এই শহর এই সময় I তারায় তারায়
চলছে ভরপুর শীতের মৌসুম। কুয়াশার চাদর ক্ষণে ক্ষণে ঢেকে দিচ্ছে রাজধানীকেও। এরই মাঝে গেল মাসে উষ্ণতা ছড়িয়ে ছিল শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গন।
দেয়ালজুড়ে বৈচিত্র্যময় সব চিত্রকর্ম। শিল্পের সৌন্দর্য ও গভীর বোধ ছড়িয়ে পড়ছে দিকে-দিকে। রয়েছে চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, স্থাপনাশিল্প, নিউ মিডিয়ামসহ বিভিন্ন মাধ্যমের চিত্রমালা। তাতে সঙ্গ দিতে চলছে মন্ত্রমুগ্ধকর পারফরম্যান্স আর্ট, নাটক, সংগীত…আরও কত কী! ১১৪টি দেশের বিখ্যাত ও প্রতিশ্রুতিশীল চিত্রশিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়ে ৮ ডিসেম্বর থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় আর্ট গ্যালারিতে শুরু হয়েছে ১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। তাতে এক লহমায় দেশীয় শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শিল্প-সংযোগের মিলেছে দারুণ সুযোগ। সাধারণ দর্শক থেকে শিল্পবোদ্ধা- সবাই বিমোহিত। এই আয়োজন চলবে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। আয়োজন ঘিরে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের শিল্প সমালোচক জুরি ইয়োনা ব্লাজউইক জানান, এবারে ছবি বাছাইয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটকে। মানুষের জীবন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কীভাবে শিল্পীরা তাদের চিত্রকর্ম বা পারফরম্যান্স আর্টে তুলে আনছেন, সেগুলো রাখা হয়েছে বিবেচনায়।
স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক। কম-বেশি সবাই রক মিউজিকপ্রেমী। ঘড়ির কাঁটায় রাত নয়টা পেরিয়েছে বেশিক্ষণ হয়নি। মঞ্চে উপস্থিত কিংবদন্তি রকস্টার জেমস ও তার ব্যান্ড ‘নগরবাউল’। বয়সের বাধা পেরিয়ে, জেমস যেন গর্জে উঠলেন সেই নব্বইয়ের দশকের মতোই, যখন তিনি ছিলেন টগবগে তরুণ। তার দরাজ কণ্ঠের অনুরণনে মাতোয়ারা সবাই। জেমস আরও একবার ‘তারায় তারায় রটিয়ে’ দিলেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব।
দৃশ্যটি ২ ডিসেম্বর, আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ‘ব্যান্ড মিউজিক ফেস্ট ২০২২’-এর। আরেক কিংবদন্তি রকস্টার, প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে বামবা [বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন] ও চ্যানেল আইয়ের এই উদ্যোগ। দেশে ব্যান্ড মিউজিক ঘিরে এত বড় উৎসব এবারই প্রথম। বেলা ২টায় শুরু হয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত চলা এই কনসার্টে নগরবাউল ছাড়াও পারফর্ম করে মাইলস, ওয়ারফেজ, সোলস, রেনেসাঁ, ফিডব্যাক, অর্থহীন, মাকসুদ ও ঢাকা, অবসকিউর, দলছুট, আর্টসেল, শিরোনামহীন, ভাইকিং, ক্রিপটিক ফেইট, পেন্টাগন ও পাওয়ারসার্জ। দেশের রক মিউজিক সিনারিওতে অডিয়েন্সের জন্য অনন্য লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স হয়ে থাকল এই ফেস্ট।
স্থাপত্যশিল্পের মর্যাদায় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকে শিল্প ও আভিজাত্যবোধ। স্থাপত্যের শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাদারদের আর্কিটেকচারাল আইডিয়াগুলোকে সারা দুনিয়ার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে কাজ করছে ‘আর্কটুইস্ট’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। সেই প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ১৭ ডিসেম্বর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে উদ্বোধন হয় আর্কিটেকচারাল এক্সিবিশন ‘আ পয়েন্ট জিরো’র। এ সময়ে একই শিরোনামে একটি বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রদর্শনী চলে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
নৃত্যকলা ও নাটক- শিল্প-সংস্কৃতির দুটি প্রাচীন অথচ চির-সমকালীন মাধ্যম। মাধ্যম দুটির মিলন ঘটে হরদমই। তাতে অন্যতর শৈল্পিক দ্যুতি খেলা করে যায়। এমনই এক মিলন ঘটে ৩ ডিসেম্বর। ধানমন্ডির ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারে আয়োজিত হয়ে গেল ড্যান্স ড্রামা ‘আলট্রাভায়োলেট’। পরিবেশনায় নাঈম খান ড্যান্স কোম্পানি। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে। প্রেম, লালসা, বিনাশ, দুঃখ, সমবেদনা…এককথায় মানবজীবনের সব অনুভূতিকে ধারণ ও প্রকাশ করেছে এই ড্যান্স ড্রামা। শুরুটা হয় সুফি ড্যান্সের মাধ্যমে। তাতে কনটেম্পরারি, কত্থক ছাড়াও রোমান্স চ্যাপ্টারে ট্যাপ ড্যান্সের মিশ্রণে মন্ত্রমুগ্ধ করেন নৃত্যশিল্পীরা।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ