skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I শেপ টেপ

ব্রা-এর দারুণ বিকল্প। অন্তর্বাসের আধুনিক ও অভিনব সংযোজন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডাক্ট টেপ ভেবে ভুল করা যাবে না কিন্তু

২০১৬। আমেরিকান সুপারস্টার কিম কার্দাশিয়ান শেয়ার করেন তার অভূতপূর্ব রেড কার্পেট ফিগারের রহস্য। কিমের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে সেই স্বীকারোক্তি দেখে চোখ ছানাবড়া হয়নি এমন মানুষ খুব কম মিলবে। দশকখানেক আগে ২০০৮ থেকেই টেপ ব্যবহার করেন কিম, পারফেক্ট ক্লিভেজের জন্য। টেপ দিয়ে সুপার লিফটেড লুক পাওয়াটা সহজ বলেই মন্তব্য কিমের। তাই তো ডাক্ট, মাস্কিং থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্যাকেজিং টেপ- কোনোটাই বাদ পড়েনি তার তালিকা থেকে। শেষমেশ গ্যাফার টেপেই মিলেছে স্বস্তি। তবে খোলার সময়ে যে ঝক্কি হতো, তা-ও স্বীকার করে নিয়েছেন অকপটে। এর অনেক আগে থেকেই নির্দিষ্ট দেহাবয়বের জন্য টেপিং টেকনিক প্রচলিত। ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ আর নন-বাইনারি ব্যক্তিরা লম্বা টেপ ব্যবহার করতেন তাদের বুকের অংশ পেঁচিয়ে সমান করে নেওয়ার জন্য। ২০১৯-এর নভেম্বরে লঞ্চ হয় কিম কার্দাশিয়ানের ব্র্র্যান্ড স্কিমসের বডি টেপ। নিজের বডি টেপিংয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কিমের তৈরি এ টেপে প্রাধান্য পায় আরাম ও স্বস্তির বিষয়টা। তাই ম্যাটেরিয়াল হিসেবে বেছে নেওয়া হয় সুপার সফট এবং ফ্লেক্সিবল স্ট্রেচি কটন। ত্বকবান্ধব আঠাযুক্ত এ বডি টেপ পরা বা খোলার সময় ত্বকের কোনো ক্ষতি করবে না। মিনিটেই দেবে এক্সট্রা লিফটেড ইফেক্ট।
বডি টেপ কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, তার পুরোদস্তুর একটা ভিডিও আপলোড করেন কিম তার সোশ্যাল মিডিয়াতে। যাতে কিমকে দেখা যায়, মডেলের কোমরের অংশ থেকে কাঁধ অব্দি সামান্য কোনাকুনিভাবে বডি টেপ লাগিয়ে দিচ্ছেন। এর ওপর একটি ব্লেজার পরিয়ে দেন মডেলকে। তৈরি করেন নিজের আইকনিক নো ব্রা লুক। সাসপেন্ডারের মতো পরে নেওয়া ছাড়াও আরও ভিন্ন ভিন্ন ফরমেশনে ব্যবহার করা যায় বডি টেপ, তারও বর্ণনা ছিল ভিডিওটিতে। টেপটিকে পছন্দনীয় দৈর্ঘ্য-প্রস্থে কেটে নেওয়া যায় বলে কখনো স্ট্র্যাপলেস ব্রা, কখনো ওয়ান শোল্ডার শেপ, তো কখনো শুধু নিপলে পরে নেওয়া যায় বলে জানান কিম। ভিডিওটি নজর কাড়ে নেটিজেনদের। হয়ে যায় ভাইরাল। ফলাফল বডি টেপ উঠে আসে আলোচনার শীর্ষে।
২০২০ সালে লঞ্চ হয় নিউ। বিউটি ও ফ্যাশন এডিটর স্টিফানি মনটেস এই বডি টেপ ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা। ‘বুব জব ইন আ বক্স’ ট্যাগলাইনে মোট তিনটি স্কিন টোনের টেপ নিয়ে আসে নিউ। ফলে ভিন্ন ভিন্ন ত্বক রঙের মানুষদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে শুরু করে প্রডাক্টটির। আর এখন তো সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ্যে এর ব্যবহার দারুণ জনপ্রিয়।
বুব টেপ, ফ্যাশন টেপ, লঞ্জারে টেপ বা বডি টেপ- নাম যেটাই হোক, ক্লোজেটের দারুণ কাজের অনুষঙ্গ। গেম চেঞ্জার বললেও ভুল হবে না। মূলত এই টেপের ব্যবহার হয় স্তনযুগলকে সুডৌল দেখানোর জন্য। ফ্যাব্রিকের অ্যাডহেসিভ এসব স্ট্রিপ ব্রেস্টকে জায়গামতো ধরে রাখে। দেয় লিফটেড ইফেক্ট। ক্লিভেজকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি শেপকেও করে তোলে পারফেক্ট। সঠিকভাবে পরতে পারার ওপর নির্ভর করে এর পুরোটাই। লো ব্যাক, প্লাঞ্জিং নেকলাইনের পোশাকের সঙ্গে পরে নেওয়ার জন্য ব্রা-এর দারুণ বিকল্প এটি।
বডি টেপ ক্লোজেটের মাস্ট হ্যাভ আইটেম নয় বটে, কিন্তু এটি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা অন্যতর। প্রতিদিন ব্যবহারের সবচেয়ে আরামদায়ক ব্রা কার্যকারিতায় কমপ্রোমাইজ না করেই যদি অনেকটা অদৃশ্যের মতো হয়ে যায়, তাহলে যে অনুভূতি হবে, বডি টেপ ব্যবহারের অনুভবটাও অনেকটা একই রকম। তবে এটা সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত ওয়্যারড্রোব চয়েজ। আর ব্যবহারের আগে কিছু বেসিক জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
টেপিংয়ের আগে
বডি টেপ ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বুক, হাত ও কাঁধের অংশে। বডি টেপগুলো সাধারণত হাইপোঅ্যালার্জেনিক এবং লেটেক্স ফ্রি হয়ে থাকে, তাই অস্বস্তি তৈরি করে না ত্বকে। তবে অনেক সময় ধরে পরে থাকার পরিকল্পনা থাকলে প্যাচ টেস্ট করে নিলে ভালো। পরিষ্কার, একদম শুকনো ত্বকে লাগাতে হবে টেপ। লোশন বা পাউডার- কোনোটাই মাখা যাবে না। না হলে ঠিকমতো বসবে না টেপ। টেপিংয়ের সঠিক জায়গাটা চিহ্নিত করে নেওয়া যায় আগেভাগেই, ন্যুড আইলাইনার দিয়ে। এতে কাজটা ঝক্কি ছাড়াই সেরে নেওয়া যাবে। আর পোশাক পরার পর যদি ইতিউতি টেপ বেরিয়ে থাকে, তা-ও কেটে নেওয়া যাবে অনায়াসে।
লো-কাট টপের সঙ্গে
প্লাঞ্জিং বা চওড়া ফ্রন্ট ওপেনিং ডাউন নেকলাইনের পোশাকের সঙ্গে বডি টেপ পরে নেওয়াটাই বেশি জুতসই। এতে লিফটেড ব্রেস্ট শেপ মিলবে, ব্রা লাইন দেখা যাওয়ার অস্বস্তি থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। শুরুতে ব্রেস্টকে পছন্দসই পজিশনে ধরে রাখতে হবে। তারপর বডি টেপের প্রথম স্ট্রিপটা শুরুতে লাগিয়ে নিতে হবে ব্রেস্টের নিচে, যেখানে ব্রা ব্যান্ড থাকে। তারপর বাস্টলাইন বরাবর নিপলের ওপর দিয়ে টেপ টেনে আনতে হবে বুকের পছন্দসই জায়গা অব্দি। সুন্দর ক্লিভেজের জন্য আরেকটা স্ট্রিপ নিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে ব্রেস্টের বাইরের অংশে, আপ অ্যান্ড ইন ফরমেশনে। এ ক্ষেত্রে দুই থেকে চারটি স্ট্রিপেই কাজ হয়ে যায়। তবে টেমিংয়ের সময় ব্রেস্টের সাইজের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে।
স্ট্র্যাপলেস টপের সঙ্গে
স্ট্র্যাপলেস ব্রা আছে কিন্তু অস্বস্তির বাইরে নয় এর ব্যবহার। এর থেকে বডি টেপ অনেক বেশি কাজের। সে ক্ষেত্রে টেপ লাগাতে হবে হরাইজন্টালি। শুরু করতে হবে ব্রেস্টের নিচে থেকে, তারপর ওপরের দিকে টেনে সেঁটে দিতে হবে বুকের ওপর। এভাবে পাশাপাশি টেপের স্ট্রিপ লাগিয়ে নিতে হবে কাক্সিক্ষত শেপ পাওয়া অব্দি। সূত্র সেই একটাই ‘আপওয়ার্ড ফর লিফট, ইনওয়ার্ড ফর ক্লিভেজ’। টি-শার্টের সঙ্গেও একই টেকনিকে বডি টেপ ব্যবহার করা যায়।
ট্রায়াঙ্গল শেপড নেকলাইনের সঙ্গে
অভিনব শিলুয়েটের কাটআউট কিংবা ট্রায়াঙ্গল পোশাকের নিচে ব্রা লুকিয়ে রাখা অসম্ভবই বটে। এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সাপোর্ট দিতে পারে বডি টেপ। স্ট্রিপ কেটে দুটি আলাদা ব্রা কাপ তৈরি করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে উল্লম্বভাবে ছোট ছোট স্ট্রিপ লাগিয়ে নিতে হবে ব্রেস্টের নিচ থেকে নিপলের দিকে। আপওয়ার্ড ফরমেশনে লাগালে মিলবে লিফটেড লুক। আর ক্লিভেজের জন্য সামান্য ইনওয়ার্ড ফরমেশনে সেঁটে নিলেই হবে।
টেপ খোলার সময়
টানাটানি করা যাবে না একদমই। এখন বাজারে পাওয়া বেশির ভাগ বডি টেপ খুব বেশি ঝক্কি ছাড়া অনায়াসেই খুলে আসে দিনভর ব্যবহারের পর। তবে খুলতে সমস্যা হলে বডি অয়েল বা অলিভ অয়েল দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়া যায় টেপ। তারপর টান দিলেই খুলে আসবে। কিন্তু পানি ব্যবহার করা যাবে না ভুলেও। কারণ, সোরেট এবং ওয়াটারপ্রুফ এসব টেপ পানির সংস্পর্শে আরও আঠালো হয়ে আটকে যায় ত্বকে। এক্সট্রা সুরক্ষার জন্য বডি টেপের নিচে পেস্টি পরে নেওয়া যায়, অথবা নিপলের ওপর পাতলা গোল সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায়। আর প্রয়োজন প্র্যাকটিস। পারফেক্ট শেপিংয়ের জন্য।
হ্যাপি টেপিং…!

 অর্চনা সাহা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top