রসনাবিলাস I ক্যাফে ডি পারটেক্স
অনেক কাল আগে, টিম ক্যানভাস একবার ঢুঁ মেরেছিল ক্যাফে ডি পারটেক্সে, তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডে। এরপর বুড়িগঙ্গায় জল গড়িয়েছে অনেক। তাই আরেকবার সেখানে নেমন্তন্ন পেয়ে, সেখানে পা পড়ল আমাদের। লিখেছেন আল মারুফ রাসেল
তেজগাঁও-গুলশান লিঙ্ক রোডে পারটেক্সের যে বড় শোরুম, তারই দোতলায় ক্যাফে ডি পারটেক্সের অবস্থান। পারটেক্স মূলত ফার্নিচারের কারবারি হলেও খাবারের জগতে সুনামের সঙ্গেই বিগত বছরগুলোতে রাজত্ব করে আসছে বাংলাদেশের বাজারে। তবে একদম ক্যাফে নিয়ে কারবার ১৪২২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন থেকেই। অর্থাৎ সে হিসাবে এই ক্যাফে কাম রেস্টুরেন্টের এই বছরের পয়লা বৈশাখে আট বছর পূর্ণ করবে।
দুনিয়াজুড়ে জেনট্রিফিকেশনের সুবাদে বড় বড় ব্র্যান্ড স্টোরে দেখা পাওয়া যায় এক টুকরো কফি কর্নার বা ক্যাফের। যেন শোরুমে আসা ক্রেতারা খানিকটা আরাম করতে পারেন। কফি বা হালকা খাবারের স্বাদ নিতে নিতে পছন্দ করে নিতে পারেন পছন্দের জিনিস। মূলত এই ধারণা থেকেই ক্যাফে ডি পারটেক্সের পথচলা শুরু। রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার লিটন ডি ক্রুজ জানালেন, এই ক্যাফেকে কেবল ক্যাফে বললে কম বলা হয়, এটা মূলত রেস্টুরেন্ট কাম ক্যাফে। আর এখন রয়েছে বুফে এবং সকালের নাশতার ব্যবস্থা।
এই ক্যাফে তার অন্দরসজ্জা বদলেছে বহুবার। প্রথমবার যখন এর বয়স এক বছর ছিল, তখনই এই সংখ্যাটা ছিল তিন। এখনকারটা নিয়ে কতবার, জিজ্ঞাসা করতেই মাথা চুলকে ম্যানেজার জানালেন, সাত-আটবার তো হবেই!
পারটেক্স শোরুমের রট আয়রনের সিঁড়ি ধরে দোতলায় এই ক্যাফে। সিঁড়ি ধরে উঠতেই বুফে কাউন্টার আর কফি বুথ। পুরো ক্যাফের মাথার ওপরের সিলিংটা পুরোপুরি কালো, মেঝেতে বসানো কাঠ রঙা টাইলস, কাঠের প্ল্যাটফর্ম দিয়ে এক কোনা খানিকটা উঁচু করে বসার ব্যবস্থা—ভোল পাল্টে পুরোপুরি করপোরেট মেজাজে এখন। সম্ভবত উইক ডের দুপুর বলেই। আশপাশের অফিসের লোকেরাই দল বেঁধে বসা—কেউ খাবারের অপেক্ষায়, কেউ খাবার শেষের আড্ডায় মশগুল, আবার কেউ বারান্দায় ধোঁয়া টানতে ব্যস্ত। কাউচ, চেয়ার, টেবিল—বসার সব ধরনের ব্যবস্থাই আছে। দেয়াল আর মাথার ওপরের ছাদটায় পারটেক্সের ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের মুনশিয়ানার ছাপ। দেয়ালে আর ছাদে আড়াল থেকে আলো এসে পুরো ঘর আলোকিত করে রাখে। আর সেই সঙ্গে রয়েছে অবাধ আলোর প্রবেশাধিকার, গ্লাসের দেয়ালের কল্যাণে। বেশ পরিপাটি এই ক্যাফে। এক পাশে ওয়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে বাইক। সম্ভবত আশপাশে মোটরসাইকেল আর গাড়ির দোকানের সুবাদেই এই সজ্জা! ঘুরে দেখতে দেখতে এক কাপ আমেরিকানোয় চুমুক দেওয়া হয়ে গেল।
সকাল থেকেই খোলা থাকে এই ক্যাফে। প্রাতরাশ থেকে নৈশভোজ—সবই সম্ভব এই রেস্টুরেন্টে। আমরা অবশ্য ভরদুপুরের খাদক- তাই মূল খাবার থেকে বেছে নিলাম গ্রিলড প্ল্যাটার—তাদের মেনুর ভাষায় প্লেট ফুল মিক্স গ্রিল। তার আগে খিদেটাকে আরেকটু বাড়িয়ে নেওয়ার আশায় চুমুক দেওয়া হলো থিক থাই স্যুপের বাটিতে। থাই স্যুপ ছিল আর দশটা থাই স্যুপের মতোই লেমনগ্রাস আর লেবুর কম্বিনেশন জোরদার; তার চেয়েও জোরালো ছিল স্যুপের আলতো ঝালের আফটারটেস্ট। ভেতরে চিংড়ি, মুরগি আর মাশরুমের পরিমাণও বেশ ভালোই ছিল।
খানিক পরেই এল সেই প্লেট ফুল মিক্স গ্রিল। এক টুকরো ডোরি, টাইগার প্রন এক টুকরা, এক টুকরো চিকেন ড্রাম স্টিক, গ্রিলড মাশরুম, সঁতে করা সবজি আর মাশরুমের সঙ্গে একথাল রাইস। কয়লায় পোড়া ডোরি আর টাইগার প্রনের স্বাদ অসাধারণ। এই কর্ডাটা পর্বের মাছ আর আর্থ্রােপোডা পর্বের পোকা এমনিতেই সুস্বাদু; তাতে কয়লা যোগ হলে যা হয়, তা কথায় বলে কি আর বোঝানো যায়? যে খায়নি, সে জানেনি ধরনের ব্যাপার আরকি! সঙ্গে যে মুরগি ছিল, সেটাও পোড়া পোড়া স্বাদে আহা-উহু…করে খাওয়ার মতোই। অবশ্য দলে থাকা ছয় বছর বয়সী সদস্য অভয়া অপ্তি জানান দিল, ‘মুরগিটা ঝাল’; রসুনের পরশ দেওয়া সঁতে করা মাশরুম আর সঁতে করা ভেজিটেবল ও সল্টেড লস্যি দিয়ে অবশ্য সেটা সে ব্যালেন্স করে নিয়েছিল। এই লস্যিতে দইয়ের পরিমাণ বেশ ভালো।
পরে আবার হাজিরা দিল আমেরিকানো—ডাবল শট এসপ্রেসো দিয়ে। প্রথমবারের মতো এবারেও বারিস্তা রোকনুজ্জামান ডিসটিংকশনসহ উতরে গেলেন। কফির ওপরের ক্রেমার পরিমাণ বেশ ভালো, বহুক্ষণ ধরেই দৃশ্যমান ছিল—সাধারণত তালেবর বারিস্তা ছাড়া এমনটা দেখা যায় না। তিনি আরও একখানা ড্রিংকস দিয়ে গেলেন আমাদের দলের কনিষ্ঠতম সদস্যের জন্য—স্ট্রবেরি ইয়োগার্ট স্মুদি। কাঠিতে গাঁথা একটা আস্ত স্ট্রবেরি দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে স্ট্রতে এক চুমুক দিয়েই সে তার ট্রেডমার্ক থাম্বস আপ দিয়ে জানিয়ে দিল, সেটা তার মনঃপূত হয়েছে।
মূলত এশিয়ান ফিউশন খাবার নিয়ে কাজ করলেও খাবারের ধরন আর বৈচিত্র্য এখন অনেকটাই বদলে ফেলেছে ক্যাফে ডি পারটেক্স। ওরিয়েন্টাল থেকে কন্টিনেন্টাল, ইন্ডিয়ান—সব ধরনের খাবারই এখন মিলছে বুফে, আলা কার্তে আর তাবল দ্যোৎ মেনুতে। লিটন ডি ক্রুজ জানালেন, এখানে মূলত আশপাশের করপোরেট অফিসের লোকজনের আনাগোনাই বেশি; আরও ঢুঁ মারেন পারটেক্সের শোরুমে আসা ক্রেতারা। পাশাপাশি আসেন ছাত্র-ছাত্রীরাও। ফলে সবার ক্রয়ক্ষমতা মাথায় রেখেই প্রতিটি খাবারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে ছোটখাটো করপোরেট মিটিংও হয় নিরিবিলি পরিবেশে, কফির কাপে আয়েশি চুমুকে।
ঠিকানা: ২২২ বীর উত্তম মীর শওকত সড়ক (গুলশান লিঙ্ক রোড), তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা ১২০৮। ফেসবুক: cafedepartex। ফোন: ০১৭৩০-৩৭৭২২০।
ছবি: লেখক