skip to Main Content

নখদর্পণ I নখের আর্দ্রতায়

ত্বক আর চুল নিখুঁত, কিন্তু নখ বেহাল। আর্দ্রতার অভাবে নয় তো?

ময়শ্চারাইজার। সে তো মুখত্বক, দেহ আর চুলের জন্য। কিন্তু ধারণাটা কতটুকু নির্ভরযোগ্য? অনেকের হয়তো জানা নেই, নখেরও দরকার বাড়তি আর্দ্রতা। এর অভাবে শুষ্কতা ভর করে অনায়াসে। ফলে ম্যানিকিউরের সৌন্দর্য বেশি দিন টেকে না। নখ বাড়েও ধীরগতিতে। অল্পতেই ফেটে যায়, ভেঙে যায়। এমনকি অতিরিক্ত শুষ্কতায় নেইল বেইজের কিউটিকলেও ফাটল দেখা দিতে পারে, যা পরে সংক্রমণের কারণ হয়ে ওঠে।
শুষ্কতায় সম্ভাব্যতা
নখে আর্দ্রতার অভাবে যে শুষ্কতা দেখা দেয়, তার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক- উভয়ই। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে বয়স ও লিঙ্গের ভূমিকা। কোলেস্টেরল হচ্ছে প্রধান লিপিড, যা নখে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। এর অভাবে নখ আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা হারাতে শুরু করে। সমীক্ষায় প্রমাণিত, নারীদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেইল প্লেইটের কোলেস্টেরল লেভেল কমতে শুরু করে। ফলে পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীদের শুষ্ক, ভঙ্গুর নখের প্রবণতা বাড়তে থাকে। আর বাহ্যিক কারণ, সে তালিকাটাও ছোট নয়। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব সহজেই পড়ে নখের ওপর। অতিরিক্ত ঠান্ডা, শুষ্ক আবহাওয়া এর শুষ্কতা বাড়িয়ে তোলে। শীতকালেই যার প্রমাণ মেলে। এ ছাড়া পরিবেশদূষণের প্রভাবও পড়ে নখে। বেশি কেমিক্যালযুক্ত পানিতে নখ সহজেই হারিয়ে ফেলে এর স্বাভাবিক আর্দ্রতা।
সারাতে সমাধান
সুখবর! সময় করে, সঠিকভাবে যদি নখে নিয়মিত ময়শ্চারাইজার মাখানো যায়, তাহলেই শুষ্কতা সেরে যাবে, মত খোদ নেইল কেয়ার এক্সপার্টদের। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয়।
আটকে রাখা চাই আর্দ্রতা
ফান ফ্যাক্ট- ত্বকের চেয়ে নখে হাজার গুণ বেশি পানি প্রবেশ করতে পারে। ফলে রোজকার হাত ধোয়া থেকে বাসন মাজায় নখের কাঠামোর স্বাভাবিক বন্ধন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভেঙে যায়। এমনকি নখের আর্দ্রতা ধরে রাখার স্বাভাবিক ক্ষমতা হারাতে শুরু করে। সে ক্ষেত্রে সমাধান? পানির যেকোনো কাজ যেমন কাপড় কাচা বা বাসন মাজার সময় গ্লাভস পরে নিতে হবে। পানির সংস্পর্শে আসার পরপরই মেখে নিতে হবে ময়শ্চারাইজার। ঠিক একইভাবে যেমন করে হাতের যত্ন নেওয়া হয়।
এক্সফোলিয়েশন মাস্ট
একটু অদ্ভুত শোনালেও ঘটনা সত্যি। নখেরও এক্সফোলিয়েশন প্রয়োজন। কারণ, ত্বকের মতো এর ওপরও মৃত কোষের আস্তর জমে, যা পরিষ্কার না করলে ময়শ্চারাইজার ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারে না। এর দরুন দেখা দেয় শুষ্কতা। নখের এক্সফোলিয়েশনের ক্ষেত্রে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড দারুণ অপশন। গবেষণায় দেখা গেছে, নেইল প্লেটে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড দিয়ে নিয়ন্ত্রিত এক্সফোলিয়েশনের ফলে শুষ্ক নখের বেশ উন্নতি ঘটেছে। কারণ, এটি নখের কোষে থাকা কেরাটিন বন্ড ভেঙে দেয় এবং হিউমিকটেন্ট হয়ে নখে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড অথবা ইউরিয়াযুক্ত নেইল রিনিউয়াল এক্সফোলিয়েন্ট দিয়ে সপ্তাহে অন্তত একবার বাড়তি যত্ন নিলেই যথেষ্ট।
সঠিক ময়শ্চারাইজার বাছাই
এক্সফোলিয়েশনের পরপরই প্রয়োজন পড়বে ময়শ্চারাইজারের। শুধু নখের জন্য বিশেষভাবে তৈরি নেইল ক্রিম মিলবে বাজারে। এগুলোর মূল উপাদান হিসেবে সাধারণত ভিটামিন ই বেশি ব্যবহৃত হয়; যা নখের শক্তি বাড়ায়, কমায় ভঙ্গুর ভাব। এ ছাড়া হ্যান্ড ক্রিমও মেখে নেওয়া যেতে পারে নখে আর্দ্রতা জোগানোর জন্য। তেলও বিকল্প হিসেবে দারুণ। কারণ, ক্রিমের চেয়েও দ্রুত শোষিত হয় নখে। এ ক্ষেত্রে সানফ্লাওয়ার বা ব্রাজিলিয়ান নাট অয়েল থাকতে পারে সংগ্রহে। এই দুটোই নখের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ায়, সাহায্য করে শুষ্কতা দূর করতে। দিনে কবার মাখতে হবে ময়শ্চারাইজার? এ ক্ষেত্রে সূত্র হচ্ছে ‘মোর ইজ মোর’। পানির সংস্পর্শে আসার পরপরই নখে ময়শ্চারাইজার মাখিয়ে নিতে হবে। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে নাইট টাইম বিউটি রুটিনে এর সংযোজনও দারুণ কাজের।
মাসাজ ম্যাটারস
তেল বা ক্রিম, যেটাই ব্যবহার করা হোক না কেন নখে, কীভাবে তা মাখা হচ্ছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দরকার সঠিক মাসাজ প্রক্রিয়া মেনে চলা। এতে শুধু ভঙ্গুর ভাব আর শুষ্কতাই দূর হবে না, সঙ্গে আশপাশের অংশে নখের রক্তসঞ্চালনও বাড়বে। সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে নখ। মিনিটখানেক মাসাজই যথেষ্ট এ ক্ষেত্রে।
নেইল স্লাগিং
এই কে-কিউটি ট্রেন্ডটি শুধু ত্বক আর চুল নয়, নখের জন্যও সমান উপকারী। নেইল স্লাগিং প্রক্রিয়ায় মূলত এক্সফোলিয়েটেড, ময়শ্চারাইজড নখের ওপর পুরু অক্সক্লুসিভ এজেন্ট মাখিয়ে দেওয়া হয় আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য। এতে নখের শোষণক্ষমতাও বাড়ে। সাধারণত তেল বা ক্রিম মাখার পরে নখে পুরু করে ভেসলিন বা অ্যাকুয়াফোরের মতো অয়েন্টমেন্ট মাখিয়ে নেওয়া হয়। বাড়তি পরিচর্যার জন্য একটি কটন গ্লাভস গলিয়ে নেওয়া যায় হাতে, যা সারা রাত রেখে দিতে পারলে আরও ভালো।
এত কিছু করার পরও যদি নখের শুষ্কতা না কাটে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া যায়। দেহে ভিটামিনের ঘাটতি, থাইরয়েড, অ্যানিমিয়া অথবা অন্য কোনো সমস্যার দরুন এমন শুষ্কতা দেখা দিতে পারে, যা সারাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো। খেয়াল রাখতে হবে খাবারদাবারের দিকেও। নখের শুষ্কতা সারাতে প্রতিদিনকার তালিকায় রাখা যেতে পারে স্যামন, ওয়ালনাট, সয়া, ডিম আর নানা ধরনের বীজের মতো ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার।

 অর্চনা সাহা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top