skip to Main Content

তনুরাগ I অ্যাকটিভ অ্যাকশন

মুখত্বক ছাড়িয়ে বিশেষ এই উপাদানগুলোর বিচরণ এখন সর্বাঙ্গে। বিশেষায়িত পরিচর্যা নিশ্চিতে

দেহত্বকের পরিচর্যা। বরাবরই একদম বেসিক। কিন্তু সময় বদলেছে। ফলে প্রো-কোয়ালিটি ফেশিয়াল প্রডাক্টের পাশাপাশি বডি স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট নিয়েও মাথা ঘামাতে শুরু করেছে বিউটি ব্র্যান্ডগুলো। কারণ, মুখত্বকের তুলনায় পুরুত্বে বেশি আর স্পর্শকাতরতায় কম হলেও পরিচর্যার অবহেলা দেহত্বককে করে তুলতে পারে মলিন। মুখত্বকের মতো দেহত্বকেও দেখা দিতে পারে বলিরেখা আর হাইপারপিগমেন্টেশনের মতো সমস্যা। তাই এত দিন বডি কেয়ার পণ্য কেনার সময় শুধু এর সুগন্ধটা যাচাই করে নিলেও এখন এর ফর্মুলেশন নিয়ে দারুণ সচেতন ক্রেতারা। ঠিক মুখত্বকের পরিচর্যার জন্য পণ্য কেনার মতো করেই। ফলাফল- জনপ্রিয়তা বাড়ছে রেটিনলে তৈরি বডি লোশনের, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড-সমেত বডি সেরামের আর স্যালিসাইলিক অ্যাসিড দেওয়া বডি ওয়াশের মতো বডি অ্যাকটিভযুক্ত প্রডাক্টের। যেগুলোর নিয়মিত ব্যবহারে মুখত্বকের বিশেষ সমস্যাগুলোর মতোই সেরে যাবে দেহত্বকের অসুবিধাগুলো।
বডি অ্যাকটিভ কী
অ্যাকটিভ মূলত অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টের শর্ট ফর্ম। এগুলো হচ্ছে এমন কিছু বিশেষ উপাদান, যেগুলো ত্বকের নির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে কাজ করে, দেয় সমাধান। একদম অকালবার্ধক্যের ছাপ থেকে ডিহাইড্রেশন পর্যন্ত। ইনঅ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় সব উপাদানের তুলনায় অ্যাকটিভ অর্থাৎ সক্রিয় এ উপাদানগুলোর ক্ষমতায় কাক্সিক্ষত ফল মিলবে দ্রুত। যেমন বডি অ্যাকনের সমস্যায় স্যালিসাইলিক অ্যাসিড অথবা বেনজয়েল পার অক্সাইডযুক্ত অ্যাকনে স্পট ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করা যায় নিয়মিত। কারণ, এ দুটো অ্যাকটিভই বন্ধ হয়ে যাওয়া লোমকূপের সমস্যা সারায়, যুদ্ধ করে ব্রণের সঙ্গে। এ ছাড়া স্ট্রেচ মার্কস আর কেরাটোসিস পিলারিসের মতো সমস্যায়ও অ্যাকটিভ দারুণ কার্যকর। তাই দেহত্বকের অবস্থা যেমনই হোক, বছরভর তারুণ্যোজ্জ্বল, সুস্থতা বজায় রাখতে বডি কেয়ার রুটিনে অ্যাকটিভের যোগ সেরা সমাধান।
অ্যাকটিভ যোগের উপকারিতা
শুষ্কতা ছাড়াও দেহত্বকে আরও অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে যেমন: পরিপুষ্টতার অভাব, হাইপারপিগমেন্টেশন অথবা ইনগ্রোন হেয়ার। এ ক্ষেত্রে রেটিনল, কিংবা গ্লাইকোলিক এবং ল্যাকটিক অ্যাসিডের মতো অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট খুব কাজের। উপাদানগুলো দেহত্বক কোষের টার্নওভারকে ত্বরান্বিত করে। ফলে অনুজ্জ্বল ত্বকে জমে থাকা মৃতকোষ দ্রুত ঝরে পড়ে। ত্বকের সুরক্ষা দেয়ালকে করে তোলে শক্তিশালী। কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায়। বাড়ায় ইলাস্টিসিটি। দেহত্বকের বলিরেখা সারানোর পাশাপাশি উজ্জ্বলতাও বাড়ায় অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো। দেয় লিফটেড ইফেক্ট। কোনো কোনো অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট এক্সফোলিয়েটর হিসেবে দারুণ। সারাতে পারে কেরাটোসিস পিলারিস এবং ইনগ্রোন হেয়ারের মতো সমস্যা। খসখসে ত্বককে মসৃণ, পেলব করে তুলতেও জুড়ি নেই।
সৌন্দর্যবিশ্বে বেশ কিছু প্রচলিত অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে-
হায়ালুরনিক অ্যাসিড
এইচএ হিসেবে পরিচিত কোমল এ অ্যাসিড প্রাকৃতিকভাবেই উৎপন্ন হয় দেহে, মলিকিউল আকারে। এটি নিজের ওজনের তুলনায় প্রায় হাজার গুণ বেশি পানি ধারণের ক্ষমতাসম্পন্ন। তাই দেহত্বকের শুষ্কতা সারিয়ে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার জোগান দিতে দারুণ কার্যকর।
ভিটামিন সি
ফ্রি র‌্যাডিকেল ড্যামেজের বিরুদ্ধে কার্যকর এ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরিবেশদূষণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে দেহত্বক। বাঁচায় সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকেও। প্রাকৃতিকভাবে লেবু, কমলা, আঙুরের মতো ফলে মেলে ভিটামিন সি। উৎপন্ন হয় সিনথেটিক্যালি। হাইপারপিগমেন্টেশন দূর করতেও দারুণ এই অ্যাকটিভ।
রেটিনল
অ্যান্টি এজিং উপাদানগুলোর মধ্যে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড উপাধি পাওয়া এটি। ভিটামিন এ থেকে প্রাপ্ত রেটিনল ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া নানা চিহ্ন যেমন বলিরেখা, সূক্ষ্মরেখা, ইলাস্টিসিটি আর কোলাজেন কমে যাওয়ার সমস্যায় দারুণ কার্যকর। এ ছাড়া এটি ত্বকের টেক্সচার ও টোনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। সারায় এনলার্জড পোর আর হাইপারপিগমেন্টেশনের মতো সমস্যা।
বেটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড
সংক্ষেপে বিএইচএ, যা একটি অয়েল সলিউবল অ্যাসিড। এটি ত্বকের গভীরে পৌঁছে যায় সহজে। নিয়ন্ত্রণ করে অতিরিক্ত সিবাম নিঃসরণের হার। খুলে দেয় বন্ধ লোমকূপের মুখ। ব্রণ সারাইয়েও কার্যকর। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সবচেয়ে প্রচলিত বিএইচএ।
সেরামাইড
আর্দ্রতার সুরক্ষা দেয়াল তৈরি করে এবং ময়শ্চারকে বেরিয়েও যেতে দেয় না ত্বক থেকে। শুষ্ক ত্বকের জন্য দারুণ কার্যকর।
আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড
সংক্ষেপে এএইচএ। যা কেমিক্যালি এক্সফোলিয়েট করে ত্বকের একদম বাইরের স্তর। ফলাফল আরও উজ্জ্বল, মসৃণ ত্বক। ল্যাকটিক অ্যাসিড আর গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এসবের ব্যবহার দেহত্বকের নানা সমস্যা দূর করে। বাম্পও সারায়।
বডি কেয়ার রুটিনে অ্যাকটিভের যোগ
গোল্ডেন রুল- বডি কেয়ার রুটিনে অ্যাকটিভ, ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকগুলো একসঙ্গে যোগ করা যাবে না; বরং একটি একটি করে অ্যাকটিভ যোগ করতে হবে রুটিনে। এতে করে প্রতিটির কার্যকারিতা আলাদা করে বোঝা যাবে। নতুন অ্যাকটিভ ব্যবহারের আগে মাসখানেক সময় দেওয়া প্রয়োজন। আর প্যাচ টেস্ট মাস্ট। প্রডাক্টের গায়ে লেখা নির্দেশাবলি মেনে অ্যাকটিভ ব্যবহার করাই ভালো, নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে। ত্বকের সমস্যা বুঝে তবেই বডি অ্যাকটিভ বেছে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

 অর্চনা সাহা
মডেল: তর্ষা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top