সেলুলয়েড I আমুর
রচনা ও পরিচালনা: মিশায়েল হানেকা
অভিনয়: জ্যঁ-লুই ত্রাতিঁনেয়োঁ, ইমানুয়েলা রিভা, ইজাবেলা হুইপের
সময়ব্যাপ্তি: ১২৭ মিনিট
ভাষা: ফ্রেঞ্চ
দেশ: ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, জার্মানি
মুক্তি: ২০১২
দীর্ঘ একটা জীবন গেছে হাতে হাত রেখে। কখনো হাসিখুশি, কখনোবা মুখ ভার। তবু ভালোবাসা ও বন্ধনের সমুদ্রে ভাটা আসেনি। শুধুই জোয়ারের খেলা। কিন্তু সময় নির্মম। নির্মম বয়স। সেই তারুণ্য সুদূর অতীত। শরীরের ভাঁজে-ভাঁজে, চলনে-বলনে এখন বার্ধক্যের থাবা। আশি পেরোনো এক দম্পতির জীবন এখন শুধুই বয়ে নিয়ে যাওয়া, আর অপেক্ষায় থাকা—মৃত্যুর। তবু তারা শারীরিক ও বাস্তবিক সকল অপারগতা সত্ত্বেও পরস্পরকে জড়িয়ে রাখে আলিঙ্গনে। পরস্পরকে চাঙা রাখার প্রচেষ্টা এখানে নিষ্কলুষ। তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ করে ফুল বিনিময়।
প্যারিসের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে, বার্ধক্যের দাম্পত্যজীবন বয়ে বেড়ানো, আনা ও জর্জ নামের দুই বুড়ো-বুড়ির কাহিনি—‘আমুর’। সরল ইংরেজিতে, ‘লাভ’। অবসরপ্রাপ্ত এই পিয়ানো টিচার দম্পতির ঘরের ভেতর মৃদু আলোর সঙ্গে খেলা করে ভালোবাসার নির্মল হাওয়া। কিন্তু একদিন সেই হাওয়া আর মৃদু থাকে না। আচমকা ঝড়ের মতো এক পলকে ডেকে আনে সর্বনাশ। দুজন যখন একসঙ্গে বসে সারছিল সকালের নাশতা, নীরবে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পড়ে আনা। প্রথমে অবশ্য বুঝতে পারে না জর্জ। যখন পারে, তখন তার ত্রাহি দশা। বুড়ো শরীরে দৌড়ঝাঁপ…হাসপাতাল…। তবু মনে আশা, নিশ্চয়ই স্ত্রী সেরে উঠবে। কিন্তু সার্জারিতে গোলমাল হয়ে যায় কিছু একটা। আনা চিরকালের মতো পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। চলাফেলার সঙ্গী করে নেয় হুইলচেয়ার।
তবু ভালোবাসা মৃদু খেলা করে চলে এই দম্পতির সংসারে। তাদের কন্যা ইভা ছুটে আসে মায়ের অসুখের খবরে। মাকে পাঠাতে চায় কোনো কেয়ার সেন্টারে। কিন্তু জর্জ রাজি নয় প্রিয়তমাকে অন্যত্র রেখে একটি দিনও কাটাতে। আনাকে দেখাশোনার জন্য নিয়োগ দেয় সে পেশাদার নার্স। যতই পেশাদার হোক, এমন ‘অচল’ বুড়িকে সামলাতে গিয়ে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। দুর্ব্যবহারের শিকার হয় আনা। আর তা দেখে ফেলে জর্জ। তাড়িয়ে দেয় নার্সকে। ঠিক করে, নিজেই করবে দেখভাল।
এভাবে আরও কিছুদিন কাটতে থাকে এই দম্পতির। আনাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, খাওয়ানো, বই পড়ে শোনানো, ফুল দেওয়া…বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে যেতে থাকে বুড়ো জর্জ। তারপর আসে এক ক্রান্তিলগ্ন। ওপরে ওপরে শক্ত দেখালেও, একদার প্রাণচঞ্চল প্রেয়সীর এমন নিশ্চল জীবন, এমন নারকীয় যন্ত্রণা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায় জর্জের। ভালোবাসা তখন অন্যতর পেখম মেলতে থাকে। আর সেই অদৃশ্য পেখম নেয় দানবীয় রূপ। একদিন আনার পাশে বসে, নিজের শৈশবের গল্প শোনাতে শোনাতে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয় জর্জ। আনা চোখ বন্ধ করতেই ঝটপট একটা বালিশ হাতে তুলে নেয় সে। আর তাতে দেয় অসহায় আনার মুখচাপা। নিথর হয়ে যায় আনা। তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে, একগুচ্ছ ফুল কিনে আনে জর্জ। ফুলগুলো সাজিয়ে রাখে। তারপর আনার ওয়্যারড্রোব থেকে বের করে আনে একটা ড্রেস। লেখে এক দীর্ঘ চিঠি। তারপর বেডরুমের দরজাটা বন্ধ করে দেয় বাইরে থেকে। আর জানালা দিয়ে এসে ঘরে আটকা পড়া এক কবুতরকে ধরে ফেলে ছেড়ে দেয় বাইরে। সুদীর্ঘ দাম্পত্যজীবনের সেই ঘর থেকে, সেই সংসার থেকে, নিরুদ্দেশযাত্রায় বেরিয়ে পড়ে জর্জ। তার চিঠিসূত্রে আমরা জানতে পারি, কবুতরটিকে মুক্তি দিয়েছে সে!
ভালোবাসার মানুষকে এমনতর মুক্তি দেওয়ার অন্তরাত্মা কাঁপানো গল্প নিজস্ব ফিল্মি ভাষায় এই সিনেমায় অনবদ্যভাবে গেঁথে রেখেছেন অস্ট্রিয়ান মাস্টার ফিল্মমেকার মিশায়েল হানেকা। আর তাতে ‘আমুর’ শুধু কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সর্বোচ্চ পদক “পাম দি’অর”ই নয়, বিদেশি ভাষার সেরা সিনেমা ক্যাটাগরিতে জিতে নিয়েছে অস্কারও।
i আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। ‘আমুর’ সিনেমাটি কোন বয়সী দম্পতির কাহিনি?
[ক] বিশোর্ধ্ব
[খ] আশি-উর্ধ্ব
[গ] পঞ্চাশোর্ধ্ব
[ঘ] সত্তরোর্ধ্ব
২। এটি কোন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সর্বোচ্চ পদক জয় করেছে?
[ক] কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
[খ] ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
[গ] লোকার্নো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
[ঘ] বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
৩। এর নির্মাতা কোন দেশের নাগরিক?
[ক] ফ্রান্স
[খ] জার্মানি
[গ] ইতালি
[ঘ] অস্ট্রিয়া
গত পর্বের বিজয়ী
১. ফারহানা ইসলাম, রামপুরা, ঢাকা
২. সুমিতা দেবী, নবাবগঞ্জ, ঢাকা
৩. শিউলি আক্তার (মুক্তা), চকবাজার, চট্টগ্রাম।