নখদর্পণ I নেইল কনসিলার
কাজ সনাতন মেকআপ কনসিলারের মতোই। নিখুঁত ক্যানভাস তৈরি। তবে মুখত্বকে নয়, নেইল প্লেটে
মিল্কি ন্যুড ম্যানিকিউর। বরাবরই ক্ল্যাসিক। চটজলদি শিক লুকের জন্য পারফেক্ট অপশন। কিন্তু এফোর্টলেস এ নেইলপলিশ লুকের জন্য সঠিক অ্যাপ্লিকেশন জরুরি। দরকার পারফেক্ট শেডের নেইলপলিশও। তবে সমস্যা সেখানেই। ন্যুড শেডের এ ফর্মুলাগুলো মাঝেমধ্যে এত স্বচ্ছ হয় যে আসল সৌন্দর্যই ফুটে ওঠে না। আবার কখনো বেশি কমলা দেখায়, বা দেখায় গোলাপিঘেঁষা। এ ক্ষেত্রে পারফেক্ট শেড ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা যেতে পারে অভিনব এক পণ্য। নেইল কনসিলার। অনলাইন বিউটি কমিউনিটি দিয়ে ভাইরাল হওয়া এই নেইল প্রডাক্ট এখন ঢুকে গেছে মেইনস্ট্রিম নেইল আর্ট বিজনেসে। ম্যানিকিউরিস্ট আর নেইল আর্টিস্টদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিন দিন। এমনকি সাধারণ সৌন্দর্যসচেতনদের মধ্যেও চাহিদা বেড়েছে পণ্যটির।
নেইল কনসিলার কী
পারফেক্টলি ন্যাচারাল নেইল লুক চাই? নেইল কনসিলারের ব্যবহার এ ক্ষেত্রে কাজটা অনেক সহজ করে দিতে পারে। সামান্য মাংসল টোনের এই পণ্য নেইল প্লেটের খুঁতগুলো ঢেকে দিতে সক্ষম। ডিসকালারেশন থেকে ক্ষতচিহ্ন—সবই আড়ালে চলে যেতে পারে এর সঠিক ব্যবহারে। ফলাফল—প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল নখ। আর এই নেইল কনসিলারগুলো শুধু খুঁতই ঢাকে না, সেই সঙ্গে নখের যত্নেও জাদুকরি। বেশির ভাগ ফর্মুলাতেই থাকে নখে শক্তি জোগানোর এবং পুনরুজ্জীবিত করে তোলার উপাদানগুলোর উপস্থিতি, যা ভবিষ্যতের ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখে নখ। যাদের ঘন ঘন নেইল আর্ট পাল্টে ফেলার অভ্যাস, তাদের জন্য দারুণ কাজের নেইল কনসিলার। এটি ব্যবহারের পর নখকে বাড়তি দেখভালের প্রয়োজন পড়ে না। নেইল আর্টকে দীর্ঘ সময় টিকিয়ে রাখে নখে।
ব্যবহার বিধি
একদম সহজ। সাধারণ নেইলপলিশের মতোই। প্রথমে এক কোট নখে দিয়ে নিতে হবে। ভালো করে শুকিয়ে যাওয়ার পর দিতে হবে দ্বিতীয় কোট। ব্যস! অনেক বেশি লাস্টিং পাওয়ার চাইলে টপ কোটও দিয়ে নেওয়া যায়। তবে তারও দরকার পড়ে না অনেক সময়। এ ছাড়া হালকা শেডের নেইলপলিশ দেওয়ার আগেও ব্যবহার করা যায় কনসিলার। এতে নখের সৌন্দর্য বাড়বে বহুগুণ।
রকমফের
নখে পিকচার পারফেক্ট নো মেকআপ মেকআপ ম্যানিকিউর যাদের পছন্দ, তাদের সংগ্রহে থাকা চাই নেইল কনসিলার। এ ক্ষেত্রে ইলিউমিনেটিং ফর্মুলার চাহিদা একটু বেশি। এগুলো কার্যকরভাবে নখের হলদেটে ভাব, ডিসকালারেশন আর অনুজ্জ্বলতা দূর করে। কারণ, এ ধরনের কনসিলারগুলোতে উপস্থিত থাকে অপটিক্যাল ব্রাইটেনারস। যা নখে উপস্থিত সমস্যাগুলোকে নিউট্রালাইজ করে দেয়। ফলাফল—নখ দেখায় নিখুঁত। ইলিউমিনেটিং নেইল কনসিলারগুলো সাধারণত দুটো শেডে মেলে বাজারে—মিল্কি হোয়াইট এবং লাইট পিঙ্ক। মিল্কি হোয়াইটের এক কোট স্বচ্ছ এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল উজ্জ্বলতা দেয় নখে। দেখায় সফিস্টিকেটেড। আরও দীর্ঘস্থায়িত্ব চাইলে এর ওপর টপ কোট দিয়ে নিলেও চলবে। আর লাইট পিঙ্ক নেইল কনসিলার রোজ টিন্টেড যুক্ত। নখের জন্য গ্লো ইনহেন্সার হিসেবে দারুণ এই শেডের কনসিলার। হালকা গোলাপি রঙের ওয়াশ নখে দেয় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল আভা। এই নেইল কনসিলারগুলোতে থাকে পোরসেলিন এক্সট্রাক্ট, যা চটজলদি নখে তৈরি করে ফ্ললেস ফিনিশ। প্রতিদিন ব্যবহার উপযোগী পারফেক্ট পলিশের মতো কনসিলারগুলো দেয় একদম প্রফেশনাল লুক। বাজারে আরও মিলবে কনসিলার ইউভি জেল। এগুলোর ফর্মুলেশন নেইল বেডের খুঁত ঢেকে রাখতে সহায়তা করে। দেয় ইউভি জেল প্রটেকশনের সুবিধা। কনসিলার ইউভি জেল নখে শক্তি জোগায় আর ডিসকালারেশনের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো দূর করে দেয়। নখে লাইনগুলোকে ভরে ফেলে। ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিউরের জন্যও পারফেক্ট এই কনসিলার। এগুলোতেও মেলে নানা শেড। পিচ এন ক্রিম এবং পেটাল পিঙ্ক শেডগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয়। যেকোনো ধরনের স্কিন টোনের সঙ্গে সুন্দর মানিয়ে যায়। দেয় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ন্যাচারাল লুক।
কনসিলারের কামাল
তা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ, ম্যানিকিউর করা নখগুলো যত সুন্দরই দেখাক না কেন, স্বীকার করতেই হবে, পুরো প্রক্রিয়ায় নখের ওপর দিয়ে বেশ ধকল যায়। প্রতিবার নতুন নেইল আর্ট করানোর আগে নেইলপলিশের স্তর আর চিপ রেজিস্ট্যান্ট প্রডাক্টগুলো তুলে নিতে হয় ভালোভাবে; যা অল্প হলেও ক্ষতি করে দেয় নখের। আর জেল ম্যানিকিউরের যে কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়, তা নখকে কুঁকড়ে ফেলে, পিলিংও হয়। এ ক্ষেত্রে নেইল কনসিলার কাজ করতে পারে রক্ষাকবচের মতো। প্রথমে নেইল কনসিলার দিয়ে, এর ওপর অন্য প্রডাক্টগুলো অ্যাপ্লাই করে নিলে নখের ক্ষতি কম হয়। এ ছাড়া সব সময় ম্যানিকিউর না করে নখকে মাঝেমধ্যে ব্রেক দেওয়া যায়। সে সময় নেইল কনসিলার ব্যবহার করলে একদম প্রফেশনাল ম্যানিকিউরের মতো লুক মিলবে, কিন্তু ক্ষতিটা হবে তুলনামূলক কম। এসব কারণেই সৌন্দর্যবিশ্বে এই পণ্যের জনপ্রিয়তা বাড়ছে হু হু করে। বিকোচ্ছে বোতলের পর বোতল।
অর্চনা সাহা
ছবি: সংগ্রহ