কভারস্টোরি I ফ্যাশনে সিএসআর
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দূষণকারী শিল্প এটি। প্রতিবছর ১ দশমিক ২ বিলিয়ন কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদনকারী; যা গ্লোবাল গ্রিন গ্যাস নিঃসরণের ১০ শতাংশ। এখানেই শেষ নয়! এ শিল্পের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায়নি পানিও। বিশ্বব্যাপী পানিদূষণের ২০ শতাংশ দায় এ শিল্পের বর্জ্যরে ওপর বর্তায়। শুধু কি পরিবেশ, এই ইন্ডাস্ট্রির নেতিবাচক নানা প্রভাবের শিকার খোদ মানুষও! সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রায়ই কানে আসে নানা নীতিবিরোধী কাজের অভিযোগ। অসংরক্ষিত কর্মপরিবেশ থেকে অন্যায্য শ্রমমূল্য যেন এই শিল্পের নিয়মিত চর্চা। এমনকি রেহাই মেলেনি পশুদেরও। অ্যানিমেল টেস্টিং থেকে লোম, পশম আর চামড়া সংগ্রহের অনৈতিক সব উপায় ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে এই ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে। যার ভয়াবহতা নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক, অনুষঙ্গ, ঝাঁ-চকচকে রিটেইল স্টোর আর ইভেন্টের আড়ালে লুকিয়ে রাখা এখন অনেকটাই অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে ৪৭৪ বিলিয়নের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্বশীল হয়ে ওঠার বিকল্প নেই বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। কারণ, শুধু ইতিবাচক ভাবমূর্তি দিয়ে মন ভোলানো মুশকিল এখনকার ফ্যাশন-সচেতনদের; বরং ইতিবাচক প্রভাবের শক্ত প্রমাণ মিললে তবেই ব্র্যান্ডের মূল্যায়ন করছেন মিলেনিয়াল থেকে জেনজিরা। বিস্তারিত জাহেরা শিরীনের লেখায়
ব্র্যান্ডটির ওয়েবসাইটে গোটা অক্ষরে লেখা ‘স্টেলাস ওয়ার্ল্ড’। তাতে ক্লিক করলেই সুস্পষ্টতা সাসটেইনেবিলিটির। শুধু তা-ই নয়, রয়েছে কঠোর সিএসআর পলিসি। ব্র্যান্ডটির প্রতিটি পদক্ষেপ এই তিনটি মূল নীতির ওপর গড়ে ওঠা। পরিবেশ সংরক্ষণ, পশুকল্যাণ আর ন্যায্য বাণিজ্য-সহায়তা। ফ্যাশন বিশ্বের অন্যতম স্বীকৃত এবং অর্থনৈতিকভাবে সফল ফ্যাশন নির্মাতা ব্র্যান্ড স্টেলা ম্যাককার্টনি। ব্র্যান্ডটির উদ্ভাবনের প্রতিটি পর্যায়ে প্রকৃতির ওপর প্রভাবের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হয়েছে। ফলাফল- পোশাক তৈরিতে প্রাধান্য পেয়েছে অর্গানিক কটন, রিসাইকেলড ফাইবার আর প্ল্যান্ট টেক্সটাইলের মতো ইকোলজিক্যাল ম্যাটেরিয়াল। শুধু পোশাকই নয়, তা পোরার যে ব্যাগ, তা-ও তৈরি হয়েছে কর্ন-প্ল্যান্ট ফাইবারের মতো বায়োডিগ্রেডেবল উপাদানে। এই ব্র্যান্ডের প্রতিটি আউটলেটের সাজসজ্জা এফএসসি সার্টিফাইড। ব্যবহৃত হয়েছে এলইডি লাইটিং। সিএসআর পলিসি অনুযায়ী ব্র্যান্ডটি প্রতিনিয়ত পানির বাড়তি ব্যবহার কমানো আর শিপিংয়ের সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আসছে। সামাজিক সমস্যা নিয়েও সোচ্চার। দায়িত্বশীল কনট্রাক্টর ও সাপ্লাইয়ার বাছাই ছাড়াও ফেয়ার ট্রেড অর্গানাইজেশনগুলোর সঙ্গে নিয়মিত কোলাবরেশন করে স্টেলা ম্যাককার্টনি। ন্যাচারাল রিসোর্স ডিফেন্স কাউন্সিল, এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জড়িত। যার প্রতিটিই কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নয়ন এবং পরিবেশের ওপর শিল্পের বিরূপ প্রভাব প্রতিহতে কাজ করে। ব্র্যান্ডটির একটি চ্যারিটি প্রোগ্রাম রয়েছে, যার আওতায় কেনিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া এই ব্র্যান্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী সিএসআর টুল হচ্ছে পশুকল্যাণে কাজ করা। ফলে কোনো ধরনের পশুর চামড়া বা ন্যাচারাল ফার ব্যবহার করে না ব্র্যান্ডটি। এমনকি জুতার জন্য ফিশ গ্লুও ব্যবহৃত হয় না। শুধু বাস্তবায়ন করেই ক্ষান্ত নয়, নিয়মিত তাদের সিএসআর পলিসি নিয়ে সোচ্চার স্টেলা ম্যাককার্টনি। উদ্দেশ্য, গোটা ফ্যাশনবিশ্বকে সামাজিক দায়িত্বশীলতা বিষয়ে সচেতন করে তোলা।
২০০৭ সালে ব্রিটিশ রিটেইলার মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার লঞ্চ করে তাদের সিএসআর স্ট্র্যাটেজি ‘প্ল্যান এ’। সাসটেইনেবল বিজনেস হেড মাইক বেরির সহায়তায়। প্রায় ১৮০টি নৈতিক ও পরিবেশগত প্রতিশ্রুতি নিয়ে। যাতে প্রাধান্য পায় মানুষ, পরিবেশ ও পশু। মূল লক্ষ্য বিশ্বের সবচেয়ে সাসটেইনেবল রিটেইলার ব্র্যান্ড হওয়া। উৎস দেশগুলোর কর্মীদের ন্যায্য অংশীদারত্ব এবং ভাতা প্রদানের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে ২০১২ সালে সিএসআর পলিসির আওতায়ও ব্র্যান্ডটি গ্রিন পিসেস ডিটক্স ২০২০ ক্যাম্পেইন সাইন করে এবং বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে যুক্ত হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল নতুন কেমিক্যাল কমিটমেন্টের বিকাশ এবং শক্তিশালী প্রিএনভায়রনমেন্টাল প্র্যাকটিস। যার আওতায় ব্র্যান্ডটির টেক্সটাইল প্রিন্টার, ফিনিশিং ফ্যাসিলিটি, লন্ড্রি, ট্যানারি থেকে ডাই হাউসগুলোতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধের প্র্যাকটিস চালু হয়। ‘প্ল্যান-এ’র আওতায় লঞ্চ হয় তিনটি ইকো-ডাই হাউস। পরিবেশ রক্ষায় চালু হয় কোল্ড ব্যাচ ডায়িং। ফলে গড়ে কমে ৫০ শতাংশ পানির ব্যবহার এবং ৩০ শতাংশ কার্বন নির্গমন। অ্যানিমেল টেস্টিংয়ের বিপক্ষে মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার। উল, ক্যাশমের আর মোহেয়ার ব্র্যান্ডটির কোনো পণ্যেই ব্যবহার করা হয় না। সিএসআরে ফেয়ার সোর্সিং নীতি মেনে চলায় মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার শ্রমঘণ্টা, কর্মপরিবেশ, কর্মীদের সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, বেতনের হার, চাকরির শর্তাবলি এবং সর্বনি¤œ বয়স সম্পর্কে সব সময়ই সচেতন।
২০১৬ সালে ফোর্বসের তালিকায় দ্য ওয়ার্ল্ড’স মোস্ট সাসটেইনেবল কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০তম স্থান দখলকারী রিটেইল জায়ান্ট এইচঅ্যান্ডএম। বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা- তাদের শক্তিশালী সিএসআর স্ট্যাটেজি এর প্রধান কারণ। সাসটেইনেবিলিটি যার মূল ভিত্তি। কম দামে সাসটেইনেবল পণ্য পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর এইচঅ্যান্ডএম, যা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় অর্গানিক কটনের মতো রিসাইকেলড ম্যাটেরিয়াল। মূলত ক্রেতা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফ্যাশন সাসটেইনেবিলিটি বিষয়ে সচেতন করাই এইচঅ্যান্ডএমের অন্যতম উদ্দেশ্য। ব্র্র্যান্ডটির সিএসআর পজিটিভ প্র্যাকটিস দারুণভাবে প্রভাবিত করছে গ্লোবাল ক্লদিং ম্যানুফ্যাকচারিং ট্রেন্ডকেও। যার মধ্যে রয়েছে কোড অব এথিকস, ডিসক্রিমিনেশন ও ইকুয়ালিটি, হ্যারাসমেন্ট এবং হিউম্যান রাইটস পলিসি। এইচঅ্যান্ডএমের রয়েছে গ্লোবাল ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট, ইউনিয়ন নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনালের [ইউএনআই] সঙ্গে। এ ছাড়া চুক্তি রয়েছে ইউরোপিয়ান ওয়ার্ক কাউন্সিলের [ইডব্লিউসি] সঙ্গেও। যার প্রতিটিই কর্মপরিবেশের পাশাপাশি কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে। এ ছাড়া গ্রিন টেক্সটাইল প্রমোশনের সেরা অ্যাডভোকেট এই ব্র্যান্ড। অর্গানিক কটনে পোশাক তৈরি ছাড়াও ব্র্যান্ডটি পরিচিত তাদের ‘কনশাস কালেকশন’-এর জন্য। রিসাইকেলড উলসহ অর্গানিক হেম্প, সিল্ক, লিনেন ও লেদার, রিসাইকেলড প্ল্যাস্টিক, পলিএমাইড ও পলিয়েস্টার (এফএসসি সার্টিফাইড) ব্যবহৃত হয় এসব কালেকশনে। ইউক্যালিপটাস ও বাঁশের ফাইবার থেকে টেক্সটাইল তৈরি করেও পোশাক বানায় ব্র্যান্ডটি, পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব কমানোর জন্য, যা এই ব্র্যান্ডের সিএসআর স্ট্র্যাটেজির অন্যতম প্রতিশ্রুতি। অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ারেও সদা সোচ্চার এইচঅ্যান্ডএম। কোনো ধরনের এক্সোটিক প্রাণীর চামড়ায় তৈরি হয় না তাদের প্রডাক্ট; বরং শুধু মাংস সংগ্রহের জন্য যেসব পশু পালিত হয়, তাদের চামড়া ব্যবহৃত হয় পণ্য উৎপাদনে।
স্পোর্টস ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস দারুণ সোচ্চার তাদের সিএসআর ক্যাম্পেইন নিয়ে। যেখানে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ প্লাস্টিক আর ম্যাটেরিয়াল ওয়েস্টের ব্যবহার হ্রাসে। ‘পার্লি ফর দ্য ওশেন’-এর সঙ্গে অ্যাডিডাস গ্রুপের পার্টনারশিপ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ। যার আওতায় অ্যাডিডাস প্রায় ৩০ মিলিয়ন জোড়া জুতা উৎপাদন করেছে শুধু রিসাইকেলড প্লাস্টিক বোতল থেকে। এ ছাড়া ভেগান উপাদান, অর্গানিক কটন, সাসটেইনেবল ডাই টেকনোলজি আর রিসাইকেলড উপাদানে ঝুঁকছে ব্র্যান্ডটি। বর্জ্য হ্রাস আর আপসাইক্লিং বেসড ইকোনমিতে অবদান রাখার জন্য।
এই যে বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্র্যান্ডের এমন সব কার্যক্রম, এগুলোর কোনোটিই পণ্য বিকোনোর স্টান্ট নয়। এমনকি সরাসরি মুনাফার সঙ্গেও যোগ নেই; বরং প্রতিবছর কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে একটা বড় অংশের অর্থ বরাদ্দ রাখা হয় সিএসআর স্ট্র্যাটেজির সঠিক বাস্তবায়নের পেছনে। বহু আগে থেকেই এ চর্চার শুরু; তবে বর্তমানে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এর পেছনে কারণ, ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল সিএসআর স্টাডির একটি রিপোর্ট। সেই মোতাবেক ত্রুটিপূর্ণ বিজনেস প্র্যাকটিসের কারণে ভোক্তারা ৯০ শতাংশ কোম্পানিকে বর্জন করেছেন। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী ৯১ শতাংশ ভোক্তা আশা করেন, নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনা ছাড়াও কোম্পানিগুলো সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে আরও দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করবে। ফলাফল- পজিটিভ ইমেজ তৈরিতে উঠে পড়ে লেগেছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্টরা। শুধু কি তাই, বর্তমানে সব বয়সী সচেতন ভোক্তাদের পাশাপাশি মিলেনিয়াল আর জেনজিদের আশা আরেক ধাপ এগিয়ে। শুধু ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরিই নয়, প্রিয় ব্র্যান্ডটি যেন সত্যিকারের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, সেটাই মূল প্রত্যাশা তাদের। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী ও কার্যকর অস্ত্র হচ্ছে সিএসআর। ভেঙে বললে, করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি। যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় তুলতে ধরতে পারবে ভোক্তাদের কাছে। তৈরি করতে পারবে ইতিবাচক ভাবমূর্তি। পরিণামে আকৃষ্ট হবেন ক্রেতারা।
সিএসআরের সুস্পষ্টতা
সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বা সামাজিক দায়বদ্ধতা কী? সহজ ভাষায়, একধরনের প্রতিশ্রুতি বা কর্তব্যবন্ধন, যার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক প্রভাবের সর্বোচ্চকরণের ওপর প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি গুরুত্ব পায় নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনার ব্যাপারও। অর্থাৎ সক্রিয়ভাবে সামাজিক কল্যাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা; পাশাপাশি কল্যাণ সাধনের জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টা ও প্রতিশ্রুতিও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ। ব্যক্তি ও সরকারি পর্যায়ে তো বটেই, সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির এই কনসেপ্ট প্রযোজ্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের ওপর। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক বিভিন্ন দায়বদ্ধতাই মূলত করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি হিসেবে পরিচিত। একটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের যে অর্থনৈতিক ও আইনি দায়িত্বের বাইরেও বেশ কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় সিএসআর থেকে। মূলত সিএসআর হচ্ছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত এমন সব কার্যক্রম, যা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণ ও অগ্রগতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শুধু কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নয়, সিএসআর অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে স্বেচ্ছায় সচেতন হতে হবে স্টেকহোল্ডার অর্থাৎ সমাজ ও সাধারণ মানুষের প্রতিও। স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য নয়, এ ক্ষেত্রে বুঝেশুনে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে, যা পুরো সমাজব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে। সিএসআর হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের পুরো ব্যবস্থাপনা ও কৌশলের এক বিশেষ অংশ, যার হরেক রকমের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
অর্থনৈতিক: সিএসআরের ক্ষেত্রে মুনাফার কথা চিন্তা করা হলেও প্রাধান্য পায় সামাজিক ও পরিবেশগত দায়বদ্ধতা।
সামাজিক ও পরিবেশগত: সিএসআর মানেই হচ্ছে, কোম্পানিগুলো সমাজ ও পরিবেশের ওপর তাদের নেতিবাচক প্রভাবের রাশ টেনে ধরবে। নিশ্চিত করবে সামাজিক ও পরিবেশগত কল্যাণ।
নৈতিক: সিএসআর অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমাজের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। সে অনুযায়ী নৈতিক মূল্যবোধ ও আদর্শ নির্ধারণ করে নৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে উৎসাহিত করা।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ সিএসআরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শেয়ারহোল্ডারদের লক্ষ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি কোম্পানির স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে। কোম্পানির স্ট্র্যাটেজি ও ম্যানেজমেন্ট কনসেপ্টের অংশ এই সিএসআর।
বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলোতে কার্যকর করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি স্ট্র্যাটিজি বাস্তবায়নের জন্য নানা নীতিমালা রয়েছে। এগুলোকে তিন ভাগ করা যায়।
আন্তর্জাতিক নির্দেশমালা ও নীতি: এগুলোর মধ্যে দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশমালা ও নীতি নির্ধারিত রয়েছে। একটি ওইসিডি, গাইডলাইন ফর মাল্টিন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ, অন্যটি ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন [আইএলও] ২০১৭ অনুমোদিত ‘ট্রাইপার্টাইট ডিক্লারেশন অব প্রিন্সিপালস কনসার্নিং মাল্টিন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসি’। ওইসিডি গাইডলাইনের অধীনে রয়েছে মানবাধিকার, কর্মসংস্থান, পরিবেশ, ঘুষ, ভোক্তাস্বার্থ, বিজ্ঞান/প্রযুক্তি ও করসংক্রান্ত বিষয়। আর আইএলও প্রাধান্য দিয়ে থাকে কর্মসংস্থান ও শ্রমসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে; তবে আরও সবিশেষে। যেমন জোরপূর্বক শ্রম, শিশুশ্রম, সমতা, কর্মসংস্থান ও কাজের নিরাপত্তা বিষয়ে। আইএলও সরাসরি প্রভাবিত করে ওইসিডির কর্মসংস্থান নীতিকে। ওইসিডি অর্থাৎ অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দেশ এ নীতিমালাগুলোতে স্বাক্ষর করার পাশাপাশি দেশের কোম্পানিগুলোতে এসব নীতির প্রচার ও প্রসার নিশ্চিত করে।
কোড অব কন্ডাক্ট: এটি মূলত আচরণগত নিয়ম বা বিহেভিয়ারাল রুলসের চুক্তি। নিয়মগুলো মূলত ভলান্টারি বা স্বেচ্ছাকৃত। সিএসআর-সংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোড অব কন্ডাক্ট হচ্ছে ইউএন গ্লোবাল কম্প্যাক্ট। যাতে মানবাধিকার, শ্রম, পরিবেশ ও দুর্নীতিবিরোধী নির্দেশনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯ হাজারের অধিক কোম্পানি এবং ৪ হাজারের বেশি নন-বিজনেস অর্গানাইজেশন এই কোড স্বাক্ষর করেছে। তালিকায় আছে নেসলে, নাইকি, শেল-এর মতো বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল করপোরেশন।
ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম: এগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নীতি, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির মতো সব প্রাতিষ্ঠানিক পরিমাপক। এগুলো ব্যবহৃত হয় প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনে। বহু ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় সিএসআর-সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলো হচ্ছে ISO26000, SA8000 ও ILO-OSH 2001 (ISO 2017; SAI 2017; ILO 2009)। এই প্রক্রিয়াগুলো সাধারণত ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতা মেনে পরিচালনার ক্ষেত্রে আদর্শের মানদ- নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সিএসআরের রকমফের
করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি মূলত দুটি- মানুষের প্রতি দায়িত্ব এবং পরিবেশগত দায়িত্ব। মানুষের প্রতি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে এর স্টেকহোল্ডাররা প্রাধান্য পেয়ে থাকে। অর্থাৎ, কর্মী, শেয়ারহোল্ডার, সরকার, ক্রেতা, বিনিয়োগকারী, সরবরাহকারী, প্রতিদ্বন্দ্বী সর্বোপরি পুরো সমাজের সবাই। পরিবেশগত দায়িত্ব বর্তায় পরিবেশ প্রতিরক্ষায় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের ওপর। সুতরাং বলাই যায়, প্রতিষ্ঠান নিজের পাশাপাশি পরিবেশ ও সমাজের বিভিন্ন পক্ষের কল্যাণের জন্য এবং নৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার উদ্যোগে যেসব কার্যক্রম পরিচালনায় দায়বদ্ধতা, সেগুলো সিএসআরের আওতাধীন।
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সিএসআর
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ইউএসডির বাজার দখল করে আছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। এগুলোর মধ্যে নারীদের পোশাকের বাজারমূল্য ৬২১ বিলিয়ন ইউএসডি; ৪০২ বিলিয়ন ইউএসডির বাজার পুরুষদের পোশাকের জন্য। পৃথিবীর ৪ কোটি মানুষ পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এ ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে। পোশাক উৎপাদনের ক্ষেত্রে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে এগিয়ে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার [ডব্লিউটিও] ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২২’ প্রতিবেদন অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে চীন। তারপরেই অবস্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নের। এরপরই তালিকায় আছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। প্রতিবেদন মোতাবেক শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশ থেকে গত বছর ৪৬ হাজার কোটি বা ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক বিক্রি হয়েছে। অত বড় ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু সমাজ ও পরিবেশের ওপর এর নানা নেতিবাচক প্রভাবের ফলে সমালোচনার বাইরে নয়। তাই বহু বছর ধরে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সিএসআর বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এখন তো ভোক্তারা আরও সচেতন। সেদিন গেছে যখন বড় বড় প্রতিষ্ঠান পণ্যের ম্যানুফ্যাকচারিং আর প্রডাকশনের সময় তাদের পরিবেশগত পদচিহ্ন, শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন এবং নৈতিকতা পর্যালোচনার ব্যাপারে কোনো জবাবদিহি না করেই পার পেয়ে যেত। এখন সে সুযোগ নেই। আজকের দিনের ভোক্তাদের জবাব চাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। গ্রিন লাইফস্টাইলের দিকে ঝুঁকতে থাকা এখনকার ভোক্তারা ব্র্যান্ড বাছাইয়ে দারুণ সচেতন। যেসব ব্র্যান্ড যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্র্যান্ড ইমেজে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ, ভোক্তাদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও কম। ২০১৫-এর গ্লোবাল সিএসআর স্টাডি অনুযায়ী, ত্রুটিপূর্ণ বিজনেস প্র্যাকটিসের জন্য ৯০ শতাংশ ভোক্তা কোম্পানিকে বর্জন করে। শতকরা ৯৯ শতাংশ গ্লোবাল কনজিউমার আশা করে, পোশাকের প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তার পাশাপাশি সে অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালনা করবে। ফ্যাশন-সচেতনেরা এ ক্ষেত্রে মূলত পাঁচটি বিষয় নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন।
শিশুশ্রম
পৃথিবীজুড়েই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির নানা পর্যায়ে শিশুশ্রমিকদের ব্যবহার করা হয়। তুলার বীজ উৎপাদন, সুতা কাটা থেকে পোশাক উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে। যেসব ব্র্যান্ড বা পোশাক নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান শিশুশ্রমিকদের নিয়োগ এবং নানাভাবে শোষণের সঙ্গে জড়িত, তারা নিজেরাই তাদের জন্য দুর্নাম তৈরি করে, যা সরাসরি ভোক্তাদের ক্রয়কে প্রভাবিত করে। নেতিবাচকতা সৃষ্টিকারী এসব কোম্পানির ইমেজ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি প্রভাবিত হয় তাদের মুনাফাও। তবে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, এখনো এমন অনেক কোম্পানির কেস স্টাডি পাওয়া যায়, অনৈতিক কাজের পরিবেশই যেখানকার প্রথা।
কাজের পরিবেশ
সস্তায় শ্রম মেলে বলে এখন অব্দি বেশির ভাগ পোশাক প্রস্তুতকারী কোম্পানি বিশ্বের দরিদ্রতম অংশে অবস্থিত, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য মুনাফাজনকই বটে। ফ্যাক্টরিগুলো দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলোর জনসাধারণের জন্য কাজের দারুণ সুযোগ করে দিলেও অন্যায্য বেতন-ভাতা, বাড়তি কর্মঘণ্টা আর অনিরাপদ পরিবেশ এখনো পোশাকশিল্পের জটিল সমস্যা। পিক সিজনে অনেক পোশাককর্মীকে জোর করে সপ্তাহে প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা অব্দি কাজ করানোরও নজির রয়েছে এসব কারখানায়। তা-ও একদম কম বেতনে। হেলথ ও সোশ্যাল ইনস্যুরেন্স না থাকায় তা কর্মীদের জীবনকে প্রভাবিত করে। কাজের সময় আঘাতপ্রাপ্ত বা রোগাক্রান্ত হলে অনেক কোম্পানিই তার দায়ভার গ্রহণ করে না, যা অনেক সময় জীবনের ঝুঁকিও বাড়ায়।
পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা
প্রতিবছর পোশাকশিল্পের কারণে লাখ লাখ পশু উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনৈতিকভাবে নিধনের শিকারও হয় মেলা। বিশ্বব্যাপী অ্যানিমেল ক্রুয়েলটি ভোক্তার ক্রয় অভ্যাসকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। বর্তমানে ফ্যাশনসচেতন ক্রেতারা অ্যানিমেল টেস্টিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তাই তো সিল্ক, ক্যাশমের, লেদার, ফার, উলের তৈরি পোশাক ব্যবহারেও বাড়ছে সচেতনতা। কারণ, এই ম্যাটেরিয়াল তৈরিতে পশুদের নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়। তাই আগ্রহ বাড়ছে বিকল্পে। তৈরি হচ্ছে অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার পলিসি। কিন্তু যেসব ব্র্যান্ড এগুলোর তোয়াক্কা করছে না, সেগুলো থেকে সরে আসছেন সচেতন ক্রেতারা।
পরিবেশের ওপর প্রভাব
তেল উৎপাদন শিল্পের পরপরই পোশাকশিল্প খাত বিশ্বের সবচেয়ে দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্প। পোশাকের কাঁচামাল এ সমস্যা সৃষ্টির প্রধান উৎস। কটন বা সুতি হচ্ছে একধরনের প্রাকৃতিক তন্তু, যা দিয়ে পৃথিবীর ৪০ শতাংশ পোশাক তৈরি হয়। কিন্তু প্রকৃতির ওপর এর প্রভাব বিধ্বংসী। প্রতি পাউন্ড কটন তৈরিতে ৬ হাজার ৪০০ থেকে ১৫ হাজার ৫০০ লিটার পানির প্রয়োজন পড়ে। এ ছাড়া রাসায়নিক নির্ভর ফসলগুলোর মধ্যে অন্যতম হওয়ায় এটি ফলাতে অনেক বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা পরিবেশের ক্ষতি তো করেই; ফসলের মাঠে কাজ করা কর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ায়। এ ছাড়া পোশাকশিল্পে বহুল ব্যবহৃত পলিয়েস্টার ও নাইলনও পরিবেশের জন্য দারুণ ক্ষতিকর। নন-বায়োডিগ্রেডেবল এই ম্যাটেরিয়াল দুটি উৎপাদনে বিপুল শক্তি ব্যয় হয়। এর মধ্যে নাইলন আবার গ্রিনহাউস গ্যাসের বড় উৎস। কারণ, এ থেকে অতিরিক্ত নাইট্রাস গ্যাস নির্গত হয়, যা পরিবেশদূষণে ভূমিকা রাখে। তাই বিকল্প হিসেবে অর্গানিক কটনের দিকে ঝোঁক বাড়ছে ফ্যাশন-সচেতনদের। টেক্সটাইল নিয়ে নানান নিরীক্ষা চলছে এই সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে।
রিসাইক্লিং
যেহেতু ফ্যাশন-সচেতনদের মধ্যে সাসটেইনেবল পণ্য নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে, সে ক্ষেত্রে পোশাক উৎপাদনকারীদের তো বসে থাকলে চলবে না। এখন ব্র্যান্ডগুলো অভিনব সব প্রক্রিয়ায় পণ্য পুনর্ব্যবহারের পন্থা বের করছে। পোশাক তৈরিতে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী কাঁচামাল ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে। যেমন মার্ক অ্যান্ড স্পেন্সার রিসাইকেলড প্লাস্টিক বোতল থেকে রিসাইকেলড পলিয়েস্টার তৈরি করছে; যা থেকে তৈরি হচ্ছে ফ্যাশনের নানা অনুষঙ্গ। এ ছাড়া কিছু ফ্যাশন ব্র্যান্ড আপসাইক্লিংয়ের চর্চা শুরু করেছে। যে প্রক্রিয়ায় একটি পুরো কালেকশন তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে টেক্সটাইলের প্রাপ্ত বর্জ্য। মূলত টেক্সটাইল ইন্সপেকশনে সামান্য ত্রুটির জন্য বাদ পড়ে যাওয়া পোশাকের ফ্যাব্রিক আর ম্যাটেরিয়াল এ ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত। যার আরেকটি দারুণ উদাহরণ হচ্ছে ব্র্যান্ড নাইকি। ২০১৫ সালে ১৮টি প্লাস্টিক বোতল থেকে নাইকি তৈরি করেছে ইউএস ওমেনস সকার টিমের জার্সি।
ফ্যাশন সিএসআরে নতুন ট্রেন্ড
ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাশন-সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো এখন আরও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে। কোম্পানির পলিসিতে যুক্ত হচ্ছে সাসটেইনেবল স্ট্র্যাটেজি। সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল চর্চায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি স্ট্র্যাটেজিতে লাগছে নতুন হাওয়া। বদলাচ্ছে ট্রেন্ড।
স্বচ্ছতা বৃদ্ধি
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ফ্যাশন ট্রান্সপারেন্সি ইনডেক্সের সপ্তম বার্ষিক সংস্করণ। তাতে বিশ্বের প্রথম সারির ২৫০টি ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও রিটেইলারের রিভিউ ও র্যাঙ্ক নির্ধারিত হয়েছে। মূলত ব্র্যান্ডগুলো তাদের উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে সামাজিক ও পরিবেশগত নীতিমালা, চর্চা ও প্রভাবের ক্ষেত্রে কতটুকু স্বচ্ছ, তার ওপর নির্ভর করে হয়েছে মূল্যায়ন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোকে তাদের সামাজিক ও পরিবেশগত দায়িত্ব নিয়ে আরও স্বচ্ছ হতে উদ্বুদ্ধ করাই এই ইনডেক্সের মূল উদ্দেশ্য। সিএসআর স্ট্র্যাটেজিতে স্বচ্ছতা তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে ক্রেতারা জানতে পারেন কোথায়, কীভাবে ও কারা এসব পণ্য তৈরি করে। উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়া জেনে তবেই ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
গ্রিন টেকনোলজি
জবাবদিহি ছাড়া যাচ্ছেতাইভাবে যথেচ্ছ কাঁচামাল ব্যবহারের দিন শেষ। জলবায়ুর পরিবর্তন এখন ভিন্নভাবে ভাবতে বাধ্য করছে মানুষকে। বাদ পড়ছে না ফ্যাশনবিশ্বও। সিএসআর স্ট্র্যাটেজিতে তাই প্রাধান্য পাচ্ছে গ্রিন টেকনোলজির ব্যবহার এবং তাতে বিনিয়োগ। সেটা হতে পারে ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর পরিবেশবান্ধব বিকল্প ফ্যাব্রিকের ব্যবহার, শক্তিশালী নিঃসরণ যন্ত্রের পরীক্ষার মাধ্যমে পরিষ্কার নিঃসরণ নিশ্চিতকরণ, অনবায়নযোগ্য উৎসের ওপর নির্ভরতা হ্রাস এবং ব্যবসার জন্য সাসটেইনেবল অপশন খোঁজা।
গ্লোবাল কোম্পানির আঞ্চলিকীকরণ
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কর্মকা- পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় মার্কেট ও সাপ্লাই চেইনের সঠিক মূল্যায়ন করছে। এতে করে লোকাল রিসোর্সিংয়ের ফলে পরিবহন ও সাপ্লাই চেইন খরচের পাশাপাশি কমছে কার্বন নিঃসরণের হার। স্থানীয় কর্মশক্তি ব্যবহারের ফলে তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান। তাই সিএসআর স্ট্র্যাটেজিতে এর যোগ শুধু লোকাল কমিউনিটির জন্যই নয়, মুনাফাজনক হয়ে উঠছে কোম্পানির জন্যও। এ ছাড়া কোম্পানির সিএসআর স্ট্র্যাটেজিতে আরও যুক্ত হচ্ছে স্থানীয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনুদান, স্কুল তৈরির ফান্ডিংসহ নানা ধরনের কার্যক্রম। এই ইতিবাচক অনুদান স্থানীয়ভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর জন্য দারুণ ফলপ্রসূ।
বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি
বেতন-ভাতার বৈষম্য এবং কর্মীদের কাঁধে অর্থনৈতিক বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা, তার স্বীকারোক্তি এখন ফ্যাশন সিএসআর ট্রেন্ডের দারুণ চর্চার বিষয়। এ ক্ষেত্রে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলা ও পুরুষ কর্মীদের বেতনের সমতা, কোম্পানির সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ বেতনভোগী কর্মীর আয়ের পার্থক্য পরিমাপ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ কর্মীদের সম্মিলন প্রাধান্য পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষের অন্তর্ভুক্তি কোম্পানিকে আরও শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে বাড়ায় বৈচিত্র্য।
দায়িত্বশীল দেশীয় ফ্যাশনশিল্প
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২২’ প্রতিবেদন অনুযায়ী একক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চীনের পরেই অবস্থান। গেল বছর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। ‘বটমলেস বাস্কেট’ থেকে ‘বাস্কেট ফুল অব ওয়াল্ডারস’-এ পরিণত হওয়া এত বড় দেশীয় ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্বটাও অনেক বড়। এ ক্ষেত্রে করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন সেক্টরে নিয়মিত চর্চাও হয় এর। প্রথমেই আসা যাক দেশীয় আরএমজি সেক্টরের সিএসআর কার্যক্রম নিয়ে; যা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে বিজিএমইএ। ‘উই বিলং উই কেয়ার’ মন্ত্রে বিশ্বাসী দেশের সর্ববৃহৎ এ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন। সিএসআরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এ প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে জড়িত। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম তাদের পরিচালিত ১২টি হেলথ সেন্টার। সেখানে ৬০ হাজারের অধিক পোশাককর্মীকে প্রতিবছর বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ দেওয়া হয়। এতে প্রায় তিন লাখ ডলার খরচ হয়, যা পুরোপুরি বিজিএমইএ ফান্ড করে থাকে। এসব হেলথ সেন্টারে পরিচালনা করা হয় নানা ধরনের সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম। এইচআইভি, টিউবারকিউলোসিস, প্রজননস্বাস্থ্য ও গর্ভনিরোধক ব্যবহারবিষয়ক। শুধু আরএমজি সেক্টরের কর্মীদের জন্য চট্টগ্রামে বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা করেছে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল। ঢাকায়ও হাসপাতাল তৈরির কাজ চলছে। সেখানকার আউটডোর ও ইনডোর ইউনিটে কম মূল্যে এবং বিনা মূল্যে সেবা নিতে পারবেন কর্মীরা। এ ছাড়া করোনাকালে বিজিএমইএ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সঙ্গে কোলাবরেশনে নিজস্ব পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেছে গাজীপুরের চন্দ্রায় ও নারায়ণগঞ্জে। কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য। আরএমজি সেক্টরের কর্মীদের সন্তানদের বিনা মূল্যে বই ও শিক্ষার নানা উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি পড়াশোনার জন্য পাঁচটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে বিজিএমইএ। এ ছাড়া নারী কর্মীদের জন্য সিএসআর পলিসি অনুযায়ী রয়েছে বিশেষ সুবিধা। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় এ প্রজেক্ট চালু করে বিজিএমইএ। যার আওতায় স্তন্যদানকারী নারী কর্মীরা শিশু জন্ম দেওয়ার পরের তিন বছর প্রতি মাসে ৮০০ টাকা বিশেষ ভাতা পাবেন, যা মোট ২৮ হাজার ৮০০ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থনৈতিক বছরে এ প্রকল্পের আওতায় মোট ২৩ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিল বিজিএমইএ, ৮ হাজার ১০০ জন নারী পোশাককর্মীকে দেওয়ার জন্য।
চট্টগ্রামে বিজিএমইএ এবং চিটাগং ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (সিডিএ) যৌথ উদ্যোগে ৩ হাজার পোশাককর্মীর জন্য একটি ডরমিটরির ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার আশুলিয়ায়ও চলছে ডরমিটরি তৈরির কাজ। পোশাককর্মী ও স্টাফদের জন্য বাধ্যতামূলক গ্রুপ ইনস্যুরেন্স স্কিমের ব্যবস্থা করে দিয়েছে বিজিএমইএ। বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় বিজিএমইএ নিয়মিত কর্মীদের জন্য আয়োজন করে নানা ধরনের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি। কর্মীদের জন্য ডিজিটাল ওয়ালেটের ব্যবস্থা করেছে বিজিএমইএ। ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন টেকনোলজি ডিভিশনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির মাধ্যমে এ সেক্টরের জন্য ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়। যার মাধ্যমে কর্মীরা ক্যাশব্যাক, রিওয়ার্ড পয়েন্ট ও মার্চেন্ট পয়েন্টের মতো সুবিধা পাবেন প্রাপ্ত বেতন-ভাতার ওপর। কর্মীদের মানসিক সুস্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি স্ট্রেস ও অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্টের জন্য ‘মনের বন্ধু’ নামে একটি সিএসআর প্রোগ্রাম রয়েছে বিজিএমইএর। ফ্যাক্টরি লেভেলে প্রতিষ্ঠানটি অ্যান্টি-সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট কমিটিও গঠন করে দেয়। যার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন ফ্যাক্টরির একজন পরিচালক এবং দুজন নারী সদস্য। বিজিএমইএর ঢাকা ও চট্টগ্রাম অফিসের বিএমসি/এসএসডি সেলের মনিটররা নিয়মিত ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে যান অ্যান্টি-হ্যারাসমেন্ট কমিটির সদস্যদের কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য। এখন অব্দি ৫৭৭টি ফ্যাক্টরিতে এ কমিটি গঠিত হয়েছে। মনিটরকারীরা ঘুরে দেখেছেন ১ হাজার ৩৯৪টি ফ্যাক্টরি।
বিজিএমইএর নিজস্ব সিএসআর অ্যাকটিভিটি ছাড়াও বাংলাদেশের অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির নিজস্ব সিএসআর পলিসি আছে। সেখানে সিএসআর নিয়ে নিয়মিত চর্চা হয়। কর্মীদের জন্য বিনা মূল্যে প্যাথলজি টেস্ট আর ওষুধ সরবরাহ, নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা, কর্মীদের শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টারের সুবিধা, মেধাবী শিশুদের জন্য শিক্ষা ভাতাসহ নানা সুবিধা দিয়ে থাকে অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। রয়েছে অভিনব সব সিএসআর প্র্যাকটিসও। এগুলোর মধ্যে অন্যতম স্পেশালি চ্যালেঞ্জড কর্মী নিয়োগ এবং তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে অ্যাপিলিয়ন গ্রুপ। এ বছর ব্রিটিশ রিটেইলার মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের মার্কস অ্যান্ড স্টার প্রোগ্রামের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৪ সাল থেকে সিপিআর নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি আজ অব্দি ৪২ জন স্পেশালি চ্যালেঞ্জড কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। গেল বছরও এনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট ক্যাটাগরির বেস্ট সিএসআর অ্যাওয়ার্ড পায় প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া কর্মীদের জন্য ন্যায্যমূল্যে নিত্যদিনের পণ্য নেওয়ার সুযোগ করে দেয় অনেক গার্মেন্টস কোম্পানি। থাকে গাছ লাগানো, সড়ক সংস্কার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ আরও নানান সিএসআর অ্যাকটিভিটি।
সিএসআর নিয়ে দারুণ সচেতন দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোও। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লাইফস্টাইল রিটেইল চেইন আড়ং। প্রায় ৬৫ হাজার স্থানীয় কারিগরকে সহযোগিতা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসার ন্যায্য শর্তাবলির নিয়মিত চর্চা করে। আড়ং পরিচালিত আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের আওতায় কারিগরদের কাজের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের সিএসআর কার্যক্রমও রয়েছে। ন্যায্যমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, ক্ষুদ্র ঋণ এবং সঞ্চয় প্রকল্প, আইনি সহায়তা প্রদান, কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার, সরকারি সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অবসর গ্রহণের পর গ্র্যাচুইটির সুবিধা এর মধ্যে কয়েকটি। পরিবেশ নিয়েও সমান সচেতন প্রতিষ্ঠানটি। পরিবেশ সুরক্ষার নানা কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে এর। রয়েছে প্রাইমারি রিসাইক্লিং স্টেশন। রিসাইক্লিং পেপার ব্যবহার করা হয় আড়ংয়ের অফিসে এবং প্রতিটি আউটলেটে। তরুণদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি রয়েছে আড়ংয়ে। রয়েছে পড়াশোনার পাশাপাশি ব্র্যান্ডটির আউটলেটগুলোতে সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে খ-কালীন কাজ করার সুযোগ। শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি সরব। ১৪ বছরের নিচে কোনো কর্মী নেই আড়ংয়ে। দরিদ্র শিশুদের জন্য রয়েছে অনুদানের ব্যবস্থা। প্রতিবছর নিয়মিত শীতবস্ত্র প্রদানের আয়োজন করে থাকে আড়ং।
শীর্ষস্থানীয় দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড লা রিভের রয়েছে বিভিন্ন সিএসআর ক্যাম্পেইন। সোসাইটাল সাসটেইনেবিলিটিতে বিশ্বাসী এ ব্র্যান্ড। প্রতিবছরই রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে লা রিভ। ব্র্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ঈদ ছাড়াও বছরের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ ছাড়া স্তন ক্যানসার বিষয়ে প্রান্তিক নারীদের সচেতনতার উদ্দেশ্যে ব্রেস্ট ক্যানসার অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম রয়েছে ব্র্যান্ডটির। করোনাকালে বিনা মূল্যে পিপিএ বিতরণ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল লা রিভ। এ ছাড়া ঈদের সময় বান্দরবানের লামায় অবস্থিত কোয়ান্টামো স্কুলে দুই হাজার শিশুকে লা রিভের পোশাক দেওয়া হয়। এমনটাই জানিয়েছেন লা রিভের প্রধান নির্বাহী মন্নুজান নার্গিস।
দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সোশ্যাল বিজনেস হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করা একমাত্র ব্র্যান্ড গ্রামীণ ইউনিক্লো। অর্থাৎ ব্র্যান্ডের বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত মুনাফার পুরোটাই ব্যবহৃত হবে পুনরায় বিনিয়োগ এবং সামাজিক নানা সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে। জানালেন গ্রামীণ ইউনিক্লোর এজিএম (হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড হোম ডেলিভারি সার্ভিস) শরিফুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, ব্র্যান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আন্তর্জাতিক মানদন্ডে প্রশিক্ষিত করা হয় প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া সিএসআর স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী প্রতিবছরের মতো এবারও দুই হাজার মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও পোশাক বিতরণ করে থাকে গ্রামীণ ইউনিক্লো। ফ্যাক্টরির কর্মীদের ক্ষমতায়নে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে ব্র্যান্ডটি। নিয়মিত চক্ষুসেবার পাশাপাশি ওষুধ এবং চশমাও কর্মীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। কমিউনিটি ক্লিনআপ প্রোগ্রামের পরিকল্পনা রয়েছে গ্রামীণ ইউনিক্লোর। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের প্রতিটি আউটলেটের আশপাশের এলাকাজুড়ে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাবে ব্র্যান্ডটি। কমিউনিটি বেসড এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়বে বলে গ্রামীণ ইউনিক্লো আশাবাদী। সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি এর বিকল্প খুঁজে বের করার প্রকল্প ইতিমধ্যে পরিচালিত হচ্ছে ব্র্যান্ডটির প্রতিটি আউটলেটে। তরুণদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয় ব্র্যান্ড র নেশন। সিএসআর নিয়ে তাদেরও রয়েছে নানা কার্যক্রম। ব্র্যান্ডটির অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হাসিবুর রহমান জানান, এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শীতার্তদের মধ্যে পোশাক বিতরণ। এ ছাড়া পথশিশুদের নিয়মিত আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে ব্র্যান্ডটি।
মডেল: তানজিন তিশা ও নাহিদ
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: জেকে ফরেন ব্র্যান্ডস
জুয়েলারি: উযমাহ্
ছবি: কৌশিক ইকবাল