অ্যাডভার্টোরিয়াল I এসজিএল: ডায়মন্ডের মান নির্ণয়ে
চকচক করলেই যেমন সোনা হয় না, তেমনি যেকোনো উজ্জ্বল পাথর মানেই ডায়মন্ড নয়। কিন্তু কী করে চেনা যাবে আসল হীরা? সেই কাজ আমাদের দেশে সম্প্রতি সহজ করে দিয়েছে সলিটেয়ার জেমোলজিক্যাল ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড (এসজিএল)।
২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এসজিএল একটি ব্রিটিশ ডায়মন্ড সার্টিফিকেশন ও গ্রেডিং ল্যাবরেটরি নেটওয়ার্ক, যার সদর দপ্তর লন্ডনে। এটি দ্রুততম বর্ধনশীল আন্তর্জাতিক পরীক্ষাগার নেটওয়ার্কগুলোর অন্যতম। এই শিল্প শীর্ষস্থানীয় জায়গায় থাকায় এসজিএল ক্লায়েন্টদের আন্তরিকভাবে সুবিধাজনক উপায়ে পরিষেবা দিয়ে আসছে। উচ্চ মানের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য এসজিএল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ পেশাদারদের গুরুত্ব দিচ্ছে। টেকসই রতœপাথরশিল্পের বিকাশে এবং এর ক্লায়েন্টদের বাণিজ্যিকভাবে সঠিক ও প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদানে এসজিএল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ব্যক্তিগত প্রতিবেদন, কিউআর কোড, ভার্চুয়াল ব্লকচেইন সক্ষম সার্টিফিকেট ও শিক্ষা পরিষেবার মতো উদ্ভাবনগুলোর মাধ্যমে সারা বিশ্বের অন্যতম প্রধান রতœতাত্ত্বিক পরীক্ষাগার হিসেবে এসজিএলের উপস্থিতি একটি বেঞ্চমার্ক হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে এসজিএলের কার্যক্রম নিয়ে ক্যানভাসের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতেছিলেন বেঙ্গল ডায়মন্ড লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর উত্তম বণিক। এসজিএল মূলত বেঙ্গল ডায়মন্ড লিমিটেডের সিস্টার কনসার্ন ও ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। মিস্টার উত্তম জানান, ২০১৯ সালে এই প্রকল্পের উদ্যোগ নেন তিনি, যদিও পথ সহজ ছিল না। শুরুতেই একধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। ফলে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে। বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশে এসজিএলের কার্যক্রম ব্যবস্থাপনায় ব্রিটেনভিত্তিক মূল প্রতিষ্ঠানটি, যেখানে বাংলাদেশে বেঙ্গল ডায়মন্ড লিমিটেডের রয়েছে অংশীদারি। শুধু একজন জেমোলজিস্টের পক্ষেই ডায়মন্ডকে সার্টিফাই করা সম্ভব। এ কাজে এসজিএলে রয়েছেন একদল দক্ষ কর্মী ও পেশাজীবী।
উত্তম বণিক আরও জানান, এই ব্যবসার সঙ্গে তার পরিবার শতাধিক বছর ধরে সম্পৃক্ত। তিনিও এ খাতে কাজ করছেন প্রায় ২৮ বছর। এই দীর্ঘ পথচলা ও অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তার পক্ষে খালি চোখে ডায়মন্ডকে খাঁটি বলে রায় দেওয়া অসম্ভব। বর্তমানে গ্লোয়িং, সিনথেটিক, সিভিডিসহ নানা প্রকারের ডায়মন্ড থাকার ফলে একে সার্টিফাই করা বেশ জটিল। এসজিএলের রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু ধাপ বা প্রক্রিয়া, যেগুলোর ভেতর দিয়ে একটি ডায়মন্ডকে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতেই ডায়মন্ডের মান নির্ধারণ করে এসজিএল।
এবার একটু ভাবা যাক, ডায়মন্ড কেনার ক্ষেত্রে আপনি কোন ব্যাপারটি সবচেয়ে গুরুত্ব দেবেন। বলা যায়, সবাই নিশ্চিত হতে চাইবেন খাঁটি ডায়মন্ডের ব্যাপারে। বাংলাদেশের বাজারে এসজিএল প্রবেশ করায় কাজটি বেশ সহজ হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড বিক্রি করে, তারা নিজ উদ্যোগে অথবা ক্লায়েন্টের চাহিদার ভিত্তিতে প্রতিটি ডায়মন্ডের জন্য এসজিএলের কাছ থেকে সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারে। এসজিএল এই শিল্পে সর্বপ্রথম বিশ্বস্ততার সঙ্গে এই সার্টিফিকেট দেয় বলে দাবি মিস্টার উত্তমের।
দেশে এসজিএলের ল্যাবটি রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত। জেমোলজিস্ট ছাড়া প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে এখানে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার। এই ল্যাবে এখন প্রায় ২০ জন কর্মী নিরলসভাবে কাজ করছেন শিল্পটির বিকাশ ঘটাতে। প্রথম ধাপে এখানে পরিমাপ করা হয় নানা উপাদানের মিশ্রণ। যেমন ধরুন, একটি অলংকারে কী পরিমাণে সোনা ও ডায়মন্ড মেশানো থাকে, তা বের হয়ে আসে এই ধাপে। অতীতে ভুল পরিমাপ উল্লেখ করে ডায়মন্ড বিক্রি করার যে অসাধু প্রবণতা ছিল ক্ষেত্র বিশেষে, বর্তমানে তা এসজিএলের মতো ল্যাবের কারণে অসাধ্য। দ্বিতীয় ধাপে ডায়মন্ডটি মেশিনে স্ক্যানিং করা হয়। এসপিএসটি হলে এই ধাপে পণ্যের কালার মার্ক করে দেওয়া হয়। তৃতীয় ধাপে, জেমোলজিস্ট পুনরায় পরীক্ষা করে দেখেন, মেশিনের ফল সঠিক কি না। যদি কালারের ভিন্নতা দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে তিনি এফটি-আইআর প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। সেখানেও পণ্যটি মান প্রমাণে ব্যর্থ হলে সেটিকে আর সার্টিফাই করা হয় না; বরং মানে বিন্দুমাত্র সমস্যা থাকলেও তা সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়। এভাবে আরও টানা দুবার সুযোগ দেওয়ার পরও মান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে নতুন করে ফি দিয়ে পরীক্ষা করাতে হয় সেই পণ্যের। চতুর্থ ধাপে করা হয় পণ্যটির গ্রেডিং। ডায়মন্ডের ক্ষেত্রে ফোর সি (কালার, ক্ল্যারিটি, ক্যারেট, কাট) খুব গুরুত্বপূর্ণ। গ্রেডিংয়ে ফোর সির মান ভালো এলে পণ্যটিকে এসজিএলের মাধ্যমে সার্টিফাই করা হয়। বর্তমানে ডায়মন্ডের ক্ষেত্রে ফোর সির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেক সি (ফাইভ সি), যা সার্টিফিকেটকে বোঝায়।
মিস্টার উত্তম বণিক বলেন, ‘সম্ভাবনাময় এই শিল্পের বিকাশ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আশানুরূপ হয়নি; তবে আমি আশাবাদী। অতীতে (২০০৭ সালের আগে) স্বর্ণের মান নিয়ে সমস্যা থাকলেও বর্তমানে তা আন্তর্জাতিক মানের। ল্যাব স্থাপনের ফলে ডায়মন্ডের মান নিয়ে সংশয় দিনে দিনে কেটে যাচ্ছে।’ তিনি জানান, বর্তমানে ক্রেতাদের সচেতনতা আরও বাড়ানোর ওপর কাজ করছে এসজিএল। শিগগির শিক্ষামূলক কার্যক্রমও চালু করা হবে, যেন ডায়মন্ডভিত্তিক জ্ঞানের বিস্তার ঘটানো যায়। পাশাপাশি, এসজিএল লন্ডনের অধীনে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হবে, যেন ল্যাবভিত্তিক নানা কার্যক্রম শিখতে পারেন শিক্ষার্থীরা। বিনিময়ে তাদের দেওয়া হবে সনদ।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: এসজিএলের সৌজন্যে