ফিচার I কানাডিয়ান টাক্সিডো
একেএ—হেড টু টো ডেনিম, অল ডেনিম, ডাবল ডেনিম, ডেনিম অন ডেনিম কিংবা ডেনিম অন ডেনিম অন ডেনিম। বিস্তারিত অর্চনা সাহার লেখায়
আলটিমেট ফ্যাশন ফো পা। কানাডিয়ান টাক্সিডোর সূত্রপাত এভাবেই। পঞ্চাশের দশকের এক বিব্রতকর মুহূর্ত থেকে যে পরবর্তী সময়ে এমন আইকনিক ফ্যাশন লুক তৈরি হবে, তা হয়তো কারও চিন্তায় ছিল না। কিন্তু ঘটনার সত্যতা মিলেছে ইতিহাসবিদ লিন ডাউনির ভাষ্যে। ১৯৫১ সাল, কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে নামীদামি এক হোটেলে ঘটনার সূত্রপাত। জনপ্রিয় আমেরিকান সংগীতশিল্পী বিং ক্রসবির দারুণ পছন্দের শহর ছিল ভ্যাঙ্কুভার। নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন তিনি সেখানে। এমনকি শহরের মেয়র জর্জ মিলার ১৯৪৮ সালে বিংকে শহরের একটি চাবিও দিয়ে দেন উপহারস্বরূপ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই মিউজিশিয়ানকে সে সময় সবাই এক নামে চিনতেন। ফ্যানদের কাছে তিনি ছিলেন ‘দ্য মোস্ট ফেমাস সিঙ্গার ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’। কিন্তু সুপরিচিত এই সংগীতশিল্পীই দারুণ বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন শুধু তার পোশাকের কারণে। তা-ও আবার তার সবচেয়ে পছন্দের শহরে। শিকার শেষে হোটেলে চেক ইন করতে চাইলে সেখানেই বাধে বিপত্তি। হোটেল কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয় বিং আন্ডারড্রেসড। কারণ, থ্রিপিস স্যুটের বদলে তার পরনে ছিল ডেনিম অন ডেনিম আউটফিট। দেখতে সাধারণ হলেও সেটি ছিল বিখ্যাত আমেরিকান ব্র্যান্ড লিভাই স্ট্রাউস অ্যান্ড কো-এর তৈরি করা। তবে খুব বেশি দূর গড়ানোর আগেই পরিস্থিতি সামলে নেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। যদিও এ ঘটনার কারণে দারুণ তোপের মুখে পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের।
এরপর থেকেই কানাডিয়ান টাক্সিডোর সূত্রপাত। পুরো ঘটনা কানাডাকেন্দ্রিক হলেও এটি প্রথম তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, লিভাই স্ট্রাউটসের ডেরায়। ক্রসবির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই কাস্টম টাক্সিডো তৈরি করা হয় লিভাইস ক্ল্যাসিক ৫০১ জিনস দিয়ে। যেন এটা পরলে কোনোভাবেই আর আন্ডারড্রেসড না দেখায় পরিধানকারীকে। টাক্সিডোর ভেতর একটা চামড়ার প্যাচও জুড়ে দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয় হোটেল কর্তৃপক্ষদের জন্য বিশেষ বার্তা। ‘আ পারফেক্টলি অ্যাপ্রোপ্রিয়েট ফ্যাব্রিক অ্যান্ড এনিওয়ান ওয়ারিং ইট শুড বি অ্যালাউড এনট্রেন্স ইনটু দ্য ফাইনেস্ট হোটেলস।’ লঞ্চ হওয়ার পরপরই লিভাইসের বেস্ট সেলিং আইটেম হয়ে ওঠে এক কানাডিয়ান টাক্সিডো। ২০১৪ এর স্প্রিং সামার কালেকশনের জন্য লিভাইস পুনরুৎপাদন করে ক্রসবির সেই অরিজিনাল আইকনিক জ্যাকেট। ২০০ পিসের লিমিটেড এডিশন সেই জ্যাকেট সাড়া ফেলে দেয় পুরো ফ্যাশন বিশ্বে।
দুর্ঘটনাবশত প্রবেশ করলেও ফ্যাশনে বাউন্ডারি ব্রেকিং কনসেপ্ট তৈরি হয় এর মাধ্যমে। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পপ কালচার যখন পাখা মেলছে, তখন ডেনিমের এই অভিনব উত্থান একে শ্রমিক শ্রেণির টেক্সটাইল থেকে উদ্ভাবনী স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরির অন্যতম অনুষঙ্গে পরিণত করে। বিদ্রোহীদের পোশাক হিসেবে পরিচিত ডেনিম শখ করে গায়ে তুলতে শুরু করেন রকস্টাররা। সত্তর আর আশির দশকে হেড টু টো ডেনিম লুক হয়ে ওঠে কুল কিডদের গো টু স্টাইল। নব্বইয়ে ড্রিউ বেরিমোরের মতো তারকাদের পরতে দেখা যায় অভিনব সব ডেনিম অন ডেনিম আউটফিট। ইউনিসেক্স লুকেও জায়গা করে নেয় এই ট্রেন্ড। ক্রসবি কাণ্ডের ৫০ বছর পরও এর যে আবেদনে ভাটা পড়েনি, তারই প্রমাণ মেলে ২০০১ সালের আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে। সেলিব্রিটি কাপল জাস্টিন টিম্বারলেক আর ব্রিটনি স্পিয়ার্সের বদৌলতে। যেখানে স্পিয়ার্সের পরনে ছিল ডেনিম প্যাচওয়ার্ক করা বেল্টেড গাউন, সঙ্গে ম্যাচিং ডেনিম ব্যাগ। জাস্টিনকে দেখা যায় ডেনিম স্যুট আর ডেনিম কাউবয় হ্যাটে। আইকনিক এই কাপল লুক এখনো একুশ শতকের প্রথম দশকের ফ্যাশনের কি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীকালে শো স্টপিং রেড কার্পেট মোমেন্ট থেকে বাঘা বাঘা ডিজাইনারের ফ্যাশন উইকের কালেকশনে দেখা গেছে হেড টু টো ডেনিমের সরব উপস্থিতি। এই ট্রেন্ডকে জনপ্রিয় করে তুলতে ওয়াইল্ড ওয়েস্ট কাউবয়ের অবদান অস্বীকারের সুযোগ নেই। তেমনি জিজি হাদিদ, কেন্ডেল জেনারের মতো সুপার মডেলরা এই লুকের আধুনিকায়নে যে প্রভাব ফেলেছেন, তা-ও মানতেই হবে। কিন্তু কীভাবে আয়ত্তে আনা যায় আপাদমস্তক ডেনিম লুক তৈরির এই আর্ট? দুই বা ততোধিক ডেনিম পিস নিয়ে তাকে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে একটা সমন্বিত রূপ দেওয়ার সহজ কৌশলগুলোই-বা কী?
মনোক্রোম
ম্যাচিং গেমের মতো করে সারতে হবে ড্রেসিং। কালার এবং ওয়াশে কাছাকাছি এমন দুটো ডেনিম পিস বেছে নেওয়া যায় এ ক্ষেত্রে। খেয়াল রাখতে হবে পোশাকের অনুপাতেও। যেমন—একটি ওয়াইড লেগড জিনসের সঙ্গে সামান্য চাপা ফিটিংয়ের ট্রাকার জ্যাকেটের জোড় দুর্দান্ত। বিকল্পভাবে, যাদের রেট্রো লুক পছন্দ, তাদের জন্য ওভারসাইজড জ্যাকেট আর হাই ওয়েস্টের স্লিম ফিটেড জিনস কিন্তু ভালো অপশন। এ ক্ষেত্রে লুক কমপ্লিট হতে পারে একই টোনের বাটন আপ শার্ট লেয়ার করে। জ্যাকেটের ভেতরে পরে নিয়ে। দ্য মোর, দ্য ম্যারিয়ার—এ সূত্র মেনে। আর হেড টু টো ডেনিম লুকে যে শুধু নীলের শেড পরতে হবে, ব্যাপারটা মোটেই তেমন নয়, এ ক্ষেত্রে কালো ডেনিমও সই। কাঙ্ক্ষিত মনোক্রোম লুকের জন্যও পারফেক্ট।
হাই কনট্রাস্ট
ম্যাচি-ম্যাচি পছন্দ নয়? সে ক্ষেত্রে মিসম্যাচই সই। বাজারে হরেক শেডের ডেনিম দিয়ে তৈরি হবে এ লুক। কনট্রাস্টিং টোনের ডেনিম বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে কালার প্যালেট। কালো কিংবা নীল—শেডে যেন সামঞ্জস্য থাকে। সেফ শটের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে লাইট ইন্ডিগো ডেনিম শার্ট, সঙ্গে ডার্ক ব্লু ডেনিম প্যান্ট। আর যারা রিস্ক নিতে অভ্যস্ত, তাদের জন্য বৈপরীত্য বেস্ট অপশন। সবচেয়ে উজ্জ্বল আর হালকা রঙের কনট্রাস্ট করে নেওয়া যেতে পারে। যেমন: ডার্কার ডেনিম ওয়েস্টার্ন শার্ট আর ট্রাকার জ্যাকেটের সঙ্গে পরে নেওয়া যায় লাইটার টোনের ডেনিম বটম।
কালার পপ
হেড টু টো মনোক্রোম ডেনিম লুকে বোর? সে ক্ষেত্রে সামান্য রঙের যোগ করে নেওয়া যায় আউটফিটে। টপ এবং স্কার্ট কম্বো কিংবা ট্রাকার জ্যাকেটের সঙ্গে জিনসের জোড়ে হুট করে একটা নিয়ন হুডির লেয়ারিংয়ে মনোটোন ভাব কাটবে। অথবা রংচঙা কোনো গ্রাফিক টি শার্টের নিচে পরে নিলে ভিজুয়াল রিলিফ দেবে লুকে। কটন আর জার্সি পিসও যোগ করে নেওয়া যায় হেড টু টো ডেনিম লুকে। কুল ক্যাজুয়াল ভাইব তৈরিতে।
ড্রেসি অ্যাফেয়ার
পলিশড লুকের জন্য পারফেক্ট। ফান, ফ্লার্টি ভাইবও দেবে। তাই অল ডেনিম লুকের জন্য পরে নেওয়া যেতে পারে ডেনিমের ড্রেস। সঙ্গে মানানসই অ্যাকসেসরিজ। কোমরে বেল্ট আর মডার্ন ডেন্টি জুয়েলারিতে সেরে নেওয়া যাবে স্ট্রিট স্টাইলিং। এ ছাড়া পকেট দেওয়া ডেনিম ওয়াইড লেগ প্যান্টের সঙ্গে পরে নেওয়া যায় ডেনিমের ক্রপ টপ আর ট্রান্সলুসেন্ট লং জ্যাকেট। একদম জমে যাবে। ফ্যাশন ফরওয়ার্ড এ লুক অফিস অ্যাটায়ার হিসেবে যেমন দুর্দান্ত, তেমনি ক্যাজুয়াল যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে নেওয়া যাবে অনায়াসে; এমনকি ডেনিমের শাড়িও। যেকোনো ধরনের দেহাবয়বেই এর স্টাইলিং সহজ। তবে এর সঙ্গে জুতা, ব্যাগ আর অন্যান্য অ্যাকসেসরিজের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন।
মডেল: আয়শা, সাদাফ, জামি ও তুবা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: র’নেশন
ছবি: কৌশিক ইকবাল