৈরি জ্যাকেটগুলো। উভয় পাশে একই ফ্যাব্রিক। পরতেও আরামদায়ক।
দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির নতুন নাম ব্লু বাটন। ব্র্যান্ডটির ফল এবং উইন্টার কালেকশনে আছে কো-অরড স্যুট। এগুলো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে মসলিন কটন। ৭ হাজার ৭০০ টাকায় পাওয়া যাবে শহুরে শীতের উপযোগী এই সেট। দেশের মানুষ বছরের এই সময়ে পাশ্চাত্যের ফ্যাশন গায়ে জড়িয়ে নিতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এখন এ ধরনের পোশাকের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া দেশের করপোরেটদের মাঝে মেয়েদের সংখ্যাও বাড়ছে। তাই চাহিদা বাড়ছে স্যুটের। কিন্তু ক্যাজুয়াল স্যুট নিয়ে দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর কাজ খুব বেশি নয়। ব্লু বাটনের তৈরি দেশি মোটিফের রঙিন স্যুট তাই নজর কাড়ছে ফ্যাশন-সচেতনদের। এমনটাই জানা গেল কস্টিউম ডিজাইনার আনিকা জাহীনের কাছে। ব্লু বাটন এই তরুণ তুর্কিরই উদ্যোগ।
জ্যাকেটের সঙ্গে বটমে পরা যেতে স্লিম কাটের ট্রাউজার। আর ডেনিম তো থাকছেই। ক্ল্যাসিক এ পেয়ারিং বরাবরই জমাটি।
মডেল: মিলি, তুবা ও অনন্যা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: যাত্রা, ওয়্যারহাউজ ও ব্লু বাটন
ছবি: কৌশিক ইকবাল